* এই নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী সরকারকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার রায় দিয়েছে জনগণ -জাস্টিন ট্রুডো
* এই নির্বাচন সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয় -রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ
সুহেল ইবনে ইসহাক: জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টি অল্প ব্যবধানে কানাডার নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে, কিন্তু পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এ নিয়ে জাস্টিন ট্রুডো তৃতীয়বারের মতো কানাডার নির্বাচনে জয়ী হলেন। কিন্তু তার সমালোচকরা বলছেন, এই নির্বাচন সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। নির্বাচনে লিবারেলরা ১৫৯টি আসন পেয়েছে, কিন্তু পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য তাদের দরকার ছিল ১৭০টি আসন। কনজারভেটিভ দল পেয়েছে ১১৯টি আসন। তাছাড়া, বøক কিউবেকইস পেয়েছে ৩৩টি, এন.ডি.পি. পেয়েছে ২৫টি এবং গ্রীন পার্টি পেয়েছে ২টি আসন। পিপলস পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে কোনো প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি। জাস্টিন ট্রুডো নির্ধারিত সময়ের আগে এই আগাম নির্বাচন ডেকেছিলেন পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের আশায় ।
কানাডায় এবারের নির্বাচনে দেশটির পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সের ৩৩৮ আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২ হাজার ১০ জন প্রার্থী। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দলের প্রার্থী ১ হাজার ৯১৯ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ৯১ জন। কনজারভেটিভ পার্টি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে ।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে মন্ট্রিয়েলে সমর্থকদের সামনে দেয়া ভাষণে জাস্টিন ট্রুডো বলেন, “এখনো অনেক ভোট গণনা বাকী আছে। কিন্তু আজ রাতে আমরা যা দেখেছি তাতে এটা স্পষ্ট কানাডার মানুষ প্রগতিশীল পরিকল্পনাকেই বেছে নিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আপনারা এমন এক সরকারকে বেছে নিয়েছেন যারা আপনার জন্য লড়াই করবে এবং আপনাদের জন্য কিছু করবে ।”
কানাডায় করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউয়ের মধ্যে এই নির্বাচন হয়েছে। এটি ছিল কানাডার ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৭ কোটি মার্কিন ডলার ।
নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর হোটেলের বলরুমে সমবেত সমর্থকদের তিনি বলেন, ‘এই মহামারির মধ্যে আমাদের নির্বাচিত করে আবার সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন । আজ আমরা যা দেখলাম তা হলো লাখো কানাডিয়ান প্রগতিশীল পরিকল্পনার প্রতি রায় দিয়েছেন।’
এক টুইটে ট্রুডো বলেন, ধন্যবাদ, কানাডা। ভোট দেওয়ার জন্য। লিবারেল পার্টিতে আপনার আস্থা রাখার জন্য। একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বেছে নেওয়ার জন্য। আমরা কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই শেষ করতে যাচ্ছি। এবং আমরা কানাডাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু নির্বাচনী ফলের যে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দুবছর আগে পার্লামেন্টের যে চেহারা ছিল, এবারের নির্বাচনে একদম সেরকম একটি পার্লামেন্টই হতে যাচ্ছে। মাত্র দুবছরের মাথায় ট্রুডো যখন হঠাৎ এই নির্বাচন ডাকেন, তখন এটিকে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য একটি চেষ্টা হিসেবেই দেখেছেন অনেকে। ট্রুডোকে এরকম একটা নির্বাচনের দরকার কেন পড়লো – তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এরিন ও’টুল এটিকে অর্থ এবং সময়ের অপচয় বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রায় ৬০ কোটি কানাডিয়ান ডলার খরচের পর জনগণ তাকে আবারও একটি সংখ্যালঘু সরকার গঠনের জন্য ফেরত পাঠিয়েছে, অন্যদিকে আমাদের দেশের বিভক্তি আরও গভীর হয়েছে।”
তবে ট্রুডো যুক্তি দিচ্ছেন যে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে তার পরবর্তী সরকারকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার রায় দিয়েছে জনগণ। নির্বাচনের সময় জাস্টিন ট্রুডোকে ঘিরে কিছু পুরোনো বিতর্ক নতুন করে মাথাচাড়া দেয়। তিনি যে মেকআপ করে অতীতে ‘কালো মুখ’ এবং ‘বাদামী মুখ’ নিয়ে দুটি পার্টিতে হাজির হয়েছিলেন, সেটিকে অনেকে ‘বর্ণবাদী’ বলে সমালোচনা করেন। একটি নির্বাচনী সমাবেশে তাকে করোনাভাইরাস টিকা বিরোধী বিক্ষোভকারীরা হেনস্থাও করে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টি অল্প ব্যবধানে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।