সুনির্দিষ্ট এককে বললে, সাকিব হাসানের কবিতা প্রাকৃতিক মুক্তোদানার মতো শুদ্ধ প্রেমাবেগের আকর। জীবনের বিভিন্নমুখী প্রসঙ্গ ও অনুষঙ্গ তার কবিতার শরীরে পরিস্ফুট হলেও নিউক্লিয়াসে দৃঢ়বদ্ধ মানবীয় সম্পর্কের গভীরতা, অনাকাক্সিক্ষত দূরত্ব ব্যথা আর আতীব্র মিলনাকাক্সক্ষা। স্বর, শৈলী, স্বনন ও উপাস্থাপনায় সাকিব হাসানের কবিতা স্বতন্ত্র- বৈশিষ্ট্যমলিণ্ডত। গতিময়তা ও গীতিময়তা তার কবিতার একটি অনন্য মাত্রা যা পাঠককে বসন্ত বাতাসের প্রশান্তি দিবে। বিশেষত চিত্রকল্প ব্যবহারে কবি সাকিব হাসান পাঠ-প্রক্রিয়ায় পাঠককে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট করেছেন এবং কবিতাপাঠের আনন্দকে বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। রূপকল্পের কার্যকর নিরীক্ষাধর্মী প্রয়োগের পাশাপাশি শব্দের নিবিড়, নিরাসক্ত ও যথার্থ সজ্জায় সাকিব হাসান পাঠকের সাথে জিনুইনলি কমিউনিকেট করতে পেরেছেন।
– শফিক রহমান

কবি সাকিব হাসানের জন্ম উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র বগুড়া শহরে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এম এ ডিগ্রী লাভ করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। সাকিব হাসান মূলত কবিতা লিখলেও, তিনি দি ডেইলি সান ও দি ইন্ডিপেনডেন্ট ইংরেজি দৈনিকে ৩০০-এর বেশি উপ-সম্পাদকীয় নিবন্ধ লিখেছেন। এছাড়া, কবি সাকিব হাসান ‘লিথি’ নামে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক ছোট কাগজের সম্পাদক। কবি সাকিব হাসানের আর একটি পরিচয় তিনি একজন অনুবাদক। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থসমূহ: ইস্পাতের ফুল, এক বেহালায় কৃষ্ণচূড়া, সেদিন জোছনা ছিল একা। অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ বেহুলা বাংলা প্রকাশনী থেকে তার মৌলিক বাংলা কাব্যগ্রন্থ রাখতে যদি জলের কাছে ও মৌলিক ইংরেজি সনেটগ্রন্থ Because of Blooming Rose প্রকাশিত হয়েছে।

বুধবারটা আমাকে দিও

বুধবারটা আমাকে দিও তুমি
বৃহস্পতি, শুক্র, সব বার তোমার
সদ্যকেনা পদ্য পোষাকের মতো
সুবর্ণ অঙ্গে আনন্দে লেপ্টে নিও।

সবটাই নেবো না, ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্র নই
অপরাহ্ন বেলা হেসে শিমুলে বসো
আমার চোখে ক’হাজার মুহূর্ত ভরে
তুমিহীনতার ছিদ্র বন্ধ করে যেও।

প্রত্যুষ হতে পূর্বাহ্ণ, সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত্রি
ম্যানিলা রশি বেঁধে তুলে দিবো
রেসের ঘোড়া ছুটে এলে দাঁড়িয়ে বলবো
এখানে আমার বুধবার আছে, বুধ আমার।

দু’ঘন্টা বিয়োগ করে বুধবার তুমিই রেখো
বুধবার ভাবতেই সৌরভ রঙ লাগে আকাশে
দৈঘ্য, প্রস্থ, ব্যাসার্ধ বিন্দুর সমান তুচ্ছ
পঞ্জি ভুলে বুধবারের জন্য অস্থির কয়েদি আমি
আমার পৃথিবী বুধবার হয়ে গেছে
তুমি ভাবনায় বুদ পৃথিবীতে।

বেঁচে আছি একুশ হাজার বছর

আমাজন রেইন ফরেস্ট উজাড় করেছি
একুশ হাজার অপ্সরার মৃত্যু মুঠোয়
বেঁচে আছি ইচ্ছে ধোয়া বনায়ন প্রাণে
পাখিরা উড়ে গেছে বৃক্ষ এখন মনে
বিয়োগ প্রান্তর ভালোবেসেছি হৃদয় খুলে
রোপণ বাসনা চোখের মণিতে অস্থির হতেই
চলে যাবো যেখানে সবুজ ফিকে হয় না
ঋতু বিবর্তন বাতাস ভিজে বারে বারে
যাবার আগে চারাগুলো পুঁতেই যাবো
বদলে যাওয়া রঙ খুব ভালোবাসো তোমরা।

অদলবদল বিরোধী চেঙ্গিস হবো
তবে নির্বিচার হত্যা আমার যজ্ঞ নয়
একুশ হাজার হাওয়া বদলানো কমলাক্ষী
নিধন উৎসব যদি আমাকে কলঙ্ক বলে
শ্যামা পূজো বন্ধ হবে সব মন্দির ঘটে
একটা শ্যামা মেয়ের জন্যই কুঠার নিয়েছি হাতে
ত্রিবেণীসঙ্গম গেছি নির্ভয় রাতে
চিতাভস্ম ছিটিয়েছি তিনটি জলে
নিধন করেছি একুশ হাজার বাতিল বৃক্ষ
বেঁচে আছি আমি একুশ হাজার বছর।

পরমা

শেকড়ে কাণায় কাণায় প্রাণরস ছিলো
ছিলো না চক্র ঋতুর দোলা
বাতাস মন্দাক্রান্তা সাজেনি উপবন দুলে
বধূসাজ মেলেনি ক্ষীণ রঙ পশ্চিম হেলে
চঞ্চল ঢেউটি পায়নি ঠাঁই
ছুটে আসা জলে পরমা ক‚লে
অক‚ল পাড়িতে পায়নি সে
যে চেয়েছিলো পরমা অথৈ।

ক্রন্দন ভেসে গেল ফেনা সমুদ্রে
মৎস্যকুমারীর অস্ফুট আলাপন কে শোনে?
স্বগতঃ কথা ফেলে আল্পনা ব্যথা
আমি তো যাই, গেছি অস্থির সুবাসে
যাবো যাবো বলে যাবোই আবার
অধীর আকুল শ্বাস হাতে পরমা ক‚লে
দেবার সবটুকু হোলি পরমা, নেবার প্রান্ত মৃত।

ভাবনার ভিতরে বৈভব কতো!
সিক্ত সবুজের ওপারে জমাট দুঃখ
আত্মার গভীরে সুর আছে, পরমা সাজে
নৃত্যগীত কতোবার আলগা করেছি
বাক্যহীন বিষণ্নতা রেখেছি পরমা জলে।

ঐশী অতন্দ্রিতা গোলাপ তোমার

কুসুম শাখায় সদ্যফোটা গোলাপ চেয়েছিলে
দিতে পারিনি
পৃথিবী সামনে দাঁড়িয়েছিল
দক্ষিণ ঘূর্ণিতে উড়ে নিলো তান্ডব বাতাস
দগ্ধ হলাম সাহারা আগুন বালি শিখায়
ইচ্ছে ফিনিক্সের কি মৃত্যু আছে?
সবুজ ডানায় লাল গোলাপ নিয়ে
ফিনিক্স হয়েছি তোমার জন্য।

ঘুমের কপাট খুলে সুঘ্রাণ পাচ্ছি তোমার
ঘুমিয়ো না অতন্দ্রিতা লগ্নকালে
মন খারাপের বালাচূড়ি হাতে
ধমনিতে সুঘ্রাণ যাতায়াত অব্যাহত।

রাত্রির কোণায় অতনু আলোর বসতি
অন্ধকার শেষে রুপালি প্রেম প্রত্যুষ
স্নানের জলে গোলাপটি ভিজিয়েছি
স্নান সেরে তুমি ঘুমোতে যেও
তন্দ্রা চোখ আমার একবার ছুঁয়ে।

মৃদুকথার মৃৎশিল্প

তোমাদের কথা খুব মনে পড়ে
জানি তেমন ভালো নেই তোমরা
অনুভব সত্য সেটা মানি
নৃত্য ছন্দে মুখর একদল ফড়িং
আমার চারপাশে উল্লাস ছড়াতো।
জানিনা, ওরা কেমন আছে
সবুজ পাতার সরলতা বিছানো
সুর্য্যরে লাল আলোয় বাগানের মায়াটা
বার বার উঁকি দেয় আমার মনে
টবে জড়িয়ে থাকা গোলাপ চারায়
কিশোরী ফুল সেজেছে কেমন
জানতে ইচ্ছে করে।

পাশের নদীটা জলের শব্দে এখন
ক‚লের কথা বলে কিনা জানি না
অপেক্ষার মেয়েটি পথ ভুলে একদিন
বাগানে প্রবেশ করে কাকে খুঁজেছিল
সেকথা জানার ব্যাকুলতায়
আজ কাল পরশু যাপন আমার।

কুমোরপাড়ার পথ পাড়ি দিয়ে
বাড়ি ফেরার আনন্দ এখন
মৃৎশিল্পের নকশা আঁকে না
আমার অস্পষ্ট ক্ষুদ্র মনে।

জানার ইচ্ছেটা পুরনো হলেও
তোমরা সবাই নতুন থেকো ছন্দে
ভালো থেকো বাগান, প্রস্ফুটিত গোলাপ
শুভকামনা তোমার জন্য মৃদুকথার মেয়ে
কথার মৃদু অর্থ লিখতে প্রত্যুষে
বিকেলের আলো সন্ধ্যা ছোঁয় না আমার।
আমার বিস্ময় পৃথিবী

নেপোলিয়নের চোখের মতো বিস্ময় পৃথিবী আমার
দৈঘ্য প্রস্থে ক্ষুদ্র, দিগন্তে আকাশ যে কোন সময়
খোলসে বন্দী শামুক উঁকি দিয়ে পৃথিবী আপন যেমন
শব্দ মানুষ ধ্বনিতে আত্মগোপনে একলা চলা আলো
জ্বলে জোনাক পোকার গায়ে সতর্ক নিভৃত বিন্দুর পদ্য।

আমার বিস্ময় পৃথিবী মানুষ হারায় নিঃশব্দ ঝরা পাতায়
দূর পথ ছন্দে হেঁটে আনন্দ কুড়িয়ে ফেরা দুঃস্বপ্ন দুয়ার
এ কেমন ব্যথা!
সারাবার বিশ্বাস দিয়ে গাঁথে না মানুষ
হোটেল রেস্তোরাঁ ক্লাসরুম সুতোর মতো ছিঁড়ে ফেলে
অশ্রæ ফোঁটা এঁকে নিরাপদ নির্বাসন ছুড়িতে খণ্ড বৃত্ত।

দানব লুকিয়ে চোখে, ঠোঁটে, হাতের তালুতে পৃষ্ঠদেশে
প্রিয় আঙুলের মুখের কোথাও ছুঁয়ে যতœ বারণ
কি এক অদ্ভুত জীবন যাপন হৃদপিণ্ডের সাথে
নিরাপত্তা বলয়ে বন্দী শরীরের বহিরাংশ ভিতরের না
সেন্ট হেলেনা দ্বীপের আশ্চর্য জীবন আমার।

বদলে গেছো চাঁদের মতো

আলো ছড়িয়ে আকাশ লিখো একা
ফোটো ঘ্রাণে এতো কোমল মোমে
কতকথা দুপাশ খসে স্মীত স্বপ্ন
কালো ভুলে সবাই হাঁটে, আমি জল স্রোতে
যদি বিন্দু জ্বেলে দেখো তাহারে অথৈ
সময় গলে আরশিতে চাঁদির জরোয়া
কালি মুছে তিথি হেসে হেমাঙ্গি শরীর
কে বলে নেই, না দেখায় আরো কতো তুমি
ঋতু চাকায় ভিজে প্রাণে মাখালে সবুজ
অরণ্য লুকিয়ে চোখে আঁকলে প্রান্তর
চলি অন্ধকারে, শূন্য হাওয়া আদ্র খুলে
জোয়ার ধুয়ে ব-দ্বীপ, আলো ঢেলে শুক্লা প্রেম
বিন্দু থেকে বৃত্ত, শূন্য থেকে অসীম বিন্দু
বদলে বদলে তুমি পূর্ণচাঁদ, আমার ভিতরে সব।

কুঞ্জলতার বাড়ি

তুমি একটি কুঞ্জলতার বাড়ি
দূর থেকে কুঞ্জলতা নামে ডাকলে
নম্র ছায়া উঠোনে মেঘরঙ টেনে দাঁড়ায় না
শূন্যতা সব আছড়ে ভাঙে হৃদয় পাড়
সূর্যের আগুনে পোড়ে পলির ত্বকভূমি
ওম আগলে বিকেল হারায় নির্বাসনে
কোথাও নেই পশলা বাতাস গুচ্ছ ঠাঁই।

এক পাহাড়ে সুখবাড়ি আছে নাম কুঞ্জলতা
চিতাভস্ম নেই, নেই দাহদদ্ধ শ্বাস
ঘুমের শ্বাসে সবুজ নীরবতা অফুরান
দুয়ার খুলে ভালোবাসা পথ পলক মেলে
কতো শনির আখড়া ভেঙে কাছে আসি লতা
সহস্র নিয়ন নিভিয়ে ভিতরে অজস্র আমি
আলোটুকু সলতে ভরে জ্বালানিতে দীপালি
দুঃখের বুদবুদ শুষে কে আর হ্রদ তোমার মতো!
চিরল ফালি জমিয়ে বাড়ি কুঞ্জলতা
সবদিক খোলা বারান্দার রঙটা চিনিয়ে দিও
ভুলপথ ভুলে যেতে যেতে সেই অঙ্গে অধীর হবো
স্বপ্নসুখে বিভোর পাদদেশে ভ্রমণপথ মেলবো
স্বল্পপ্রাণের ফুলে কুঞ্জলতার একটা বাড়ি বানাবো।

সুটকেসটা খোলা হলো না

নিঃশব্দ গোলাপটি তাকালে চোখে
একটি শব্দ নিয়ে ছুটে যাই সুটকেস
অভ্র খুলে সদ্যভ্রুণটি রাখতে চাই অতল ভিতরে
কেটু পর্বতের দুঃস্বপ্ন চূড়া থেকে দূরে সরে যাবো
যেতে চাই সবসময় যেমন প্রশ্বাসের পরেই নিঃশ্বাস
এখনো খোলা হলো না
চৈত্র পুড়ে ভ্রুণটি আছে পাদদেশে।

রঙ, ফুল, রোদ আর বৃষ্টি ঘুরে কেউ এলে বাড়িতে
কতো সহজে ঋতু নামে ডাকি দরজায় দাঁড়িয়ে!
গ্রহণচাঁদ সূর্য পেলে স্নান উৎসবে কতো আলো!
ভিতরের সূর্যটা তোমার নিবো
মিটাবো পিপাসা আলো অন্দরে
অংকুর যেভাবে প্রাণ রাখে
রশ্মি সুতোর তুলাদন্ডে
অথচ এখনো খোলা হলো না সুটকেসটা।

মেয়েটি আসার আগে পাখিরা উড়েছিলো

তরল আকাশ মেঘে ডুবলে
পাখিদের নীড়ে সূর্যস্নান জমে
খাঁচায় সংশয় ঝরে আলো স্বরে
কপাট নড়ে মায়াভরা মেয়েটির মতো
সেই মেয়েটি আসার মুখটি যার প্রান্তর ছিলো
সীমানায় আশার প্রস্থ নিয়ে সীমাহীন মেয়েটি
আসতে চেয়েছিলো গানের আকাশে উড়ে।

পাখিরা উড়েছিলো আগের দিন
সাতটি রঙে যেমন আকাশ আলো
লাল, নীল, আসমানী আনন্দ ভাসা ক‚লে
মেয়েটি চেয়েছিলো আসতে হাওয়া নৌকো বেয়ে
শোরগোল ছিলো, মেঘে কতো ভয় ছিলো
ছিলো সূর্যের আগুন, আনন্দ পোহানো পূর্বাহ্ন
পাখিরা সব উড়েছিলো সিনান চোখ খুলে।

মারকুইস স্ট্রিট কোলকাতা

পথঘাট অচেনা হলে মারকুইস স্ট্রিট
পাখি নেই উলট-পালট কোলকাতা শহরে
দিকভ্রান্ত নদীতে শুধু মারকুইস ঢেউ
সূর্যোদয় বালিকা গ্যাসের গলিতে কিশোরী
নাম লেখা হলো তার শতকের হৃৎপিণ্ড
অন্ধ আলো ভুলে বারবার তাই প্রেম তুমি স্ট্রিট।

দু’দিনের শহরে কতো জায়গায় বসেছি
গ্রাণ্ড হোটেলের মার্কেটে শার্ট কিনতে টাকা হারাইনি
মানিব্যাগ খুলে মনে হলো স্নানের সময়
তোমার হাসিতে ভিজে গেছে সব কাগজ
নিউমার্কেটের মেয়েটি মৃদু বললো, “ক’দিন আছেন?”
উত্তর জানা ছিলো না,
তুমি ছিলে পুরনো মনে, এখনো স্ট্রিটে ব্যাগেজ।

পাসপোর্টে লেখা ছিলো সব
ফেরার দিনটি কেবল অন্ধ ছিলো
কোলকাতা শহর মুখস্থ করে
কি হবে আর গর্ব চাষে
হৃদয়ে মারকুইস, মস্তিষ্ক অব্দি স্ট্রিট
তোমাকে দেখে রঙহীন স্ট্রিটে হাঁটবো অবিরাম।
প্রেম কীর্তনখোলা

কীর্তনখোলাকে বহুবার বলেছি,
উত্তর মেলেনি।
বলেছে, দুঃখ দিও না
অবহেলা করো না
এমন প্রশ্নে আমার
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে
ঢেউয়ের স্বপ্ন অধোমুখ হয়।

মন আমারই বেদনার বৃক্ষ
ভাবনা তরুপল্লবে কেন সাজো?
তোমার স্রোতে অন্ধকার প্রিয়
অপেক্ষা সাতকাহন তার
বাতাসে অভিমান করো না
প্রবাহ কথা ফেলে এসো না
কীর্তনখোলা
ওকে ভীষণ ভালোবাসি
সব কথা লিখে পাঠিয়ে দিবো।

আচ্ছা, তবু ভালো থেকো,
এমন কে ভালোবাসে?
একলা জল নিয়ে বসে থাকে।

তোমাকে না-দেখা দশ লক্ষ মুহূর্ত

তোমাকে না-দেখা দশ লক্ষ মুহূর্ত
পানিপথের বারুদের মতো
বিধ্বংসী হাহাকারে ঝুলে থাকে
জলে, স্থলে, শূন্যে।

সাগর ফণায় উদ্যত বাতাস
ছুটে আসে টাইফুন বেগে
ছিন্নভিন্ন করে আমার মন।

তোমাকে না-দেখা দশ লক্ষ মুহূর্তে
হোলি উৎসব রঙ এক লহমায়
কালোপর্দা ফেলে দৃশ্যঅন্ধ চোখে
যখন ব্যাঘ্র হুঙ্কারে তছনছ খাঁচা।

ফা-হিয়েনকে বিহার প্রদেশে থামিয়ে
বলি, ‘দেখেছেন আমার দশ লক্ষ?’
ধূ-ধূ বালিচরে ছুটে যাই
এক আজলা জলের জন্য।

গোলাপের কাছে গিয়ে বলি
সুবাস ফিরিয়ে নাও
আমাকে দাও দশ লক্ষ মুহূর্ত
যেখানে একটিই প্রাণ
তাকিয়ে থাকে আমার অগ্নি দেহে।

নদীটা এখন নেই

যতো যোজন ঘুরে চোখ প্রেম
শুকনো পাতার সুরে জল সেই চোখ
ভ্রষ্ট স্মৃতি ফেলে আসা নষ্ট প্রান্তরে
সন্ধা ভিড় ভাঙলে সকাল তার ছবি
জেগে ওঠা ঘুমে স্বপ্ন
নদীর মতো স্রোত
নদীটা এখন নেই
আঁচলে বাঁধা আছে মায়া।

নৌকো ছিলো, ভাটিয়ালি ছিলো
স্নান ছিলো, এখন নেই
দূর বাতাসে ভিজে
দু’ক‚লে দুলছে অনেক কথা
মাটিতে চিহ্ন লেপ্টে
হাওয়ায় ভেসে আছে নদী
বাতাস গানে উপচে পড়া কথা
নিত্য নদীতে বইছে
নদীটা আছে কোথায় যেনো আছে
দৃষ্টিঅন্ধ ফাঁকে অনাদরে মিশে।

বাক্য শেষে যতি চিহ্ন
কথার পরে অদৃশ্য নিরবতা
গোলাপ ঝরে মৃত্তিকা
মৃত্তিকায় ফুল সৌরভ
দৃশ্য কালে নিঃশেষ
সঞ্চয় প্রেমে অনিঃশেষ
নদীটা এখন নেই
সময় আছে পৃথিবীর রঙ আছে
নদীটা এখন নেই
সঞ্চয় আছে ভালোবাসা আছে।

অঙ্গুরীয় অনামিকা

কেনো নয় শিমুল?
কেনো নয় ফিরে আসা?
সূর্য গলে আলো তাপ
পৃথিবী ফুঁড়ে সবুজ প্রেম
জন্মান্ধ আগুন পৃথিব্তীণ,
ভালোবাসায় আলো ভিজিয়ে
আমার আলো তাপে
অঙ্গুরীয় অনামিকা তুমি।

কেনো নয় দগ্ধদহন?
কেনো নয় শ্রাবণ বৃষ্টি তৃণভূম?
ঝরুক বারি যত অঝোরে
আলিঙ্গন থাক খোলা জলে।

কেনো বারণ পৌষ বরণ?
ভরা ভাদরের আদরে?
আঙুলে আবদ্ধ রেখেছি
একটি অঙ্গুরীয়, তুমিই প্রেম
অনামিকা নামে ভালোবেসেছি
এখনো নাম অনামিকা।

অনামিকা আঙুলে রেখেছি
একটি অঙ্গুরীয় অনামিকা নামেই
জাগরণ শেষে ঘুম ফেরে
অঙ্গুরীয় অপলক জাগে
তুমি আছো আঙুলে
অঞ্চল বিলুপ্ত পথ জেগে
ঘুরে ঘুরে ফিরে আসা এক নাম।