অনলাইন ডেস্ক : জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে সরাতেই সরকার চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর নেই। তারপরও বিএনপি সেখানে গিয়ে বিশৃঙ্খলা করে। বিএনপি জানে না সেখানে (চন্দ্রিমা উদ্যানে) জিয়া নাই, জিয়ার লাশ নাই? তাহলে এত নাটক করে কেন? খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়া কি কখনো তার লাশ দেখেছে? ওখানে একটা বাক্স নিয়ে এসেছিল। সেখানে গিয়ে মারামারি ধস্তাধস্তি কেন? মারামারি ধস্তাধস্তির অভ্যাস তাদের এখনো যায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, লাশ দাফন হয়েছে, লাখ লাখ লোক জানাজায় শরিক হয়েছে। তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ (এইচএম এরশাদ) সাহেব নিজে তার (প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান) বডি ক্যারি (বহন) করেছেন। ইট ইজ এ ওপেন ক্লিয়ার, ক্রিস্টাল ক্লিয়ার- এর চেয়ে বড় সত্য কিছু আর হতে পারে না। এখন এই ধরনের ইস্যুগুলো নিয়ে আসা মানে তারা যে কতটা রাজনীতি শূন্য হয়ে গেছে, দেউলিয়া হয়ে গেছে রাজনীতিতে- এটা তার প্রমাণ। আজকে আপনাদেরকে দিয়ে আমাদের কাছে প্রশ্ন করিয়ে সেই কথাগুলোকে আবার সামনে নিয়ে আসা এটা হচ্ছে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা প্রচেষ্টা মাত্র।
প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মূল জায়গাটায় আসে না কেন তারা (সরকার)? যে নির্বাচনটা কীভাবে করবেন, আপনি গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে শক্তিশালী করবেন, কীভাবে মানুষের অধিকারগুলো, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবেন- সেই কথাগুলোর উত্তর দেয় না তারা (সরকার)।
ফখরুল বলেন, গতকাল (শুক্রবার) আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জেনারেল ওবায়দুর কাদের সাহেব বলেছেন, আমি নাকি তার কথার উত্তর দেই না। উনি কি পত্রিকা পড়েন? তার প্রত্যেকটা কথার উত্তর শুধু না, সঠিক সত্যকে তুলে ধরি সবসময়। উনি গতকাল বলেছেন, ছবি দেখাতে। কী বলব বলেন এখন? এসব কথার জবাব দিতে গেলে মানহানি মামলা করবেন। সেই ধরনের কথা আমাদের রুচিতে বাধে যে ছবি দেখাতে বলেন, অমুক করতে বলেন। এটা তো কাজ না, পয়েন্ট না। কাম ডাউন। করোনাতে কী করেছেন সেটা বলুন, আপনি মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য কী করেছেন সেটা বলুন, দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য কী করেছেন সেটা বলুন, আজকে কেন মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্র হচ্ছে সেই কথা বলুন। আরেকদিকে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি মানুষ ধনী থেকে ধনী হচ্ছে, বড় লোক থেকে বড় লোক হচ্ছে, বিদেশে টাকা পাচার করছে। সমাজে এমন একটা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে, অসামাজিক কার্যকলাপে ছেয়ে গেছে। কোনো কিছু কাজ করছে না এখানে। ইট ইজ গোয়িং টু দ্য ফেইল্ড স্টেট।
চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবর প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ধর্মপ্রাণ মানুষের মনের ভেতরে আঘাত এসেছে যে, জিয়াউর রহমান সাহেবের সমাধি সম্পর্কে যেসব কথা তারা বলেছে- এটা সাধারণ মানুষ কখনো ভালোভাবে নেয়নি। জিয়াউর রহমান তো এদেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে আছেন, মনের মধ্যে আছেন। আপনারা যদি কখনো শবে বরাতের রাতে ওদিকে (চন্দ্রিমা উদ্যান) যান দেখবেন যে, সাধারণ মানুষরা এসে তার সমাধি জিয়ারত করছে।
অযথা উনাকে (জিয়াউর রহমান) নিয়ে টানা, শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে টানা– এগুলো আমরা করতে চাই না। উনারা আমাদের সবার শ্রদ্বেয় নেতা। তাদের সেই জায়গাতেই রাখা উচিত। এটা জাতির জন্য, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য খুবই দুঃখজনক যে, এদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যাদের অবদান আছে, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতা তাদের সম্পর্কে এই সমস্ত নোংরা কথা যখন বলা হয় তখন বুঝা যায় তারা কতটা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে, তাদের কোনো রাজনীতি নেই।
গতকাল (শুক্রবার) জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যকে ‘রুচিহীন’ মিথ্যাচার অভিহিত করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় বলে মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন।