কবি নিশাত জাহান রানার কবিতার এক উদ্ভাসিত আলো আমাদের মনোজগতকে অবিরাম আলোকিত করে চলে। এই আলো আমাদের হৃদয় আর মস্তিষ্কের আবেগ আর চিন্তাকে নিয়ে এক অদ্ভুত খেলায় মেতে উঠে। এ খেলায় তিনি খুব সহজেই তাঁর কবিতায় হাজির করাতে পারেন স্রষ্টা আর সৃষ্টি নিয়ে আমাদের বোধ আর প্রশ্নকে। কবি নিশাত জাহান রানা বলে চলেন আমাদের জীবনের কথা, জীবন অনুভবের কথা আর জীবনের ভালোবাসার কথা। তাঁর কবিতার শব্দে এক চমত্কার স্রোত আছে যা আমাদের প্রতিনিয়ত প্রাণিত করে কবিতার সৌন্দর্যের আস্বাদ নিয়ে কবিতা প্রেমে বুদ হতে।
কবি নিশাত জাহান রানা খুবই সরল ও সাবলীলভাবে তার চির চেনা জগতটাকে কবিতার শব্দ ব্যঞ্জনায় পাঠকের কানে পৌঁছে দেন। কবির কবিতার সাংগীতিক সুর পাঠক একটু চোখ বন্ধ করলেই শুনতে পান আর সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন এ সুরের ব্যপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে দিগন্তরেখায়। ফলে তাঁর কবিতা এক অদ্ভুত প্রাঞ্জল গতিময়তায় ঋদ্ধ, যা খুব সহজেই পাঠককে নিবিষ্ঠ করে ফেলে কবিতার প্রতিটি পংতিতে। পাঠককে নিজের মনের আয়নায় দাঁড় করানোর শৈলীতে সমৃদ্ধ কবি তার কাব্যিক আলোর রেখায় অবলীলায় বলে দেন পাঠকের বলতে না পারা সব কথা।
মনিস রফিক

নিশাত জাহান রানার কাব্যগ্রন্থ ‘তুমি ধ্বংস তুমি উদ্ধার’ প্রকাশিত হয় ২০০২ সালে। অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- অঞ্জলিভাষা (স্মৃতিকথা); আলোর নগর ছায়ার নগর (ভ্রমণ); আমাদের সৌরজগত (বিজ্ঞান); জেন্ডারকোষ ইত্যাদি। নিশাত জাহান রানার উদ্যোগে চলছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সাধারণ নাগরিকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বয়ান সংগ্রহের নিয়মিত কার্যক্রম জনগল্প ’৭১। ইতিমধ্যে সংগৃহীত দলিলের ১ম ও ২য় খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে।
নিশাত জাহান তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন ১৯৯৮ সালে। তাঁর তৈরি তথ্যচিত্রের মধ্যে রয়েছে চেতনায় একুশে: একটি গানের ইতিহাস; ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জীবন নিয়ে ফিনিক্স, বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী কলিম শরাফীর জীবনচিত্র পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া; বিশিষ্ট সাংবাদিক সন্তোষগুপ্তের জীবনচিত্র মাস্টারমশাই, কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জীবনচিত্র একুশের প্রথম কবি: মাহবুব উল আলম চৌধুরী ইত্যাদি।
সাংবাদিকতা পেশায় নিশাত জাহান রানার কর্মজীবন শুরু। পরে দীর্ঘদিন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনে অধিকার, জেন্ডার সমতা ও শিক্ষা সেক্টরে কাজ করেন। ২০০১ সালে শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার প্লাটফর্ম হিসেবে তিনি গড়ে তোলেন যুক্ত। প্রকাশনা সংস্থা হিসেবেও যুক্ত বিশিষ্টতা অর্জন করেছে। নিশাত জাহান রানা আবৃত্তি সংগঠন স্বনন-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
নিশাত জাহান রানার জন্ম: ৩ মে ১৯৬৩

ঈশ্বর নিখোঁজ

নিষ্প্রাণ আয়নাল
শুয়ে ছিলো সমুদ্র কিনারে
ঈশ্বর দেখেনি।

জেরুজালেমের আকাশে
গুলি ছোটে অগণন
ঈশ্বর দেখেনি।

ফ্লয়েডের নিঃশ্বাস
সাদা হাঁটু কেড়ে নেয়
ঈশ্বর দেখেনি।

ফেলানি ও ছেঁড়া জামা
কাঁটাতারে ঝুলে ছিলো
ঈশ্বর দেখেনি।

ঈশ্বর দেখেনি
কত দিন কত রাত
করোনার অভিঘাত
মানুষকে নিয়ে গেল
কাছে থেকে দূর।

ঈশ্বর দেখেনি
ধর্ম অধর্ম হয়ে
ধীরে ধীরে কেড়ে নিল
প্রান্তিক হৃদয়ের
ছন্দ ও সুর।

শর্ত

কোনো অভিলাষ নেই তোমার কাছে
রক্তে বিদ্যুত তরঙ্গ ছাড়া
কোনো অভিলাষ রেখোনা আমার কাছে
রক্তে বিদ্যুত তরঙ্গ ছাড়া।

কোনো বাসনা নেই তোমার কাছে
রক্তিম উষ্ণ করতল ছাড়া
কোনো বাসনা রেখোনা আমার কাছে
রক্তিম উষ্ণ করতল ছাড়া।

কোনো আকাক্সক্ষা নেই তোমার কাছে
নিদ্রাহীন অস্থিরতা ছাড়া
কোনো আকাক্সক্ষা রেখোনা আমার কাছে
নিদ্রাহীন অস্থিরতা ছাড়া।

কোনো অনুযোগ নেই তোমার কাছে
বিস্ময় ও বিপন্নতা ছাড়া
কোনো অনুযোগ রেখোনা আমার কাছে
বিস্ময় ও বিপন্নতা ছাড়া।

কোনো প্রার্থনা নেই তোমার কাছে
কেবল ভালোবাসা ছাড়া
কোনো প্রার্থনা রেখোনা আমার কাছে
কেবল ভালোবাসা ছাড়া।

আমার কেবলই বিলম্ব হয়ে যায়

তোমাদের ভ্রমণ যেখানে শেষ হয় আমার যাত্রা সেখানেই শুরু।
তোমরা যখন ছুটে গেছো যোজন যোজন দূর মাঠের শেষপ্রান্তে আলোর কাছে
সন্ধ্যার আকাশে আমি তখনই কেবল অশ্রু নামক নক্ষত্রের সন্ধান শুরু করেছিলাম
ঘাসের ভেতর চোখ ডুবিয়ে আলোকিত নীল ফুলটিকে চুম্বনপ্রয়াসী হয়েছিলাম
নিপুণ গোয়েন্দার মত রাতের পাখির অশ্রুত একাকী গানে কান পেতেছিলাম।
আমার কেবলই কি বিলম্ব হয়ে যায়!

তোমাদের অর্জন যেখানে শেষ হয় আমার প্রাপ্তি সেখানেই শুরু।
ত্রস্ত পথে যেতে যেতে তোমরা কুড়িয়ে নিয়েছিলে পাথরে শাণিত হিংস্র তরবারী
এবং বাঁশের ঝুড়ি ভরেছিলে ফল পাকুড় শষ্প আর শেকলে বাঁধা বরাহ ও কুক্কুটে
আমি তো তখন আত্মবিচ্ছেদের অনুভবে মায়া বুনে দেব বলে মৃত্তিকাসংলগ্ন হয়েছি
খইরঙা নুড়িটির আলোকবর্ষের ইতিহাস শুনবো বলে ঝর্নার স্ফটিকজলে পা ডুবিয়েছি।
আমার কেবলই কি বিলম্ব হয়ে যায়!

তোমাদের চাওয়া যেখানে শেষ হয় আমার প্রার্থনা সেখানেই শুরু।
চাঁদের গায়ে পা রাখবে বলে তোমরা যখন দ্রুততম যানে সওয়ার হয়েছো
পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ক্রমাগত ছুটে যাচ্ছো অজানা কোনো প্রাণের সন্ধানে
আমি তখন সূর্যালোকে কি করে মায়াবী জ্যোত্স্না রচিত হয় ভেবে উদাস হয়েছি
তোমার আকুল অপেক্ষা কেমন বৃষ্টিধারার স্পর্শ বয়ে আনে বুঝতে চেয়েছি।
আমার কেবলই কি বিলম্ব হয়ে যায়!

লেডি জুলিয়ানা

সমুদ্রে ভেসে যায় লেডি জুলিয়ানা
বুকে করে নিয়ে যায় মৃত্যুদণ্ড-মওকুফ কয়েদি
দুইশত পঁচিশ কিংবা ছাব্বিশ দাগী চিহ্নিত নারী।

কি উপক্ষেণীয় অপরাধে দিলে এমন কঠিন নির্বাসন!
ঔপনিবেশিত মন!

একটি ছোট্ট ফ্রক চুরির মতো কতো দায় নিয়ে
সাগরে ভেসে চলে মেরি ওয়েড অথবা সহযাত্রীগণ
যেন নতুন সংসারে বসত হয় অচিন মহাদেশে!
যেন উপনিবেশ গড়ে ওঠে না ফেরার দেশে!

কে নেয় সিদ্ধান্ত বলো তোমার জীবনের
কে দেয় রায় বলো অন্ধ বিধাতার মতো
আর কত শাস্তি দেবে বলো আদালত
কার নামে কতকাল হবে নিপীড়ণ-
ঈশ্বর, শৃঙ্খলা অথবা অকারণ অপরাধে?

আজো তবে চুরি হবে দফতরের নথি
সক্রেটিস নষ্ট করবে সমাজ-তরুণা
মেরি ওয়েড সাজা পাবে আজো বারবার
দেশে দেশে মহাদেশে নবতর নামে!

সভ্যতার কোন পথ সুস্থ হবে তবে
প্রাকৃতিক স্বাভাবিক সীমারেখা মেনে!
অতিমারি চিহ্ন এঁকে চলে ভিন্ পথে
আমাদের গতায়ত চিরচেনা রথে।

ভুত কিংবা ভবিষ্যত
(শঙ্খ ঘোষ-এর প্রয়াণদিনে)

আমার কোনো ভবিষ্যত নেই
আদিগন্ত জ্বলছে রৌদ্রঝলসিত শিমুল
দগ্ধঘোরে আমি হেঁটে যাচ্ছি যুদ্ধের ময়দানে;
সেখানে লৌহবর্মআটা ভিনগ্রহের প্রাণী কেবলি-
দেশ জাতি প্রজাতি অথবা
মাতা ধরিত্রীর সুরক্ষাপ্রকল্পে
দিনশেষে তারা ফিরে ফিরে যায়
বেহুলার বাসরঘরে।
অপেক্ষায় থাকে তারা
অনিবার্য দংশিত ভবিষ্যতের।
আমিও তাদেরই অংশ হয়ে
হেঁটে যাই দিকচিহ্নহীন কবন্ধ-শরীর এক।
চলমান ভবিষ্যতে আমার মগজ ছিটকে পড়ে
খোলা বাজারে,
আমার হৃদয়ের উদভ্রান্ত শান্তিকল্যাণ
ভাগ করে নেয় বহুজাতিক পণ্যব্যবসায়ী।
আর আমার স্বপ্নগুলি খেলা করে
তুমুল নৃত্যপরায়ণ
গবেষণাগারের উদ্বাহু ভুতেদের স্ট্রিপটিজে।
আজ তবে সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত
আমার ভুত কিংবা ভবিষ্যত
মেফিস্টো অথবা আযাযিলের
সামূহিক জাগলারি মূলত!!
২১ এপ্রিল ২০২১

পরিচয়হীন

মধ্যরাতে যখন হোরেসিও শুনতে পেলো পর্বান্তরের ঘন্টাধ্বনি
আর চেনা-অচেনা পৃথিবীর পারাপার-তোরণে দ্বিধাগ্রস্ত হ্যামলেট,
তুমি আমাকে উপস্থিত করলে-
এক চেনা-অচেনা অমরাবতী অথবা ইন্দ্রপ্রস্থের সামনে,
যার প্রথম দরজার পারে হেফাস্টাস-নির্মিত উদ্যানে সহস্র রঙ-ঝর্ণার খেলা
রক্তস্রোত হয়ে ভেসে যাচ্ছে অলকানন্দার অনিবার্য স্রোতে
দূরে বহু দূরে ভোরের তারা হয়ে লুসিফার বসে আছে সিংহাসনে
ইশারার ভাষায় অব্যাহত নির্দেশ রচিত হচ্ছে মেফিস্টোফিলিসের উদ্দেশে।

প্রাসাদের দ্বিতীয় মহলে সহস্র পেঁচা-বাদুড়ের ডানা ঝাপটানি তখন
আলো ফুটে ওঠার প্রাক-লগ্নের তীব্র প্রতিরোধ তাদের চিলচিত্কারে
আড়ালের বিমূর্ত সন্ধানে কেঁপে কেঁপে উঠছে ত্রস্ত নিশিপদ্মের বুক।

অভূতপূর্ব তৃতীয় নগরে প্লাতা নদীর ধারে উপবিষ্ট অনন্ত-যৌবন পিয়াসী যযাতি
তার আকাঙ্খার শরীর বেয়ে উঠে আসছে শ্বাপদ সরীসৃপ আর উজ্জ্বল অগ্নিশিখা
গলে গলে পড়ছে স্বর্ণরেণু আর হীরকখন্ডের মিলিত বিভার প্রদর্শনী।

প্রাসাদের চতুর্থ মহলে অবলিভিয়নের প্রান্তে দাঁড়িয়ে অনুসন্ধানী যে আবছায়া
তার পর্বতসমান বাদামীবর্ণ দেহ, ভুবনপ্রসারী বাহু আর মাছরাঙা চোখে
এফোঁড় ওফোঁড় হওয়ার বেদনায় ভিজে যেতে যেতে সম্বিত ফিরে এলে ভাবি
কে আমি! কি আমার পরিচয়!

আত্মবিচ্ছেদ

এবং তুমিও আমাকে পরিত্যাগ করলে ঈশ্বর!

কত নদী সমুদ্র দু’হাতে প্রবল সরিয়ে
কত পর্বত রাঢ়বঙ্গের মাটিতে রক্তচিহ্ন এঁকে
কত শ্যেনচক্ষু ঈগলথাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে
কত আকাশপথে মেঘের বিমান চালিয়ে
তুমি এলে এই শূণ্যতার সভায়।

এই নদীতীরবর্তী বিস্তীর্ণ মখমল ঘাসে
এই অসীম নীলের ছাউনিঢাকা প্রান্তরে
তাবু টানালে তুমি কি সুনিপুণ দক্ষতায়!

হলুদ কমলা ফুলে ঝলসে উঠলো দিকদিগন্ত
এলো আকাশচারি পাখি ঘন তরুপল্লবে
প্রাণীর আদর এলো আর মীনের গভীর সংগম
গড়ে উঠলো আদিম বসতি এক পুনরায়
এভাবেই তো কেটে গেল কল্পান্ত কয়েক।

ক্লান্তি নামে তবু অলক্ষ্য সূর্যছায়ায়
অতিমারি ধেয়ে আসে সমুদ্রে নভোনীলে
ফুসফুস ভরে ওঠে কার্বনে-করোনায়
মিলিত হৃদয় ক্রমে বহুধাবিভক্ত হয়
আত্মবিচ্ছেদের অনিবার্য স্বভাব
নেমে আসে স্বর্গের আদিম পথ বেয়ে।

ফসলভরা এই মাঠ ছেড়ে হে নির্জন বিধাতা
তুমি তবে চলে যাও দূর অজানা অন্ধকারে
তুমিও পরিত্যাগ করো তবে ঈশ্বর!
২৭/০২/২১

বসন্ত ফাল্গুন

ভালোবাসায় যখন মরে যেতে ইচ্ছে করে
তখন কি হৃদয়ের পুনর্জন্ম হয়!
খোলস বদল ক’রে যেমন উদ্ভাসিত হয় বৃক্ষ!

ভালোবাসায় যখন ভেসে যেতে ইচ্ছে করে
তখন কি তুলার বীজ হাওয়ায় উড়ে যায়
যদিও জানে না কোথাও আছে কিনা আশ্রয়!

ভালোবাসায় যখন ডুবে যেতে ইচ্ছে করে
তখন কি মিছিলের বুকে গুলি এসে লাগে
উছলে ওঠে এক অপ্রস্তুত রক্তধারা অকস্মাত!
২১/০২/২১

অগ্নি

কেবলই আগুনের দিকে ডাকো আমাকে
লেলিহান কমলা শিখার রূপে অন্ধ হয়ে যাই
আকাশে বাতাসে বাজে বাঁশী
শিরায় ধমণীতে নাচে তরঙ্গ
ভস্ম হওয়ার দুর্মর বাসনা
শীর্ষ নীলে বিলীন হতে চায়।
অগ্নি, তুমি ধ্বংস।

কেবলই আগুনের দিকে ডাকো আমাকে
কম্পিত শিখাকে বাঁচাতে ত্রস্ত দু’হাত বাড়াই
পৃথিবীর পথে প্রান্তরে গুহা কন্দরে
ছড়ানো অন্ধকার সরাই
উজানে প্রাণপণ আলোর তাপে
আলোকিত হয়ে যায় পথ
অগ্নি, তুমি প্রাণ।

কেবলই আগুনের দিকে ডাকো আমাকে
প্রলম্বিত কাল-সীমায় যজ্ঞের ধূপ-ধুনো জ্বালি
দিগন্তরেখা অবধি বিছানো ছায়ায়
ঘৃতাহুতি চলে অনন্তর
নিঃস্ব হতে হতে পবিত্রতার পথে
ক্রমশ হেঁটে যাই নন্দনসভায়।
অগ্নি, তুমি হোম।

কেবলই আগুনের দিকে ডাকো আমাকে
নির্মম মায়ায় তরল হয়ে উঠি স্বর্ণকার
সমস্ত ক্লেদ ঝরে যায়
প্রত্যন্ত প্রদেশ থেকে
পুড়ে যেতে যেতে খাঁটি হতে থাকি
কৃষ্ণরাত্রির সীমানায়।
অগ্নি, তুমি পবিত্র।

বাঁকবদল

অশ্বারোহী হঠাত থমকে যায়নি
কবিতার নোট বুক হঠাত শুণ্য হয়নি
বাগিচার গোলাপগুলি হঠাত ঝরে পড়েনি
অদৃশ্য কোথাও ইশারা ছিল।

আকাশচারী হঠাত নীড়াশ্রয়ী হয়নি
সবুজ পাতা হঠাত মাটিতে লুটায়নি
ফণী অকস্মাত ফণা তুলে ছোটেনি
অদৃশ্য কোথাও ইশারা ছিল।

আমিই বুঝিনি বাঁকবদলের রীতি।

সময়

কি এসে যায়
যদি লাবণ্য ঝরে যায় ধুলায়!
যদি এ প্রত্নশরীর
ইতিহাস বুকে নিয়ে
পুনরায় জেগে ওঠে
রাতের আকাশে!

যদি শ্রুতি হারায় ডেসিবল-সীমা!
যদি এ চোখের আলো
একদিন জ্বলে ওঠে
গভীর অরণ্যে!
কি এসে যায়!

তুমি তবু থেকে যাবে
তর্জনী আর মধ্যমার
বৈদ্যুতিন সংস্পর্শে।
জল হয়ে ছুঁয়ে যাবে
নৃত্যপর ফুলগুলি
শব্দের অনুপম খেলায়।

চিহ্ন-কথা

অশ্রু, কত যত্নে তোমাকে
চোখের পেয়ালায় ধারণ করেছি
তবু কেন এমন অস্থির তুমি
কেবলই উপচে ওঠো!

অশ্রু, কত আদরে তোমাকে
হৃদয় পাত্রে সংযত রেখেছি
তবু কেন এত আর্দ্রতাপ্রবণ তুমি
কেবলই বৃষ্টিতে ভেজো!

অশ্রু এতো ঢেউ দিওনা প্রাণে
এতো তরংগ তুলো না জলে
শুন্যের ভেতরে এই তরংগমালা
কেবলই নক্ষত্রের ফাঁস বুনে যায়।

চুম্বনচিহ্ন রেখে যায় আমার গ্রীবায়
বৃক্ষদেহে বয়সের অবিরাম বৃত্তের ভাষায়।