ফরিদুর রহমান : অশ্বারোহী তাসমিনার সাথে মিউনিখের উৎসব শেষ করেই আমরা চলে যবো মুনশেনগ্লাডবাখে। ষোল বছর আগে যখন কোলোন থেকে এই ছোট্ট শহরে এসে প্রথমবারের মতো একটা রাত কাটিয়ে গিয়েছিলাম তখন স্বপ্নেও ভাবিনি এই শহরে আবার কখনো আসার প্রয়োজন বা সুযোগ হবে। সেবার ডয়েচ ভ্যালার প্রশিক্ষণের সূত্রে কোলোনে এসে আমার এক অডিও-ভিজ্যুয়ালের ছাত্রীর আমন্ত্রণে সেই শহরে যাওয়া। এখন কন্যা যেহেতেু পড়াশোনার কারণে সেখানে অবস্থানে করছে, সেক্ষেত্রে জার্মানিতে এসে মুনশেনগ্লাডবাখে না যাওয়ার কোনো কারণ নেই। মেয়েকে মেইলে আমাদের যাবার ট্রেনের সময় সূচি জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু মোবাইল ফোনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগে অভ্যস্ত মানুষের হাতে একটা ফোন না থাকলে অস্বস্তির শেষ থাকে না। মিউনিখে পৌঁছে প্রথম দিন থেকেই স্থানীয় মোবাইল নেটওয়ার্কের একটা সিম কিনে নেবো ভাবছিলাম। কিন্তু ছবি দেখা এবং সেমিনারের ব্যস্ততা ছাড়াও উইলির অতিথিশালা পর্যন্ত যাতায়াতের কারণে সময় করে উঠতে পারিনি।
ঘরের কাছের আলদি ডিপার্টমেন্ট স্টোর থেকে আগের দিনই একটা সিম কিনে এনেছিলাম, কিন্তু এ্যাক্টিভেট করতে পারিনি। রেজিস্ট্রেশন না করে আগের মতো সিম চালু করার কোনো উপায় নেই। অনলাইনে সেই রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পুরণ করে সাবমিট করা আমার সাধ্যের বাইরে। ব্রেকফাস্টের পরে রিজেন্ট হোটেলের ফ্রন্টডেস্কের ছেলেটাকে বলতেই সে বেশ আন্তরিকতার সাথে অনলাইনে আমার নাম ঠিকানা এবং পাসপোর্ট নম্বর ছাড়াও নানা তথ্য দিয়ে ফর্ম পুরণ করে সাবমিট করে দিল। তারপরে হ্যান্ডসেটে সিম ঢুকিয়ে বলে দিল চালু হতে আরো কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। তা তো লাগতেই পারে। তবে এবারে একটা জীবন্ত মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে সকালের অধিবেশনের ইনসিগনিয়া বেজে ওঠার আগেই ব্রাইসার রুন্ডফুকংকে পৌঁছে গেলাম।
দিন শুরু হলো মঙ্গোলিয়ার ‘সুপারম্যান গাননা’ ছবিটি দিয়ে। ছয় বছর বয়সের গাননা মঙ্গোলিয়ার যাযাবর জীবনে আর সকল শিশুর মতোই পরিবারে বড়দের কাজে সাহায্য করে। নিজেকে সে সুপারম্যান হিসাবে কল্পনা করতে ভালোবাসে। মনে করে কল্পলোকের শক্তি দিয়ে ছাগল পালনের কাজে সে আরো দক্ষতার সাথে বাবাকে সাহায্য করতে পারবে। একটা ছোট বোনের খুব সখ ছিল তার। একদিন সত্যি সত্যিই তার মা হাসপাতাল থেকে একটা ছোট্ট শিশু নিয়ে বাড়ি ফেরে। ঘুমিয়ে থাকার কারণে হাসপাতালে যেতে পারেনি বলে তার আফসোস হয়। অবশ্য খুব শিগগিরই নতুন ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গাননা। নন-ফিকশনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নরওয়ে এনআরকে সুপার-এর ‘নাইস ওয়ার্ক’ এবং জাপানের এনএইচকের ‘মিমিক্রিস’ দুটোই ছিল টেলিভিশন অনুষ্ঠান।
উৎসবে প্রিজনেস হার্ট প্রাইজ বলে একটা পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে। কোনো ছবি বা ছবির কোনো একটি চরিত্র যদি দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায় তবে যে কোনো নিবন্ধিত দর্শক তার হার্ট প্রাইজের জন্যে একটি অনুষ্ঠান বা ছবিকে ভোট দিতে পারেন। এই ভোটদানের নিয়মটিও বেশ অভিনব। নির্মাতা, প্রযোজক, কলাকুশলী এবং দর্শক প্রতিনিধিসহ প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে দেয়া পরিচয় পত্রে একটি ছোট্ট লাল রঙের স্টিকার সংযুক্ত থাকে। প্রজেকশন হলের বাইরের লবিতে বড় আকারের সময়সূচির বোর্ডে ছবির নামের পাশে আইডি কার্ড থেকে হার্ট স্টিকারটা তুলে লাগিয়ে দিলেই গুণতিতে একটা ভোট যুক্ত হয়ে যায়। সাধারণত ফেস্টিভ্যালের শেষ দিনে সবকিছু দেখা শেষ করে এই ভোট দেয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কারণ হৃদয় খুলে কাউকে দিয়ে দেয়ার পরে যদি মনে হয় আর কেউ আরো বেশি করে হৃদয় ছুঁয়ে গেছে তাহলে তখন আার করার কিছু থাকে না। বিকেলে দেখলাম একদিন বাকি থাকতেই কেউ কেউ তাদের হৃদয় উজাড় করে দিয়ে দিয়েছেন। খুব বেশি না হলেও আমাদের তাসমিনার পাশে এক এক করে পাঁচটি স্টিকার আঁটা হয়ে গেছে। এই সময় কানাডা থেকে আসা একজন পরিচালক আমাদের প্রযোজক মাহবুবা বেগম হেনাকে পাকড়াও করে বললেন, ‘আমি তোমাকেই খুঁজছিলাম। তোমার উপস্থিতিতেই আমি আমার হার্টটা তাসমিনাকে দিতে চাই।’
তখন পর্যন্ত হার্টের সংগ্রহ সবচেয়ে বেশি ছিল নেদারল্যান্ডসের নন-ফিকশন ‘হাউ কাই টার্নড ইনটু নিলস’-এর। তৃতীয় লিঙ্গের শিশু কাই বাজি পোড়ানো, ঘুড়ি ওড়ানো, দৌড়ঝাঁপ এবং ফুটবল অনুশীলনসহ যে সব খেলাধুলা নিয়ে মেতে ছিল সবগুলোই ছেলেদের খেলা। কিন্তু তার শরীরটা মেয়েদের। এক সময় তার নতুন স্কুলের শিক্ষক এবং বাবা মায়ের সহযোগিতায় সে এক রূপান্তরিত নতুন জীবন লাভ করে এবং তার নাম হয় নিলস। একটি শিশুর শারীরিক সমস্যার সাথে সাথে তার মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা নিয়ে নির্মিত এই প্রামাণ্যচিত্রটি হার্ট প্রাইজ না পেলেও জিতে নিয়েছে ১১-১৫ বিভাগের শ্রেষ্ঠ নন-ফিকশন ছবির পুরস্কারসহ অন্যতম জেন্ডার ইকুইট পুরস্কার।
দর্শকের ভোটে এবং জুরিদের বিচারে শ্রেষ্ঠ এবং রানার্সআপ নির্বাচন ছাড়াও হার্ট প্রাইজ, জেন্ডার ইকুইট প্রাই্জ, থিম প্রাইজ এবং একটিইউনিসেফ পুরস্কার ছাড়াও প্রিজনেস ইন্টারন্যাশনালে টেলিভিশন অনুষ্ঠান, প্রামাণ্যচিত্র ও ছোটদের চলচ্চিত্রের জন্যে বিভিন্ন বিভাগে প্রায় গোটা কুড়ি পুরস্কার দেয়া হয়। এ সব পুরস্কারের মধ্যে একটি ‘চিল্ড্রেন্স জুরি এ্যাওয়ার্ড’। শুধুমাত্র শিশুদের নিয়ে একটা জুরি কমিটি তৈরি করে কয়েকদিন ধরে তাদের সব ছবি এবং অনুষ্ঠান দেখাবার ব্যবস্থা করা হয়। তাদের অলোচনা এবং সুপারিশের ভিত্তিতে দেয়া হয় ‘চিল্ড্রেন্স জুরি পুরস্কার।’ চূড়ান্ত ঘোষণার দিন জেনেছিলাম ‘অশ্বারোহী তাসমিনা’ শিশু জুরিদের বিচারে প্রাথমিক নির্বাচনের তিনটি ছবির মধ্যে থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছিল একজন শিশু বিচারকের আপত্তির কারণে। তার কথা ছিল, ‘এই প্রামাণ্যচিত্রে একটি পশুর প্রতি অমানবিক আচরণ করা হয়েছে।’ মডারেটরদের একজন বলেছিলেন, ‘হর্সগার্লের শেষ প্রতিযোগিতার দৃশ্যে মেয়েটি যে ঘোড়ার পিঠে চাবুক মেরে তাকে তাড়িয়ে নিয়ে যা”িছল, এই দৃশ্যটি চিল্ড্রেন জুরিদের পছন্দ হয়নি।’ আমি বিস্মিত হলেও ভেবে দেখেছি, শিশু বিচারকদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
আজ আবার লাঞ্চ করেছি ফেস্টিভ্যালের ফুড কর্নারে। বলে রাখা ভালো ব্রেকফাট হোটেলে এবং ডিনারের আয়োজন রাতের পার্টিতে থাকলেও দুপুরে লাঞ্চের ব্যবস্থাটা নিজ দায়িত্বেই করতে হয়। সে ক্ষেত্রে অনেকেই বাইরে চলে যান, কাছাকাছি ছোট বড় রেস্তোরা, কফিশপ এবং ফাস্টফুডের দোকানের কোনো অভাব নেই। তবে শুধু দুপুরের খাবার খেতে বাইরে যেতে ইচ্ছে না করলে ফেস্টিভ্যাল চত্বরের ভেতরেই ‘বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্যে’ লাঞ্চ সেরে ফেলা যায়।
লাঞ্চের পরপরই ইয়ান উইলিয়াম বুল্টের সাথে একটু আলোচনায় বসলাম। বিষয়টা ফেস্টিভ্যাল বা ডকুমেন্টারি নিয়ে নয়। তিনি ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের শিশু ও যুব শাখার প্রধান সেই কারণেই তার সাথে কথা বলা। বাংলাদেশে ফ্রি প্রেসের ‘কিডস নিউজ নেটওয়ার্ক’ যেহেতু আমার নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান, তাই এর ভেতরের অব্যবস্থা এবং দুর্নীতি আমার নিজের গায়েই এসে লাগে। বিশেষ করে বর্তমানে আমার সময়ে রিক্রুট করা যোগ্য কর্মীদের শুধুমাত্র আমার প্রতি বিদ্বেষবশত চাকুরিচ্যুত করারটা শুধু অনৈতিক নয় বরং প্রতিহিংসার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। ইয়ান উইলিয়াম বললেন, ‘তোমার ফ্রি প্রেস ছেড়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য দুঃখজনক ব্যাপার। তবে বাংলাদেশের বিষয়টা পুরোপুরি স্থানীয় সংস্থার এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার।’ বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানই যেমন দ্রুত গড়ে ওঠে, তেমনি পদ-পদবি এবং অর্থ সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে অনেক সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান অকালে মুখ থুবড়ে পড়ে। আমার সাথে ইয়ান উইলিয়ামের আলোচনার মাস ছয়েকের মধ্যেই কবি সাহেবের যোগ্য নেতৃত্ব স্বত্তে¡ও বাংলাদেশে ‘কিডস নিউজ নেটওয়ার্কের ফান্ড’ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
দুপুরের প্রদর্শনীতে আবারও সেই নরওয়ের এনআরকে সুপারের ‘সোফিয়া ফুক্স’ই সম্ভবত দিনেরসবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফিকশন ছবি। আট নয় বছর বয়সের দুই বন্ধু দুঃখ কষ্টে থাকা মানুষের মধ্যে হাসি আনন্দ ছড়িয়ে দেবার এক অসম্ভব অভিযান শুরু করে। বিভিন্ন উত্তেজনা সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে জীবনকে তারা নতুনভাবে দেখতে চায়। তাদের অভিযানের এক পর্যায়ে সোফিয়া ফুক্স নামে এক বৃদ্ধা দুজনকে দুটি ম্যাজিক হেয়ারিং এইড উপহার দেন। এটি কানে দিলে তারা মানুষের প্রকৃত চিন্তা ভাবনার কথা শুনতে পায়। এ বারে দ্বিগুণ উৎসাহে তারা তাদের আনন্দ বিতরণের কাজ চালিয়ে যায়। কিন্তু একদিন সোফিয়ার এক দুষ্টু ভাগনি তাদের ম্যাজিক হেয়ারিং এইডের সন্ধান পায় আর তখনই পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। এই ছবিটি ছাড়াও কয়েকটি অসাধারণ এ্যনিমেশন ছবি শেষ করে বিকেলের দিকে ফেস্টিভ্যাল থেকে বেরিয়েছি।
আমাদের হোটেলটা সেইডল স্ট্রাসের শেষ মাথায়। ফেস্টিভ্যাল ভ্যেনু থেকে বেরিয়ে প্রথমে মার্স স্ট্রাসে ধরে হেঁটে ডাইনে ঘুরে সেইডল স্ট্রাসে ধরে একটু এগোলেই পথে পড়ে শেক্সপিয়ার ক্যাফে এ্যান্ড বার। শেক্সপিয়ারের নামে প্যারিসে বই-পুস্তকের দোকান, দুবাইতে রেস্টুরেন্ট, লন্ডনে এ্যান্টিক শপ এবং শেক্সপিয়ারের জন্মস্থান স্টাটফোর্ট অন আভনে একাধিক হোটেল রেস্টুরেন্ট এবং কফিশপ আছে বলে শুনেছি। কিন্তু এই মহান কবি এবং নাট্যকারের নামে নির্ভেজাল মদ্যপানের আয়োজন পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। দু বছর আগে শুধুমাত্র এই নাম মাহাত্ম্যেই প্রথমবার ঢুকে পড়েছিলাম শেক্সপিয়ারের জগতে। বারের ভেতরে খুব বেশি মানুষের স্থান সংকুলান হয় না বলে বাইরে চেয়ার টেবিল পেতে বসার ব্যবস্থা আছে। তবে এই স্বল্প স্পেসে বিপুল পরিমানে বিচিত্র পানীয়ের আয়োজন সত্যিই বিস্ময়কর। তারচেয়ে বড় বিস্ময় অন্তত পঁচাত্তর বছর বয়সের এক তরুণী, যিনি এই প্রতিষ্ঠানটি চালান। তার বয়স বেড়েছে, কিন্তু তাঁকে আমি বৃদ্ধা বলতে চাই না। মাত্র একজন পুরুষ সহকর্মী সাথে নিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে যে সার্ভিস তিনি দিয়ে যাচ্ছেন তার তুলনা নেই।
বিকেলে হোটেলে ফেরার পথে হেনাকে বললাম, ‘চলো শেক্সপিয়ারে একটা ঘুরে যাওয়া যাক।’
বাইরে ক্যাফে এ্যান্ড বার দেখেই বললো, ‘এখন আর কোথাও বসার দরকার নাই। সোজা হোটেলে ফেরা যাক।’
বললাম, ‘এখন বসবো না। শুধু একজনের সাথে দেখা করবো আর তোমাকে ভেতরটা একটু দেখিয়ে আনবো।’
মিউনিখের তৃষ্ণার্তদের সান্ধ্যকালীন ভিড় তখনো জমতে শুরু করেনি। আমি নিশ্চিত সেই চির তরুণী বৃদ্ধা আমাকে চিনতে পারেননি, তবুও পরিচিতের মতো করেই স্মিত হেসে বললেন, ‘হ্যালো হাউ আর ইউ?’ বললাম, ‘দু বছর পরে মিউনিখে এসে অবধি ভালো আছি। আমার স্ত্রীকে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে নিয়ে এলাম।’
‘খুব ভালো করেছো। তা তোমাদের কী দিতে পারি এখন?’
বললাম,‘এখন ফেস্টিভ্যাল থেকে ফিরছি, পরে কোনো এক সময় আসবো।’ বারের বাউন্টারের পেছনে পতাকা দণ্ডের মতো একটা দীর্ঘ স্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন দেশের কারেন্সি নোট সাজানো। তার মধ্যে গতবারে আমার দেয়া কুড়ি টাকার একটা নোটও শোভা পাচ্ছে। আমি সেটি দেখিয়ে বৃদ্ধাকে বললাম, ‘বাংলাদেশ!’
‘ওহ- ইয়েস বাংলাদেশ!’ পরে কোনো এক সময় আসবো বলে বিদায় নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। সারাদিনের ছবি দেখা অলোচনা সমালোচনার পরে একটু বিরতি না দিলে সন্ধ্যায় পার্টিতে যোগ দেয়া কষ্টকর হবে।
সে দিন রাতের পার্টির নাম ছিল ‘গ্রিল এ্যান্ড চিল নাইট!’ জাপানের জাতীয় টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ প্রতিবারই একটা পর্টির আয়োজন করে, কিন্তু এবারে তাদের অংশগ্রহণ ছিল ঢিলেঢালা। সেই শূন্যস্থানেই যুক্ত হয়েছে শিক কাবাব, চিকেন গ্রিলসহ নানা ধরনের .ঝলসানো মাংসের আইটেম। আর চিল অংশে আইসক্রিমের বিপুল আয়োজন। বাইরের চত্বরে হয়েছে বারবি-কিউয়ের আয়োজন। কয়েকটা অস্থায়ী শেডের নিচে লম্বা টুপিওয়ালা কয়েকজন টার্কিশ শেফ অভ্যস্ত দ্রুত হাতে ‘কেবাব’ তৈরি করে যাচ্ছেন, কিন্তু তারপরেও অপেক্ষার লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে মশলা মাখানো পোড়া মাংসের ঘ্রাণ। আমার মনে হচ্ছিল, এর সাথে খানিকটা কয়লার ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে দিতে পারলে স্বাদ ও গন্ধের একেবারে সঠিক পরিবেশটা পাওয়া যেতো। যারা শুরুতেই কাবার রুটি হাতে পেয়েছিলেন তাদের অনেকেই নানা রঙ রূপের আইসক্রিম দিয়ে তাদের গ্রিল এ্যান্ড চিলের কোটা পূর্ণ করেছেন। ‘গ্রিল এ্যান্ড চিল নাইট’-এর উদ্যোক্তা কারা ছিল তা জানা যায়নি, তবে জাপানিরা ওয়াকওভার দিয়ে আসলে ভালোই করেছে। খাদ্য ও পানীয়ের আয়োজনের দিক থেকে এবারের প্রিজনেসে এই রাতটিই ছিল সেরা। (চলবে…)