সোনা কান্তি বড়ুয়া : বাংলাদেশে পাহাড়ের আদিবাসী স¤প্রদায়ের লোকেরা এমনিতে অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার। আমরা রামুর বৌদ্ধ বিহারে ধ্বংসযজ্ঞ ট্রাজেডি দেখেছি কিন্তু ইসলাম ধর্ম অবমাননার অপবাদে রামুর মুসলমান ফেইসবুকে কোরআনের উপর পদচিহ্ন অপরাধীদের বিচার দেখিনি। ইসলামি ধর্মান্ধগণ লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে কোরআন অবনামনার ছুতোয় আবু ইউনুস শহীদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে আহত এবং পরে খুন করে আগুনে জ্বালিয়েছে! রামুর ইসলামি ধর্মীয় রসের হাঁড়িতে রাজনীতিকে মজাদার করতে মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই রামুর মুসলমান রাজনীতি! বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশী হত্যাযজ্ঞই কি পাকিস্তানী ইসলাম এবং মুসলমান ফেইসবুকে কোরআনের উপর পদচিহ্ন কি বাংলাদেশী ইসলাম?

বৌদ্ধগণ রামুর বৌদ্ধ বিহারে ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি বয়ে বেড়ানোটা বাংলাদেশে কতটা মারাত্মক। একবার মন ভেঙে গেলে ভাঙা মন নিয়ে দিন কাটানোটা কতটা কষ্টকর তা শুধু যার মন ভেঙেছে সেই বুঝতে পারে। এই পৃথিবীতে যাদের একবার মন ভেঙে যায় তারা হয়তো আর ঠিকমতো নিজেকে গুছিয়ে তুলতে পারে না আগের মতোন করে। ইসলামি ধর্মান্ধগণের বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন কিন্তু সবকিছু শেষ হয়ে গেলো না। মৃত্যুর পরবর্তীতেও কিন্তু একটা জীবন আছে। তারা মনে করে যে, মৃত্যুই হয়তো এ ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার উপায়। কিন্তু না এটাতো অস্থায়ী একটা সমাধান মাত্র। এর পরের জীবনটা যে, কতোটা ভয়াবহ হতে পারে তা কি তারা একটাবারও ভেবে দেখে না? মরে গেলাম মানে বেঁচে গেলাম না। কারণ কারো জন্য জীবনটা থেমে থাকে না। হয়তো ডিপ্রেশনের কারণে তারা এটা বুঝতে পারে না।

বাংলাদেশে খাগড়াছড়ির রামগড়ে লংগদুর ডানে আঠারকছড়ায় বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমি ও বিহার বেদখলের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ স¤প্রদায় চুপচাপ থাকতে পারে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সমাবেশে বক্তারা বলেন, লংগদুর আঠারকছড়ায় ধর্মান্ধ রাষ্ট্রবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক বিহার অধ্যক্ষকে হুমকি এবং সেটলার কর্তৃক বিহারের ভূমি ও বিহার বেদখলে রাষ্ট্র বাহিনীর সহযোগিতা পূরো বৌদ্ধ স¤প্রদায়কে উদ্বিগ্ন করেছে। একটি দেশে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপর রাষ্ট্রীয় বাহিনী এরকম আচরণ করতে পারে না। মুসলমান যে মানব, অখন্ড মানব জাতি সেই মানব! বাংলাদেশে ধর্মান্ধ মুসলমান রাজনীতি বৌদ্ধগণকে নিষ্পেষণ করে মুসলমান করা হচ্ছে! ধর্মান্ধ রাষ্ট্রবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী সেটলার কর্তৃক বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে ছিলেন!

এলাকার মুরুব্বী জ্যোতিময় চাকমা বলেন- “দেশে যদি বৌদ্ধ বিহারের ভূমি সুরক্ষিত না হয় তবে আমাদের ভূমির সুরক্ষার নিশ্চয়তা কোথায়? আমরা রামুর ট্রাজেডি দেখেছি কিন্তু অপরাধীদের বিচার দেখিনি। রাষ্ট্রের এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি বারবার অপরাধীদের সাহস দেয়। যদি অপরাধীদের বিচার হতো বারবার এমন ঘটনা ঘটতো না। শুধু বৌদ্ধ বিহারের ভূমি বেদখল নয়, আমাদের ধর্মীয় গুরুদেরও নিরাপত্তা নেই। খাগড়াছড়ির গ্রামে বৌদ্ধ স্মৃতি বৌদ্ধগণকে যেমনি আনন্দিত করতে পারে তেমনি হতাশায় নিমজ্জিত করতে পারে। প্রচন্ডভাবে হতাশায় নিমজ্জিত বৌদ্ধগণ ডিপ্রেশনে ভুগছে! এখন মানুষ বুঝতে পারে আসলেই এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকাটা কতোটা কষ্টকর। পাহাড়ের আদিবাসী স¤প্রদায়ের লোকেরা এমনিতে অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার। একদিকে সা¤প্রদায়িক আক্রমন, অন্যদিকে স্বজাতি কর্তৃক নিপীড়িত ও বিতাড়ন। এত অত্যাচারিত হওয়ার পরে ও জম্ম জম্মান্তরে কল্পনা করেনি, নিজের জমিকে সেটেলারদের নিকট দেওয়ার জন্য আঞ্চলিক দলের লোকেরা নির্দেশ দিবে?

ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে বর্তমান বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া এক সময় বৌদ্ধপ্রধান দেশ ছিলো! ইসলামি রাজনীতি বৌদ্ধধর্ম এবং বৌদ্ধ প্রধান দেশকে অজগরের মতো গিলে ফেলেছে! বাংলাদেশ মুসলমান রাষ্ট্র হয়ে বিক্রমপূর মুন্সীগঞ্জ হয়েছে! বিক্রমপূরের বজ্রযোগীনির রাজপুত্র ছিলেন অতীশ দীপংকর। বাংলাদেশে মুসলমান রাজনীতি বিক্রমপূরকে ধর্মান্ধ মুসলমান বানিয়ে মুন্সীগঞ্জ করা হয়েছে! বাংলাদেশ রাষ্ট্র অমুসলমানগণকে যেভাবে নিপীড়ন চালাচ্ছে তা আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি! আজ বাংলাদেশে মুন্সীগঞ্জে অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থানে “অতীশ দীপংকর বিশ্ববিদ্যালয়” এবং আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ তীর্থস্থান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান পাল সাম্রজ্য আমলের প্রখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন! ধর্মান্ধ মুসলমান রাজনীতির মাফিয়া চক্রে বিক্রমপূর মুন্সীগঞ্জ হলো! বৌদ্ধ পালরাজাগণ বাংলাদেশে চারশত বছর রাজত্ব করেছিলেন এবং ১০৪১ সালে অতীশ দীপংকর তিব্বতে যাবার পর বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম রাতারাতি কোথায় হারিয়ে গেল?
চর্যাপদ পাঠ এবং গবেষণার সময় মনে হবে বাংলা কেবল একটি দেশ নয়, সে একটি সভ্যতা, একটি সংস্কৃতি, একটি অপাপবিদ্ধ জীবনাদর্শ বা জীবন দর্শনের প্রতীক, যার মর্মবাণী হল বিশ্ব মানবতাবাদ “আমার এই ঘর ভাঙিয়াছে যেবা / আমি বাঁধি তার ঘর। / আপন করিতে গুরিয়ে বেড়াই,/ যে মোরে করেছে পর। (কবি জসীম উদ্দীনের লেখা)!

ধর্মান্ধ সেটলার কর্তৃক বিহারের ভূমি ও বিহার বেদখলে রাষ্ট্র বাহিনীর সহযোগিতা পূরো বৌদ্ধ স¤প্রদায়কে উদ্বিগ্ন করেছে। ধর্মান্ধ মুসলমানদের নরহত্যার উল্লাস মানবজাতির ধর্ম নয়!
অমুসলমানগণকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র নিষ্পেষণ করে নিপীড়ন চালাচ্ছে এবং রামগড়ে লংগদুর আর্যগিরি বনবিহারের অধ্যক্ষকে হুমকি ও জমি বেদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ! আদিবাসীর সংবাদ (শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১)! রামগড় প্রতিনিধি। খাগড়াছড়ির রামগড়ে লংগদুর ডানে আঠারকছড়া আর্যগিরি বনবিহারের অধ্যক্ষকে হুমকি, ভীতি প্রদর্শন, সেটলার বাঙালি কর্তৃক বিহার ও ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (১৭ জুলাই ২০২১), দুপুর ১২টার সময়ে রামগড় উপজেলা বৌদ্ধ ধর্মীয় স¤প্রদায় দায়ক-দায়িকাবৃন্দ এই বিক্ষোভের আয়োজন করেন।

কলেজ ছাত্র অসীম চাকমা বলেন, ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্মাবলম্বীদের রাষ্ট্র যেভাবে নিপীড়ন চালাচ্ছে তা আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। ছাত্র সমাজ কিন্তু এসব আর দেখতে চায় না। এর বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ প্রতিরোধ করবেই। তিনি বলেন, একজন সচেতন ছাত্র হিসেবে দাবি জানাতে চাই- লংগদুতে বিহারের ভূমি বেদখলে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার ভূমি বেদখলের রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে এবং পাহাড় হতে সেনাশাসন তুলে নিতে হবে।

এলাকার মুরুব্বী জ্যোতিময় চাকমা বলেন- দেশে যদি বৌদ্ধ বিহারের ভূমি সুরক্ষিত না হয় তবে আমাদের ভূমির সুরক্ষার নিশ্চয়তা কোথায়? আমরা রামুর ট্রাজেডি দেখেছি কিন্তু অপরাধীদের বিচার দেখিনি। রাষ্ট্রের এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি বারবার অপরাধীদের সাহস দেয়। যদি অপরাধীদের বিচার হতো বারবার এমন ঘটনা ঘটতো না। শুধু বৌদ্ধ বিহারের ভূমি বেদখল নয়, আমাদের ধর্মীয় গুরুদেরও নিরাপত্তা নেই।

সেটলার দ্বারা বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরও (ধর্মীয় গুরু) হয়রানি, জখম ও নিপীড়ন এমনকি হত্যার চিত্রও এ পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে দেখেছি। তাই আমরা বারবার যাতে এমন ঘটনা না ঘটে দোষীদের দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি জানাই। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ১.পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের ভূমির নিশ্চয়তা বিধান করা, ২. সেনা ও সেটলার কর্তৃক বেদখলকৃত ভূমি ফিরিয়ে দেয়া, ৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা, ৪. আর্য্যগিরি বনবিহারের অধ্যক্ষকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হুমকি-হয়রানি বন্ধ করা ও ৫. এযাবৎ কালে সংঘটিত বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার বিচারের দাবি জানানো হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে সঞ্চালনা করেন এলাকার যুবক লিটন চাকমা।

আমার চোখে দেখা ১৯৭৯ সালের আগে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা থেকে রাংগামাটি জেলার লংগদু পর্যন্ত বাঙালি পরিবার ছিল মেরুং বাজারে ৪ পরিবার। নূর আহাম্মদ এবং তার ভাই, পান সওদাগর ও আরেকজন। সব মিলিয়ে ১৫/১৬ জন থাকত। যাদের সাথে বলা যায় হৃদ্যতার সম্পর্ক, পারিবারিক সম্পর্ক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক।

দীঘিনালা এবং লংগদু সদর ব্যতীত কোনো বাঙালি বসতি ছিল না। তবে হাটেঁর দিন নৌকায় করে কিছু অস্থায়ী বাঙালি যাতায়াত করত, মালামাল বিক্রী করত। যাদেরকে ভাষান্য বাঙালি বলে, নৌকা বাহক বলে। মাইনী নদীর দুই পাড়ের লোকদের নিকট মালামাল বিক্রী করত। এই হাট থেকে অন্য হাটে চলাচল করত।

১৯৭৫/৭৬ সালে সম্ভবতঃ মেরুং পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। ১৯৭৯ সালে যখন প্রথম সেটেলার বাঙালিদের বসতি করা হয় – তখন মেরুং পুলিশ ফাঁড়ির আশপাশে রাখা হয়েছিল। এরপর ক্রমান্বয়ে বাজারের আশপাশে ঝুপড়ি করে বসানো হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় সেটেলার বাঙালি বসতি। আমার চোখে দেখা, এসব বাঙালিদের কোনো মালপত্র ছিল না। হাতে লম্বা লম্বা বাঁকা দা, একটা লুংগি বা ছেড়া কাপড় দিয়ে ছোট পুতলি। পুতলির ভিতর থাকত কিছু কাপড়-চোপড় এবং একাধিক পাতিল। তাদের কথাগুলো অনেকেই বুঝত না। এমনকি ওদের ভিতরও বুঝত না। কারণ, কেউ নোয়াখালি, কেউ বরিশাল কেউ বা উত্তর বংগের। একেক এলাকার লোকের কথার ভাব, ভংগী, আঞ্চলিক কথা এরা নিজেরাই বুঝত না।

১৯৭৯ সালে প্রথম যখন সেটেলার বসতি করা হয় তখন আমি ক্লাশ নাইন এর ছাত্র ছিলাম। মেরুং ইউনিয়ন তখন খুব বড় ছিল। আমাদের মেরুং এ ঘর ছিল, জমি ছিল এবং ভুইয়ছড়ায় খামার ঘর ছিল। মেরুং এ আমাদের জমি ছিল নদীর পূর্ব পার্শ্বে ৩ একর, মেরুং হাইস্কুলের দক্ষিণে মাদ্রাসার পাশে বাড়ি (আমাদের বাড়ি, কাকা সুরসেন চাকমা এবং বিপিন বিহারী চাকমা) ছিল ৪ একর এবং বর্তমান চাউলের সরকারি গোডউনে ছিল আমাদের বাড়ি। পাহাড় নামলেই ২ একর শস্য জমি এবং তার উত্তরে আরো ২ একর শস্য জমিসহ মোট ৭ একর ছিল।

ভুইয়ছড়ায় আমার দাদীর নামে ৩ একর ধান্য জমি (যে জমিটা জনৈক সেটেলার বাঙালি ভূয়া দলিল বানিয়ে বন্দোবস্তি করে) বন্দোবস্তিকৃত জমি একটি পাহাড় ২ একর এবং ভোগদখলীয় ৩ একর ধান্য জমি ছিল। সব মিলিয়ে ৮ একর জমি ছিল ভুইয়ছড়া এলাকায়। বর্তমানে সেটেলারদের ভোগদখলে রয়েছে।

একই মেরুং ইউনিয়নের এরেংছড়িতে রয়েছে ভোগ দখলীয় জমিসহ ৩০ একরের মতো। যা এখন সেটেলারদের হাতে। আমাদের জমিতে এখন শত শত পরিবার সেটেলার বসতি করেছে।

সে সময়কার সেটেলারদের বৈশিষ্ট্য ছিল এরকম। ওরা নিয়মিত রেশন পেত। সারাদিন আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখত। সামনে যা চোখে পড়ে নিয়ে ফেলত। আর নদীতে, জলাশয়ে মাছ ধরত এবং অনেকে খেত, ঘুমাত আর বাচ্চা বানাত। কিছু সময়ের ভিতর মেরুং বাজারের পুলিশ ফাঁড়িতে সেনাবাহিনী যোগ দিল। সেটেলার বাঙালিরা প্রশিক্ষণ পেতে শুরু করে।
১) অস্ত্র প্রশিক্ষণ।
২) আদিবাসীদের সাথে আচার – ব্যবহার প্রশিক্ষণ এবং গোপন তথ্য সংগ্রহ।
৩) আদিবাসীদের সাথে ঝগড়া করার এবং বিতাড়িত করার কৌশল।

এভাবে দিন, মাস, বছরের চাকা ঘুরছেই। সময় সুযোগ পেলে মালামাল চুরি করে আনছে, পাকা ধান কেটে আনছে, কলার ছড়া কেটে আনছে, হাড়ি, পাতিল সামনে যা পায় তাই নিয়ে আসে এবং দলবদ্ধভাবে ঘুরে। নির্দেশ মতো কেউ যদি এদিক, সেদিক হলে ক্যাম্পে ডেকে শাস্তি পেতে হতো। অনেকে বলেন, যা এখনো অনেক জায়গায় চলমান রয়েছে।
সেটেলার বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিচার দিতে হতো ক্যাম্পে। তাও আবার ভিন্নরকম। আপনি বিচার দিলেন আর বিচারের জন্য ৭/৮ ঘন্টা বসে রাখার পরে নেতার সাথে দেখা করতে হত। কথার কোনো হেরফের হলো উল্টো মাসের পর মাস, বছরের পর বছর হাজিরা দিতে হতো। সৈনিক থেকে শুরু করে সকলকে স্যার সম্বোধন করতে হতো। একটু প্রতিবাদী হলে শান্তিবাহিনী মামলায় জড়ানো হতো কিংবা যুবক ছেলে থাকলে বলত “শান্তিবাহিনীর কাজ করে”। ফলে কেউ আর বিচার দিত না। নীরবে সহ্য করত কিংবা সেখান থেকে অন্যত্র পালিয়ে যেত। কারণ, আদিবাসীদের মামলা নিয়ে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না এবং এখনো ৯৬-৯৭% লোকের মামলা বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই।

ক্রমেই বাড়তে থাকে সেটেলারদের সংখ্যা। আমার বাবা জনৈক সাহেব আলি নামের সেটেলারকে কাজের লোক রেখেছিল। বয়সে আমরা উনিশ, বিশ হতে পারে।। খুবই সহজ সরল ছিল, কর্মঠ ও ধৈর্যশীল ছিল। আমাদের রান্না খেত। শুকরের মাংস থেকে শুরু করে সবকিছু খেতো। শুনেছিলাম মারা পড়েছে কয়েক বছর আগে। মৃত্যুর আগে ভাল পয়সাওয়ালা হয়েছে, জমি জমা করেছে, বড় বিল্ডিং করেছে, চাঁদের গাড়ি ৩/৪ টা কিনেছে।
দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় ক্রমেই সেটেলার বাঙালিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। একাধিকবার সা¤প্রদায়িক আক্রমনে আদিবাসীরা জমি জমা ফেলে চলে যায় অন্যত্র। দখল করে নেয় একের পর এক এলাকা।

বর্তমানে দীঘিনালা থেকে লংগদু পর্যন্ত হাজার হাজার পরিবার সেটেলার বাঙালি পরিবারের বসতি হয়েছে। বর্তমানে ওরা সচ্ছল পরিবার। যার আনুমানিক সংখ্যা লক্ষাধিক হতে পারে। শুধু মেরুং এলাকায় রয়েছে কোটি কোটি টাকার মালিক শতাধিক সেটেলার। আমাদের জমি জমার কোনো চিহ্ন নেই। রোহিংগা মুসলমানদের মতো এদের বংশবৃদ্ধি দ্রুত। কোনো পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করে না। অনেকের একেকজন বিয়ে করেছে ৪/৫/৬/৭টা করে। সন্তানের সংখ্যা ও অনেক।

তথ্যমতে, লংগদু উপজেলাধীন আটারকছড়া এলাকায় বিগত কিছুদিন ধরে আর্যগিরি বন বিহারের আনুমানিক ৫/৬ একর জমি বেদখল করার জন্য রাতারাতি কয়েকটি ঘর তুলেছে। আর্যগিরি বন বিহারে ৪০০ শতাধিক দায়ক দায়িকা বিগত ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতিটি পরিবার ৬/৭ বার করে উদ্ভাস্তু হয়েছে। এইসব উদ্ভাস্তু পরিবারগুলো বৌদ্ধ বিহারের জন্য ৫০/৬০ একর জমি দান করেছিল। বিগত সময়ে সেগুন গাছ, কলা গাছ সহ বিভিন্ন বাগান করেছিল। সেগুলো ও সেটেলাররা কেটে নিয়েছে। বৌদ্ধ বিহার পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। সেটেলার বাংগালিরা এমনিতেই ক্ষমতাশালি। অধিকন্তু যোগ হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক সংগঠনের স্থানীয় কিছু নেতৃত্ব। সূত্র জানায়, আঞ্চলিক সংগঠন থেকে বৌদ্ধ বিহার কমিটির লোকদের নির্দেশ দিয়েছে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য এবং জমিটা সেটেলারদের দিয়ে দেওয়ার জন্য।

বিগত সময়ে আঞ্চলিক সংগঠনের লোকদের ভগবানের মতো সাধারন লোকেরা পুজো করে আসছে। যাদের দেখলে প্রথমে নমস্কার এরপর বসার স্থান, এরপর পানি ও উন্নত খাবার দিত। খাবারের পরে নিরাপদ তুলতুলে বিছানা, নিরাপদ পাহাড়া, নিরাপদ যোগাযোগ হইতে শুরু করে সবকিছু। আঞ্চলিক সংগঠনের লোকেরা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলত, পূর্ণ সায়ত্বশাসন এনে দেওয়ার কথা বলত, আত্মনিয়ন্ত্রণের কথা বলত, সেটেলার বাংগালিদের বিতাড়নের কথা বলত বিগত সময়ে।

পাহাড়ের আদিবাসী স¤প্রদায়ের লোকেরা এমনিতে অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার। একদিকে সা¤প্রদায়িক আক্রমন, অন্যদিকে স্বজাতি কর্তৃক নিপীড়িত ও বিতাড়ন। এত অত্যাচারিত হওয়ার পরে ও জম্ম জম্মান্তরে কল্পনা করেনি, নিজের জমিকে সেটেলারদের নিকট দেওয়ার জন্য আঞ্চলিক দলের লোকেরা নির্দেশ দিবে? যে জমিতে রয়েছে হাজার হাজার মা,বোনের রক্ত, কান্না, হাজারো বাপ ভাইয়ের অকালে ঢেলে দেওয়া রক্ত। আমরা কি সেই বেঈমান? যে জ্ঞাতি ভাইয়ের রক্তের বেঈমানী করছি, হাজারো মা বোনের ধর্ষন ও নির্মম খুন হওয়া মৃত্যু চীৎকারে আমরা ভুলে গিয়েছি? তুলে দেওয়া হচ্ছে শত শত বছর ধরে ভোগ দখলিয় জমিগুলো সেটেলারদের হাতে। সেটা কিসের আদর্শের রাজনীতি? কিসের এত মানবতা? স্বজাতির ভোগ দখলিয় জমিগুলো সেটেলার বাংগালিদের নিকট দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে? অমুসলমানগণকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র নিপীড়ন চালাচ্ছে!

৪টি আঞ্চলিক সংগঠনকে সকলেই ভয় পায়। কারন, জলজ্যান্ত খুন করে, মুক্তিপন করে, অপহরন করে। আমরা কি সেই পাপী? কে উত্তর দেবে? ৪টি আঞ্চলিক সংগঠনের লক্ষ্য কি? পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন? নাকি পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন আদায়? নাকি আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়?
আফগানিস্থাণের বামিয়ান বুদ্ধমূর্তিকে নিয়ে মুসলমান রাজনীতির ভয় কেন? বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করার নাম বখতিয়ার খিলজি এবং মুসলমান শাসকগণ! বৌদ্ধ নগরী মুন্সিগঞ্জের নাটেশ্বর গ্রামে মাটির নিচে লুকানো কেন? প্রাচীন বাংলার রাজধানী পুÐ্রনগর বা মহাস্থানগড়ের ধ্বংসস্তুপে লুকানো সমৃদ্ধ বৌদ্ধ ইতিহাস! মুসলমান যে মানব, অখন্ড মানব জাতি সেই মানব! বাংলাদেশে মুসলমান রাজনীতি বৌদ্ধগণকে নিষ্পেষণ করে মুসলমান করা হয়েছে! ১২০২ সালে বখতিয়ার খিলজি বৌদ্ধ বাংলাদেশ দখল করল এবং বখতিয়ার খিলজির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৌদ্ধগণ ইণ FORCE মুসলমান হয়েছিলেন!

বৌদ্ধ নগরী মুন্সিগঞ্জের নাটেশ্বর গ্রামে বৌদ্ধ স্মৃতি বৌদ্ধগণকে যেমনি আনন্দিত করতে পারে তেমনি হতাশায় নিমজ্জিত করতে পারে। বখতিয়ার খিলজির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে ছিলেন! প্রচন্ডভাবে হতাশায় নিমজ্জিত বৌদ্ধগণ ডিপ্রেশনে ভুগছে এমন মানুষ বুঝতে পারে আসলেই এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকাটা কতোটা কষ্টকর। বাংলাদেশে বৌদ্ধগণ বখতিয়ার খিলজির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি বয়ে বেড়ানোটা কতটা মারাত্মক। একবার মন ভেঙে গেলে ভাঙা মন নিয়ে দিন কাটানোটা কতটা কষ্টকর তা শুধু যার মন ভেঙেছে সেই বুঝতে পারে। এই পৃথীবিতে যাদের একবার মন ভেঙে যায় তারা হয়তো আর ঠিকমতো নিজেকে গুছিয়ে তুলতে পারে না আগের মতোন করে।

বিশ্ব বিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ত্রয়দশ শতাব্দীতে তূর্কি শাসক সন্ত্রাসী বক্তিয়ার খিলজী ধ্বংস করেছিল। আটশত বছর পর চীন ও জাপানের দুই বিলিয়ন ডলার এবং ভারত সরকারের সাহায্যে দুইহাজার আঠারো সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্লাস শুরু হয়েছে। যে বৌদ্ধগণকে নিষ্পেষণ করে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তুর্কি মুসলিম বখতিয়ার খিলজি র উপনিবেশিক শক্তি বিজয়ী হয়েছিল, আটশত বছর বছর পর তার চাকা উলটে বখতিয়ার খিলজির রাজনীতির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রাচীন বাংলার রাজধানী পুÐ্রনগর বা মহাস্থানগড়ের ধ্বংসস্তুপে লুকানো সমৃদ্ধ ইতিহাস! ইসলাম ধর্মের নামে বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করার নাম বখতিয়ার খিলজি এবং ইসলামি রাজনীতির মাফিয়া চক্রে ধর্মান্ধ ইসলাম ধর্মের মস্তক বিক্রয়। সুদূর তূর্কি দেশ থেকে এসে ১২০২ সালে বখতিয়ার খিলজি বাংলাদেশ দখল করল এবং রামষই পন্ডিতের লেখা “শূন্য পুরান “ শীর্ষক বই বলছে (16th Century), সন্ত্রাসী তুর্কি মুসলমান বখতিয়ার খিলজি ও মুসলমান শাসকগণ বৌদ্ধগণকে মুসলমান বানিয়েছিলেন!

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!