শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : এটা হচ্ছে সমাজের উচ্চবিত্ত অভিজাত মানুষদের একটা অসুখ! এই কম্পমান অবস্থায় বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রশংসা তিনি করছেন, যে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছেন তিনি নিজেই, নিজ হাতে!
তুলনা হয় না এমন আয়েসি ভঙ্গির, তুলনা হয় না এমন আত্ম প্রশংসার!
কনের মুখটা ঢাকা আছে একটা বড় ঝলমলে লাল রঙের রুমাল দিয়ে। তুয়ান ওয়েন এখন এই রুমালটা সরাবে ওর মুখের উপর থেকে। আর এই ঘটনার তীক্ষ্ণ প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী রইলাম আমি! তুয়ান ওয়েন বেশ খানিকটা সময় শূন্যে হাত দু’টো উঁচু করে থাকলো। তারপর হঠাত করেই ঐ বস্ত্র খন্ডটা তুলে ফেললো উপরে। সে এই কাজটা যেন করতে চাচ্ছে না মোটেই, কিন্তু তার তো অন্য কোন উপায় নাই, উপরওয়ালার নির্দেশ তাকে মানতেই হবে। তার চেহারায় যেন ফুটে উঠেছে হতাশা আর মন মরা ভাব।
কনের নাম হুয়াং ফু শ্র। মেয়েটির চোখের মনি ইঙ্গিত করছে, অতীতে যেন সে বড় কোন ভুল করেছে। তার ট্যারা চোখ দিয়ে সে তাকাচ্ছে দু’পাশে! তার অবয়বে প্রকাশিত হচ্ছে একটা হাস্যকর লাজুক ভাব! এ দৃশ্য দেখে সবুজ গরুড় পক্ষী দালানের বাইরে দাঁড়ানো আমি নিজেকে সংযত রাখতে পারলাম না। আমার অনিয়ন্ত্রিত হাসির শব্দ নিঃসন্দেহে চমকে দিয়েছে দালানের ভেতরে থাকা মানুষদের। তারা সবাই এক সাথে দেয়ালের উপরের ছোট জানালাটার দিকে তাকালেন। আমি দেখতে পেলাম এই বিয়ের আসরেও তুয়ান ওয়েনের বিষন্ন চেহারাটা ফ্যাকাশে হয়ে উঠলো। সে জানালার দিকে তাকালো। তার ঠোঁট দু’টো কেঁপে উঠলো। আমি শুনতে পেলাম না, সে মৃদু কন্ঠে কি বলছে। এমনও হতে পারে সে হয়তো কিছুই বলেনি!
আমি ইয়েন লাঙ-এর ঘাড়ের উপর থেকে লাফ দিয়ে নামলাম। খুব জোরে ছুটে সবুজ গরুড় পক্ষী দালান ত্যাগ করলাম। পার্শ্ব প্রাসাদ থেকে মলয় স্তুতি দালানের দিকের যাওয়ার রাস্তায় ঝুলানো আছে অনেকগুলো লন্ঠন যা সুখ আর আনন্দের নির্দেশক! আমি কোন কিছু বাছ বিচার না করেই একটা লন্ঠন টান মেরে ছিঁড়ে ফেললাম। গোটা পথটা দৌড়িয়ে ফিরে আসলাম শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহে। আমি খুব জোরে দৌড়াচ্ছিলাম, ইয়েন লাঙ আমাকে অতটা জোরে দৌড়াতে মানা করছিলো। সে ভয় পাচ্ছিলো, আমি না আবার পরে যাই! কিন্তু আমি আমার গতি কমাইনি, লন্ঠনটা হাতে ধরেই ছুটছিলাম প্রবল বেগে। আমি জানি না, আমি কাকে এতো ভয় পাচ্ছি! ঘন্টা আর ঢোলের আওয়াজ ছাড়া কিছুই তো আমাকে অনুসরণ করছে না! কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ঐ ভয়াবহ বিয়ের অনুষ্ঠানটাই ছুটে আসছে আমার পিছু পিছু!
রাতের বেলা নামলো তীব্র ঠান্ডা হীম শীতল বরফ বৃষ্টি। আমি রাজকীয় বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভবিষ্যত জীবন, আমার বিয়ে শাদী, এ সব বিষয়ে ভাবছিলাম। কেমন যেন একটা শূন্যতা বোধ করছিলাম মনের মধ্যে। শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহের বাইরে থাকা প্রাসাদ লন্ঠনটা রাতের বৃষ্টির তোড়ে কাঁপছে। লন্ঠনের ভিতরের আগুনের শিখাটা স্থিরতা রাখতে পারছে না, হেলে দুলে মিটমিট করে জ্বলছে! রাজ প্রাসাদের দেয়ালের বাইরে প্রাসাদের ঘন্টা ঘড়িতে রাত তিনটা বাজার ঘন্টা শুনা যাচ্ছে। আমার অনুমান তুয়ান ওয়েন ইতিমধ্যেই ট্যারা চোখের নব বধূর হাত ধরে বাসর ঘরের ভিতরে ঢুকে গেছে!
ঐ সাদা ছোট ছোট ভূতের দল আরেকবার আসলো স্বপ্নে। এবার আমি স্পষ্ট দেখলাম তাদের মুখ অবয়ব। মাথার চুল সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যাওয়া জীর্ণ শীর্ণ পোশাক পরিহিত একদল ভূত মেয়ে মানুষ! ওরা আমার রাজকীয় বিছানার চার পাশ ঘিরে নাচছে, গাইছে! এক দল চোখ ধাঁধানো যৌন আবেদনময়ী ভূত রূপে আসা মেয়েলোক। বরফ স্বচ্ছ খাঁটি জেড পাথরের মতো ওদের ত্বক ও মাংস পেশীগুলো জলস্ফটিকের উজ্জ্বলতা নিয়ে ঝলমল করছে। আমি আর ওদের ভয় পাচ্ছি না। ভূত তাড়াবার কিংবা ধরার জন্য আমি আর উচ্চ স্বরে ডাকছি না সন্ন্যাসী চুয়ে খোং-কে। স্বপ্নের মধ্যে খানিকটা যৌন অনুভূতির সঞ্চার হওয়ার অভিজ্ঞতা হলো আমার। এটা ছিলো আমার একটা ভেজা স্বপ্ন, আমি নিজে নিজেই উঠে গিয়ে আমার অন্তর্বাস পাল্টে ফেললাম।
অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সেনা সদর দপ্তর থেকে সীল মোহর যুক্ত একটা পত্র পেলো তুয়ান ওয়েন। তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে তিন হাজার অশ্বারোহী আর তিন হাজার পদাতিক সৈন্যের সেনাপতি হিসাবে, এই সেনা দল নিয়ে তাকে যেতে হবে চিয়াও চৌ-এর দিকে। সেনা দল সংগঠিত করে এই অভিযাত্রার উদ্দেশ্য হচ্ছে ফং কুয়ো দেশ কর্তৃক কোন আগ্রাসী তত্পরতা কিংবা জায়গা দখল করার পাঁয়তারাকে মোকাবিলা করা। তুয়ান ওয়েন বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদে বসে সেনা সদরের সীলমোহর যুক্ত এই সরকারি আজ্ঞাটি হাতে পেয়েছে। এটা ছাড়াও সে আবদার করে হস্তগত করেছে প্রয়াত সম্রাটের রেখে যাওয়া নয়টা মুক্তা খোচিত হাতলওয়ালা মহা মূল্যবান তলোয়ারটা। সে যখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা স্বরূপ কুর্নিশ করার জন্য নত হয়েছে, তখন আমি দেখতে পেলাম তার কোমর বন্ধের সাথে ঝুলানো আছে চিতা বাঘের অবয়ব খোচিত ঐ রাজ দন্ডটা! আর ওটা হচ্ছে দাদী হুয়াং ফু ফুরেন কর্তৃক প্রদত্ত উপহার। যেটা কিনা আমি পাওয়ার জন্য বহু বার আবদার করেছি। কিন্তু ঐ অমূল্য বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকার জাত দ্রব্যটি আমি পাই নাই! এই ব্যাপারটা আমার নজরে আসার পর, আমি আমার আত্ম মর্যাদায় একটা প্রবল আঘাত অনুভব করলাম। রাজ দরবারের সভাসদবৃন্দ যখন তুয়ান ওয়েনের উদ্দেশ্যে অভিনন্দনমূলক বক্তব্য রাখছিলেন, তখন আমি ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে জামার আস্তিন গুটিয়ে বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদ ছেড়ে বেড়িয়ে গেলাম।
যা ইচ্ছা তাই! আমি জানি না হুয়াং ফু ফুরেনের উদ্দেশ্যটা কি? কেনো তিনি এ রকম যা ইচ্ছা তা করার খেলায় মেতেছেন! সব নাতীদের উপর তাঁর এই মিষ্টি শিশির মান্না বিতরণ করার এই রাজনৈতিক ক‚টকৌশল আমি একেবারেই পছন্দ করি না। তাঁর তো বয়স হয়েছে, জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার সময় প্রায় ঘনিয়ে এসেছে। এখনও তিনি কেনো নিজেকে পরিশ্রান্ত করছেন নানা রকম ক‚ট কৌশল আবিষ্কার করার কাজে, শুধু মাত্র সিয়ে রাজ প্রাসাদের মানুষ আর ঘটনাবলীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য? আমি এমনও সন্দেহ করছি, হয়তো বা হুয়াং ফু ফুরেন আর তুয়ান ওয়েনের মাঝে আছে একটা দুরোভিসন্ধির গোপন আঁতাত!
ওরা কি করতে চায়?
একবার এই প্রশ্নটার উত্তর দেয়ার জন্য আমি অনুরোধ করেছিলাম রাজকীয় বিহারের অধ্যাপক যৌ চ্রি থোং-কে। যৌ চ্রি থোং একজন বিজ্ঞ পন্ডিত, তিনি কনফুসিয়াস দর্শনের একজন তাত্তি¡ক বিশেষজ্ঞ। আমার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য তিনি যে বক্তব্য রাখলেন, সেটা নিতান্তই বাগাড়ম্বর অন্তঃসারশূন্য কথাবার্তা বৈ অন্য কিছু নয়! এর কারণ আমি জানি, এঁনারা সবাই হুয়াং ফু ফুরেনের ভয়ে ভীত! যদি সন্ন্যাসী চুয়ে খোং এখন প্রাসাদে থাকতেন তবে খুব ভালো হতো। কিন্তু হায়, তিনি তো ইতিমধ্যেই বহু দূরের তিক্ত বাঁশ পাহাড়ে তাঁর নিজের জায়গায় নির্জনবাসে থাকতে চলে গেছেন!
আমি শুনতে পাচ্ছি ঝুলন পর্দার বাইরে কে যেন ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কে ওখানে বসে আছে? আমি পর্দা তুলে দেখলাম। আরে, এ যে ইয়েন লাঙ! দীর্ঘক্ষণ ক্রন্দন করার কারণে ইয়েন লাঙের চোখ দু’টো ফুলে গেছে। ফুঁপিয়ে কাঁদার শব্দ হঠাত করেই থেমে গেলো! আমাকে দেখেই ইয়েন লাঙ মাটিতে নুয়ে পরে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে কুর্নিশ করলো।
“কাঁদছ কেনো? কে তোমাকে বকা দিয়েছে?”
“জাঁহানপানাকে বিরক্ত করার সাহস এ গোলামের নাই। কিন্তু বাস্তবে প্রচন্ড ব্যথা আমি সহ্য করতে পারছিলাম না।”
“কোথায় ব্যথা পেয়েছ? রাজ বৈদ্যকে ডাকবো কি? তোমাকে দেখে যাক।”
“এমনটা চাওয়ার সাহস গোলামের নাই। ব্যথা একটু পরই চলে যাবে। রাজ বৈদ্যকে বিরক্ত আর উদ্বিগ্ন করার সাহস হচ্ছে না!”
“আসলে তোমার ব্যথা কোন জায়গায়?”, ইয়েন লাঙের দুঃখ ভারাক্রান্ত অভিব্যক্তির মধ্যেও তথ্য গোপন করার মতো একটা অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করলাম। আমি চেষ্টা করলাম ভিতরের খবর বের করার, সত্য ঘটনা জানার। আমি মুখ গম্ভীর করে, ইয়েন লাঙ-কে ধমক দিয়ে বললাম, “যদি তুমি আস্পর্ধা দেখাও, আমাকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করো, তাহলে আমি কিন্তু কারা রক্ষককে ডেকে এনে তোমার পেট থেকে সত্য কথা বার করার হুকুম দেবো!
পিছনের দিকে! ইয়েন লাঙ আঙ্গুল দিয়ে তার পশ্চাত দেশ ইঙ্গিত করে দেখিয়ে আবার ব্যথায় কোঁকিয়ে উঠলো।
আমি আছি অন্ধকারে, কিছুই বুঝতে পারছি না। ইয়েন লাঙের খানিকটা প্রকাশ করা, খানিকটা গোপন রাখা বিবরণ থেকে সব শেষে গোটা ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার হলো। একটা গুজব শুনেছিলাম আমি আগেই, যে রাজ কুমার তুয়ান উ নাকি রাজধানীর নাট্য দলের একটা সুদর্শন অভিনেতা ছেলের সাথে অস্বাভাবিক মেলামেশা করে! এমন মেলামেশা হচ্ছে অধ্যাপক যৌ চ্রি থোং-এর ভাষায়, হাতা কাটা জামায় লাগা অশুভ বাতাস! কিন্তু আমি কল্পনাও করতে পারিনি, তুয়ান উ-এর হাতা কাটা জামার আস্পর্ধা এতটাই বেশি। সেটা প্রসারিত হয়েছে এমন কি প্রাসাদের দিকেও। আর সেই অশুভ প্রসারণ স্পর্শ করেছে আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ইয়েন লাঙের দেহটাকে। আমার মনে হচ্ছে, এটা হচ্ছে আমার প্রতি আমার বৈমাত্রেয় ভাইদের শত্রুতার আরেকটা নিদর্শন!
আমার প্রচন্ড রাগ হলো। আমি সাথে সাথে এক দল প্রহরীকে নির্দেশ দিলাম তুয়ান উ-কে শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহে ডেকে এনে জিজ্ঞেসাবাদ করার জন্য। ভয়ে ইয়েন লাঙের ছোট্ট মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। সে মাটিতে মাথা ঠুকে ঠুকে আমার কাছে সনির্বদ্ধ অনুরোধ করতে লাগলো, যাতে এ ব্যাপারে কোন কিছু যেন জানাজানি না হয়। গোলামের চামড়া ও মাংস অল্প একটু তিক্ত স্বাদ গ্রহণ করবে, এটা তো খুবই নগণ্য ব্যাপার! আর সাধারণ মানুষের ভেতর এ ব্যাপারটার জানাজানি ডেকে আনতে পারে মহা বিপর্যয়! পাটা পুতার উপর রসুন ছেঁচার মতো করে, ইয়েন লাঙ ওর কপালটা আমার পায়ের কাছে এনে বার বার মাটিতে মাথাটা ঠুকছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ভাবলাম কি ভাবে ওকে সন্তুষ্ট করা যায়। হঠাত করেই আমার মধ্যে একটা প্রচণ্ড ঘৃণার ভাবের উদয় হলো। একটা পা উঁচুতে তুলে ছেলেটার পশ্চাত দেশে জোরে একটা লাথি মেরে বললাম, “তুমি আমার কাছে এসো না। আমি তোমার কথায় কোন অন্যায্য অবিচারকে আশকারা দিতে পারি না। তুয়ান উ বরাবরই উদ্ধত আর দাম্ভিক। অনেক আগেই ভেবে রেখেছি, ওকে শাস্তি দিয়ে সংশোধন করবো আমি!”
দন্ড বিধায়করা আমার আদেশ মোতাবেক শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহের সামনে স্থাপন করেছে শাস্তি দেয়ার যন্ত্রপাতি। শাস্তিটা হচ্ছে খোজা করণ, শুক্রাশয় দু’টির অপসারণ! প্রাসাদ তত্ত¡াবধায়ক রাজকীয় ফরমান নিয়ে ভিতরে গিয়ে আবার ফিরে এসেছে শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহে। সে জানালো, “চতুর্থ রাজ কুমার গোসল করার পর এখন কাপড় বদলাচ্ছেন, একটু পরেই তিনি এখানে আসবেন।”
প্রাসাদ তত্ত¡াবধায়কদের মুখ চেপে গোপন করা হাসির শব্দের মধ্যেই তুয়ান উ শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহের সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি দেখতে পেলাম খুব আত্মম্ভরিতার একটা ভাব নিয়ে খোজা করণের যন্ত্রপাতিগুলোর সামনে এসে দুই আঙ্গুল দিয়ে ছোট একটা ছুরি তুলে নিয়ে জিজ্ঞেসা করলো, “তোমরা এখানে কি করছো, কোন মজার ব্যাপার আছে বুঝি?”, সে যে তাকে, দণ্ড দিতে আসা দণ্ড বিধায়ককে এই প্রশ্নটা করেছে, সেই ব্যাপারটা সে একে বারেই বুঝতে পারে নাই! দণ্ড বিধায়ক তার কথার কোন জবাব দিলো না। আমি আমার জন্য নির্ধারিত উচ্চ আসন থেকে নেমে আসতে যাবো, ঠিক এমন সময় ইয়েন লাঙ তীক্ষ্ণ স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো,
“জাঁহাপনা ভীষণ রাগ করেছেন, আপনি তাড়াতাড়ি পালিয়ে যান!”
ইয়েন লাঙের গলার আওয়াজ শুনে তুয়ান উ চমকে উঠলো, মুহূর্তের মধ্যে তার চেহারা ভয়ে বিবর্ণ হয়ে গেলো। আমি দেখলাম সে পিছন ফিরে দৌড়াতে শুরু করেছে। তার পশমের তৈরী শীতের জামাটার কোণা হাত দিয়ে উঁচু করে ধরেছে, পায়ের জুতা খুলে গিয়েছে, সামনে প্রতিবন্ধকতার মতো হয়ে দাঁড়ানো প্রাসাদ তত্ত¡াবধায়ককে ধাক্কা মেরে সরিয়ে সে চেঁচিয়ে উঠলো, “দাদী আমাকে বাঁচান!” তুয়ান উ পুরো পথটা চরম আতংক নিয়ে পালিয়ে বাঁচলো। তার দেহ-ভঙ্গি আর আচরণ চরম হাস্যকর হয়ে উঠেছে সবার চোখে। প্রাসাদ তত্ত¡াবধায়করা খানিকটা পথ ওকে অনুসরণ করে আবার ফিরে আসলো। ওরা বললো যে, তুয়ান উ সত্যি সত্যিই বুড়ো দাদীর গুলজার কক্ষের মধ্যে ঢুকে গেছে!
তুয়ান উ-কে গোপনে দণ্ড দেয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে গেলো, আমার পুরো রাগটা গিয়ে পরলো ইয়েন লাঙের উপর। আমি বুঝতে পারছি না, সে এতোটা বিনীত কেনো! ঘৃণ্য এই গোলাম, এখন তুমি তুয়ান উ-এর হয়ে শাস্তি ভোগ করো! আমি দণ্ড বিধায়ককে ইয়েন লাঙের পিঠে তিন’শ ঘা দোররা মারার আদেশ দিলাম। বলা চলে, সে আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে, সেটার শাস্তি আমি তাকে দিচ্ছি। (চলবে)