ফরিদুর রহমান : উইলির বাসায় আজ শেষ দিন। এখান থেকে বেরিয়ে হোটেলে চেক-ইন বেলা বারোটায়। কাজেই সকালের প্রদর্শনীতে থাকতে পারবো না সেটা ধরেই নিয়েছিলাম। উইলিরও যেহেতু কোনো নতুন গেস্টআসবার কথা নেই, সেক্ষেত্রে ওর এখানে লাগেজ রেখে বিকেলের দিকে ফিরে এসেও নিয়ে যাওয়া যেতো। কিন্তু আমাদের ট্রাম বাসের তিন দিনের টিকেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত রাতেই, আর হোটেল রিজেন্ট ফেস্টিভ্যাল ভেন্যু থেকে হাঁটা পথ। কাজেই শুধু আসা যাওয়া করে পকেটের বৈদেশিক মুদ্রা মিউনিখের ট্রামওয়ালাদের না দিয়ে একজন ট্যাক্সিওয়ালাকে দিলে একবারেই হোটেলে পৌঁছে যাওয়া যাবে। উইলিকেও বলে রেখেছি আমরা সাড়ে এগারোটার আগে বেরোচ্ছি না।
হাতে সময় না থাকায় এই কদিন উইলির সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি। আজ সে নিজে থেকেই আলাপ জমাতে এলো। ওর কিচেনে নানা ধরনের কফি এবং চায়ের সংগ্রহ থেকে এই কয়েকদিন ইচ্ছে মতো চা-কফি নিয়ে খেয়েছি, খাবার ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করেছি অথবা ওভেনে দিয়ে গরম করেছি। উইলি আছে নাকি নেই তা বুঝতেও পারিনি। নিজেদের ঘর দরজা, কিচেন এবং বাথরুম ছাড়া অন্যদিকে যাবার প্রয়োজনও হয়নি। আজই প্রথম ওর নিজের ঘরে বসলাম। অতিথির ঘরসহ পুরো বাড়ি পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে ঝকঝকে এবং গোছানোর দিক থেকে রীতিমতো টিপটপ হলেও নিজের ঘরটা বেশ এলোমেলো। চারিদিকে বই পুস্তক এবং পত্র পত্রিকা ছড়ানো। ছবি দেখে প্রথমে যাকে মিউনিখের মাস্তান মনে হয়েছিল, তার ঘরে পড়াশোনার এতো আয়োজন দেখে আরেকবার চমৎকৃত হলাম। ছোট্ট দুই রুমের বাসার ভেতরেও একটা বাগান আছে। নিজে থেকেই বললো, একা মানুষ দুই ঘরের এই ভাড়া বাড়িটাও বড় মনে হয়। সেই কারণে একটা ঘর গেস্ট হাউস হিসাবে এয়ার বিএনবিকে দিয়ে রেখেছে। একজন স্ত্রী ছিল, বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেনি কিন্তু সে এখন থেকেও নেই। এই শহরেই নিজের মতো আছে কোথাও।
উইলি নিজেই কফি বানিয়ে খাওয়ালো। তারপর আমরা ওর বাগানে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া কালো রঙের একটা টি-শার্ট হাতে দিলে বিস্মিত হয়ে বললো, ‘কালো আমার পছন্দের রঙ, তুমি বোধহয় আগে থেকেই জানতে!’ বললাম, ‘নিশ্চয়ই, তা না হলে এটাই বা তোমাকে দেবো কেন।’
সাড়ে এগারোটা বাজলে উইলি একটা ট্যাক্সি ডেকে আমাদের ভারি লাগেজগুলো নিজের হাতে গাড়িতে তুলে দিলো। আগেই জেনেছিল আমাদের একমাত্র কন্যা মুনশেনগøাডবাখে পড়াশোনা করছে এবং আমরা মিউনিখ থেকে সোজা সেখানেই যাবো। জার্মান ভাষায় ক্যাব ড্রাইভারকে গন্তব্যসহ আরো কিছু নির্দেশনা দিয়ে আমাদের উদ্দেশ্যে বললো, ‘তোমাদের মেয়েকে আমার শুভেচ্ছা জানাবে আর প্রিজনেসে কি পুরস্কার পেলে সেটাও জানিয়ে দিও।’
বললাম, ‘পুরস্কার পেলে জানাবো। না জানালে বুঝবে তোমার কথা সত্যি হয়নি।’ উইলি এরপরে কী বলেছিল শুনতে পাইনি, গাড়ি চলতে শুরু করেছিল। তবে তার কথা ছিল সব সময়েই ইতিবাচক।
হোটেল রিজেন্টে পৌঁছে গেলাম বারোটা বাজার আগেই, তবে তাতে চেক-ইনে কোনো সমস্যা হলো না। ঘরের জানালার পরদা সরিয়ে দেখলাম একটু দূরে মিউনিখ হফতবান হফ দেখা যাচ্ছে। এটি একটি প্রান্তিক স্টেশন, কাজেই দুই একটা ট্রেন ছেড়ে যাবার কিংবা স্টেশনে এসে থামার দৃশ্যও বেশ দেখা যায়। তবে জানালা বন্ধ থাকায় শুধু ছবিটা চোখে পড়ে, শব্দ ঘরে ঢোকার কোনো সুযোগই পায় না। আমি কিছুক্ষণ জানালায় দাঁড়িয়ে ট্রেনের আসা যাওয়া দেখি। প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে। এই অবেলায় অর্থাৎ লাঞ্চব্রেকের আগে আর ফেস্টিভ্যাল ভেন্যুতে না গেলেও চলবে। রিজেন্টের বাইরের রাস্তাঘাট আমার পরিচিত। সেইডল স্ট্রাসের হোটেল থেকে বেরিয়ে বাঁয়ে ঘুরলেই আরনুলফ স্ট্রাসের অনেকটা জুড়ে ফাস্টফুডের দোকান এবং টার্কিশ কেবাব হাউজ। কিছু পরে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় স্টেশন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে ঘুরে এসে ‘সাবওয়েতে’ ঢুকে পড়লাম। আমাদের দেশে ম্যাকডোনাল্ডস, পিৎজাহাট বা কেনটাকি ফ্রাইড চিকেন পরিচিত হলেও সাবওয়ের নাম খুব একটা শোনা যায় না। ম্যাকডোনাল্ডস এবং কেএফসি দুটোই বয়সে সাবওয়ের চেয়ে অল্প কিছুদিনের বড় হলেও সাবওয়ের বয়েসও কম নয়। কেএফসি ১৯৫২ ম্যাকডোনালডস ১৯৫৫ আর সাবওয়ে ১৯৬৫ সালে জন্ম নিয়ে গত ষাট সত্তুর বছর ধরে সারা দুনিয়াকে বার্গার সালাদ আর মুরগি ভাজা খাওয়াবার একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে।
সাবওয়ের সুবিধাজনক দিক হলো, অন্যদের মতো ওদের খাবার ভেতর থেকে তৈরি হয়ে আসে না। সাধারণত চোখের সামনে রাখা বিভিন্ন উপকরণ থেকে পছন্দ মতো বেছে নেবার স্বাধীনতা থাকে। লাঞ্চের সময় হয়ে এলেও সাবওয়েতে তেমন ভিড় ছিল না। কাজেই ইচ্ছে মতো গোল মরিচ, লাল মরিচ, ক্যাসিকাম, কালো জলপাই, পেঁয়াজ, লেটুসপাতা, শশা ইত্যাদি দিয়ে বেশ বড়সড় বার্গার বানিয়ে নেয়ার পরে দেখা গেল খাদক হিসাবে আমরা উঁচু জাতের নই। ফলে যথাসাধ্য চেষ্টা করেও অর্ধেকটার বেশি শেষ করা সম্ভব হলো না। অথচ গত রাতে বিবিসির পার্টি শেষে ঘরে ফেরার সময় মনে হচ্ছিল কিছুই খাইনি।
যস্মিন দেশে যদাচারের নিয়ম অনুসারে বৃটিশদের আয়োজিত পার্টিতে সসেজ রোল, কোনস, করোনেশন চিকেন, স্যান্ডুইচের মতো নাম না জানা কিছু একটা এবং শেষে বোধহয় অ্যাপেল পাই নাকি লেমন কেক জাতীয় মিষ্টি কিছু ছিল। দুশ বছর ধরে আমাদের শাসন শোষন নিপীড়ন চালিয়ে, আমাদের চর্ব- চোষ্য-লেহ্য-পেয় সব হজম করে দেশে ফেরার সময় যদি উপমহাদেশীয় রান্নার কিছু রেসিপি সঙ্গে করে নিয়ে যেতো তাহলে বিবিসির পার্টির এই দশা হতো না। তবে পার্টিতে পরিবেশিত পানীয়ের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য ছিল। জার্মানির এক তরুণ ক্যামেরাম্যানের সাথে, গতরাতের পার্টিতেই এবারে প্রথম দেখা হলো। আমি যেমন তার নামমনে রাখতে পারিনি, বুঝলাম সেও আমার নাম ভুলে গেছে। বললাম, ‘তোমাকে এই কদিন দেখিনি মনে হয়?’ বললো, ‘এবারে আমার কোনো কন্ট্রিবিউশন নেই। নেহায়েত মিউনিখেই থাকি বলে প্রিজনেসের সময়ে সবার সাথে দেখা করতে এসেছি।’
জার্মানদের সম্পর্কে আমার ধারণা ক্রমেই বদলে যাচ্ছে। শুধুমাত্র পুরোনো বন্ধু বা পরিচিতদের সাথে দেখা করার জন্যে নিজের সময় বের করে কোনো জার্মান এখানে আসতে পারে তা আগে হলে বিশ্বাস করতাম না। আমাকে ড্রিংকস কর্নারের দিকে ডেকে নিয়ে বললো, ‘তুমি কি মোহিতো ট্রাই করেছো? চলো আজ মোহিতো নেয়া যাক।’
নামটা আমর কাছে অপরিচিত হওয়ায় আমি বললাম, ‘জীবনে প্রথমবারের মতো মোহিতোর কথা শুনলাম। তবে চেখে না দেখলেও মোহিতো নাম শুনেই আমি রীতিমতো মোহিত!’ অনুবাদ করে বলে দিলাম, বাংলায় মোহিত শব্দের অর্থই ডেলাইটেড বা এনচ্যান্টেড! পরে অবশ্য জেনেছি মোহিত নয়, পানীয়টি আসলে মোইতো। সাদা রামের সাথে লেবুর রস, সোডাওয়াটার, পুদিনা পাতা এবং সামান্য চিনি মিশিয়ে তৈরি হয় জনপ্রিয় এই ককটেইল। বিবিসির জরিপেও নাকি এটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ পার্টি ড্রিংক হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কাজেই খাবার যেমনই হোক পানীয় পরিবেশনের ক্ষেত্রে সেরাটাই পরিবেশন করেছেবিবিসি।
চতুর্থ দিন প্রথমার্ধের ছবি দেখতে না পারায় অন্তত গোটা দুই ভালো কাহিনি চিত্র দেখা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বঞ্চিত হলাম। তাৎক্ষণিক বলা যায় এই কারণে যে মূল প্রজেকশন হলের সামনে সাজানো সারি সারি ডেস্কটপের সাথে সংযুক্ত হার্ডডিস্ক চালিয়ে দিয়ে উৎসবের যে কোনো ছবি যে কোনো সময় দেখে নেয়ার সুযোগ ছিল। এ ছাড়া দোতলায় মিডিয়া বার থেকে প্রত্যেকে অন্তত তিনটি করে ছবির ডিভিডি কপিও বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারেন। যাদের কথায় আস্থা রাখা যায় তেমন দুজন দর্শকের প্রশংসার সূত্র ধরে বিকেলে লবিতে সাজানো ডেস্কটপ থেকে কয়েকটা ছোট ছবি ছোট পর্দায় দেখে নিলাম। ছোট এবং বড় পর্দায় দেখার মধ্যে অনেক তফাৎ থাকলেও গত্যান্তর না থাকায় কানে হেডফোন লাগিয়ে দেখে রাখার কাজটা শেষ করলাম। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ‘দ্য ড্যাড’ এবং অস্ট্রেলিয়ার চিল্ড্রেন্স টেলিভিশন ফাউন্ডেশনের ‘লিটল লাঞ্চ’ বেশ ভালো লেগেছে। দুপুরের অধিবেশনে চেক রিপাবলিকের ‘দ্য উইশ ফিশ’ ছাড়া কোনো ছবির কথাই এখন আর মনে নেই।
লবিতে ছবি দেখে বেরোবার মুখে দক্ষিণ আমেরিকার কোনো একটা দেশের এক কিডস নিউজ নেটওয়ার্ক কর্মকর্তার সাথে দেখা হয়ে গেল। তার সাথেও পরিচয়ের সূত্রপাত সেই নেপালে। সে বেশ হাসি হাসি মুখে অভিনন্দন জানিয়ে বললো, ‘তোমাদের হর্সগার্ল বেশ ভালো হয়েছে। আশা করছি ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের এবারে অন্তত গোটা দুয়েক পুরস্কার থাকবে।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন দুটা?’ সে বললো, ‘কুনুমি দ্য নেটিভ থান্ডার আর তোমাদেরটা।’ আমি খুব বেশি অবাক হলাম না। কারণ ‘অশ্বারোহী তাসমিনা’ প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হবার পরেই ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের পক্ষ থেকে ছবিটি নির্মাণে তাদের কৃতিত্বের পাশাপাশি পরিচালক হিসাবে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। এই ঘটনার ছয়মাস আগেই ফ্রি প্রেসের সাথে আমার সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে। তাই বললাম, ‘তুমি বোধহয় জানো না, অনেক দিন আগেই আমি ফ্রি প্রেস ছেড়ে দিয়েছি।
‘ওহ, তাই নাকি? কি হয়েছিল বলো তো?…’ ইত্যাদি বলে সে জানতে চাইলেও নিজেদের ত্রুটি দুর্বলতা, বিশেষ করে অযোগ্যতা ও হিসাবের কারচুপির কথা বিদেশিদের কাছে বলে বলে কী হবে! তাই ওকে শুধু বললাম, ‘আমি আসলে স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই বলে মাথার উপর থেকে আন্তর্জাতিক এনজিওর খবরদারি থেকে বেরিয়ে এসেছি।’
বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে অবসর নেয়ার পরে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক একটি সংস্থার হয়ে ‘কিডস নিউজ নেটওয়ার্ক’ নামে ছোটদের জন্য টেলিভিশন সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারের একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। বলা যায় প্রতিষ্ঠানটি নিজের হাতে গড়ে তুলছিলাম। প্রথম পর্যায়ে ফান্ড নিয়ে স্থানীয় এনজিও কর্তৃপক্ষের নয়-ছয়ের কারণে পুরো ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়।
এরপরে ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের অনুরোধে নতুন করে শুরু করার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। প্রতিষ্ঠানটির প্রসাশনিক কাজকর্ম দেখার জন্যে বেসরকারি সাহায্য সংস্থায় কাজ করা একজন অভিজ্ঞ লোক খুঁজছিলাম। তেমন একজনকে পাওয়াও গেল, তিনি তখন বেকার। অভিজ্ঞতা ছাড়াও তাঁর কিছুটা কবিখ্যাতি আছে। শর্ত অনুসারে ভালো ইংরেজি জানার কথা থাকলেও ভাবলাম তাঁর ঘাটতিটুকু আমি নিজেই পুরণ নিতে পারবো। কিন্তু নিজে অর্থবিত্তের দিক থেকে সৎ থেকেও কোনো কোনো মানুষ যখন শুধু নিজের অবস্থান তৈরির জন্যে নীতি নৈতিকতাহীন অধস্তনদের সাথে হাত মিলায় তখন তার চাতুর্য ধরে ফেলা আমার জন্যে সত্যিই কঠিন ছিল। যাকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে বহাল করেছিলাম, যে সে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসাবে আমার বিরুদ্ধেই আমাস্টারডামে রিপোর্ট পাঠাচ্ছে তা ছিল আমার কল্পনার বাইরে। যাই হোক, আমাকে বিতাড়িত করার জন্য কবি সাহেবকে কষ্ট করতে হয়নি। লজ্জায়-ঘৃণায় বড় অংকের বেতন এবং বছরে একাধিকবার ইওরোপ অমেরিকা সফরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দশ মিনিটের সিদ্ধান্তে ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের ঢাকা অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছি। এ সব ভাবতে ভাবতেই কিডস নিউজ নেটওয়ার্ক-এর কর্মকর্তার সাথে আমার স্ত্রীর পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললাম, ইনিই ‘তাসমিনা দ্য হর্স গার্ল’এর প্রযোজক, এভি কিউ-এর একমাত্র মালিক।
রাতে ছিল নরডিক কারাওকি নাইট। ডেনমার্ক নরওয়ে সুইডেন ফিনল্যান্ড এবং আই্সল্যান্ড নিয়ে নরডিক নামে পরিচিত দেশগুলোর গানের আসরে যে দুজন গলাগলি ধরে আসর মাতিয়ে রেখেছিলেন তাদের কেউই প্রকৃত নরডিক নন। এদের একজন আবার সেই নেদারল্যান্ডসের ফুটবলার ইয়ান উইলিয়াম এবং অন্যজন যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড কিম্যান। তবে একদল নরডিক তরুণ তরুণীর গান এবং তার সাথে পরিবেশিত নাচে শেষ পর্যন্ত বয়স এবং অঞ্চল ভেদ ভুলে অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন। আমার মতো যাদের ফুটবল এবং নৃত্য-গীত কোনোটাতেই পারদর্শিতা নেই, তারা দর্শকের ভূমিকায় থেকে বিপুল করতালি দিয়ে পারফরমারদের উৎসাহিত করেছি। সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য ছোট একটা অস্থায়ী মঞ্চ থাকলেও দর্শকেদের জন্য কোনো যথারীতি কোনো বসার ব্যবস্থা ছিল না। এই অনানুষ্ঠানিক আয়োজনের মধ্যেই খাবার এবং পানীয় এসে গেছে। সঙ্গীতের সাথে পানীয়ের কোনো বিরোধ নেই। ফলে কঠিন এবং কোমল পানীয়ের পাত্র হাতে হাতে ঘুরতে শুরু করেছে একটু পরেই। এইদিন শুধু রঙিন পানীয় নয়, লম্বা টেবিলে সাজানো খাবারেও দেখা গেছে রঙের বৈচিত্র্য। এ সব বর্ণবহুল ভোজ্যবস্তু নর্ডিক অঞ্চলের কিনা তা জানি না, তবে রঙের মতোই স্বাদেও ভিন্নতা ছিল এটুকু বলা যায়।
আমরা যখন উৎসব প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে আসছি কারাওকি নাইটের মিউজিক তখনও বেজেই চলেছে। (চলবে…)