হিমাদ্রী রয় : আপনি কে? এই প্রশ্নটি যদি নিজেকে করি তবে হয় আমি কে? আসলে এই প্রশ্নটি সবাই সবাইকে করা উচিত। আমি কি সেই আমি যাকে মানুষ দেখে নাকি সেই আমি যেভাবে নিজেকে দেখাতে চাই। সেই আমি যে সবার সামনে দাঁড়াই নাকি সেই আমি যে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে।

এই প্রশ্নের জবাব পেতে ফোন অব রেং,অডিয়েন্স পুল কিংবা ফিফটি ফিফটির মতো অপশন এর সুযোগ নেই তবে জীবন পরিক্রমার অভিজ্ঞতা থেকে খুঁজে নেয়া যায় এবং একসময় সবাই খুঁজেও নেই।

এমন নয় যে নিজেকে জিজ্ঞাসা করিনি আমি কে? উত্তর পেয়েছি এক তবে জবাব দিতে বিবেকের সাথে প্রতারণা করেছি বারবার। আমার বেড়ে উঠার সাথে সাথে আমার ভাবনার জগতটাও প্রসস্থ হয়েছে। পেছন ফিরে দেখেছি অনেক সময় পার করে দিয়েছি অন্যের কাছে গুরুত্ব খুঁজতে যেয়ে। সামনের মানুষটি আমায় নিয়ে কি ভাবছে,নিজের ভাবনার চেয়ে তাকেই গুরুত্ব দিয়েছি। তাই আমার আমি পাওয়া হয়না।

ছোটবেলায় আমাদের কথাবার্তা, চলাফেরার তরতরিকা শেখানো হয় যাকে ইংরেজীতে মেনারস বলে,যাতে আমাদের চলন বলন অন্যের কাছে ভালো লাগে এবং অন্যের সাথে মেলে। খুব ভালো কথা কিন্তু নিজের মতো করে নয় কেন? সবার মতো করতে যেয়ে আমাদের বিশেষতা,নিজস্বতা কোন না কোন ভাবে হারিয়ে যায় যা অন্যের থেকে আমাদের আলাদা করতে পারতো।

সামাজিকতার ভিরে মানুষের কাছাকাছি হতে যেয়ে নিজের থেকে দূর হয়ে গেছি নিজের অজান্তেই। স্মৃতি হাতরাতে যেয়ে খুঁজে পেলাম একদিন যে ছিলো আমার কাছাকাছি আমার বাল্যবন্ধু শেখর, ক্লাস সেভেনে যখন স্কুল ড্রপ করি সে জোর করে ভর্তি করিয়েছিল স্কুলে। আমাকে মঙ্গল দান করে হারিয়ে গেছে জীবন থেকে, ভুল হলো হারাতে চেয়েছি। যান্ত্রিকতায় আচ্ছন্ন করেছি জীবন। অলস অবসরে নেটফ্লিক্স আর আউটডোর চিল,রবিবারের প্ল্যান,ছোট খাটো শিল্প চর্চার বড় বড় সংকীর্ণতা দেখে যাপন।

কাজ, ডেডলাইনস, বিলস, ই-মেইল, হাই-হ্যালোতে পরিচিত স্বজন ঘেরা জীবন আজকাল প্রশ্ন করে তুমি কে? বিষয় রসের পাত্র হাতে?
একটা সময় জীবনের কোন লক্ষ ছিলোনা তাই রাস্তার পরোয়া করিনি তবে গন্তব্য জানতাম আর এও জানি আকাশের হরি এসে আমাকে পাড় করবেননা শুধু জানি সাঁতরাতে হবে আমাকে আমার কর্মকে নিয়ে।

হাওরের জলবায়ু উড়ালে শক্তি দিয়েছিল তাই উড়ে এসেছি সরোবর থেকে সরোবরে,পাড়ি দিয়ে এসেছি সমুদ্র তবু কাঁদামাটির গন্ধ মেখে আছি এই এটিচুডটিই আমি। মনের মাটিতে যাতে অহংকারের ইমারত খাড়া না হয় তাই মাটির ধারে গিয়ে বসি মাটি আমাকে আমার অস্তিত্ব মনে করিয়ে দেয়। কিছু আনমূল মানুষের সাহচর্য,অহমিকার পাঁকে ঘেরা আমিকে প্রেমের হাটের রাঙামাটির পথ দেখায়। আমি শিখেছি যদি বাঁচার মতো বাঁচতে হয় উপেক্ষা করতে হবে বিদ্রুপ, অবজ্ঞা আর আঘাতকে।

নিজের থেকে দূর হয়ে নিজেকে ফিরে পাওয়া খুব সহজ নয় তবে নিজের খোঁজে নামা এক ইতিবাচক শুরু। এই শুরটা অনেকের জন্য খুব জরুরি। নাজিমের কথায় ‘কি মধুর কি আশায় রঙিন তোমার স্মৃতি এবার নিজের গান আমি গাইবো’। অনেকটা পথ এসেছি সম্পর্ক বাঁচাতে বাঁচাতে, নিজেকে ভুলিয়ে দিয়েছি আপনজন খুঁজতে খুঁজতে।
হাজার মনে কাঁচা ঘর তৈরি বেকার, দিনের শেষে ফিরতে হয় নিজের ঘরেই যা আমার।
সুতরাং আমি কে? এর উত্তর আমাকেই খুঁজতে হবে।
হিমাদ্রী রয়