স্পোর্টস ডেস্ক : সাকিব আল হাসান এর আগেও স্টাম্পে আঘাত করেছেন। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে মোহাম্মদ আমিরের বলে বোল্ড হয়ে যাওয়ার পর সাথে সাথে স্টাম্পে ব্যাট দিয়ে আঘাত করেন সাকিব।
তবে তখন এক মুহূর্তও সময় নেননি তিনি, হাত তুলে আম্পায়ারের কাছে ইশারা করেন ক্ষমা চাওয়ার মতো করে। এই কারণেই হয়তো আর এনিয়ে তেমন কথা শোনা যায়নি এরপর।
সেটাও শুরু নয়। খেলার মাঠেই সাকিবের রাগের বহিঃপ্রকাশ অনেক পুরনা।
২০১৮ সালে গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছিন তার অন্যতম ভাবনার বিষয় রাগ নিয়ন্ত্রণ। একটা সময় অনেক চিল্লাচিল্লি করতাম, সামনে কিছু পেলে ভেঙ্গে ফেলতাম, এখন এই জিনিসগুলো হয় না। এখন অন্তত টাইম নেই বোঝার জন্য।
তখন যদিও সাকিব বলেন, রাগারাগি হলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তিনি জানেন। কিন্তু সাকিবের ক্যারিয়রে আলোচিত বিভিন্ন ঘটনা সে কথার সাক্ষ্য দেয় না।
২০১০ সালে যখন সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে জয় পায় সেই সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ৯২ রানে থাকার সময় সাকিব দৌড়ে তেড়ে যান ব্যাট হাতে গ্রাউন্ডসম্যানের দিকে মারমুখী ভঙ্গিতে। এই ম্যাচে সাকিব শতক হাঁকান ও পুরো সিরিজ জুড়ে তার পারফরম্যান্সেই বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বড় জয় পায়। এই সিরিজটিকেই পরে ভক্তরা ‘বাংলাওয়াশ’ নাম দেন।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি ম্যাচে সরাসরি টেলিভিশন ক্যামেরায় উরুসন্ধি বরাবর ইঙ্গিত করেন, এই ঘটনায় সাকিব তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ ও ৩ লাখ টাকা জরিমানার শাস্তি পান।
একই বছর ভারতের বিপক্ষে একটি ম্যাচে সাকিবের বিরুদ্ধে এক তরুণকে পেটানোর অভিযোগ আছে। সাকিব অভিযোগ করেছিলেন, ওই তরুণ তার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। দুটি ঘটনাই মিরপুরের শের এ বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঘটেছে।
শেষ ঘটনায় সাকিব ছয় মাসের একটি নিষেধাজ্ঞার শাস্তি পান তখনকার কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহের সাথে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগে।
২০১৮ সালে সাকিবের সাথে এক ব্যক্তির বাদানুবাদের ভিডিও ভাইরাল হয় আমেরিকায়।
এরপর এই শুক্রবার, সাকিব আল হাসান স্টাম্পে লাথি দিয়ে ভাঙ্গার পরপরই সেই ভিডিও ও ছবি গোটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, আম্পায়ার ইমরান পারভেজ সাকিবের লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া না দেয়ার পর এক মুহূর্তও সময় নেননি সাকিব, লাথি মারেন স্টাম্পে।
সাকিব স্টাম্পে লাথি মারছেন, সেটায় বিভিন্ন ধরনের মতামত এসেছে। শাস্তিও এসেছে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা সাথে পাঁচ লাখ টাকার জরিমানার।
তবে বিশ্লেষকরা ঘটনার পেছনের কারণ হিসেবে যাই ব্যাখ্যা করুক, সবাই কম-বেশি এই ঘটনাকে অসমর্থনযোগ্য বলছেন। সাকিবও খুব দ্রুতই ক্ষমা চেয়েছেন এবং কোনো বিরোধিতা ছাড়াই শাস্তিও মেনে নিয়েছেন। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের দেয়া বারবার এসব শাস্তি কী কোনো কাজে আসছে না?
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু অবশ্য বলছেন, সাকিব আল হাসানের মতো একজন তারকাকে বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন এই ব্যাপারটাও খুব একটা ভালো দেখায় না।
মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল। একেকজনের সাথে চুক্তি থাকে, নিয়মকানুন থাকে। একটা মানুষ কীভাবে নিজে গড়ে উঠছে তার আচরণ বা কোন পরিস্থিতিতে তার প্রতিক্রিয়া কী হয় সেটা গড়ে ওঠে। কোনো খেলোয়াড়কে নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল। তবে কোনো খেলোয়াড়কে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে সেটা কোনো সুখকর দৃশ্য হতে পারে না।
সাকিবের স্টাম্প ভাঙ্গার ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন রকম কারণ থাকতেই পারে। কখনো কখনো পুঞ্জীভুত ক্ষোভ থাকতে পারে, সেটার একটা বহিঃপ্রকাশ থাকতে পারে। সেটা হলেও, একজন লইয়ার যখন জাজ উপস্থিত থাকে তখন কী ধরনের ব্যবহার করতে পারে সেটার একটা বর্ডার লাইন থাকে।
শেষ পর্যন্ত সাকিব যে কাজটা করেছেন তা নিয়ে লিপু বলেন, এত বড় মাপের খেলোয়াড়কে যে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এটা ভালো উদাহরণ না। প্রত্যেককে তার ক্রিকেটীয় জ্ঞানে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত থাকা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্র বলেন, অনেক সময় মানুষের মনে এমন মুহূর্ত আসে যখন এমন কাজ করে ফেলে। এই মুহূর্তকে স্পার্ক অফ দ্য মোমেন্ট।
তবে সাকিব দ্রুতই ক্ষমা চেয়ে নেন বরে শুভ্র বলেন, এটা যে ভুল সেটা সাকিবও বুঝতে পেরেছে খুব তাড়াতাড়ি। এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত কিছু না। যেকোনো ক্রিকেটার করলেই খারাপ, আর সাকিবের মতো ক্রিকেটার যারা রোল মডেল হিসেবে পরিচিত তাদের জন্য আরো খারাপ।
এখানে সাকিবের ক্রোধ তৈরি হওয়ার অনেক কারণই থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন উৎপল শুভ্র, ‘এখন বায়োবাবলে আছেন, পরিবার আমেরিকায়, সাকিবের ব্যাটে রান নেই অর্থাৎ নিজের পারফরম্যান্স যথেষ্ট ভালো নয়।’
শুভ্র বলেন, ‘এটা যে কারো ক্ষেত্রে ঘটে যেতে পারে। সাকিব বড় খেলোয়াড় ওরটা পাবলিক হয়েছে, আমাদেরটা পাবলিক হয় না।’
সূত্র : বিবিসি