রবার্ট ইগার, অনুবাদ: কোরবান আলী : (দা ওয়াল্ট ডিজনী কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসাবে রবার্ট ইগারের পনের বছরে অর্জিত শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা। ২০০৫ সালে রবার্ট ইগার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন যখন কোম্পানি এ যাবত কালে সর্বাধিক সঙ্কটময় পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে। তিনটি মূলনীতির উপর ভর করে তিনি এগুলেন এক. গুণগত মানের শ্রেষ্ঠতা বজায় রাখা, দুই. নিত্য নতুন প্রযুক্তির সাথে প্রতিযোগিতা না করে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং তিন. গন্ডির বাইরে বিশ্বব্যাপী নিজেদের চিন্তা-চেতনার প্রসার ঘটানো। চৌদ্দ বছরে তিনি ডিজনিকে পৃথিবীর সর্ববৃহত মর্যাদাসম্পন্ন মিডিয়া কোম্পানিতে রূপান্তর করলেন। এখন পিক্সার, মার্ভেল, লুকাসফিল্ম, টুয়েন্টি ওয়ান সেন্চুরি ফক্স প্রভৃতি স্বনামধন্য কোম্পানির মালিক দা ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি। রবার্ট ইগারের লেখা “দা রাইড অফ এ লাইফ টাইম” সাপ্তাহিক ‘বাংলা কাগজ’এ ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন উন্নয়ন সংগঠক ও অনুবাদক কোরবান আলী)
দশ.
তৃতীয় অধ্যায়
অজানাকে জান
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) খুনের রহস্য উন্মোচিত হবার পর একটা গোলমেলে পরিস্থিতির উদয় হলো। গল্প বলার আর কোন উপজিব্য অবশিষ্ট থাকল না। ক্রমে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেল। প্রযোজনা প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিল যা বিভ্রান্তি ও বিলম্বের কারণ হয়ে দাঁড়াল। ডেভিড তাঁর স্থানে অতি উজ্জ্বল নক্ষত্র তথাপিও আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল টুইন পিক ধারাবাহিক আর স¤প্রচার করা উচিত হবে না। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল তাঁকে অব্যহতি দিয়ে একদল বিচক্ষণ সিরিয়াল নির্মাতাদের হাতে টুইন পিকের পরিচালনা বুঝিয়ে দিবো। অবশেষে সিদ্ধান্তে আসলাম টুইন পিক আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। ডেভিড লিঞ্চকে বরখাস্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, এটি করলে বরং চারদিকে নিন্দার ঝড় উঠবে। আমরা টুইন পিক সনিবার রাতে স্থানান্তর করলাম এটি বোঝানোর জন্য যে এটি স¤প্রচারের প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে। ফলে এর রেটিংগুলো দ্রুত কমে আসল। ডেভিড প্রকাশ্যে আমাকে দোষারোপ করা শুরু করলেন। তিনি বললেন, আমি টুইন পিককে মৃত্যুদন্ড দিয়েছি। প্রথমত আমি খুনের রহস্য উদঘাটন করতে প্ররোচিত করেছি। দ্বিতীয়ত আমি এমন সময়ে টুইন পিকের স¤প্রচার স্থানান্তর করেছি যখন কেউ টিভি দেখে না।
বর্তমান সময়ে বসে আমি যখন সমগ্র পরিস্থিতি পর্যালোচনা করি তখন আমি ঠিক কাজটি করেছি বলে মনে হয় না। আমি সে সময়ে গল্প বলার অত্যন্ত গতানুগতিক টেলিভিশন পন্থা অলম্বন করেছিলাম। ডেভিড সে সময়ে বেশ অগ্রগামী ছিলেন। সে সময়ে আমি গভীরভাবে অনুভব করেছিলাম যে লরা পমারকে কে হত্যা করেছে এটি এরিয়ে যাওয়া দর্শককে হতাশ করছে। আমার হত্যা রহস্য উদঘাটনের দাবী গল্প বলার ধরনকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করেছিল। সিনেমার স্বাভাবিক ধারাবাহিততায় বিশৃংখলার সৃষ্টি করে ছিল। এখন মনে হচ্ছে ডেভিডই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সঠিক ছিলেন।
সৃজনশীল কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য প্রথমেই যেটি অনুধাবন করা জরুরী সেটা হচ্ছে এটি কোন বিজ্ঞান নয় – এখানে সবকিছুই বিষয় কেন্দ্রিক। বেশিরভাগ বিষয়ই ভুল নয় আবার সঠিকও নয়। গভীর আসক্তি কোনকিছু সৃষ্টির জন্য শক্তিশালী উপাদান। বেশিরভাগ স্রষ্টা বোধগম্যভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠেন যখন তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অথবা নির্মাণ কৌশল প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমি যখন আমাদের ব্যাবসার সৃষ্টিশীল বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তির সাথে কথা বলি তখন এ বিষয়টি মনে রাখার চেষ্টা করি। আমাকে যখন কোন সৃষ্টিশীল কাজে অংশগ্রহণ করতে বলা হয় অথবা সমালোচনা করতে বলা হয় তখন আমি সবসময় বিবেচনা করি স্রষ্টা কতটুকু নিজেকে তাঁর সৃষ্টিতে নিমগ্ন করেছেন এবং সৃষ্টির কোন কোন অংশ তাঁদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
আমি কখনও নেতিবাচক বিষয় দিয়ে শুরু করি না। যতক্ষণ না আমরা একটা প্রযোজনার শেষ পর্যায়ে পৌঁছায় ততক্ষণ ছোট করে কিছুই শুরু করি না। আমি দেখেছি মানুষ স্বচ্ছ, সুসংগত, বড় চিন্তার অভাবকে ঢেঁকে দেবার জন্য বিশদ আলোচনায় মনোনিবেশ করে। আপনি যদি ক্ষুদ্র পরিসরে গুরুত্বহীনভাবে কোন কিছু শুরু করেন তবে আপনি নিজেও গুরুত্বহীন বিবেচিত হবেন। বড় ছবি যদি জগাখিচুড়ি হয় তখন এর ছোটখাট বিষয় নিয়ে আলোচনা করা মূল্যহীন। এ ছবির জন্য সময় নষ্ট করা উচিত নয়।
দুটি ভিন্ন পরিস্থিতি কখনও এক হতে পারে না। জে জে আব্রাম অথবা স্টিভেন স্পিলবার্গের মত বড় চলচিত্র পরিচালককে ফিডব্যাক দেয়া আর অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞ কম আত্মবিশ্বাসী পরিচালককে ফিডব্যাক দেয়া এক বিষয় না। যখন আমি রাইয়ান কুগলারের সাথে বসলাম তাঁর ব্ল্যাক প্যান্থার চলচ্চিত্রের ফিডব্যাক দেবার জন্য তখন তাঁকে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। তিনি কখনও ব্ল্যাক প্যান্থারের মত বড় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন নায়। এটি ছিল বিশাল বাজেটের একটা চলচ্চিত্র। ভালো করার ব্যাপক চাপ তাঁর মধ্যে সবসময় কাজ করতো। আমি তাঁকে স্পষ্ট করে বলেছিলাম, ‘আপনি একটা বিশেষ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। আমার কিছু সুনির্দিষ্ট মন্তব্য আছে যা হস্তান্তর করার আগে আমি আপনাকে জানাতে চাই যে আপনার উপর আমাদের অগাধ বিশ্বাস আছে’।
ফিডব্যাক শুরু করার প্রক্রিয়া এমন হওয়ই উপযুক্ত। কিন্তু এভাবে মানুষের প্রতি সম্মান রেখে ফিডব্যাক দেয়ার উপায়টি প্রায়ই উপেক্ষিত হতে দেখা যায়। কোন সৃজনশীল প্রযোজনার ক্ষেত্রে আর্থিক ব্যাবস্থাপনার মধ্যে একটা সূক্ষ্ন ভারসাম্য বজায় থাকতে হয়। আর্থিক নিয়ন্ত্রণ করতে যেয়ে সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় যেন কোন ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে বা প্রত্যাশিত ফলাফল থেকে বিচ্যুত না হয় সেদিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। সহানুভূতিশীল হওয়া সৃজনশীলতার শব্দ ব্যাবস্থাপনার পূর্বশর্ত আর পারস্পরিক সম্মানবোধ হচ্ছে ভালো ফলাফল বের করে আনার অন্তর্নিহিত শর্ত।
এটি লক্ষণীয় যে টুইন পিক এর মৃত্যু সে মৌসুমে আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যার্থতা ছিলো না। ১৯৯০ সালের বসন্তে আমি সবুজ সংকেত দেখিয়েছিলাম কপ রক একটা টিভি ধারাবাহিককে, যা গভীর রাতের মসকরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল এবং সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ টিভি শো তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল। কিন্তু সে সময় আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলাম।
স্টিভেন বোকোর সাথে প্রথম দিককার এক সাক্ষাত্কারে তিনি আমাকে বলেছিলেন ডুগি হাউজার ছাড়াও ‘এ পুলিশ ড্রামা সেট টু মিউজিক’ নামে তাঁর মাথায় আরও একটি ধারনা কিলবিল করছে। ব্রডওয়ের একজন প্রযোজক তাঁকে প্রস্তাব করেছিলেন তাঁর নির্মিত হিল স্ট্রিট ব্লু চলচ্চিত্রটিকে তিনি গীতিনাট্যে রূপান্তর করতে চান। বহুবিধ কারণে সেটা আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ধরনাটি তাঁকে আলোড়িত করেছিল। ব্রডওয়ের জন্য তিনি পুলিশ গীতিনাট্য নির্মাণ করেননি তবে পুলিশ গীতিনাট্য তিনি নির্মাণ করেছিলেন টেলিভিশনে স¤প্রচারের জন্য। পর্যায়ক্রমে তিনি খসড়া গীতিনাট্য আমার কাছে আনতেন আর আমি সেটি ভন্ডুল করে দিতাম। আমি স্টিভের কাছে পুলিশ সম্পর্কিত একটা সিনেমা শো চেয়েছিলাম, গীতিনাট্য চাইনি। সেই বসন্তে তখনও টুইন পিক তার আভা বিচ্ছুরণ করে চলেছে। একদিন স্টিভকে বললাম, ‘কেন না? চলুন গীতিনাট্যটি চেষ্টা করে দেখি।’
সিনেমা শোটি লস এঞ্জেলেস পুলিশ সদর দপ্তরে প্রদর্শিত হলো। খুব সাধারণ চিন্তাধারায় নির্মাণ হয়েছে সিনেমা শোটি। পুলিশি বিধি-বিধান খুব ভালো ভাবে চিত্রায়িত হয়েছে ছবিটিতে। একমাত্র ব্যাতিক্রম উচ্চ নাটকীয় মুহূর্তে অভিনয় শিল্পিবৃন্দ সমস্বরে গেয়ে উঠতো দুঃখগীতি, ধর্মীয় সংগীত। এই গানগুলো সবই সংগৃহীত। যখন আমি পরীক্ষামূলকভাবে নির্মিত চলচ্চিত্রটি দেখছিলাম তখন অনুভব করলাম এটি টিভিতে প্রদর্শনযোগ্য নয়। আবার এও ভাবছিলাম হতে পারে আমিই ভুল। আমি স্টিভের প্রতিভার প্রসংশা না করে পারি না। সিদ্ধান্ত নিলাম আমি যদি এ প্রকল্প হাতে নি তবে এ সিদ্ধন্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে হবে।
কপ রকের প্রথম স¤প্রচার শুরু হয় ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সাধারণত ধারাবাহিক সিনেমাগুলোর প্রথম সংখ্যা স¤প্রচারিত হওয়ার সময় আমি নিউ ইয়র্কের প্রধান কার্যালয়ে অবস্থিত গবেষণা বিভাগের প্রধানকে আমাকে ফোন করতে বলতাম যাতে আমি রাতের মূল্যায়নের খোঁজ খবর নিতে পারি। এবার ব্যাতিক্রম আমি বললাম যদি মূল্যায়নের ফলাফল ভালো আসে তবে আমাকে ফোন দিয়েন কথা বলা যাবে। আর যদি মূল্যায়নের ফলাফল ভালো না হয় তবে ফ্যাক্সে ফলাফল পাঠিয়ে দিলেই চলবে। ভোর পাঁচটায় ফ্যাক্স মেশিনের চিত্কারে ঘুম ভেঙ্গে গেল। শব্দ শেষে আমি আমার চোখ বন্ধ করলাম এবং ঘুমিয়ে পড়লাম।
মূল্যায়ন খুব একটা খারাপ আসেনি। একজন সিনেমা শোটির দুঃসাহসিকতার প্রশংসা করেছিলেন। অন্যরা বলেছিলেন আপনি যদি গানগুলো সিনেমা থেকে বাদ দেন তবে আপনি বিখ্যাত স্টিভেন বোকোর পুলিশি নাটক পাবেন। বাকি সবাই বলেছিলেন এটি একটি বিব্রতকর ছবি। এগারতম পর্ব শেষ হবার পর আমরা এটি গুটিয়ে নিলাম। স্টিভেন শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের গুণকীর্তন করা এবং একই সঙ্গে স¤প্রচার বন্ধের শোক জানানোর জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি বললেন, ‘যতক্ষণ না মোটা ভদ্র মহিলার গান শেষ হয় ততক্ষণ অনুষ্ঠান চলব’। দেখলাম মাথার উপরে একটা উড়ন্ত সার্কাসের বারে একটা নাদুস-নুদুস সুন্দরী নারী দুলছেন এবং তিনি গান গাইতে শুরু করলেন।
গান শেষে আমি উঠে দাঁড়ালাম কপ রকের চলচিত্রটি নির্মাণে নিয়োজিত সকল কলাকুশলী, কর্মী ও অভিনয় শিল্পীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার জন্য। আমি বললাম, ‘আমরা চেষ্টা করেছি বড় কিছু করার জন্য কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি সফল হলো না। আমি অনেক বড় বড় ঝুঁকি নিয়েছি। কোন কোন সময় কোন ঝুঁকি না নেয়ার চেয়েও ব্যাপকভাবে অকৃতকার্য হয়েছি।’
সে সময় সত্যি সত্যি যা অনুভব করেছি আমি তাই বলেছি। চেষ্টা করে দেখার জন্য আমার অনুশোচনা ছিলো না। একইভাবে কয়েক মাস পরে আমি যখন টুইন পিক বাতিল করলাম আমার অনুভূতি একই ছিল। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আমি কাজ করতে চাইনি। মহত কিছু সৃষ্টির সম্ভাবনা সমুন্নত রেখে কাজ করতে চেয়েছি। বিনোদনের মূখ্য সময় পরিচালনার প্রথম এক বছর যা কিছু শিখেছি সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যার্থতা সত্বেও স্বাচ্ছন্দে থাকা জরুরী। প্রচেষ্টার অভাবে ব্যার্থ হইনি বরং বাস্তবতার বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারিনি। আপনি যদি অভিনব চমকপ্রদ কিছু সৃষ্টি করতে চান তবে নিজেকে ব্যার্থ হবারও অনুমতি দিতে হবে।
স্টিভ আর আমি কপ রকের ব্যার্থতার দ্বায়ভার ভাগাভাগি করে নিলাম। আমাদের দুজনের মধ্যে এটি নিয়ে এক ধরনের রসবোধ কাজ করে। আমার কথা হচ্ছে স¤প্রচারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে কখনও দূরে সরিয়ে রাখবো না। অনেক বছর আগে এবিসি স্পোর্টসের সেই ছোট্ট ঘরটিতে বসে আমি যাকিছু শিখেছিলাম তার চেয়ে অনেক উচ্চ মানের শিক্ষা আমি এই এক বছরে পেলাম। আপনি কখনও আপনার ভুলকে মুছে ফেলতে পারবেন না বা আপনার ভুল সিদ্ধান্ত অন্যের ঘারে চাপিয়ে দিতে পারবেন না। আপনার ব্যার্থতার দ্বায়ভার আপনাকেই বহন করতে হবে। আপনি যাদের পাশে দঁড়িয়ে ব্যাপক সম্মান আর সুনাম অর্জন করেছেন একটা ব্যার্থতার দ্বায়ভার তাদের ঘারে চাপিয়ে দিতে পারেন না। তাদের শুধুমাত্র আপনার সাফল্যের কৃতিত্ব দিতে পারেন।
যখন কপ রকের ক্ষত সামান্য শুকিয়ে আসছে সে সময় স্টিভেন আমাকে বললেন সে টিভি ইতিহাসে প্রথম আর-রেটেড চলচিত্র নির্মাণ করতে চান। (এই রেটিংটির অর্থ ছবিতে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্রিয়াকলাপ, কঠোর ভাষা, তীব্র গ্রাফিক সহিংসতা, মাদকের অপব্যবহার এবং নগ্নতার মতো প্রাপ্তবয়স্কদের উপাদান রয়েছে এমন ছবি)। আমি বললাম, ‘স্টিভেন, আপনি তো এনবিসি টিভির জন্য হিল স্ট্রিট ব্লু, লস এ্যঞ্জেলেস ল নির্মাণ করেছেন। কৈ আমাদের জন্য তো তা করেননি। আমি একটা পুলিশ সংকান্ত চলচিত্র পেলাম যার নাম কপ রক। আর এখন আপনি এমন কিছু নির্মাণ করতে চান, যা প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দাতারা টাকার বস্তা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করবে?’ এখন পর্যন্ত তিনি যে সমস্ত চলচিত্র নির্মাণ করেছেন সে সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব মূল্যায়ণ কি আমি জানি না। সে সমস্ত চলচ্চিত্রের প্রশংসাও আমি করিনি। এখন তিনি ব্যতিক্রম কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণে মনোযোগী হতে চান। টেলিভিশনের দৃশ্যপট বদলে দেবার মতো চলচিত্র নির্মাণে তিনি কতটুকু সাড়া দিচ্ছেন তাও আমার অজানা। তাঁর ধারণা এইচবিও দ্রুতই অন্যান্য টেলিভিশনের দুপুরের খাবার খেয়ে ফেলবে। কারণ এইচবিওর নির্মাতাদের যৌনতা বা নগ্নতা বিরোধীদের মুখোমুখি হতে হয় না। সুতরাং তিনি টেলিভিশনে স¤প্রচারের জন্য প্রথম আর-রেটেড ধারাবাহিক চলচ্চিত্র নির্মাণ পরিকল্পনার কথা বললেন, যার নাম এনওয়াইপিডি ব্লু।
টেলিভিশন যে দ্রুত বদলে যাচ্ছে বা টেলিভিশনের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসছে সে বিষয়ে আমি স্টিভেনের সাথে এক মত। কিন্তু আমি এও জানি একটা আর-রেটেড ধারাবাহিক টেলিভিশনে স¤প্রচারের অনুমতি পাবো না। আমি বিক্রয় প্রতিনিধীদের সাথে কথা বললাম। তারপর স্টিভেনের সাথে আলোচনা করে ধারণাটি থেকে সাময়িকভাবে সরে আসলাম। তথাপিও আমি বিশ্বাস করি আমরা যদি এমন কিছু নির্মাণ করি যা টেলিভিশনের সীমানা স¤প্রসারিত করবে। সম্পূর্ণ আর-রেটেড ছবি নাইবা করলাম। স্টিভেন ধারণাটি বিবেচনায় নিল। বলল, ‘আমরা যদি এরকম কিছু একটা নির্মাণ করি তবে সেটি দেখতে কেমন হবে?’ (চলবে)