অনলাইন ডেস্ক : তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।
রোববার ফ্রান্সের দৈনিক সংবাদপত্র ‘লে-অপিনিয়ন’ এর মতামত সম্পাদকীয়তে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তুরস্ক এবং ফান্স সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিষয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এর মধ্য ভূমধ্যসাগরে চালানো তেল গ্যাস অনুসন্ধান জরিপ, আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের নাগোর্নো-কারাবাখের যুদ্ধ, সিরিয়া এবং লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।
গত বছর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দাবি করেন, তুরস্ক ফরাসি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করছে। ২০২২ সালের ফ্রান্সের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে, ইসলামি চরমপন্থা নির্মূলের নামে ফ্রান্স মুসলমানদের টার্গেট করে আইন প্রণয়ন করলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান ফরাসি প্রেসিডেন্টকে ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে উল্লেখ করেন। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে ফরাসি পণ্য বয়কটেরও ডাক দেন তিনি।
দুই প্রেসিডেন্টের এই বাগযুদ্ধের ফলে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়।
ফ্রান্সের সংবাদপত্রে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বিষয়ে বিভ্রান্তি এবং কুসংস্কারের কারণে তুরস্কের বিষয়ে ফ্রান্সের ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমরা জোর দিয়ে এবং স্পষ্ট করে বলতে চাই; ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো চিন্তা তুরস্কের ছিল না।
বিভিন্ন চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তুরস্কেকে ফ্রান্সের অপরিহার্য মিত্র উল্লেখ করে মেভলুত কাভুসোগলু বলেন, ইসলামফোবিয়া, কুসংস্কার এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য দূর করতে তুরস্ক সব সময় ফ্রান্সের পাশে থাকবে। তুরস্ক ও ফ্রান্স বন্ধু দেশ, ভবিষ্যতেও বন্ধু থাকবে। যেসব বিষয়ে আমরা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সেসব বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে যেন সম্পর্কে ফাটল না ধরে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রাখায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ‘মানসিক পরীক্ষার দরকার’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান।
মুসলমানদের প্রতি ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মনোভাবের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এরদোগান বলেছিলেন, ‘ এমন একজন রাষ্ট্রপ্রধানের বিষয়ে কী বলতে পারেন যিনি ভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষের মানুষের প্রতি এমন (বিদ্বেষমূলক) আচরণ করেন। প্রথমত, তার মানসিক পরীক্ষা করা উচিত। ‘
ম্যাক্রোঁর বিতর্কিত বক্তব্য
গত ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘ধর্ম হিসেবে ইসলাম আজ বিশ্বজুড়ে সংকটে রয়েছে। শুধুমাত্র যে আমাদের দেশেই যে এই ধরনের ঘটনা চোখে পড়ছে তা কিন্তু নয়। তবে আমরা কোনোভাবেই ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিতে কাউকে আঘাত হানতে দেব না। নতুন করে অভিযান চালিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও পাবলিক সেক্টর থেকে ধর্মকে সরিয়ে দেওয়া হবে। নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্য যেসব স্কুল ও মসজিদ বিদেশে থেকে টাকা পায় তাদের ওপর কড়া নজরদারি চলবে। তার ওই বক্তব্যের পর মুসলিম বিশ্বের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
এরদোগান বলেন, ‘ইসলাম সংকটে বলে ম্যাক্রোঁ যে শুধু ধর্মকে অশ্রদ্ধা করেছেন তাই নয়, খোলাখুলি উসকানিও দিয়েছেন। ম্যাক্রোঁ এসব কথা বলে তার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। ইসলামের কাঠামো নিয়ে কথা বলার তিনি কে?’
এরদোগান বলেন, ম্যাক্রোঁ যে সব বিষয়ে কিছুই জানেন না, সেই সব বিষয়ে বলার আগে যেন ভালো করে বিষয়টা জেনে নেন। আমরা চাই তিনি দায়িত্বশীল প্রেসিডেন্টের মতো কাজ করুন। ঔপনিবেশিক গভর্নরের মতো নয়।’
ম্যাক্রোঁ ও এরদোগানের সম্পর্ক
ম্যাক্রোঁ ও এরদোগানের সম্পর্ক এমনিতেই খুব ভালো নয়। যেখানেই তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেখানেই ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।
গ্রিসের সঙ্গে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের বিরোধে গ্রিসের পক্ষে দাঁড়িয়েছে ম্যাক্রোঁ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যাতে তুরস্কের ওপর অবরোধ দেয় তার জন্য আবার আর্মেনিয়া-আজারবাইজান লড়াইয়ে যেখানে আজারবাইজানের পক্ষে তুরস্ক সেখানে আর্মেনিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট।