সোনা কান্তি বড়ুয়া : “অহিংসা পরম ধর্ম এবং বিশ্বে বুদ্ধের বাণী নতুন করে অনুরণিত হউক! শুভ ২৫৬৫তম বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভেচ্ছা বিনিময়। মানব মনে উদীয়মান সকল ধর্ম “শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্ত পুণ্য / করুণাঘন ধরণীতল করহ কলংক শূন্য!”
মানবতা আজ কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী করোনা দ্বারা পীড়িত। হে মোর চিত্ত বৌদ্ধতীর্থে জাগোরে ধীরে / পূজণীয় গৌতমবুদ্ধের বুদ্ধজয়ন্তি স্মৃতির সাগরে তীরে। এক ভাব গম্ভীর বৌদ্ধ ধর্মীয় ঐতিহ্যের পরিবেশে কানাডায় বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ বিহারে ২৫৬৫তম বুদ্ধাব্দের শুভ বুদ্ধজয়ন্তি বর্ষ বুদ্ধ পূর্ণিমা জাতি সঙ্ঘসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এ দিবসটি VISAKHA PUJA (Thailand, Combodia, Laos and Vietnam) বেশাখ (Sri Lanka and Myanmar) দিবসরূপে উদযাপিত হয়েছে। বুদ্ধ পূর্ণিমার বিশ্বমানবতায় উদ্ভাসিত ধরণীতল! পরম পূজণীয় বুদ্ধের বুদ্ধজয়ন্তি, বোধি লাভ, এবং মহা পরিনির্বানসহ ত্রিস্মৃতি বিজরিত বৌদ্ধজগতের পরম পবিত্র বুদ্ধপূর্ণিমা (২৬ মে ২০২১) বৌদ্ধদের মৈত্রী ভাবনা সমারোহে সমাপ্ত হয়েছে। তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ, / তাই তব জীবনের রথ,/ পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীর্তিরে তোমারে,/ বারম্বার। / তাই চিহ্ন তব পড়ে আছে,/ তুমি হেথা নাই।”

বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান কোথায় জানেন কী? নেপালের লুম্বিনিতে। আর সেখানেই এক প্রাচীন মন্দিরে খননকার্য চালানোর সময়ে প্রতœতাত্তি¡করা আবিষ্কার করে ফেলেছেন খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের আরেকটি অজানা কাঠামো। তাদের দাবি অনুযায়ী, এটা পৃথিবীর প্রাচীনতম বৌদ্ধমন্দির বা প্যাগোডা। ইতোপূর্বে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম বৌদ্ধমন্দির ছিলো সম্রাট অশোকের সময়কালের। তবে এখন জানা গেছে যে সেটা এই মন্দিরের অনেক পরে তৈরি হয়, মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে- যখন সম্রাট অশোক আফগানিস্তান থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন।

খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের মত বৌদ্ধ ধর্মানুসারে, বুদ্ধের বোধি লাভ হয় একটি বৃক্ষের নিচে এবং গবেষকেরাও একটি বৃক্ষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মন্দির খুঁজে পেয়েছেন যা প্রাচীন সময়ে তৈরি হয়। আরও বলা হয়, এর আগে ওই এলাকায় (নেপালে) বৃক্ষ কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কোনও মন্দিরের খোঁজ পাওয়া যায়নি। সুতরাং সম্ভাবনা আছে যে এটাই হতে পারে সেই বৃক্ষ যার ডাল ধরে মহামায়া দেবী জন্ম দিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধকে। একটি প্রেস কনফারেন্সে কনিংহ্যাম বলেন, (Priya. Com) এটা এমন এক দুর্লভ মুহূর্ত যেখানে ধর্ম এবং বিজ্ঞান পাশাপাশি অবস্থান করছে। বৌদ্ধ ধর্মানুসারে, রানী মহামায়া দেবী লুম্বিনি বাগানের একটি গাছের ডাল ধরে থাকা অবস্থায় বুদ্ধের জন্ম দেন। গৌতম বুদ্ধ বেড়ে ওঠেন বিলাস ও প্রাচুর্যের মাঝে, কিন্তু ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগী হয়ে তিনি বোধনের সন্ধান শুরু করেন।

“একটি প্রেস কনফারেন্সে কনিংহ্যাম বলেন, এটা এমন এক দুর্লভ মুহূর্ত যেখানে ধর্ম এবং বিজ্ঞান পাশাপাশি অবস্থান করছে। বৌদ্ধ ধর্মানুসারে, রানী মহামায়া দেবী লুম্বিনি বাগানের একটি গাছের ডাল ধরে থাকা অবস্থায় বুদ্ধের জন্ম দেন। গৌতম বুদ্ধ বেড়ে ওঠেন বিলাস ও প্রাচুর্যের মাঝে, কিন্তু ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগী হয়ে তিনি বোধনের সন্ধান শুরু করেন।
আজকের দিনে সমস্ত সমস্যার মূলে Attachment ক্রোধ! গৌতমবুদ্ধের উপদেশ ছিল, “অক্রোধের দ্বারা বিশ্বমৈত্রীতে ক্রোধকে জয় কর।” এই সব মূঢ়¤øান মুখে দিতে হবে ভাষা, / এই সব শ্রান্ত শুস্ক-ভগ্ন বুকে ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা’ নিয়ে দেশ ও দশের মঙ্গল সাধন করার কামনাই বৌদ্ধদের মৈত্রী ভাবনা। বৌদ্ধধর্ম হিন্দুধর্ম নয়! ব্রাহ্মণ ধর্ম হল গোলামী ও হিন্দুধর্ম মানে হল বর্ণ ব্যবস্থা! হিন্দু মানে হল জাতি ব্যবস্থা। হিন্দু ধর্ম নামে হিন্দু মানে হল উঁচু-নীচ ভেদাভেদ। বুদ্ধকে হিন্দুদের নবম অবতার বানিয়ে বর্ণাশ্রমবাদী হিন্দু মন্দিরে ‘বুদ্ধং সরনং গচ্ছামি’ উচ্ছারিত হয় না। হিন্দুধর্মের পূর্বে মহেঞ্জোদারো প্রতœতাত্তিক নিদর্শনে কাশ্যপবুদ্ধের প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে বিরাজমান।

বাংলাদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ দেশের ভিক্ষু সংঘের কাছ থেকে ত্রিশরনসহ পঞ্চশীল প্রার্থনা, নিমন্ত্রিত বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘকে সঙ্ঘ দান, পিন্ডপাত প্রদান, নিমন্ত্রিত উপাসক উপাসিকাগণকে আহার প্রদান এবং পুণ্যানুমোদনের পুণ্য অনুষ্ঠানসমূহ সুচারুভাবে সুসম্পন্ন হয়। মানুষ নিজের ভুবনে নিজেই সম্রাট। জগজ্জ্যোতি বুদ্ধের বিশ্বমৈত্রীতে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্টানসহ সর্ব ধর্মের মানুষ একত্রে মানুষের ভাই-বোন আত্মীয়স্বজন। কোন মানুষ অন্য মানুষের শত্রæ নয়। মানব মনে উদীয়মান সকল ধর্ম সর্বশক্তিমান এবং “যেথায় আছি যে যেখানে / বাঁধন আছে প্রাণে প্রাণে।” কানাডা এবং আমেরিকা দেশের প্রায় আড়াই হাজার বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত হচ্ছে। টাইম ম্যাগাজিনে সর্ব প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ছিল : (টাইম, ১৩ অক্টোবর ১৯৯৭ সাল ) আমেরিকানদের সাথে বৌদ্ধধর্মের আন্তরিক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ” (আমেরিকানস ফ্যাসসিনেশান উইথ বুড্ডিজম) এবং মহামান্য দালাইলামর নিকট সশ্রদ্ধ চিত্তে আমেরিকান স্ত্রী ও পুরুষ দলে দলে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছেন! কলম্বাসের পূর্বে এরিজোনার প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দিরে আমেরিকা আবিস্কারের অজানা ইতিহাস! ১৯০৯ সালে, April 05, উক্ত প্রসঙ্গ নিয়ে এরিজোনার গেজেট পত্রিকায় “Before Colombus, Buddhist Monks discovered America” প্রকাশিত হবার পরও আমরা কেহ উক্ত প্রসঙ্গ নিয়ে মাথা ঘামাইনি!

বাংলাদেশে এ বৎসর ও কোন সরকারি প্রোগ্রাম হচ্ছে না। পৃথিবী কখন স্বাভাবিক হয় কে জানে? ২৬০০ বছর পূর্বে বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস জুড়ে গৌতমবুদ্ধ বিরাজমান। আশি বছর বয়সে পরম পূজণীয় গৌতমবুদ্ধ মহাপরিনির্বান লাভ করলেন। পূজনীয় বুদ্ধের ভাষায়, ‘অতএব, আনন্দ, তোমরা আত্মদ্বীপ হয়ে, আত্মশরণ হয়ে, অনন্যশরণ হয়ে বিহার (জীবন যাপন) কর, ধর্মদ্বীপ, ধর্মশরণ, অনন্যশরণ হও। আনন্দ, ((The Great Buddhist Monk) কিরূপে ভিক্ষু আত্মদ্বীপ, আত্মশরণ, অনন্যশরণ; ধর্মদ্বীপ, ধর্মশরণ, অনন্যশরণ হয়ে বিহার করেন? ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মেডিটেশন (বৌদ্ধধ্যান প্রণালী) আজ মানব চিত্তের একমাত্র ঔষধ।

গৌতমবুদ্ধের অহিংস নীতিতে দীক্ষা নিয়ে সম্রাট অশোকের (After three hundred years of Lord Buddha) মানবাধিকারের ঘোষণা ছিল ”অহিংসা পরম ধর্ম” শিলালিপিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ভাষায় , “জগতের মধ্যে শ্রেষ্ট সম্রাট অশোক আপনার যে কথাগুলিকে চিরকালের শ্রুতিগোচর করিতে চাহিয়া ছিলেন, তাহাদিগকে পাহাড়ের গায়ে খুদিয়া দিয়াছিলেন। ভাবিয়া ছিলেন, পাহাড় কোনকালে মরিবে না, সরিবে না, অনন্তকালের পথের ধারে অচল হইয়া দাঁড়াইয়া নব নব যুগের পথিকদের কাছে এক কথা প্রতিদিন ধরিয়া আবৃত্তি করিতেই থাকিবে। পাহাড়কে তিনি কথা কইবার ভার দিয়াছিলেন। তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ, / তাই তব জীবনের রথ,/ পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীর্তিরে তোমারে,/ বারম্বার। / তাই চিহ্ন তব পড়ে আছে,/ তুমি হেথা নাই।”
মহামতি সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারত গোলেমালে হিন্দু ইন্ডিয়া এবং মুসলমান পাকিস্তান হল কেন? সারা দিন রাত জুড়ে বৌদ্ধধর্মের বিরুদ্ধে হিন্দুরাজনীতি অসংখ্য ষড়যন্ত্র করে চলেছে। মনস্তত্বের দৃশ্যকাব্যের মতো মানব সভ্যতা বা মানব জাতির জীবন নদী স্থির নয়, সদা অনিত্য পরিবেশে চল ও চলমান। বিশ্বপ্রবাহের নির্মমতা আজ প্রাচীন হিন্দুরাজনীতির বৈদিক সভ্যতার মানবাধিকারহীন জাতিভেদ প্রথাকে কাঁধে চাপড়িয়ে একবিংশ শতাব্দীর মহাকালের মোহনায় দাঁড় করায়। বিশ্বকোষ (১৩শ ভাগ, পৃষ্ঠা ৬৫) থেকে একটি ঐতিহাসিক উদ্ধৃতি উল্লেখ করা গেল, “কিয়ৎকাল পরে সিদ্ধার্থ গুরুগৃহে গমনের পূবেই তিনি ব্রাহ্মী বঙ্গলিপিসহ ৬৪ প্রকার লিপি অবগত ছিলেন।”

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব এন্টোনিও গোতরেস সমগ্র পৃথিবীকে বুদ্ধের প্রদত্ত শিক্ষা পালন করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন (বুদ্ধ পূর্ণিমার ঠিক আগে)! তিনি বলেছেন যে, আজ হতে আড়াই হাজার বছর পূর্বে ভগবান বুদ্ধ ‘সঙ্ঘং সরণং গচ্ছামি’ বা একতাবদ্ধ হয়ে থাকার কথা বলেছিলেন। একতাবদ্ধ থেকে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ বৈষম্য ভুলে একে অপরকে সাহায্য করতে, সহানুভূতি প্রদর্শন করতে এবং মানব তথা সমস্ত জীবকে সেবা করতে শিক্ষা দিয়েছিলেন। এজন্য আজ বুদ্ধের বার্তা অতীব মহত্বপূর্ণ ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-১৯ এর কারণে আজ মানবতা বিপন্ন হতে চলেছে।’

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বলেছেন- ‘যখন আমরা ভগবান বুদ্ধের জন্ম, তাঁর বুদ্ধত্ব লাভ এবং তাঁর মহাপরিনির্বাণ স্মরণ করছি, তখন তাঁর শিক্ষা হতেই আমাদেরকে অধিকতর প্রেরণা নেওয়া উচিত। মানবতা আজ কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী দ্বারা পীড়িত। এরকম পরিস্থিতিতে বুদ্ধ বলেছেন- ‘শরীরধারী সকল মনুষ্যই রোগগ্রস্থ।’ এজন্য আমিও রোগগ্রস্থ। গোতরেস তাই বলেছেন- ‘ভগবান বুদ্ধের একতাবদ্ধ হয়ে একে অন্যের সেবা করা, পাশে থাকার শিক্ষা পূর্ব হতেও; বর্তমানেও অধিকতর মহত্বপূর্ণ প্রমাণিত হচ্ছে। সেজন্য আমরা সবাই মিলেই কোরোনা ভাইরাসকে নির্মূল করতে পারব এবং এ সঙ্কটের সমাধান করতে সক্ষম হব। পবিত্র এ বেশাখ দিবসে সমগ্র বিশ্ববাসীর প্রতি আমার এ আবেদন রইল।’ বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে গৌতমবুদ্ধকে সশ্রদ্ধ বন্দনা নিবেদনের নৈবেদ্য সাঁজিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ভাষায় :

“হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বি নিত্য নিঠুর দ্ব›দ্ব
ঘোর কুটিল পন্থ তার লোভ জটিল বন্ধ।
নতুন তব জন্ম লাগি কাতর যত প্রাণী
কর ত্রাণ মহাপ্রাণ আন অমৃত বাণী
বিকশিত করো প্রেম প্রদ্ম চিরমধু নিষ্যন্দ
শান্ত হে মুক্ত হে, হে অনন্ত পুণ্য
করুণাঘন ধরণীতল করহ কলংক শূন্য
এস দানবীর দাও ত্যাগ কঠিন দীক্ষা
মহাভিক্ষু লও সবার অহংকার ভিক্ষা।
দেশ দেশ পরিল তিলক রক্ত কলুষ গøানি
তব মঙ্গল শঙ্খ আন, তব দক্ষিণ পাণি
তব শুভ সঙ্গীতরাগ, তব সুন্দর ছন্দ।
শান্ত হে মুক্ত হে, হে অনন্ত পুণ্য
করুণাঘন ধরনীতল করহ’ কলঙ্ক শূন্য। ”
বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে গৌতমবুদ্ধকে সশ্রদ্ধ বন্দনা নিবেদনের নৈবেদ্য সাঁজিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী” গানটি বুদ্ধ জন্মোৎসব ২১ শে ফাল্গুন, ১৩১৩ বঙ্গাব্দ মহামানব বুদ্ধের নামে উৎসর্গ করেছিলেন!

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অঙ্গনে চীন, জাপান, কোরিয়া, তিব্বত, Mongolia Singapore, Malyasia শ্রীলংকা, ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, মায়ানমার কম্বোডিয়া, ঞযধরষধহফ লাওস এবং কানাডায় বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ বিহারে গৌতম বুদ্ধের জীবন ও দর্শনের বিভিন্ন দৃশ্যাবলীর সচিত্র প্রদর্শণী অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৬ মে ২০২১!
প্রায় ২৬০০ বছর পূর্বে বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতমবুদ্ধ (রাজপুত্র সিদ্ধার্থ) বাল্যকালে যে বাংলা লিপি অধ্যায়ন করেছিলেন তা বাংলা বিশ্বকোষে (১৩শ ভাগ, পৃঃ ৬৫ ) সগৌরবে বিরাজমান সত্তে¡ ও হিন্দুরাজনীতি বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের নাম বাদ দিয়ে হিজরি সাল নিয়ে মিথ্যা বঙ্গাব্দ রচনায় ইতিহাস কলঙ্কিত হয়।
বিশ্বের ধর্ম প্রচারকদের মধ্যে একমাত্র গৌতমবুদ্ধ (রাজপুত্র সিদ্ধার্থ) ২৬০০ বছর পূর্বে বঙ্গলিপি অধ্যয়ন করার গৌরবোজ্জ্বল কাহিনীর সচিত্র খন্ডচিত্রের ইতিহাস ভারতের অজন্তা গুহায় আজ ও বিরাজমান।
বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্মৃতির মনিমালায় পোড়ামাটির শিল্পকর্মে “গৌতমবুদ্ধ ধর্মচক্র মূদ্রায়” আজ ও বাংলাদেশে বিরাজমান। ধর্মচক্র মূদ্রা বা ভূমিস্পর্শ মূদ্রায় বজ্রসত্ত¡ বা বুদ্ধকে বর্ণনা করার মতো কলম, অথবা এঁকে দেখাবার মতো তুলি আমার নেই। শুধু আমি আমার বিদ্যাবুদ্ধিতে এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের বুদ্ধমূর্তির চিত্রে এমন একটা কিছু আছে যার জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা যায়। বাব বার ফিরে ফিরে এঁকে দেখলে ও চোখ ক্লান্ত হয় না, পীড়িত হয় না। বাংলাদেশে একাধিক বুদ্ধমূর্তি আছে যা নাকি শুধু বিভিন্ন পদার্থ দিয়ে বানানো নয়, যেন তাঁর মধ্যে হাজার বছর ধরে বন্দী হয়ে আছে শিল্পীর অনুক্ত কথা, একটি অপ্রকাশিত ধ্যানের মন্ত্র। যা খোলা নয়, ঢাকা। গৌতমবুদ্ধের বিশ্বমৈত্রীতে উদ্ভাসিত ধরনীতল!
ব্রাহ্মণরাজ প্রতিষ্ঠা করতে হিন্দুরাজনীতি এবং সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গের বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ কেন ? পুষ্যমিত্র শুঙ্গ ্ হিন্দু লেখকগণ দশরথ জাতক (৪৬১) বদলায়ে হিন্দু রামায়ন এবং ঘট জাতককে (৪৫৪) বদলায়ে হিন্দু LIFE OF SRI KRISNA IN THE MAHABHARATA বানিয়েছে ! উক্ত হিন্দু রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের বত্রিশ নম্বর শ্লোকে গৌতমবুদ্ধকে চোর এবং বৌদ্ধদেরকে নাস্তিক বানিয়েছে। হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধ ধর্মচক্রকে বদলায়ে অশোকচক্র বানিয়েছে এবং সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারতকে হিন্দু ভারত করেছেন। গৌতমবুদ্ধের উপদেশ ছিল, “যে আমার দেহকে দেখে সে আমাকে দেখেনা, যে আমার উপদেশ মেনে চলে সে আমাকে দেখে ও মেনে চলে।“

বাঙালি বৌদ্ধ সংস্কৃতির গভীর প্রভাব তিব্বতি বজ্রযানী বৌদ্ধধর্মে আজ ও বিরাজমান। হাজার বছর পূর্বে তিব্বতি ভাষায় চর্যাপদের ৮৪ জন সিদ্ধার্যদের জীবনী লিপিবদ্ধ হয়েছিল।
জনতার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, বুদ্ধং সরনং গচ্ছামি’!
বুদ্ধ গয়া বৌদ্ধদের পূজনীয় পরম তীর্থভুমি
বিধর্মীরা হিংসা করে বোমা মারলে তুমি?
হে মোর চিত্ত বৌদ্ধ তীর্থে জাগোরে ধীরে
গৌতমবুদ্ধের স্মৃতির সাগরে তীরে।
রাজশাহীর পাহাড়পুর এবং বগুড়ার মহাস্থানগড়ে
গৌতমবুদ্ধের শিক্ষা দীক্ষা ছিল বিশ্বশান্তির তরে।
সিদ্ধার্থের রাজসিংহাসন ত্যাগ মানব কল্যাণে
মনের আঁধার জয়ী বুদ্ধ গয়ার উরবিল্ব বনে।
লোভকে জয় করা সহজ কাজ নয়
বোধিবৃক্ষতলে বুদ্ধত্ব লাভ মারের পরাজয়।

গৌতমবুদ্ধের স্মৃতি ভাসে পুন্ড্রবর্ধন ও রমনার বটমূলে।
পাহাড়পুরে সোমপুরী মহাবিহার, মহাস্থানে বুদ্ধভগবান,
বাংলাদেশে ছিল মৈত্রীর অভিনব বাতাবরণ।
রাজশাহীর পাহাড়পুর এবং বগুড়ার মহাস্থানগড়ে
গৌতমবুদ্ধের শিক্ষা দীক্ষা ছিল বিশ্বশান্তির তরে।
সিদ্ধার্থের রাজসিংহাসন ত্যাগ মানব কল্যাণে
মনের আঁধার জয়ী বুদ্ধ গয়ার উরবিল্ব বনে।
লোভকে জয় করা সহজ কাজ নয়
বোধিবৃক্ষতলে বুদ্ধত্ব লাভ মারের পরাজয়।
আবেগ ছোঁয়া স্বপ্নমায়ায় প্রথম বাংলা বই চর্যাপদ,
চুরাশি সিদ্ধার শূন্য নৌকায় বজ্রযোগীনি মহাসুখ পথ।
ধর্ম কোলাহলে কি বাংলাভাষার পুষ্ঠি ও বিকাশ?
ব্রাক্ষণ্য ধর্মের সাথে বৌদ্ধধর্মের যুদ্ধ হ’ল প্রকাশ।

ছুটে চলা রমনা পার্ক থেকে নেপালের লুম্বিনী উদ্যানে
গিয়ে দেখি রাজপুত্র সিদ্ধার্থ বিশ্বমৈত্রী ফেলা আসা দিনে।
বোধিসত্ত¡ তারা দেবীর ওরার মতোই বরফের আবরন,
চীন তিব্বতের তারা দেবী কেন বাংলায় কালূ রূপে বিচরণ?
ইতিহাসের সূত্র বিশ্লেষনে দেখা যে, গং. স্মৃতিকণা হাওলাদার লিখেছেন, “১৮৫ খৃষ্ট পূর্বের কথা সেদিনটা ছিল স্মরনীয় দিন।মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রোথের (Fifth Generation of the Emperor Asoka) রাজ্যাভিষেক। চারিদিকে চলছে তার প্রস্তুতি।বালক বৃহদ্রোথ এবং সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গের পুত্র অগ্নিমিত্র তরবারি নিয়ে অনুশীলনে ব্যস্ত। শূঙ্গ বংশের গুরুদেব পতঞ্জলি পূষ্যমিত্রকে বলে এইতো সূযোগ বৃহদ্রোথকে হত্যা করে ব্রাহ্মণরাজ প্রতিষ্ঠা করার। ঠিক হলোও তাই এমন ভাবে হত্যা হোলো যেন অঘটন ঘটেছে। কিন্তু কিছু মানুষের মধ্যে গুঞ্জন রয়েই গেল হত্যা নিয়ে। সুতরাং পূষ্যমিত্র সমস্ত ঘটনা ঢাকা দেওয়ার জন্য পাটলিপুত্র রাজধানী পরিবর্তন করে বিদিশায় প্রতিস্থাপন করলেন। “

আমার দেশ আমার পরম তীর্থভূমি এবং মানবাধিকারই সর্বকালের ধর্মের মূলমন্ত্র। তুমি ব্রাহ্মণ যে মানব, অখন্ড মানব জাতি সেই মানব ! কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২) ! প্রায় ৫ হাজার পূর্বে বৈদিকপূর্ব চক্রবর্তি রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো বোধিসত্তে¡র (Maha Sudarshan) প্রতœতাত্তিক নিদর্শন মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে বিরাজমান। বৈদিক রাজা ইন্দ্র প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধ নগরদ্বয় মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা ধ্বংস করার পর প্রাচীন ভারতে বৈদিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (লেখক স্বপন বিশ্বাসের লেখা ইংরেজি বই ‘বৌদ্ধধর্ম’ মহেঞ্জোদারো হরপ্পার ধমর্, কলিকাতা ১৯৯৯)! মহেঞ্জোদারো কাশ্যপবুদ্ধের ইতিহাস এবং বৌদ্ধ প্রতœতত্ত¡ নিদর্শনে স্থাপত্যশৈলীতে ধ্যানমগ্ন রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো বোধিসত্ত¡ (Maha Sudarshan in the Mahhaparinibbana Sutta) বিরাজমান! নেপালে কাশ্যপবুদ্ধের বৌদ্ধনাথ্ শীর্ষক বিরাটকায় বৌদ্ধ স্তুপ Kathmandu কাঠমান্ড়ু নগরে বিরাজমান ১
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!