স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী মাঠে ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে তুলে চলে এসেছেন আলোচনায়। মূল একাদশে না থাকলেও ম্যাচের শেষদিকে ৮২ মিনিটে স্প্যানিশ আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার আয়োজে পেরেজের জায়গায় মাঠে নামেন হামজা। ইংল্যান্ডের তো বটেই, এফএ কাপকে গোটা বিশ্বেরই প্রাচীনতম ফুটবলীয় প্রতিযোগিতা মানা হয়। সে টুর্নামেন্ট বাংলাদেশি কিংবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কেউ জিতবেন, এত দিন অবিশ্বাস্য বলে মনে হতো। হামজার কল্যাণে এখন বাংলাদেশিদের সে স্বপ্নও বাস্তব। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এফএ কাপের স্বাদ পেলেন হামজা। তবে মিনিট দশেক মাঠে থাকা হামজা মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন ম্যাচ শেষে উদ্‌যাপনের সময়।

দলের মুসলিম সতীর্থ ফরাসি ডিফেন্ডার ওয়েসলি ফোফানার সঙ্গে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে নিয়ে ম্যাচের পর গোটা ওয়েম্বলি প্রদক্ষিণ করেছেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটার ওপর ইসরায়েলিদের হামলার প্রতিবাদ এভাবেই জানিয়েছেন দুজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে সেই ছবি আর ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। হামজার সে ছবি এক চোখ, দুই চোখ হতে হতে পৌঁছেছে বিশ্বখ্যাত ইংলিশ রক ব্যান্ড ‘পিঙ্ক ফ্লয়েড’-এর কিংবদন্তি গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট রজার ওয়াটার্সের চোখে। হামজার ছবি পোস্ট করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি।

হামজার ছবি পোস্ট করা একজনের টুইট রি-টুইট করে ওয়াটার্স লিখেছেন, ‘হামজা চৌধুরী, আমার নায়ক তুমি। এগিয়ে যাও ফক্সেস (লেস্টারের ডাকনাম)! আগামী শনিবার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাঁটু গেড়ে বোসো। রজারের পক্ষ থেকে ভালোবাসা।’

হামজার জন্ম ইংল্যান্ডে। তবে বাঙালি পরিবারে জন্ম হওয়ার সুবাদে বাংলার আলো-বাতাস তাঁর চেনাই বলা চলে। মা রাফিয়া বাংলাদেশি। বাংলাদেশে হবিগঞ্জের বাহুবল থানার স্নানঘাট গ্রামে তাঁর নানা বাড়ি। ছয় মাস বয়স থেকে পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে যাতায়াত শুরু। বাংলাদেশে এসেছেন প্রায় ২০ বার। সর্বশেষ এসেছিলেন প্রায় ছয় বছর আগে। এর আগে ইংল্যান্ডের জার্সিতে খেলেছেন অনূর্ধ্ব– ২১ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে।

বিশ্ব ফুটবলের মুসলিম তারকারা এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অত্যাচারের শিকার ফিলিস্তিনে পক্ষ নিয়েছেন। ইউরোপিয়ান লিগে খেলা পল পগবা, মোহাম্মদ সালাহ, রিয়াদ মাহরেজ থেকে আচরাফ হাকিমিরা নিজ নিজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করে। যদিও ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্যায়ে হামজার হাত ধরেই চলমান আগ্রাসনের প্রতিবাদ করতে দেখা গেল।

রোববার রাতে জায়ান্ট চেলসির বিপক্ষে ১-০ গোলের ব্যবধানে জয় পায় লেস্টার।

হামজা চৌধুরীর সঙ্গে দলটির হয়ে খেলা ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার ওয়েসলে ফোফানাও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে তুলে নেন।

ডেইলি মেইল, দ্য মিরর, ফার্স্টপোস্ট, আইরিশ টাইমস থেকে আল জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটরের মতো গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এমনকি চোখ এড়ায়নি দ্য টাইমস অব ইসরায়েলেরও।

এই ঘটনার পর ইংল্যান্ডে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হুসাম জমলট দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে হামজাদের আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

চিঠিতে তিনি বলেন, ‘এফ এ কাপের শিরোপা জয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্তে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে তুলে নেন হামজা চৌধুরী ও ওয়েসলে ফোফানাও। ফিলিস্তিনি সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে জানাই গভীর কৃতজ্ঞতা।’

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনের পতাকা ফুটবলের অন্যতম শীর্ষ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তুলে ধরে সংগ্রামী জনতার পক্ষ নেয়ায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’

শুভেচ্ছা জানিয়ে জমলট হামজাদ বলেন, ‘শিরোপা জেতায় আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আশাকরি একদিন লেস্টার সিটি ক্লাব স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী জেরুজালেমে খেলবে।’