অনলাইন ডেস্ক : চীন থেকে বাংলাদেশ টিকা কিনতে চেয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রদূত ‘যে মন্তব্য করেছেন’ সেটি দু:খজনক বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আজ মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থ দেখেই সঠিক সময়ে চীনের টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে টিকার ব্যাপারে চীনা রাষ্ট্রদূত মে মন্তব্য করেছেন সেটি দু:খজনক।
আগামীকাল বুধবার সিনোফার্মের তৈরি পাঁচ লাখ করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ এর টিকা দেশে আসবে। বিষয়টি গতকাল সোমবার জানান চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এ সময় তিনি বলেন, অনেক দেশে চীনের টিকার চাহিদা রয়েছে জানিয়েছে। তবে, বাণিজ্যিকভাবে যেটা বাংলাদেশ পেতে চায়, সেই টিকা পেতে বাংলাদেশের সময় লাগবে। তাছাড়া বাংলাদেশ এক সপ্তাহ আগে শুধু সিনোফার্মের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনের উপহারের টিকার জন্য বাংলাদেশকে ৩ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। অথচ এই অনুমোদনের জন্য দীর্ঘ তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে টিকা পেতে বাংলাদেশ ৩০ এপ্রিল প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ আগেই অনুমতি দিলে চীনের টিকা আগে পেত।
চীনা রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্যকেই দু:খজনক বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ বিষয়টি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের কৌশলগত জোট ‘কোয়াড’-এ যোগ দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে চীনা রাষ্ট্রদূত আগ বাড়িয়ে কথা বলেছেন, যেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আমরা নির্ধারণ করি। যেকোনো দেশ তার বক্তব্য তুলে ধরতে পারে। দেশের মঙ্গলের জন্য আমরা কী কাজ করব না করব, আমাদের মৌলিক অবস্থানের ভিত্তিতে আমরা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’
চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘চীনের রাষ্ট্রদূত তার দেশের অবস্থানের কথা বলেছেন। যে প্রতিষ্ঠানের কথা উনি বলছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের (কোয়াড) কেউই এখনো আমাদের অ্যাপ্রোচ করেনি। এটি একটু আগ বাড়িয়ে বলাবলি হয়েছে। তবে এটা নিয়ে বিশেষ বক্তব্য নেই। এমনিতে চীন কখনো অন্যের বিষয়ে নাক গলায় না। আর এ রকম অ্যাগ্রেসিভ কখনো কাউকে বলতে শুনিনি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা কী করব, না করব সেটা আরেকজন বড় করে বলছেন। দেশের মঙ্গলের জন্য যেটা প্রয়োজন, সেটাই আমরা করব।’
তিনি বলেন, ‘চীনের কাছ থেকে আমরা এ ব্যবহার আশা করিনি।’ চীনের রাষ্ট্রদূতকে এ বক্তব্যের জন্য কোনো বার্তা দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কী করি না করি, সেটা সব সময় মিডিয়াকে বলি না। উই হ্যাভ ডিফারেন্ট ওয়ে অব ডুয়িং থিঙ্কস। আমরা জানি, আমরা কী করব। সবকিছু বলে দিলে তো মহামুশকিল।’
২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া কোয়াড উদ্যোগ সম্প্রতি বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। এ ইস্যুতে গতকাল সোমবার বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এ জোটকে চীনবিরোধী একটি ছোট গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে বেইজিং। তাই চীন মনে করে, এতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে ‘যথেষ্ট খারাপ’ করবে।
বিষয়টি নিয়ে আজ কথা বলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকও। তিনি বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্র নীতি, আমরাই ঠিক করবো, চীনা রাষ্ট্রদূত কি বললো সেটাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না।’
অনুষ্ঠানে নেপালকে বাংলাদেশের দেওয়া বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাাদিত ৫০০০ ভায়াল রেমডেসিভির ইনজেকশন এবং অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস উৎপাদিত হাইড্রোক্লোরোকুইন ট্যাবলেট হস্তান্তরের জন্য প্রতীকী বক্স ঢাকায় নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূতের হাতে তুলে দেয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নেপালের ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বংশীধর মিশরা, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব লোকমান মিয়াও উপস্থিত ছিলেন।