অনলাইন ডেস্ক : কানাডায় প্রথম বারের মতো করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে। কোভিড-১৯ এর নতুন ধরণ নিয়ে দেশটি বিপাকে রয়েছে। টিকা দানের হার বাড়িয়েও দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ রাখা যাচ্ছে না। কোনো কোনো অঞ্চলে সংক্রমণের হার যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের হারের কাছাকাছি। আবার কোনো কোনো অঞ্চলে তা যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে বেশি। করোনার তৃতীয় প্রবাহে আসা নতুন ধরণটি অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের আক্রান্ত করছে বেশি। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগির সংখ্যাও বাড়ছে।

গত মঙ্গলবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২ ডোজ টিকা নিয়েছে মোট জনসংখ্যার ১৯.৬%। ব্রিটেনে এই হার ৮.৫% আর কানাডায় মাত্র ২%। এই প্রেক্ষাপটে কানাডায় টিকা কর্মসূচী আরো জোরদার করা হয়েছে। গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, কোভিড-১৯ এর তৃতীয় ঢেউ (থার্ড ওয়েভ) বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশ মারাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। এই মুহূর্তে কানাডাও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে আছে।

জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হিসাব অনুযায়ী, কানাডায় এ পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি করোনা রোগি শনাক্ত হয়েছে এবং ২৩ হাজারেরও বেশি জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিবেশি যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩১ মিলিয়ন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৫ লাখ ৫৯ হাজারেরও বেশি।

জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির চলতি সপ্তাহের হিসাব অনুযায়ী কানাডায় প্রতি ১ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ১৮০ জন করোনা শনাক্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রতি মিলিয়নে ১৮০ জন করে আক্রান্ত হচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রতি মিলিয়নে আক্রান্তের হার ১৯৫ জন। গত জানুয়ারিতে দেশটিতে এই হার ছিল ৭০০ জন। অর্থাৎ গত ৪ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু কানাডায় কেন আক্রান্তের হার বাড়ছে? অন্টারিও হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যান্থনি ডেলা বলেন, যে কোন কারণেই হোক আমাদের সার্বিক কার্যক্রমে কিছু ঘাটতি রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশি যুক্তরাষ্ট্র এই মহামারি প্রতিরোধে যে ধরনের সমন্বিত ব্যবস্থা নিয়েছে আমরা তা পারিনি। অবশ্য শুরুতে তারা যে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়েছিল তাতে তাদের অভিজ্ঞতাও সমৃদ্ধ হয়েছে। যাই হোক, অতীতের চাইতে আমি ভবিষ্যত নিয়েই বেশি চিন্তিত। আমরা যদি এখনো সঠিক পদক্ষেপ না নিতে পারি তাহলে আমাদের জন্য আরো বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। কানাডার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে দেশটিতে ১৬ হাজারেরও বেশি ধরনের করোনা রোগি শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৯০% যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম শনাক্ত হওয়া ধরণটির মতো। বাকি ধরণগুলো নতুন প্রকৃতির। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল ভেরিয়েন্ট ও সাউথ আফ্রিকা ভেরিয়েন্ট। কানাডায় গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রাজিল ভেরিয়েন্ট শনাক্তের হার দ্বিগুণ হলেও সাউথ আফ্রিকা ধরণ আক্রান্ত পাওয়া গেছে ৩০০ জন।

দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আঘাতের পর জনসাধারণের চলাচলে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সবচেয়ে জনবহুল ওন্টারিও প্রদেশে (জনসংখ্যা ১৪ মিলিয়ন) ৪ সপ্তাহের কঠোর লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। কুইবেকের প্রধান তিনটি শহরে ১ এপ্রিল থেকে শপিংমল ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে জনপ্রিয় জাতীয় হকি লীগের (এনএইচএল) সব খেলা পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন দলের ২৫ জন খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা আক্রান্ত হওয়ার পর ওই ঘোষণা দেওয়া হয়।
সবার মনেই এখন প্রশ্ন- সংক্রমণের এই হার রোধের উপায় কী? কেউ বলছেন সচেতনতার কথা। আবার কেউ বলছেন শুধু সচেতন হলেই হবে না, এর পাশাপাশি ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামও জোরদার করতে হবে। কানাডা সরকার পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহ করলেও তা প্রদানের হার খুবই ধীর।

ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর অ্যান্ডু মরিসের মতে, কানাডায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হয়েছে একটু দেরিতে। আবার এখন এই কার্যক্রম চলছে ধীর গতিতে। এসব কারণেই দেশটিতে সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, করোনার নতুন ধরণটি স্বাস্থ্যকর্মীদেরও রেহাই দিচ্ছে না। ইতিমধ্যে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আমরা যেভাবে ভ্যাকসিন প্রোগাম চালিয়ে যাচ্ছি সেভাবে চলতে থাকলে হবে না। আমাদের আরও একটিভ হতে হবে এবং জনগণকে সচেতন করতে হবে। সূত্র : বিবিসি