অনলাইন ডেস্ক : সরু চালের পর এবার মোটা ও মাঝারি মানের চাল ইরি/স্বর্ণা, পাইজাম ও লতার দামও বাড়ল। শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে দুই টাকা করে বেড়েছে। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহের মধ্যেই দুইবার বাড়লো চালের দাম। প্রতি বছর ধানের মৌসুমের সময় চালের দাম কমে। কিন্তু এবার সদ্য সমাপ্ত আমনের মৌসুমেও চালের দাম কমেনি। বরং উলটো বেড়েছে এবং এখনো বাড়ছে।
এদিকে শুধু চালের দামই নয়, গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, আদা ও ব্রয়লার মুরগিও। এছাড়া গত প্রায় দুই মাস ধরেই ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির। কিন্তু কেন বাড়ছে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম তা যেন কারোরই জানা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছর কোনো কারণ ছাড়াই রমজানে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। এবার রমজানের এক/দেড় মাস আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন। যাতে রমজানে দাম বাড়ানোর জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে না হয়। সরকারের বিপণন সংস্থা টেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল শুক্রবার তাদের দৈনন্দিন বাজারদরের প্রতিবেদনে জানায়, মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা কেজিতে দুই টাকা করে বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে দুই টাকা বেড়ে মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৮ টাকা। তবে সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেটের দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা উল্লেখ করলেও রাজধানীর বিভিন্ন খুচরাবাজারে দেখা গেছে তা বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকায়। টিসিবির হিসেবে গত এক বছরে মোটা চালের দাম ৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, সরু চালের দাম ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ ও মাঝারিমানের চালের দাম ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ১৬ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নিলেও অত্যন্ত ধীরগতিতে আসছে সেই চাল। এর মধ্যে বেসরকারিভাবে যাদের চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই মিল মালিক। তাদের একটি অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে ধীরগতিতে চাল আমদানি করছে। অন্যদিকে স্থানীয় বাজারে তারাই চালের দাম বাড়াচ্ছে। তবে চাল আমদানিকারকরা বলেছেন, আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এছাড়া সীমান্তে জ্যামসহ বিভিন্ন কারণে ভারত থেকে চাল আসতে দেরি হচ্ছে।
গতকাল তুরাগ এলাকার নতুন বাজারের চাল বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, গত কিছুদিন ধরেই চালের দাম বাড়তি। পাইকারী বাজারে সব ধরনের চালের দাম বাড়ায় খুচরাবাজারেও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
চালের পাশাপাশি গত কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে আলু, পেঁয়াজ, আদা ও মুরগির। প্রতি কেজি আলুতে দুই টাকা বেড়ে ১৬ থেকে ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মানভেদে পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে পাঁচ টাকা। এরমধ্যে দেশি পেঁয়াজের কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজে দুই টাকা বেড়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকৃত আদার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মানভেদে ৭০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম গত সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাওরান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী বেলাল আহমেদ বলেন, ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে এক দিনের বাচ্চা ২০/২২ টাকা থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। এছাড়া এখন বিয়ে, পিকনিক, ফ্যামেলি ডেসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। ফলে মুরগির চাহিদা বেড়েছে। এসব কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে।
এদিকে নতুন করে ভোজ্য তেলের দাম না বাড়লেও এখনো উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে রান্নার অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্যটি। গতকাল খুচরাবাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ও খোলা সয়াবিন ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া সুপার পাম অয়েল ১০৫ থেকে ১০৭ টাকা লিটার বিক্রি হয়। গত এক বছরের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনে ৩৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, বোতলজাত সয়াবিনে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও সুপার পাম অয়েলে ৩৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার কথা জানালেও কবে নাগাদ কমতে পারে এ ব্যাপারে কোনো আশার কথা শোনাননি ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সারা বছর ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ টন হলেও শুধু রমজানেই পণ্যটির চাহিদা আড়াই থেকে ৩ লাখ টন। এ অবস্থায় রমজানে ভোজ্য তেলের সরবরাহ বাড়াতে এখনই উদ্যোগ না নিলে এর বাজার অস্থির করার সুযোগ নেবে অসাধু চক্র।