অনলাইন ডেস্ক : সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সখ্যতার কারণে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তার যুগ এখন অতীত। যুক্তরাষ্ট্রে এখন জো বাইডেন যুগ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করবে। সেই সম্পর্ক মোহাম্মদ বিন সালমানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে নাকি তার পিতা বাদশা সালমানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে- সেটাই এখন আলোচনার বিষয়। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সৌদি আরবের ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এখন নতুন করে সম্পর্ক গড়তে গেলে তিনি কোনদিকে মোড় নেবেন সেটাই দেখার বিষয়। তবে তিনি সৌদি আরবের বাদশা সালমানের সঙ্গেই সম্পর্ক জোরালো করার উপর জোর দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।
এ নিয়ে মঙ্গলবার তার প্রেস সেক্রেটারি জেন পসাকি বলেছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করতে যাচ্ছি। এর কিছু অংশ হবে সমকক্ষ-সমকক্ষ আলোচনা। এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমকক্ষ হলেন সৌদি আরবের বাদশা সালমান।
এমন সমকক্ষ বনাম সমকক্ষ আলোচনার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিবর্তে ক্রাউন প্রিন্সের আলোচনা বা সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে। এ বিষয়টি জানেন এমন এক সূত্র এ কথা জানিয়েছে। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের অফিসিয়াল দায়িত্ব হলো উপপ্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ২০১৫ সালে তিনি ক্ষমতায় আসার পর তার ওপর বিপুল পরিমাণ দায়দায়িত্ব। কারণ, তার পিতা সালমানের বয়স এখন ৮৫ বছর। তার অবর্তমানে তাকেই দেশ চালাতে হবে। এ অবস্থায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তাকে পুনর্মূল্যায়ন করবে জো বাইডেন- তার প্রেস সেক্রেটারি জেন পসাকির মন্তব্যে সেটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি আরবের দিকে হাত বাড়িয়েছিলেন তার একটি কৌশল নিয়ে। তিনি সৌদি আরবকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যনীতি কার্যকর করার জন্য এমন কৌশল নিয়েছিলেন। আর তাই তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সৌদি আরবকে। কিন্তু সে অধ্যায় এখন অতীত। বাইডেন প্রশাসনের প্রথম কয়েক দিনেই সৌদি আরবের কাছে বেশ কিছু অস্ত্র বিক্রি থামিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন ইয়েমেন যুদ্ধ থামানোর প্রচেষ্টা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন সৌদি আরবের মানবাধিকার রেকর্ড উন্নত করারও আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কর্মকর্তা এবং কার্নেজ এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর সিনিয়র ফেলো অ্যারোন ডেভিড মিলার বলেছেন, এর অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব সম্পর্ক অধিক কাঠামোর ভিত্তিতে এবং নিয়মিত চ্যানেলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি আরো বলেন, এটা হলো ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য একটি চপেটাঘাত। প্রশাসন দেখতে পেয়েছে তিনি বেপরোয়া ও নিষ্ঠুর। বাদশা সালমানের স্বাস্থ্য ভাল নেই। তার মানে এই নয় যে, বাদশাকে বাদ দিয়ে ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে মূল যোগাযোগ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব সম্পর্ক পুরোপুরি ভেঙে যায়নি। বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরানের আগ্রাসন থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সৌদি আরবকে তারা ভালভাবে সমর্থন দেবে। সৌদি আরবের নেতৃত্বে প্রতিবেশী ইয়েমেনে যে যুদ্ধ হচ্ছে তা বন্ধ করতে সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ওদিকে বাইডেনের জাতীয় গোয়েন্দা বিষয়ক পরিচালক অরভিল হেইনস প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যা নিয়ে সিআইএর গোপন রিপোর্ট প্রকাশ করে দেবেন তিনি। ফলে এটা হতে পারে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য একটি বিব্রতকর অবস্থা। কারণ, সিআইএর তদন্ত ও অন্যান্য তদন্তে খাসোগি হত্যার সঙ্গে সরাসরি মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এই রিপোর্ট প্রকাশ হলে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভঙ্গুর হয়ে উঠতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বিশেষ দূত এবং কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স-এর ডিস্টিংগুইশড ফেলো মার্টিন ইন্ডিক বলেছেন, সম্পর্ক নতুন করে ঝালাই করার অর্থ হতে পারে সৌদি আরবকে একটি সংকেত দেয়া। তা হলো, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছ থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে প্রতিশ্রুতি চাইছেন। তার মধ্যে রয়েছে ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধ। দেশের ভিতরে ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি দৃষ্টি ভিন্নভাবে দিতে হবে। বাইডেন আসলে আজ হোক বা কাল হোক যেসব ঘটনা ঘটে গেছে তার জন্য ক্রাউন প্রিন্সের কাছে জবাব চাইবেন। যদি সেটা না করেন ক্রাউন প্রিন্স তাহলে আমার মনে হয় বাইডেন যোগাযোগ করবেন বাদশা সালমানের সঙ্গে। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তা জেন পসাকির কথার সঙ্গে যেন মিলে যাচ্ছে তা।