অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার পালাবদলের পরপরই সে দেশে স্থগিত থাকা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কাছে এ সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় বা ইউএসটিআরের কাছে এ বিষয়ে শিগগিরই চিঠি দেবে। পাশাপাশি আগামী মার্চ বা এপ্রিলে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা চুক্তি (টিকফা) বিষয়ক বৈঠকে জিএসপি ফিরে পাওয়ার শর্তগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি তুলে ধরবে বাংলাদেশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী জুন-জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি কর্মসূচির মূল্যায়ন করবে। এর আগে মার্চ অথবা এপ্রিলে টিকফা বৈঠক হতে পারে। তার আগেই জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের অনুরোধ করে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি চিঠি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক পোশাক শ্রমিক নিহত হন। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকার এবং শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না অভিযোগ এনে ওই বছরের ২৭ জুন জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। পরের মাস জুলাইয়ে কারখানা পরিদর্শন, শ্রম আইন সংশোধনসহ ১৬ শর্ত সংবলিত একটি কর্মপরিকল্পনা দেয়। জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের আশায় বাংলাদেশ একই বছরে টিকফা সই করে। এরপর ফেরতের আবেদন করলেও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে জিএসপি পুনর্বহাল হয়নি।
জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি জেনে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেয়, টিকফার পরবর্তী বৈঠকগুলোতে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের অনুরোধ করবে না। বাংলাদেশ মনে করে আসছে জিএসপি দেওয়া না দেওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে রাজনৈতিক বিষয়। কোনো শর্ত পূরণ করে এ সুবিধা পাওয়া যাবে না। এজন্য গত চার বছর ধরে বাংলাদেশ টিকফার বৈঠকে কখনও সরাসরি বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের প্রস্তাব করেনি। তবে এখন বাইডেন দেশটির ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। এতে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের আশা জাগছে বাংলাদেশের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, অবশ্যই জিএসপি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যেসব শর্ত দিয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়েছে এবং তার অগ্রগতি চলমান। ফলে বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো যেতে পারে। তবে আবেদন করলেই জিএসপি ফিরে পাওয়া যাবে, তা নয়। মনে রাখতে হবে ডেমোক্র্যাটদের আমলে বারাক ওবামা প্রশাসন জিএসপি স্থগিত করেছিল।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের কাছে দাবি ও প্রত্যাশা তুলে ধরতে পারে। তবে বিষয়টি একপক্ষীয় নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে এই বার্তা দিতে হবে যে মানব উন্নয়ন, শ্রমমান, কর্মপরিবেশের উন্নয়ন বাংলাদেশ কোনো শর্তে করছে না, নিজের মানোন্নয়নেই করছে।