অনলাইন ডেস্ক : সুশাসনের অভাব, খেলাপি ঋণের অসহনীয় চাপ, অদক্ষতা, ঋণ কেলেঙ্কারি ও নানা অনিয়মে দেশের ব্যাংক খাত বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানায় আন্তর্জাতিক তথ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। গত বুধবার রাতে ‘ব্যাংক খাতে দেশগুলোর ঝুঁকির মাত্রা : বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। ঝুঁকির স্কেলে ১০-এর মধ্যে বাংলাদেশ ৯ রয়েছে, যা গত দুই বছর ৮-এ ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ লুকিয়ে রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক খাতের খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করে, বাস্তবে তার পরিমাণ অনেক বেশি। বড় বড় গ্রাহকের বারবার খেলাপি ঋণ পুনর্গঠনের (রিশিডিউলিং) সুবিধা দেওয়া ও উচ্চ আদালত থেকে স্টে অর্ডার নিয়ে ঋণখেলাপিদের বাড়তি সুবিধা প্রাপ্তি হচ্ছে।
সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে দেশের ব্যবসা উন্নত হবে। এর ইতিবাচক প্রভাব ব্যাংক খাতে পড়বে বলে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুন মাস শেষে দেশের ৫৯ ব্যাংক মোট ১০ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। খেলাপির পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা।
গত বছরের ডিসেম্বরে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপির অঙ্ক ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত বছরের মার্চ মাস শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। ওই সময়ে বিতরণ করা ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ছিল খেলাপি। আন্তর্জাতিকভাবে খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশের বেশি থাকলেই ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। সেখানে বাংলাদেশে আছে ৯ শতাংশের বেশি। এতে এমনিতেই ঝুঁকিতে রয়েছে ব্যাংকিং খাত। এর মধ্যে করোনার মহামারীর কারণে ঋণের কিস্তি আদায় না হলেও খেলাপি হিসেবে ধরা না হওয়ার কারণে অদৃশ্য খেলাপি ঋণের পরিমাণ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি বৃহৎ ও ছোট শিল্পের করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৬০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঋণ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঋণেও খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
কিস্তি আদায় কম হওয়ায় ঋণ ও সুদ আদায় কমে গেছে। এতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি অধিকাংশ ব্যাংকের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে লোকসানি শাখাও।