অনলাইন ডেস্ক : বহু নাটকীয়তার পর অবশেষে ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় কমলা হ্যারিসকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও বিশ্ব নেতারা অভিনন্দন জানিয়েছেন, পাঠিয়েছেন শুভেচ্ছাবার্তা। তবে চীন, রাশিয়া, তুরস্কসহ প্রভাবশালী কয়েকটি দেশ এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাবশালী দেশ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো মিত্র তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোগান, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোর কাছ থেকে এখনও অভিনন্দন পাননি জো বাইডেন।
যেকোনো দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো একটি রুটিন কাজ। তারপরও প্রভাবশালী এতগুলো দেশ কেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও শীর্ষ অর্থনীতির দেশের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্টকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন না।
বিবিসি, সিএনএন ও ওয়াশিংটন পোস্ট এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে বলছে, একেক দেশের ক্ষেত্রে অভিনন্দন না জানানোর কারণ একেক রকম।
চীনের ওপর একের পর এক বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। দেশটিকে তটস্ত করে রেখেছেন ট্রাম্প তার শাসনামলের প্রায় পুরোটা সময়।
অনেক চীনা বিশ্লেষক মনে করেন ট্রাম্পের পরাজয়ে হয়তো চীনা নেতৃত্ব ভেতরে ভেতরে কিছুটা অখুশি। এটা ট্রাম্পকে পছন্দ করেন বলে নয়।
চীনা নেতারা মনে করেন, তিনি আরও চার বছর ক্ষমতায় থাকলে আমেরিকার ভেতর বিভেদ বাড়তো। ফলে আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্র আরও বিচ্ছিন্ন হতো।
বিশ্বজুড়ে নতুন করে মিত্রদের সঙ্গে শক্ত জোট তৈরির যে প্রতিশ্রুতি বাইডেন দিয়েছেন সেটা চীন তাদের স্বার্থের পরিপন্থী হিসাবে দেখছে। এর চেয়ে বরং ট্রাম্পের ‘একলা চলো’ নীতিই চীনা নেতৃবৃন্দের কাছে কম বিপজ্জনক ছিল।
আর এ কারণেই হয়তো এখনও তারা বাইডেনকে অভিনন্দন বার্তা পাঠায়নি। তাছাড়া শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প কী করেন সেটা দেখার অপেক্ষা করে থাকতে পারে বেইজিং।
রাশিয়ারও এখন পর্যন্ত বাইডেনের বিজয় নিয়ে চুপ থাকার পেছনের কারণ বাইডেনের বিজয়ে শীর্ষ নেতৃত্ব স্তরে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক বদলে যাবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর অনেক নিষেধাজ্ঞা চাপালেও ভ্লাদিমির পুতিনের ব্যাপারে চুপচাপ থাকতেন।
ট্রাম্প খোলাখুলি বলেছেন, তিনি পুতিনকে পছন্দ করেন। কিন্তু পুতিন সম্পর্কে বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই অন্যরকম হবে।
বাইডেন রাশিয়াকে ‘বিরোধী পক্ষ’ বলে মনে করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের টার্গেট করার জন্য তালেবানকে পয়সা দেওয়ার যে অভিযোগ রাশিয়ার বিরুদ্ধে উঠেছে, তার শক্ত জবাব তিনি দেবেন।
রুশ একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘ট্রাম্পের আমলে আমেরিকা-রাশিয়া সম্পর্ক সাগরের তলে গিয়ে ঠেকেছে। আর বাইডেন হলেন ড্রেজারের মতো যিনি সাগরের তল খুঁড়ে ওই সম্পর্ক অতলে নিয়ে যাবেন।’
ফলে বাইডেনের বিজয়ে মস্কো একবারেই খুশি নয়। তার ওপর ট্রাম্প ভোট চ্যালেঞ্জ করতে আদালতে যাওয়ার কারণে পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেবে ক্রেমলিন।
২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্কের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে আঙ্কারার সম্পর্কে প্রভাব পড়ে। তৎকালীন ওবামা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় ওই অভ্যুত্থানের চক্রান্ত করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
আর জো বাইডেন ছিলেন ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট। ওই অভ্যুত্থানের কিছুদিন আগেই তিনি তুরস্ক সফরে গিয়েছিলেন। ক্ষমতায় এলে তুরস্কে সরকার পরিবর্তনে উদ্যোগী হওয়ার অঙ্গীকার করেন জো বাইডেন।
অন্যদিকে ২০১৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থান নস্যাৎ করে দেওয়ায় এরদোগানের প্রশংসা করেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানা বিষয়ে তুরস্কের মতভিন্নতা থাকলেও টাম্পের সঙ্গে এরদোগানের ব্যক্তিগত সম্পর্ক কিছু ক্ষেত্রে আঙ্কারাকে সুবিধা এনে দিয়েছে।
মার্কিন এয়ার ডিফেন্স মিসাইল কিনতে ব্যর্থ হয়ে আঙ্কারা রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহ করলে ক্ষুব্ধ হয় ওয়াশিংটন।
এ ঘটনায় তুরস্কের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সামরিক অবরোধ আরোপের সুপারিশ করে মার্কিন সিনেট। তবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাবলেট ট্রাম্প সেটি ঠেকিয়ে দেন।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার নিয়ে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র বহু দ্বৈরথ রয়েছে। ফলে আঙ্কারা ওয়াশিংটনের নতুন প্রশাসন সম্পর্কে ভেবে-চিন্তে অগ্রসর হবে বলে মনে হচ্ছে।
এছাড়া ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো ট্রাম্পের কড়া সমর্থক। নির্বাচন নিয়ে অচলাবস্থার সময় তিনি বলেছেন, ট্রাম্পই জয়ী হবেন। ফলে ট্রাম্পের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেখার অপেক্ষায় প্রতিবেশী ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট এখনও অভিনন্দন জানাননি বাইডেনকে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল লোপেজ বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা অভিনন্দন জানাবে না।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও ট্রাম্পের মধ্যে কানামাছি খেলা চললেও তারা পরস্পরের বন্ধু। ফলে বাইডেন জয় দেশটির কাছে অপ্রত্যাশিত।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া মার্কিন নির্বাচনের খবরই প্রকাশ করেনি। অভিনন্দন না জানানো সবগুলো দেশই নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া ও আইনি ঝামেলার কথা বলেছে।
কিন্তু বাইডেনকে অভিনন্দন না জানানো এসব দেশ কর্তৃত্ববাদী একনায়কের শাসনাধীন। ফলে বাইডনের জয়ে তারা নিজেদের মতো প্রেসিডেন্ট হারানোয় ব্যথিত কিনা, এমন প্রশ্নও থাকছে।