শওগাত আলী সাগর : ‘এনডিপিতে যোগ দিন’- এ কথা বলি না, আমি বলি- মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হোন, কানাডীয়ান রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হোন’। খালিশ আহমেদ এই কথাগুলো বলেছিলেন ২০১৫ সালে। ফেডারেল ইলেকশনে সেবার তিনিই ছিলেন একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী। এনডিপির মনোনয়ন নিয়ে তিনি ভোটযুদ্ধে নেমেছিলেন। এবছর ভোটের মাঠে তিনি আর একা নন। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল থেকে চার জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। ক্যালগেরির সিগন্যাল হিল এলাকা থেকে এনডিপির মনোনয়নে খালিশ ছাড়াও স্কারবোরো সেন্টারে ফাইয়াজ কামাল নির্বাচন করেছেন। এনডিপির হয়ে নায়াগ্রা ওয়েষ্ট থেকে নির্বাচন করেছেন নামির রহমান। অশোয়া থেকে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন আফরোজা হোসাইন। খালিশ এবং নামির দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছিলেন।
নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের কেউই বিজয়ী হতে পারেননি। নির্বাচনের আগে ঢাকার কালের কণ্ঠের সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলো- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে। উত্তরে আমি স্পষ্ট করেই বলেছিলাম, এই প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের চেয়েও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন পাওয়াটাই সামগ্রিকভাবে কমিউনিটির জন্য উল্লেখযোগ্য অর্জন বলে আমরা মনে করি। মূলধারার রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পেতে যে যোগ্যতার প্রয়োজন হয়, সেই যোগ্যতার পরীক্ষায় এই চারজন উত্তীর্ণ হয়েছেন- এরা এখন মূলধারায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয়ান রাজনৈতিক নেতা হিসেবে স্বীকৃত।
মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার তাড়না থেকেই নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের পারফরমেন্সের দিকে একটু মনোযোগ দেয়া দরকার। সেই বিবেচনা থেকেই বাংলাদেশি কানাডীয়ান চার প্রর্থীর ভোটের হিসাব নিয়ে পর্যালোচনা করবো।
ক্যালগেরির সিগন্যাল হিল থেকে এনডিপির হয়ে ভূতত্ববিদ খালিশ আহমেদ দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিদ্বন্ধিতা করলেন। খালিশের নির্বাচনী এলাকায় সেই অর্থে বাংলাদেশি কমিউনিটি নেই। কনজারভেটিভের ঘাঁটিতেই তিনি ভিন্ন দলের হয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছিলেন। নির্বাচন পরবর্তীতে ফেসবুকে এক পোষ্টে ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে খালিশ লিখেছেন, ‘২০১৫ সালের তূলনায় এবার তার ভোটের পরিমান ৭০ শতাংশ বেড়েছে’। এটিও কম কথা নয়।
২০১৫ এর নির্বাচনের পর নানা প্রতিকুলতা সত্ত্বেও খালিশ আহমেদ এনডিপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, এলাকায় সক্রিয় ছিলেন। তার ফলশ্রুতিতে তার সমর্থন বেড়েছে।২০১৫ সালের নির্বাচনে খালিশ ৩১২৮ ভোট পেয়েছিলেন, এবার পেয়েছেন ৫১২১ ভোট। এই আসনে বিজয়ী কনজারভেটিভের রন লিয়েপেন্ট ৪৩ হাজার ৫৩৫ ভোট পেয়েছেন। লিবারেল প্রার্থী পেয়েছেন- ৯৩৭০ ভোট। গত নির্বাচনে তিনি ১৯,৭০৮ ভোট পেয়েছিলেন।
অশোয়ায় লিবারেল পার্টি থেকে নির্বাচন করেছেন আফরোজা হোসেন। প্রথমবার ভোটে দাড়িয়ে তিনি ১৫ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়েছেন। গত বছর এই আসনে লিবারেল প্রার্থী পেয়েছিলেন ১৬ হাজার ৫৮৮ ভোট। কনজারভেটিভের কলিন ক্যারি ২৩ হাজার ৯৮৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এনডিপি প্রার্থী শৈলেন পায়েল পেয়েছেন ১৭ হাজার ৫৩১ ভোট।
স্কারবোরো সেন্টারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এনডিপির প্রার্থী ফাইয়াজ কামাল পেয়েছেন ৪,৩২৯ ভোট। গত বছর এই আসনে এনডিপি প্রার্থী পেয়েছিলো ৫২২৬ ভোট। এই আসনে লিবারেল পার্টির সালমা জাহিদ ২৫ হাজার ৪২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
নায়াগ্রা ওয়েষ্ট থেকে এনডিপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন নামির রহমান। তিনি পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৮৮ ভোট। গত নির্বাচনে তিনি ৫৫০৮ ভোট পেয়েছিলেন।এই আসনে লিবারেল প্রার্থী আয়ান বিংহাম পেয়েছেন ১৬৯৮৬ ভোট । এই আসনে ২৩ হাজার ৯৭৩ ভোট পেয়ে কনজারভেটিভ প্রার্থী ডিন এলিসন নির্বাচিত হয়েছেন।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, এনডিপি থেকেই বাংলাদেশি কানাডীয়ান প্রার্থী সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন পেয়েছে। লিবারেল পার্টি এবারই প্রথম একজন বাংলাদেশি কানাডীয়ানকে দলের মনোনয়ন দিয়েছে। পেশাগত অবস্থান বিবেচনায় এনডিপির খালিশ এবং নামির মূলধারায় প্রতিষ্ঠিত পেশাজীবী। ফাইয়াজ কামালও আইবিএম এর মতো প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী করেন। আর পেশাদার একাউন্টেন্ট আফরোজা হোসেনের রয়েছে কানাডার বিভিন্ন সংগঠনে দীর্ঘ সময় ভলান্টিয়ার করার অভিজ্ঞতা। তিনি লিবারেলের রাজনীতির সাথেও সম্পৃক্ত অনেক দিন ধরেই।
আমরা জানি, দলগত ভোটের অবস্থান ডিঙ্গিয়ে নিজেকে বিজয়ী করে নিয়ে আসা এই প্রার্থীদের জন্য এখনো কঠিন। তার জন্য আমাদের আরো বেশ খানিকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। আর এই প্রার্থীদেরও আরো পরিশ্রম করতে হবে। জয়- পরাজয় নিয়ে ভাবনাকে পেছনে ফেলে রাজনীতিতে আমাদের অবস্থানটা সংহত করতে হবে।
আমরা চাইবো, আরো বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয়ান মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হউক, নির্বাচনে প্রার্থী হউক। ডলি বেগমকে দিয়ে যে ইতিহাস রচিত হয়েছে- তা আরো সম্প্রসারিত হউক।