শুজা রশীদ : (পর্ব ১০)
১৪.
মিন্টুর সাথে প্রথম ডেটিংয়ের পর রিমার মনে হল পরিস্থিতি যেন কেমন থিতিয়ে গেল। তার মনটা একটু খারাপ হল। তার ধারণা ছিল তাদের ডিনার ডেটটা ভালোই হয়েছিল। মিন্টু গাড়ি নিয়ে এসেছিল, তাকে তার এপার্টমেন্ট থেকে তুলে নিয়ে মার্কহ্যামে একটা চমত্কার থাই রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিল। স্কারবোরোতে এতো ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট থাকতে এতখানি পথ ঠেলে মার্কহ্যামে যাবার কারণটা পরিষ্কার না হলেও যাত্রাটুকু ভালোই লেগেছিল। কানাডা আসা অবধি এটাই ছিল ওর প্রথম কোন সুদর্শন যুবকের সাথে কোন গাড়িতে ওঠা। ও পরেছিল একটা আকাশী শিফন, সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ আর হিলয়ালা জুতা। লোকটাকে মুগ্ধ করবার একটা তাগিদ অনুভব করেছিল, হয়ত ভেবেছিল তার সাথে একটা ভবিষ্যত আছে।
রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে ধীরে ধীরে মিন্টুর প্রাথমিক লাজুকতা কেটে গিয়েছিল, সে সহজ, প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল, নিজের পরিবার নিয়ে অকপটে অনেক কথা বলেছিল- কিভাবে তারা কানাডায় এসে সাফল্যের মুখ দেখেছে, কিভাবে সে একদিন শিল্পপতি হবে এবং পরবর্তিতে কানাডিয়ান রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। শ্রোতা হিসাবে রিমার তুলনা নেই। জীবনের পথে চলতে চলতে এক দুর্বিপাক থেকে আরেক দুর্বিপাকে চক্কর খেতে খেতে এই একটা গুণ সে অর্জন করেছে। কথার মূল্য অবশ্যম্ভাবী কিন্তু কথার বুননিতে সে তেমন দক্ষ নয়। চুপচাপ থেকে তার চারপাশে যে শব্দের মালারা ক্রমাগত চক্কর খায় সে মনযোগ দিয়ে শোনে, বিশ্লেষণ করে এবং বোঝার চেষ্টা করে। লোকটার মধ্যে সে দেখেছিল এক গর্বিত, উচ্চাকাংখী মানুষ যে একাধারে ছিল রোমান্টিক এবং লাজুক।
মূল কোর্স শেষ হবার পর দুজনে যখন ডেজার্ট খাচ্ছিল- রঙচঙে আঠাল মিষ্টি ভাতের উপর আইসক্রিম, মিন্টু হঠাত জেদ ধরেছিল রিমাকে নিজের সম্বন্ধে কিছু বলার জন্য। আসার আগে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনুশীলন করে এসেছে রিমা। সে জানত এই মুহূর্ত আসবে। চেয়েছিল এমনভাবে শব্দ চয়ন করতে যেন তার অতীত উঠে এসে তার এই চমত্কার ভবিষ্যতের ইংগিতটুকুকে অঙ্কুরেই বিনাশ না করে দেয়।
আমার জীবন আরও অনেকের মত খুব সহজ ছিল না কিন্তু দুটি সন্তান নিয়ে আমি একরকম ভালোই আছি-
আমার আগের স্বামীর সাথে বনিবনা হচ্ছিল না, বাচ্চা দুটাকে নিয়ে কোন রকমে পালিয়ে এসেছি-
আমার দুটি অতুলনীয় সন্তান রয়েছে, তাদের জীবনে বাবার মত কারো ভালোবাসা পাওয়াটা প্রয়োজন-
কোনটা শুনতেই ভালো লাগছিল না কিন্তু নিজের দুটি সন্তানের কথা না তুলে নিজের সম্বন্ধে সে কি বলতে পারে বুঝতে পারছিল না। তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাওয়া ছিল তার সন্তানেরা। মিন্টু মানুষ হিসাবে চমত্কার হলেও সে কখন বিয়ে করেনি, তার নিজের বাচ্চা কাচ্চাও নেই। তার প্রতিক্রিয়া কি হবে ঠিক আন্দাজ করতে পারছিল না।
শেষ পর্যন্ত সহজ পথটাই বেছে নিয়েছিল রিমা। যা যা বলবে বলে ঠিক করে এসেছিল সে সব চেপে গিয়ে তাকে সত্যিটাই সরাসরি বলেছিল। অনেক কিছু বলেছিল ফায়জাকে নিয়ে, সে যেমন বুদ্ধিমতী তেমন মেজাজী, পান থেকে চুন খসলে রিমাকেও ঝাড়ি দিতে ছাড়ে না। জিব্রানের কথা বলতে গিয়ে হাসতে হাসতে সারা হয়েছিল। ছেলেটা কাঠবিড়ালির মত বাসার মধ্যে সারাক্ষণ চক্কর মারতে থাকে, কিছু না কিছু একটা নিয়ে ঝামেলা বাঁধাবেই- একবার নিজের সাদা টি শার্টে ইয়া বড় একটা রঙ্গিন ফুটবল এঁকেছিল- আরেকবার বোনের সাথে বাজী রেখে কাঁচা ডিম খেয়ে সারা রান্নাঘরে বমি করে ভরিয়েছিল-
মিন্টু কি কখন কাঁচা ডিম খেয়ে দেখেছে? চেষ্টা করা উচিত। রিমা একবার খেয়েছিল। জঘন্য লাগে- হি হি হি-
যখন লক্ষ্য করেছিল মানুষটার নজর তার উপর আঠার মত সেঁটে আছে, দুই ঠোঁটের ফাঁকে এক চিলতে হাসি, সে লজ্জা পেয়ে হাসি থামিয়ে ফেলেছিল। তার দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিল। সে গভীর একটা শ্বাস নিয়ে মিন্টুর চোখে চোখ রেখে নীচু স্বরে বলেছিল, “এটাই আমার জীবন। যদি আপনি আমার সাথে না জড়াতে চান আমি আপনাকে কোন দোষ দেব না। আজকের এই অপূর্ব সন্ধ্যাটুকু উপহার দেবার জন্য কৃতজ্ঞ থাকব।”
ওর দিক থাকে নজর সরিয়ে নিয়েছিল সে, নিশ্চুপে খাওয়া শেষ করে বিল চেয়েছিল। ওয়েট্রেস বিল নিয়ে তাত্ক্ষণিক ফিরে এলে সে ক্রেডিট কার্ডে সেটা মিটিয়ে দেয়, মোটা অংকের বখশিশ দেয়। তারপর চেয়ার ছেড়ে ওঠার আগে মিন্টু তার চোখে চোখ রেখে মৃদু স্বরে বলেছিল, “আপনার বাচ্চাদের সাথে দেখা করতে চাই। আমার খুব ভালো লাগবে।”
রিমা পরিত্রাণের নিঃশ্বাস ফেলেছিল। “আপনি ওদেরকে খুব পছন্দ করবেন,” ও বলেছিল।
মানুষটা মুচকি হেসেছিল।
ফিরতি পথে তেমন একটা কথাবার্তা হয়নি। মিন্টু জিজ্ঞেস করেছিল ঢাকা গ্রোসারীতে সে কোন কোন দিনে কাজ করে। মানিকের ব্যাপারে দু একটা জিনিষ জানতে চেয়েছিল, বিড়বিড় করে কিছু একটা বলেছিল। রিমার কাছে মনে হয়েছিল হঠাত করেই যেন দুজনার মাঝে নিঃশব্দতা নেমে এসেছিল। মিন্টুর কথার বন্যা অযাচিতভাবে থেমে গিয়েছিল। রিমা ভাবতে চাইছিল লোকটা হয়ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এবং চুপচাপ রিমার সঙ্গটুকু উপভোগ করছিল কিন্তু ভেতরে ভেতরে জানত সেটা সত্য নয়। মিন্টুর মাথায় অন্য কোন ভাবনা চক্কর দিচ্ছিল। সে তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে বিদায় নেয়, ফোন নাম্বারটাও চায় না। কিন্তু সেটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় কারণ সে জানত কোথায় গেলে রিমাকে পাওয়া যাবে।
সেই ডিনারের পর দশ দিন পেরিয়ে যায়। সিগ্রেট কিনবার অজুহাতে ঢাকা গ্রোসারীতে হঠাত করে সে উদয় হয়নি। যাতায়াতের পথে রিমা মনযোগ দিয়ে চারপাশে বার বার নজর বুলিয়েছে, রাস্তায়, ফুটপথে, বেঞ্চে- হয়ত সে আছে আশেপাশেই, চুপিচুপি তাকে লক্ষ্য করছে। কেন তেমন একটা আশায় সে বুক বেধেছিল ঠিক জানত না কিন্তু তাতে অন্তত তার বেশ কিছু দিন একটা স্বপ্নময়তায় কেটেছিল। মানুষটাকে তার মনে ধরেছিল। সে হতে পারত চমত্কার একজন স্বামী এবং তার দুটি সন্তানের বাবা।
সেই বিকেলটা ছিল ঝকমকে। কাজ শেষ করে ড্যানফোর্থ এভিনিউ ধরে হেঁটে বাসায় ফিরছিল রিমা, হঠাত একটা কালো মার্সিডিজ ওর পাশে এসে থামল, তার পেছনে গাড়ির সারি লেগে গেল। গাড়িটা চিনতে কষ্ট হল না ওর। বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে। মানুষটা কি বলবে, কি করবে কোন ধারণাই নেই। গত কয়েকটা দিনের বেদনাময় অপেক্ষার ক্ষণগুলো ভেতরে ভেতরে ওকে একবারে দুর্বল করে দিয়েছিল। অপ্রত্যাশিতভাবে সে আবার প্রেমে পড়েছিল এবং প্রত্যাখ্যাত হবার আশংকায় ভীত সন্ত্রস্থ হয়েছিল।
মিন্টু গাড়ি থেকে নীচে নেমে এসে প্যাসেঞ্জার সাইডের দরজাটা খুলে ধরে। “ওঠো! প্লিজ!”
গাড়িতে উঠে বসেছিল রিমা, কোন কথা নয়, প্রশ্ন নয়, যেন নিজের ভাগ্যকে নীরবে মেনে নিয়েছিল। পেছনের অপেক্ষমান গাড়ির সারি থেকে একজন তীব্র শব্দে ভেপু বাজায়, আরেক জন অসহিষ্ণু কন্ঠে আপত্তিকর কিছু একটা বলে, আশেপাশের কিছু মানুষ হেসে ওঠে, কিন্তু মিন্টু সেসবে কান দেয় না, শান্তভাবে গাড়ি চালিয়ে এগিয়ে যায়, তাকে দেখে মনে হয় সে যেন এক শান্তিময়, ধৈর্যবান, ক্ষমাশীল মানুষ। অন্য কোন সময় হলে পেছনের ঐ বেয়াদপ ড্রাইভার হয়ত বিপদে পড়তে পারত। আজকে বেঁচে গেল। রিমা ভেবেছিল তাকে নিয়ে কোন নিরালা জায়গায় যাবে কথা বলার জন্য কিংবা হয়ত অন্য কোন পরিকল্পনা আছে। কিন্তু ওর বাসায় যাওয়াটা দরকার ছিল। পাশের বাসার মহিলার কাছে ফায়জা এবং জিব্রানকে রেখে এসেছিল। বাংলা টাউনের কাছে একটা এপার্টমেন্ট দুজনে ভাগ করে থাকত। সে বাচ্চাদের নিয়ে একটা কামরায় থাকত আর সেই মহিলা যে স্থানীয় একটা সেলুনে কাজ করত থাকত অন্য কামরাটাতে। রান্নাঘর আর বাথরুম ছিল একটা করে। কিন্তু তাতে কোন অসুবিধা হত না। মহিলা মানুষ হিসাবে চমত্কার ছিল। রিমা কাজে গেলে সে মাঝে মাঝে বাচ্চা দুজনকে দেখভাল করত। কিন্তু অকারণে দেরী করতে দ্বিধা হচ্ছিল রিমার। চাইছিল না মহিলা ভাবুক সে তার ভালোমানুষীর সুযোগ নিচ্ছে।
মিন্টু তাকে নিয়ে তার বাসায় এলো। অবাক হয়েছিল রিমা। বাচ্চাদের জন্য খেলনা এনেছিল। বাচ্চাদের সাথে দেখা করল। তার বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার দেখে দুজনাই তাকে পছন্দ করল, বিশেষ করে জিব্রান। ফায়জা সতর্কভঙ্গীতে তাকে পর্বেক্ষণ করেছিল বেশ কিছুক্ষণ, যেন বোঝার চেষ্টা করছিল এই লোকটা হঠাত কোথা থেকে এসে জুড়ে বসল। খেলনা পেয়ে দুজনারই আনন্দ আর ধরে না। খেলনার মুখ তারা ইদানীং দেখেনি। রিমার যে সামান্য উপর্জন ছিল তাতে বাচ্চাদের খেলনা কিনে দেবার সামর্থ তার ছিল না। মিন্টু ছেলেটার জন্য নিয়ে এসেছিল একটা ব্যাটারি চালিত ট্রেন আর মেয়েটার জন্য ছবি আকবর সরঞ্জাম। রিমার ব্যাপারটা ভালো লেগেছিল।
রিমার জন্য সেদিন আরেকটা নতুন জীবনের সূচনা হয়েছিল। মনেপ্রাণে এটাই চাইছিল সে। প্রেম বর্জন করবার মত মানসিক শক্তি তার ছিল না। মিন্টু এসেছিল একটা চোখ ধাঁধান বজ্রের মত। এমনই কিছু একটার জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিল যেন রিমা। জানত বজ্রের সাথে সাথে আসবে ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা কিন্তু তারপরও পিছিয়ে যাবার মত মনবল তার ছিল না।
দুই মাস পর তারা একটা ছোট কমিউনিটি সেন্টারে খুব ছোটখাট একটা অনুষ্ঠান করে বিয়েটা সেরে ফেলে। খুব জাঁকজমক করে বিয়ে হবে তেমনটা রিমা আশা করেনি কিন্তু এতো চুপি চুপি হবে সেটাও সে ভাবেনি। হাতে গোনা কয়েক জনকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল মিন্টুর কয়েক জন পারিবারিক বন্ধু আর লিয়াকত। রিমা হাজির হয়েছিল বাচ্চাদের নিয়ে, সাথে ছিল তার প্রতিবেশী ভদ্রমহিলা আর কয়েকজন পরিচিত মানুষ। কোন প্রশ্ন করেনি সে, অনুযোগ করেনি কিন্তু মিন্টু মনে মনে নিশ্চয় অপরাধবোধে ভুগছিল কারণ এক পর্যায়ে সে সত্যটা ফাঁস করে দেয়- তার বাবা-মা একজন ডিভোর্সী মহিলার সাথে তাদের ছেলের বিয়েকে মেনে নিতে পারেননি এবং সেই কারণে বিয়ের উদযোগে তাদের কোন ভ‚মিকাই ছিল না। অবাক হয়নি রিমা। বিয়ের আগে মিন্টুর অনুরোধে তাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল সে। জানত কিসের মধ্যে পা দিচ্ছে। বিয়ে পড়ানোর সময় মিন্টুর দু পাশে বসেছিল তার সন্তানেরা, গভীর বিশ্বাস আর আস্থায় ধরে ছিল লোকটার দুটি হাত। সেই দৃশ্য দেখে চোখ ভিজে গিয়েছিল রিমার, মনে হয়েছিল এর চেয়ে বেশি সে আর কিছুই চায় না।
মিন্টুর পরিবারের সাথে বসবাস করবার সুযোগ কখন হয়নি রিমার। তাকে তারা গ্রহণ করেনি। মিন্টু ক্রিসেন্ট টাউনে একটা এপার্টমেন্ট ভাড়া করে এবং তারা ঝট করেই আগের বাসা ছেড়ে দিয়ে সেখানে গিয়ে ওঠে।
১৫.
পিন্টু ওর রুপালী রঙের পর্শা ৯১১ ক্যারেরা কুপেটাকে সবেগে লম্বা ড্রাইভওয়েতে তুলে দিয়ে আচমকা ব্রেক কষে, ঝট করেই থমকে দাঁড়িয়ে যায় গাড়িটা। ২০১৬র মডেল। নতুন কিনেছিল। বাবা-মা চাননি সে গাড়িটা কিনুক কিন্তু সে কান দেয়নি। তারা অতীত থেকে উঠে আসা মানুষ। সফল হবার জন্য যে সাফল্য প্রদর্শনের প্রয়োজন রয়েছে সেটা তাদেরকে কে বোঝাবে? সামর্থ্য শব্দটা খুবই আপেক্ষিক। হাড়ির খবরতো সবার জানার দরকার নাই। গাড়ি বস্তুটার বিশেষ গুরুত্ব আছে। তার বদ্ধ বিশ্বাস এই পর্শা তার জন্য যে বিশেষ ধরনের সম্মান বয়ে এনেছে তা শুধু নিজের কমিউনিটিতেই সীমাবদ্ধ নয়। এই সম্মানটুকুর মূল্য তার কাছে কত খানি সেটা অধিকাংশ মানুষ বুঝবেও না।
গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে এলো। এখন মাত্র বিকেল হচ্ছে। এতো তাড়াতাড়ি সে কখন বাসায় ফেরে না। মায়ের হুকুম হয়েছে বলেই এসেছে। তার কন্ঠে কিছু একটা তাগিদ ছিল। যত তাড়াতাড়ি পারে চলে এসেছে। সামান্য ব্যাপার স্যাপার নিয়ে মাকে অকারণে উত্তেজিত হতে দিতে চায় না সে।
এলাকাটা সুন্দর। কিছু পুরানো বাংলো বাড়ী আর কিছু নতুন দোতলা বাড়ী। বেশ কিছুদিন ধরে বিল্ডাররা পুরানো বাংলো বাড়ী কিনে ভেঙে ফেলে নতুন দোতলা বাড়ী বানিয়ে আকাশচুম্বী দামে বিক্রী করছে। বাংলা টাউনের হৈ চৈ থেকে অনেক খানি দূরে এই এলাকাটা হাইওয়ে ৪০১ এর উত্তরে। বছর দশেক আগে যখন বাড়িটা কিনেছিল ওরা খুব ভালো দামে পেয়েছিল। এক চতুর্থাংশ একর জমির উপর বাড়িটা ছোটখাট একটা ম্যনসনের মত। দোতলায় ছয়টা বিশাল বেডরুম আর চারটা বাথরুম, নীচে মেইন ফ্লোরে খোলা মেলা বিশাল লিভিং রুম, প্রশস্ত ডাইনিং রুম, রান্নাঘর যার আকার ছোটখাট একটা এপার্টমেন্টের চেয়ে বড়ই হবে, ফ্যামিলি রুম যেখানে জনা ত্রিশেক মানুষ এটে যাবে। নীচে বেসমেন্টে রয়েছে তিনটি বড়সড় বেডরুম, দুটি বাথরুম এবং একটা বিশাল বিনোদন কামরা যেখানে একটা ফুলসাইজের পুল টেবিল বসান এবং দামী প্রজেক্টরের জন্য ৮০ ইঞ্চি স্ক্রিন দেয়ালে টাঙান।
কিন্তু মনে মনে পিন্টুর স্বীকার না করে উপায় থাকে না যে তাদের অবস্থা বাইরে থেকে যেমন দেখায় ততখানি ভালো নয়। বাড়ীটাকে দেখে ইতিমধ্যেই পুরানো মনে হয়, রান্নাঘর এবং কয়েকটা বাথরুমে বেশ কিছু কাজ করাতে হবে। একটু রঙ করতে পারলেও ভালো হত। এলাকাটা ধীরে ধীরে হলেও চমত্কার দেখতে দোতলা, আধুনিক বাড়িতে ছেয়ে যাচ্ছে।
একটা প্রশস্ত আঙিনা পেরিয়ে ভারী, ডাবল প্যানেলের কাঠের সদর দরজা যার মাঝের অংশে কুয়াশাময় ক্রিস্টাল গ্লাশ। বাসাটা পূর্বমুখী হওয়ায় সকালের রোদটা খুব ভালোভাবে এসে পড়ে। একটা মাঝারী আকারের টেবিলকে ঘিরে দুটি ইজি চেয়ার রাখা। মাঝে মাঝে তার বাবা-মা সকালে বাইরে এসে সেখানে বসে রোদ পোহান।