অনলাইন ডেস্ক : গত ৮ সপ্তাহে কুইবেকে ৮ নারী খুন হয়েছেন। বর্তমান এবং সাবেক সঙ্গীদের হাতে তারা খুন হন। এসব খুনের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ঝড় বইছে। বিক্ষোভকারীরা সা¤প্রতিক এসব খুনের কঠোর সমালোচনা করে দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন। গত শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকেলে মন্ট্রিলে একদল বিক্ষোভকারী এই খুনের ঘটনাগুলোকে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ‘মহামারী’ হিসেবে বর্ণনা করে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। মন্ট্রিলে ওই বিক্ষোভ চলাকালে একই সময় কুইবেকে প্রায় ২০টি এলাকায় বিশাল বিক্ষোভ হয়। এতে কমপক্ষে ৬টি শহরে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যান চলাকলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘অনেক হয়েছে, নারীর প্রতি আর কোনো সহিংসতা দেখতে চাই না।’
কুইবেক ফেডারেশন অব ওমেন শেল্টারস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মানন মনাস্টিস বলেন, সা¤প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নারী খুনের ঘটনা বেড়ে গেছে। এই সংখ্যাটা খুবই উদ্বেগজনক। আগে পুরো বছরে যেখানে এতগুলো খুনের ঘটনা ঘটতো না সেখানে কয়েক সপ্তাহে এতগুলো নারীর জীবন গেল। ‘সত্যিই অবিশ্বাস্য।’ বিক্ষোভ শুরুর আগে তিনি আরো বলেন, ‘কানাডায় প্রতি ২ দিনে বর্তমান বা সাবেক সঙ্গীর হাতে একজন নারী খুন হয়েছেন। আমরা করোনা নামে একটা মহামারী মোকাবেলা করছি। এর মধ্যে নারীর প্রতি সহিংসতা এই নতুন ‘মহামারী’ সত্যিই উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, তার সংগঠনের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এখন নির্যাতিত নারীদের আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। সবগুলো কেন্দ্র প্রায় শতভাগ ভরপুর। নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে সরকারকে আরো কঠোর হওয়া উচিত বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘শুধু আলোচনা আর আশ্বাস নয়, এখন প্রয়োজন সত্যিকারের কঠোর পদক্ষেপ।’
নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইকে সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, বিষয়টির ভয়াবহতা যেন সবাই উপলব্ধি করতে পারে সে জন্যই আমাদের এসব কর্মসূচী। বিক্ষোভে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ অংশ নেয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া কেথরিন সোফি পাকুয়েট বলেন, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা মানুষকে বোঝাতে আমরা এই বিক্ষোভে এসেছি। এই ভয়াবহতার অবসান হওয়া উচিত। স্কুল শিক্ষার্থী কেথরিন আরো বলেন, অনেকে করোনা মহামারীর মধ্যে এ ধরনের বিক্ষোভকে বাড়াবাড়ি বলছেন। কিন্তু আমরা তা বলছি না। আমাদের দাবি সব ধরনের সমস্যারই সমাধান হওয়া উচিত। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে স্কুল পর্যায় থেকেই শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
বিক্ষোভে যোগ দিতে আসা সিভিল লিবারেটিস গ্রæপের সভাপতি আলেক্সান্দ্রা পেইরি বলেন, কুইবেকের স্কুলগুলোতে এখনো যৌন শিক্ষার পর্যাপ্ত ক্লাস হয় না। তার মতে নারী পুরুষের সম্পর্কের সাম্যতার বিষয়টি স্কুল পর্যায়েই শেখানো উচিত। তিনি আরো বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা এখন আর কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, এটি বর্তমানে একটি বড় ধরনের সামাজিক ব্যধিতে রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে কুইবেকে সামাজিক প্রথাতেই নারীর প্রতি বৈষম্য বিরাজ করছে। এগুলোর অবসান হওয়া উচিত।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সালমা কাদরী বিক্ষোভের আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আইনের দুর্বলতার কারণে প্রতিবন্ধী ও অভিবাসী নারীদের অবস্থা খুবই খারাপ। অনেক ক্ষেত্রে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও এসব নির্যাতিত নারীদের নিতে চায় না। পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। সূত্র : দ্য কানাডিয়ান প্রেস