অনলাইন ডেস্ক : জাম্বিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করা এক বৃদ্ধা হঠাৎ এসেছেন আলোচনায়। মূলত, বেশভূষা তাকে আলোচনায় এনেছে। চটকদার পোশাক ও সাজ-সজ্জায় হয়েছেন অনলাইন জগতের চেনা মুখ। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও উঠে এসেছে তার গল্প।

বিবিসি জানাচ্ছে, ওই বৃদ্ধার নাম মার্গারেট চোলা, বয়স ৮০। তার নাতনি ডায়ানা কুম্বা নিউ ইয়র্কের ফ্যাশন শিল্পী। তিনিই দাদিকে ফ্যাশন মডেলিংয়ে প্ররোচিত করেছেন।

ডায়না কুম্বা ২০২৩ সালে ‘গ্র্যানি’ নামে পাক্ষিক ধারাবাহিক নির্মাণ করেন।

তিনি জাম্বিয়া এসেছিলেন বাবার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য। বাবার পোশাকের রুচিবোধই তাকে ফ্যাশনের দুনিয়ায় আসতে অনুপ্রাণিত করেছে।
গ্রামে গিয়ে সঙ্গে থাকা সব পোশাক পরে ওঠার সুযোগ হয় ডায়নার। দাদি এসব পোশাক পরবেন কি-না তা জানতে চান ডায়না কুম্বা।

দাদি তাতে রাজিও হয়ে যান। সেখান থেকেই গল্পের শুরু। এরপর চোলা ‘লিজেন্ডারি গ্ল্যামার’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তার ফ্যাশন স্টাইল এবং ফটোশুট ইনস্টাগ্রামে এনে দিয়েছে সোয়া দুই লাখের বেশি অনুসারী।
এ বিষয়ে চোলা বলেন, ‘এমন পোশাকে আমার নিজেকে অন্যরকম মনে হয়।

আগে এমনটা মনে হয়নি। এখন যেন পৃথিবীটা জয় করে নিতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমার হাতে তখন কাজ ছিল না। তাই রাজি হয়ে যায়। পরেই দেখি না হয়। আমি মরে গেলে তো আমাকে মনে করবে।’ এরপর প্রথমবারের মতো রুপালি প্যান্ট আর স্যুট গায়ে চাপিয়ে নেন দাদি।

এ নিয়ে নাতনি কুম্বা বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, এমন পোশাকে খামারবাড়িতে দাদির কয়েকটি ছবি তুলে রাখব। গ্রামে দাদির এই খামারবাড়ি জাম্বিয়ার রাজধানী লুসাকা হতে উত্তরে ১০ মাইল ভেতরে।’

চটকদার পোশাকে চোলার ছবি তোলা হলো। কখনো রাজকীয় চেয়ারে বসে, আবার কখনো চামড়ার সোফায় বিশ্রামের ভঙ্গিমায়। দাদির পেছনে দেখা যেত ইটের দালান, লোহার ছাদ, হাল দেওয়া জমি, আম গাছ আর ভুট্টার ক্ষেত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাদির প্রথম ছবি পোস্ট করার কথা বলতে গিয়ে ডায়না জানান, খুব ভয়ে ছিলেন। ছবি পোস্ট করার পর ১০ মিনিট ফোনের কাছে ছিলেন না। আর ওই ১০ মিনিটে এক হাজার লাইক চলে আসে।

ডায়না বলেন, ‘আমার তো মাথা ঘুরে গেল। একটার পর একটা কমেন্ট আসছিল। লোকজন আরো ছবি দেখতে চাইছিল।’

লাল পোশাকের সঙ্গে সোনার হার, রত্ন বসানো মুকুর পরা দাদির অনেকগুলো ছবি পোস্ট করার পর ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ‘গ্র্যানি’ সিরিজটি আলোড়ন তোলে।

এই অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে চোলা বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে দেখলাম পৃথিবীর কত জায়গা থেকে সবাই ভালোবাসা জানাচ্ছে আমাকে। এই বয়সে এমন হইচই বাঁধিয়ে দেব এমন তো কখনো চিন্তাও করিনি।’

চোলা তার সঠিক বয়স জানেন না। কারণ নিজের জন্মসনদও নেই তার কাছে। তবে তার বয়স ৮০ বছরের বেশি। চোলা সব সময় উজ্জ্বল রং বেছে নেন। যেমন, সবুজ রঙের আমেরিকার ফুটবল জার্সির সঙ্গে কুচি দেওয়া লাল পোশাক স্কার্ট। তাতে আবার জাম্বিয়ার স্বাধীনতার ৬০ বছর পূর্তির পতাকা।

চোখ আটকে যায় এমন সব অলংকরণে নিজেকে মুড়িয়ে নিতে পারেন চোলা। সানগ্লাস, ঢাউস আকারের হ্যাট, ব্রেসলেট, পেনডেন্ট, গ্লাভস, ব্যাগ কিছুই বাদ যায় না।

২০১২ সাল থেকে ফ্যাশন নিয়ে মেতে থাকা কুম্বা মনে করেন তার দাদির সাহস ও একাগ্রতা আছে যে কোনো সাজে নিজেকে প্রকাশ করার।

‘গ্র্যানি’ সিরিজ দিয়ে বয়স্কদের সম্ভাবনার কথা বলতে চান কুম্বা। এই ‘গ্র্যানি’ পরের প্রজন্মের জন্য কিছু ছাপ রেখে যাক, এই তার স্বপ্ন। কুম্বাকে এরমধ্যে চারজন নাতনি ডেকে নিয়েছে নিজেদের ৭০ থেকে ৯৬ বছর বয়সী গ্র্যান্ডমার ছবি তুলে দিতে।