অনলাইন ডেস্ক : ভারতের করোনা পরিস্থিতি অন্য বহু দেশের তুলনায় ভালো জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে গরিবদের খাদ্যসহায়তা আরও পাঁচ মাস বাড়ানো হবে। মঙ্গলবার তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা প্রকল্পে খাদ্যসহায়তার পরিমাণ আরও পাঁচ মাস বাড়ানো হচ্ছে। এই প্রকল্পে দেশের ৮০ কোটি দরিদ্র মানুষ মাসে মাথাপিছু ৫ কেজি করে চাল অথবা গম ও ১ কেজি করে ডাল বিনা মূল্যে পাচ্ছেন।
করোনার হাত থেকে দরিদ্রদের বাঁচাতে গত ২৬ মার্চ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি রুপির প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। তাতে এপ্রিল, মে ও জুন তিন মাস দরিদ্রদের বিনা মূল্যে চাল, ডাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই প্রকল্প মোদি বাড়ালেন আরও পাঁচ মাসের জন্য। ফলে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত গরিবেরা বিনা মূল্যে এই খাদ্যসহায়তা পাবেন। এতে সরকারের বাড়তি ৯০ হাজার কোটি রুপি খরচ হবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে এই ঘোষণা দেন। লাদাখ সীমান্তে সংঘর্ষ ও উত্তেজনার কারণে এই ভাষণ ঘিরে যথেষ্ট জল্পনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু মোদি ১৭ মিনিটের ভাষণে চীন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তাঁর ভাষণজুড়ে ছিল করোনা পরিস্থিতি ও তার মোকাবিলা। তিনি বলেন, সরকার ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ প্রকল্প দ্রুত চালু করার দিকে এগিয়ে চলেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যেকোনো মানুষ দেশের যেকোনো রাজ্যে রেশন তুলতে পারবেন। এতে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন পরিযায়ী শ্রমিক ও অন্যরা, যাঁদের কর্মসূত্রে ভিনপ্রদেশে থাকতে হয়।
বুধবার থেকে দেশে লকডাউন নিষেধাজ্ঞা আরও শিথিল হবে। অথচ সংক্রমণ এখনো লাগামছাড়া। করোনার লেখচিত্র এখনো ঊর্ধ্বমুখী। প্রধানমন্ত্রী তাই সবাইকে সতর্ক করে বলেন, এই সময়ে দেশে সর্দি-কাশি বেড়ে যায়। ফ্লু দেখা দেয়। তাই সতর্কতা বাড়ানো প্রয়োজন। অথচ ব্যক্তিগত ও সামাজিক ব্যবহারে অনেক শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। হাত ধোয়া, দুই গজ দূরত্ব মেনে চলা, মুখোশ পরা, হাতে হাত না মেলানো সেভাবে আর মানা হচ্ছে না। এটা একেবারেই ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘দেশের আইন সবার জন্য সমান। গ্রামের পঞ্চায়েতপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। আপনারা খবরে হয়তো দেখেছেন, এক দেশের প্রধানমন্ত্রীকে (বুলগেরিয়া) মুখোশ না পরার জন্য ১৩ হাজার রুপি জরিমানা (১৫০ ইউরো) করা হয়েছে।’
লাদাখে ভারত-চীন সংঘর্ষ, সীমান্ত উত্তেজনা ও চীনা পণ্য বয়কট নিয়ে মোদি তাঁর ভাষণে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে দুই দিন আগে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে তিনি চীনা পণ্য বয়কটের মধ্য দিয়ে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন। সোমবার সেই লক্ষ্যে ভারত আরও এক ধাপ এগিয়ে ৫৯টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে। ওর মধ্যে রয়েছে টিকটক, শেয়ার ইট, উই চ্যাট, ইউসি ব্রাউজার, ক্যাম স্ক্যানারের মতো জনপ্রিয় অ্যাপ। সরকার জানায়, দেশের সুরক্ষা, নিরাপত্তা, সংহতি, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত।
চীন মঙ্গলবারই এ নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্তে চীন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত এটা স্পষ্ট, চীনের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা ভারত কমাতে সচেষ্ট। এখন দেখার, ৫জি স্পেকট্রামে চীনা সংস্থা হুয়াউইকে ঠেকানো হয় কি না। নিরাপত্তার স্বার্থে এই দাবি অনেক দিনের। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ভারতকে আগেই সতর্ক করেছে।