সোনা কান্তি বড়ুয়া : ’৭১-এর গণহত্যার আলোচনাকে সামনে রেখে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী বাঙালিরা ইতোমধ্যে সোচ্চার হয়েছে! বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী বাঙালিরা ইতোমধ্যে সোচ্চার হয়েছে এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য। রাজাকার ধর্মব্যবসায়ীদের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ করে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে রাজাকারদের ধর্মব্যবসা থামেনি। এরা এখনও ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজাকারদের ধর্মান্ধ ইসলামি রাজনীতির এতো উলঙ্গ দর্প বাংলাদেশে কেন? জয় সত্য ও মানবতার জয়।
রাজনীতির মাফিয়া চক্রে ধর্মান্ধ ধর্মের মস্তক বিক্রয় করে পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে ১৪ আগষ্ঠ ইসলাম ধর্মের নাম দিয়ে বার শত মাইল দূরের বাংলাদেশকে দখল করল! ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী রাজনীতির বাংলাদেশী হত্যাযজ্ঞ! পাক সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে পাকিস্তানের গণহত্যারঅভিযোগ ও বিচার প্রসঙ্গ! মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশীদের নিশ্চিহ্ন করতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের ’৭১-এর গণহত্যা! আমাদের মন বলে, “বিধির বিধান কাটবে তুমি,/ তুমি কি এমনি শক্তিমান?”
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার মহাসম্মেলনে পাক বাহিনী ও রাজাকারদের ’৭১-এর গণহত্যার এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য। জয় বাংলার স্বাধীনতা দিবসে চোখে আসে পানি! নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চে প্রতিষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস!
আমি স্মৃতিচারণ করছি! লন্ডনের লিবারেশন সংস্থাসহ আমার প্রিয় বন্ধুবর সঞ্জয় রতন বড়ুয়ার আমন্ত্রণে ২০১০ সালের ৭ই জুন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার মহাসম্মেলনে আমার ভাষন দেবার জন্যে আমন্ত্রিত হয়েছিলুম। দেশে বিদেশের সুধীবৃন্দের সাথে নানা জায়গায় বিভিন্ন আলাপ আলোচনা হয়েছে সাহিত্য সাংস্কৃতির অগ্রগণ্যদের পরম সান্নিধ্যে! ১৯৮০ সালের ১৮ই ডিসেম্বর আমি ব্যাংককস্থ বিশ্ববৌদ্ধ সদর দফতরের প্রতিনিধি পদে মনোনিত হয়ে জাতিসঙ্ঘ সম্মেলনে (ব্যাঙ্কক, থাইল্যান্ড) যোগদান করেছি। তারপর কর্ণফুলি ও পদ্মা দিয়ে কত জল কোথায চলে গেল। কিন্তু দেশ সর্বদা মনে থাকে এবং এখন আমাদের বাংলাদেশের ট্রাজেডির কথা লিখছি, এবং স্মৃতিচারণ করছি!
অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তুমি এইসব করে বেড়াও? ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে কী লাভ? কী লাভ আমি জানি না, শুধু একটা কথাই জানি, মানুষের দুঃখে আমার প্রাণ কাঁদে। ওদের কান্না আমার সত্তার মধ্যে ধ্বনিত হয়। চোখে জল চলে আসে, আমি উন্মাদ হয়ে যাই। পারি না নিজেকে স্থির রাখতে। অনেকেই হয়তো পারেন, কিন্তু আমি পারি না। কেন পারি না, এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। হয়তো এটা আমার জন্মার্জিত প্রবণতা। আমার নিয়ন্ত্রক। আমাকে সারাজীবনই বহন করতে হবে এই প্রবণতার অভিঘাত।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী দলটির নেতাকর্মী ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে পাকিস্তান ইসলামের নাম দিয়ে বাংলাদেশে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে বাংলাদেশে পাকিস্তান ইসলাম ধর্মকে তলোয়ার বানিয়ে অপব্যবহার করে ৩০ লক্ষ বাংলাদেশী মানুষ হত্যা, ২ লক্ষ মা -বোনকে ধর্ষন এবং বুদ্বিজীবি হত্যা করেছিল! দেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ, কোন রাষ্ট্রধর্ম নয়: একাত্তরের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। পাকিস্তানী ধর্মান্ধ রাজনীতির মাফিয়া চক্রে জামায়াতে ইসলামী দলটির নেতাকর্মী এবং প্রশাসকগণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদ্রোহী ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে পাকিস্তান নর-নারী হত্যার উল্লাস মানবজাতির ধর্ম নয়!
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে অভিযোগ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হলো না কেন? ’৭১-এর পরাজিত শক্তিই হিংস্র জীব-জানোয়ারের চেয়েও ভয়ঙ্কর মানুষরূপী কোন জীব। সে সময় মামুনুলদের মতো দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জাতীয় পতাকা, সঙ্গীত গিলে খাওয়ার মতো হায়েনার দল ছিলো না। ছিলো না ধর্মের নামে ধর্ম অবমাননা করার মতো ভয়ঙ্কর জীবের অস্তিত্ব। মা-বোনের সতীত্ব-সম্ভ্রম হরণ করার মতো দানবদের আনাগোনা। ছিলো না মন্দির-মসজিদ ভাঙার মহোৎসব। মামুনুলদের হুংকারে আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ, বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলন, ৭ মার্চ, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, বৈশাখী উৎসবে আস্থাশীল মানুষ সবাই ভীত, শংকিত। বাংলাদেশের জন্মকে এরা প্রকাশ্যে অস্বীকার করে। তাদের হিংস্র হুংকারে আজ অন্য ধর্ম স¤প্রদায়ের মানুষের জন্য বাংলাদেশ আর নিরাপদ বাসযোগ্য নয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ভাষণে ঘোষণা করেন: “কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় ২৩ বৎসরের করুণ ইতিহাস, বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। ২৩ বৎসরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস- এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। ১৯৫৮ সালে আয়ুব খান মার্শাল ল’ জারি করে ১০ বছর পর্যন্ত আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৬ সালে ৬-দফা আন্দোলনে ৭ই জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯ এর আন্দোলনে আয়ুব খানের পতন হওয়ার পরে যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গনতন্ত্র দেবেন – আমরা মেনে নিলাম। তারপরে অনেক ইতিহাস হয়ে গেলো, নির্বাচন হলো।”
রাজাকার ভন্ডদের ‘ইসলামধর্ম অপব্যবহারের’ বীজ আজ মহীরূহ হয়ে জামাতী কুলাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধাকে লাথি মারছে।লোভের লোলাসহ হিংসা বিদ্বেষ ও মোহ চরিতার্থ করার নাম ইসলাম ধর্ম নয়। আমাদের মন বলে, “বিধির বিধান কাটবে তুমি, / তুমি কি এমনি শক্তিমান? একাত্তরের পরাজিত শক্তি, ঘাতক, দালাল, নারী নির্যাতন কারী জামাত বর্তমান সরকারের পথপ্রদর্শক নয়। মিলিটারি শাসকগণ তো আজ পাকিস্তানের গোলাম নয়। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ধর্মের অপব্যাখ্যা বন্ধ করতে একুশের আলোর প্রতিষ্ঠা এবং বার শত মাইল দূরের পাকিস্তানী সেনাশাসক ইয়াহিয়া খান ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা করে গোলাম আজমের জামাত এবং মুসলিম লীগের যুদ্ধাপরাধীরা অসহায় ৩০ লক্ষ বাঙালি হত্যায় একসাগর রক্তের বিনিময়ে সর্বকালের বাংলাদেশের আবির্ভাবে অবাক পৃথিবী তাকিয়ে রয়। ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশে মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নিতে ঢাকায় এসেছিল কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ধর্মভিত্তিক চোরাবালির রাজনৈতিক মঞ্চে ধর্মের মুখোষ পরে। বাংলাদেশ জুড়ে পাকিস্তানী বোরখার জাল ছিঁড়ে ফেলার সময় একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতা সুধামাধুরী কে স্বাধীনতা বিষবৃক্ষে পরিনত করতে জামাত ১৪ই ডিসেম্বরে বাঙালি জাতির বুদ্ধিজীবিগণকে হত্যা করে।
সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি
সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।
তা যদি করতে পারেন, দেশে পরিবর্তন আসতে বাধ্য!
পণ্ডিত চাণক্য কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’! ক‚টনীতি, রাজনীতি বা ক‚টকৌশলের ক্ষেত্রে সম্রাট অশোকের গুরু পণ্ডিত চাণক্য কৌটিল্যের নাম ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে! খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০-২৭৫ সময়ে প্রাচীন ভারতে মগধ রাজ্যের বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, ধুরন্ধর’ পণ্ডিত চাণক্য কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ রাষ্ট্র, রাজনীতি, ক‚টনীতি, সরকার, আমলা, অর্থব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে বিশদ আলোচনা রয়েছে! চাণক্যের সর্বাত্মক সাহায্যেই রাজা চন্দ্রগুপ্ত নন্দ বংশের অবসান ঘটিয়ে মৌর্য বংশের রাজত্ব কায়েম করেন এবং এর পর চাণক্য চন্দ্রগুপ্তের পরামর্শক হিসেবে ও তাঁর উত্তরসূরি বিন্দুসারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ এবং তাঁর এ জ্ঞান অভিজ্ঞতালব্ধ।
প্রসঙ্গত: উল্লেখযোগ্য যে, হাইকোর্টের বিচারে (রিট) ২০০৬ সালের ৩০শে আগষ্ঠ “বাংলাদেশের সামরিক প্রশাসকগন রাষ্ঠ্রদ্রোহী ছিলেন (National News Papers dated 31 August 2006)! ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম রাষ্ট্রপতি হত্যাকান্ডের পর, পরবর্তীতে বাঙালি হত্যাযজ্ঞই কি বাংলাদেশে পাকিস্তানী ইসলাম? এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। জামায়াতে ইসলামী দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান!
১৯৭১ এর ৭ মার্চের পর থেকে ঘরে ঘরে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়ে জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরপরই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুখোমুখি যুদ্ধ শুরু করে মুক্তিযোদ্ধারা। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই যখন নিজেদের জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে ব্যস্ত, তখনও ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করতে মাঠে নেমেছে রাজনৈতিক ইসলামের তথাকথিত পীর-মাওলানার।
১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল, শুক্রবার, জুমার নামাজের পর পাঞ্জাবি-টুপি পরে শান্তি কমিটির ব্যানারে পাকিস্তানের পক্ষে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে রাজপথে মিছিল বের করেছিল এই উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীরা। ধর্মীয় আবেগ ব্যবহারের নিখুঁত পরিকল্পনায় অংশ হিসেবে তারা বেছে নিয়েছিল মুসলিমদের ধর্মীয় ছুটির দিন শুক্রবারকে। মিছিল শুসম্রাট অশোকের রুর স্থান হিসেবে নির্ধারণ করেছিল বৃহত্তর মসজিত বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটকে। সময়টাও ছিল ঠিক নামাজের পর। এরপর ইসলাম রক্ষার ছদ্মবেশে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিতে চেয়েছিল এই স্বাধীনতাবিরোধীরা।
হ্যারল্ড লাস্কির ‘আ গ্রামার অব পলিটিক্স’! হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা কিছুদিন পরপর একাডেমিক স্কলারদের নিমন্ত্রণ করেন বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য শোনার জন্য। একবার প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট নেলসন রকফেলার এমনি এক সমাবেশে স্কলারদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কাজ হলো, যেটা ঠিক সেটা বলা এবং আমাদের ভুল ধরিয়ে দেওয়া।’ তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘দ্য হোয়াইট হাউস ইয়ারস’-এ কিসিঞ্জারের আরেকটা চমৎকার ঘটনার উল্লেখ আছে : কিসিঞ্জার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জনসনের সঙ্গে দেখা করার জন্য ওভাল অফিসে গেলে তিনি বলেছিলেন, ‘অধ্যাপক, আপনাকে একটি পরামর্শ দিয়ে যাই- পত্রিকার কলামগুলো নিয়মিত পড়তে ভুলবেন না।’
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের এই অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা ও জেনোসাইডের ভিডিও ফুটেজ, ফটোগ্রাফ, ছবি, দলিল পত্র এবং তথ্য উপাত্ত। মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পর এই প্রথম জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত ভয়াবহতম, বীভৎস, বর্বর গণহত্যা ও জেনোসাইড নিয়ে আলোচনা হতে যাচ্ছে। এই আলোচনাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী বাঙালিরা ইতোমধ্যে সোচ্চার হয়েছে এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য। নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ-BASUG, ‘আমরা একাত্তর’ এবং ‘প্রজন্ম ৭১’-এর যৌথ আহŸানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ জেনেভার সদর দপ্তরে আগামী ৩ অক্টোবর বিকেল ৩টায় ৫১তম অধিবেশনে ৩নং আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করেছে। এ উপলক্ষে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পৃথিবীব্যাপী ‘জেনোসাইড স্বীকৃতি আদায় সপ্তাহ’ উদযাপন করা হবে। জেনেভা ও নিউইউর্কের জাতিসংঘ ভবন ছাড়াও লন্ডন, টরেন্টো, মন্ট্রিয়াল, ফ্লোরিডা, (SAMAKAL , 25 SEPT. 2022)!
আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। ৭১ সালে কিছু রাজাকার ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ ছিল বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এখন বাংলাদেশের মানুষ নিকৃষ্ট মানুষে পরিণত হয়েছে। সেজন্য অর্জন-বিয়োজন মিলিয়ে ৫০ বছরে আমরা এগিয়েছি অনেকটা; তবে যেতে হবে আরও বহুদূর। বিশেষ করে আদর্শিক বিচ্যুতির জায়গাটা অনেক বড়। আমাদের সংবিধানে বলা আছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ কিন্তু জনগণ এখনো রাষ্ট্রের মালিক হতে পারল না। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হারিয়েছি, চার জাতীয় নেতাকে হারিয়েছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছরের মধ্যে প্রায় ২৫ বছর আমরা হারিয়েছি। কারণ ৭৫ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত যারা দেশ পরিচালনা করেছে তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল না। তারা রাজাকারদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল। বাকি ২৫ বছর আমরা সময় পেয়েছি। এই সময়ে বৈষয়িক সমৃদ্ধি অর্জন করেছি, কিন্তু মনুষ্যত্বের অবনমন হয়েছে প্রচণ্ডভাবে।
২৩ বৎসরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস। বাংলাদেশে (পূর্ব পাকিস্তানে) কায়দে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহের উর্দূ ভাষা প্রচলনের বিরুদ্ধে দেশে রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের ক্ষেত্রে বাঙালির অখন্ড সাধনা এবং এই অখন্ড সাধনার ফলেই সালাম, বরকত, রফিক, সহ অনেক নাম না জানা শহীদদের জীবন দান। গৌতমবুদ্ধের সময়ের বাংলা লিপি বহু চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে এবং নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীতে প্রতিষ্ঠিত হলো অনাগত বংশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্দোলন প্রবর্তন সূত্রময় ‘শহীদ দিবস।’ ধর্মের নামে অবিচারকে বাদ দিয়ে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে বাঙালি জাতি একতাবদ্ধ হয়ে মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার জন্যে প্রান দান করেন। ইসলামি জঙ্গীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার কাছে পরাজিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল শোষণমুক্ত, অসা¤প্রদায়িক সাম্যবাদী সমাজ নির্মাণ; যে সমাজে রাষ্ট্র হবে ধর্মনিরপেক্ষ। রাষ্ট্র নিশ্চয়তা দেবে সমাজের উৎপাদিত সম্পদের সুষম বণ্টনের। নিশ্চয়তা দেবে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও মানবাধিকারের। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এমন রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখেই অকাতরে জীবন দিয়েছিল। এমন রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য চাই একটি প্রবল সমাজ বিপ্লব। পুঁজিবাদকে হয়তো নির্মূল করা সম্ভব নয়, তবে এর লাগাম টেনে ধরে সাম্যবাদী সমাজ নির্মাণ খুবই সম্ভব। সেই কাজটি করতে পারে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ! আজকের বাংলাদেশে যে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়; মাদকের ছড়াছড়ি; নারীর প্রতি সহিংসতা; সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাস; দুর্নীতি ও কালো টাকার দৌরাত্ম্য- সবকিছুর মূলে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে গিয়ে পুঁজিবাদের কাছে আত্মসমর্পণ।
বিগত ৫০ বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে উভয় শ্রেণিই তাদের ঘোষিত আদর্শিক অবস্থান থেকে সরে এসেছে এবং পুঁজিবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। প্রগতিশীলদের অন্তর্দ্ব›দ্ব পরিত্যক্ত সা¤প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে দেয়। ফলে স্বাধীনতার সুফল ছিনতাই হয়ে যায়। রাষ্ট্রটি আবার শোষক শ্রেণির হাতে গিয়ে পড়ে। বিগত ৫০ বছরে এই শ্রেণিটি এতটাই পরিপুষ্ট হয়েছে যে, রাষ্ট্রকে আর তাদের হাতের মুঠো থেকে বের করা যাচ্ছে না। একটি শক্তিশালী সমাজবিপ্লব ভিন্ন সেটি সম্ভবও নয়।
ধর্মান্ধ ইসলামি রাজনীতির এতো উলঙ্গ দর্প বাংলাদেশে কেন? পবিত্র কুরআন শরীফের বিভিন্ন আয়াত (: ১০৯ এবং ২২ : ৩৮) লঙ্ঘন করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার, আলবদর চক্র ইসলাম ধর্মকে তলোয়ার বানিয়ে অপব্যবহার করে ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা, ২ লক্ষ মা – বোনকে ধর্ষন এবং বুদ্বিজীবি হত্যা করেছিল। মুক্তি যুদ্ধে ২ লক্ষ মা-বোনকে ধর্ষন জামায়াতে ইসলামী ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ছিল ! অথচ এই ধর্ষন অপরাধের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করেছেন।
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!