অনলাইন ডেস্ক : ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল আততায়ীর গুলিতে নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. রকিব সেরনিয়াবাত। যার হত্যার বিচার আজও হয়নি।
তবে রকিব সেরনিয়াবাতের মৃত্যুর পর তার পরিবারের জন্য তিন হাজার টাকার একটি অনুদানের চেক দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
কিন্তু সেই চেক আজও কেউ ভাঙাননি। ভালোবেসে পরম যত্নে চেকটি আকড়ে রেখেছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। আর এখন সেই স্মৃতিময় চেকটি সংরক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিতে চান তারা। সেইসঙ্গে রকিব সেরনিয়াবাতের হত্যার বিচারও দাবি পরিবারের সদস্যদের।
নিহত রকিব সেরনিয়াবাতের ছোট ভাই মো. রাজিব সেরনিয়াবাত জানান, দেশ স্বাধীনের পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রকিব সেরনিয়াবাত ১৯৭৪ সালে সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল রাতে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন রকিব সেরনিয়াবাত। গৌরনদীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশেই দাফন করা হয় তাকে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার পর ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে রকিবের বাবা সেকান্দার আলী সেরনিয়াবাতকে তিন হাজার টাকার একটি অনুদানের চেক দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সই রয়েছে চেকটিতে। চেকটিতে উল্লেখ রয়েছে-‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল, সোনালী ব্যাংক স্থানীয় কার্যালয়, ঢাকা। একাউন্ট নং-৪৬৯৩। ’
চেকটি সেকান্দার আলীর হাতে পৌঁছায় ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে। এরপর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হওয়ার পর তার স্মৃতি ধরে রাখতে চেকটি ভাঙাননি সেকান্দার আলী। পরিবারের এক সদস্য চেকটি নিয়ে ব্যাংকে গেলেও সেখান থেকে ফেরত আনেন সেকান্দার আলী। শত অভাবের মধ্যেও সন্তানহারা বাবা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি হিসেবে চেকটি পরম যত্নে তার কাছে রেখেছেন।
রাজিব সেরনিয়াবাত বলেন, ২০০১ সালে বাবা মারা যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর সই করা সেই চেকটি বাবা আমার হাতে দিয়ে সংরক্ষণ করতে বলেন। মৃত্যুর আগে বাবা বলেছিলেন, মনে করো এটি একটি চেক নয়, এ হলো স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। এ চেক যে কলম দিয়ে বঙ্গবন্ধু সই করেছেন, সেই কলমের কালি হচ্ছে তোমার মুক্তিযোদ্ধা ভাই রকিবের রক্ত। এ চেকের মধ্যেই আমি খুঁজে পাই বঙ্গবন্ধু আর আমার ছেলে রকিবকে।
চেকটি পরম যত্নে দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এখন চেকটি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সরাসরি তুলে দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। সেইসঙ্গে ভাইয়ের হত্যার বিচারও চাই।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমার ভাইয়ের বিচার ঠিকই হতো। তার মৃত্যুর পর সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। কাগজবন্দি গেছে হত্যার ঘটনা। এখন চেষ্টা করেও কোন পথ খুঁজে পাচ্ছি না, কারণ কাগজপত্র যেমন পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি সাক্ষীদের অনেকেই মারা গেছেন। তবে মামলার বাদী আমার বড়ভাই আব্দুর রাজ্জাক সেরনিয়াবাত এখনও বেঁচে আছেন।
রাজিব সেরনিয়াবাতের আরেক বড়ভাই আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাতও বঙ্গবন্ধুর হাতের সেই করা চেকটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দিতে চান। তিনি জানান, এটাই তাদের পরিবারের ইচ্ছে।
বরিশাল জেলার তৎকালীন গৌরনদী বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলার সেরাল গ্রামের ছেলে আব্দুর রকিব সেরনিয়াবাত। তিনি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক এবং যুদ্ধকালীন রাডার ইঞ্জিনিয়ার।
মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু জানান, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও গৌরনদী পাক হানাদারমুক্ত হয়েছিল ছয়দিন পর ২২ ডিসেম্বর। ওই সময় সরকারি গৌরনদী কলেজের পাক সেনাদের স্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থানরত সেনা সদস্যদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে রকিব সেরনিয়াবাত ছিলেন অন্যতম।