অনলাইন ডেস্ক : তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার অধিকৃত পশ্চিম তীরে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে সৌদি আরব। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে মার্কিন মধ্যস্থতায় আলোচনায়ও জড়িত রিয়াদ। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ফিলিস্তিনি অঞ্চলের জন্য নিযুক্ত অনাবাসিক সৌদি রাষ্ট্রদূত নায়েফ আল-সুদাইরি। তিনি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও শীর্ষ ফিলিস্তিনি কূটনীতিক রিয়াদ আল-মালিকির সঙ্গে দেখা করেছেন।
জর্দানে তেলসমৃদ্ধ দেশের দূত সুদাইরিকে গত মাসে ফিলিস্তিনি অঞ্চলের পদের জন্য নাম ঘোষণা করা হয় এবং জেরুজালেমের কনসাল জেনারেল হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর সৌদি আরব থেকে প্রথমবার পশ্চিম তীর পরিদর্শন করা প্রতিনিধিদলটি জর্দান থেকে স্থলপথে ভ্রমণ করে। তাদের লক্ষ্য ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের অবসানের পথ প্রশস্ত করা।
সৌদির এ সফর এমন সময়ে এলো, যখন ওয়াশিংটন ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলোচনার সঙ্গে পরিচিত কর্মকর্তাদের মতে, আলোচনার মধ্যে সৌদি আরবের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরো পড়ুন : সৌদিতে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের প্রথম প্রকাশ্য ঘোষিত সফর
২০২০ সালে ইসরায়েল সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। কিন্তু সৌদি আরব এখনো পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলের বিরোধের সমাধান না হওয়ায় তারা সে পথ অনুসরণ করা থেকে বিরত রয়েছে।
উল্লেখ্য, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গত সপ্তাহে বলেছিলেন, দুই দেশ ‘ঘনিষ্ঠ হচ্ছে’।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েল ইউনেসকোর সভাসহ ক্রীড়া ও অন্যান্য ইভেন্টে অংশ নিতে সৌদি আরবে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে।
আরো পড়ুন : সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক প্রতিনিয়তই ঘনিষ্ঠ হচ্ছে : যুবরাজ
শক্তিশালী সংরক্ষণ
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার জাতিসংঘকে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, ‘আমরা ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক শান্তির চূড়ায়’ রয়েছি।
৮৭ বছর বয়সী আব্বাস এর আগে ফিলিস্তিনিদের দৃঢ় সংযম নিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বলেন, যদি কেউ মনে করে, ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের পূর্ণ, বৈধ জাতীয় অধিকার না পেলেও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বিরাজ করবে, তাহলে তারা ভুল।
১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল, ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের দিকে পরিচালিত করা।
কিন্তু বছরের পর বছর ধরে স্থবির আলোচনা ও মারাত্মক সহিংস সংঘর্ষ শান্তিপূর্ণ সমাধানের স্বপ্নকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। উভয় পক্ষের সরকারি সূত্র অনুসারে, সাম্প্রতিক সহিংসতার বৃদ্ধির ফলে চলতি বছর এ পর্যন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৪২ ফিলিস্তিনি এবং ৩২ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র অতীতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে আলোচনার মধ্যস্থতা করেছে। তবে প্রায় এক দশক আগে একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর থেকে তারা দুই দেশের সমাধানের দিকে কোনো চাপ দেয়নি।
নেতানিয়াহুর কট্টর-ডান সরকার ইতিমধ্যে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিগুলো সম্প্রসারণ করছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর থেকে পশ্চিম তীর দখল করে আছে এবং পরে আন্তর্জাতিকভাবে অস্বীকৃত পদক্ষেপে পূর্ব জেরুজালেমকে সংযুক্ত করেছে। সামরিক বাহিনী বিদ্রোহী গোষ্ঠী হামাস শাসিত ফিলিস্তিনের উপকূলীয় অঞ্চল গাজার ওপরও অবরোধ বজায় রেখেছে।
সৌদি যুবরাজ গত সপ্তাহে ফক্স নিউজের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেছিলেন, তার দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে একটি চুক্তির জন্য ‘ঘনিষ্ঠ’ হয়ে উঠছে। তবে তিনি জোর দিয়ে এ-ও বলেছিলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুটি রিয়াদের জন্য ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’ রয়ে গেছে।
সূত্র : এএফপি