অনলাইন ডেস্ক : পণ্য দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে এমন ৬০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এগুলোর মধ্যে ৩০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় শতাধিক মামলা হয়েছে। বাকি ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে রাখা হয়েছে নজরদারিতে। এসব প্রতিষ্ঠান যারা চালাচ্ছেন, যে কোনো সময় তারা তদন্ত সাপেক্ষে গ্রেফতার হতে পারেন।
যেসব প্রতিষ্ঠান সিআইডির নজরদারিতে রয়েছে সেগুলো হলো: ই-শপ ইন্ডিয়া, বিডি লাইক, র্যাপিড ক্যাশ-কুইক অনলাইন ই-লোন্স অ্যাপ, ফস্টার করপোরেশন, আলাদিনস প্রদীপ, বুমবুম, সহজ লাইফ অ্যান্ড লাইভলি লাইফ, প্রিয় শপ, নিডস ডটকম, সিরাজগঞ্জ শপ, দালাল প্লাস, আদিয়ান মার্ট, নিডস, এসকে ট্রেডার্স, মোটরস, চলন্তিকা, সুপন প্রডাক্ট, এসডিসি ওয়ার্ল্ড, নিউ নাভানাসহ ৩০টি প্রতিষ্ঠান। সিআইডির পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) ও র্যাব নজরদারির মধ্যে রেখেছে এসব প্রতিষ্ঠানকে।
এ ব্যাপারে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সিআইডিও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছে। কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে না। কয়েকজন ভুক্তভোগী এজন্য থানায় অভিযোগ করেছেন।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে এবং সিআইডির অনুসন্ধানে ৬০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। ৬০টির মধ্যে ৩০ থেকে ৩২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সিআইডির নজরদারিতে রয়েছে।
সিআইডির সূত্র জানায়, প্রতারণার অভিযোগে অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সারা দেশে শতাধিক মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, নিরাপদ শপ, রিং আইডি, টুয়েন্টিফোর টিকিট ডটকম, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস, ধামাকা, কিউকম ও এহসান গ্রুপ উল্লেখযোগ্য। প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা এসব মামলায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ করেছেন।
সিআইডি সূত্র আরো জানায়, যে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে সিআইডি কাজ করছে, তার মধ্যে ধামাকা শপিং ৫০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ইভ্যালির বিরুদ্ধেও শত কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ তদন্তাধীন। তদন্তকারীরা বলছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকটি ছোট প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের গ্রেফতারের পর ই-কমার্সের প্রতারণা সামনে আসতে থাকে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও শত শত গ্রাহক অভিযোগ করছেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা র্যাব তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে এহসান গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের র্যাব গ্রেফতার করেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ কিছু ই-কমার্সভিত্তিক কোম্পানির কেউ কেউ পালিয়ে গেছেন। এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। এগুলো অবশ্যই একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। চলতি আইন সংশোধনের মাধ্যমে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে প্রতারণামূলক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
পাশাপাশি আইন প্রয়োগের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া দক্ষ জনবল বৃদ্ধি ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যেন তারা প্রতারণামূলক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে সাবধান থাকতে পারেন।