সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনুষ্ঠানে (বাম থেকে) সাহিদুল আলম টুকু, মনিস রফিক, এনায়েত করিম বাবুল এবং সোলায়মান তালুত রবিন

অনলাইন ডেস্ক : গত ১২ই মে, শুক্রবার টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র ‘মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টারে এক ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম আয়োজিত ‘৬ষ্ঠ টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ (6th Toronto Multicultural Film Festival 2023)’ এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। আগামী ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে ২১শে সেপ্টেম্বর চারদিনব্যাপী এই চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হবে স্কারবোরোর ২২ লেভবিক এভিনিউ’র সিনেপ্লেক্স ওডেন এবং মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রিনিং সেন্টার এ।

উল্লেখ্য, টরন্টো ফিল্ম ফোরাম ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করার পর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও চলচ্চিত্র বিষয়ে আলোচনায় টরন্টোর বাংলাদেশী প্রবাসীদের মধ্যে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে। ২০১৭ সালে কানাডার ১৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম সেই বছরে ১ম মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এর আয়োজন করে। তারপর এর ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর টরন্টো ফিল্ম ফোরাম চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করে আসছে। শুধুমাত্র ২০২০ সালে করোনা অতিমারীর সংকটের সময় টরন্টো ফিল্ম ফোরাম এর পক্ষে চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।

প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এবার প্রায় ২০টি সংস্কৃতির ৪০টির মত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র এবং স্বল্প ও পূর্ণ দৈর্ঘ্যের কাহিনী চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। সেই সাথে উৎসবের সময়ে উপস্থিত থাকবেন প্রদর্শিত চলচ্চিত্রের বেশ কয়েকজন নির্মাতা এবং অভিনয় শিল্পী, যারা ইতোমধ্যে দেশ বিদেশে নিজেদের চলচ্চিত্র নির্মাণ শৈলী এবং অভিনয়ের জন্য সুধীজনের দৃষ্টি কেড়েছেন।

ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ‘মিট দ্য প্রেস’ এ উপস্থিত টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সদস্যবৃন্দ

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এবং ৬ষ্ঠ টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ এর সমন্বয়ক মনিস রফিক। তাঁর বক্তব্যে তিনি জানান, আমরা যারা এই দেশে অভিবাসী হয়ে নতুন জীবন শুরু করেছি, তাদের প্রায় সবাইকে এই নতুন ভ‚মির বহুজাতিক সংস্কৃতির সৌন্দর্য মুগ্ধ করে, আর এই মুগ্ধতা আমাদের মাঝে প্রগাঢ় এক উপলব্ধিবোধ জাগিয়ে তুলেছে যে বহুজাতিক সংস্কৃতির সৌন্দর্যের ক্ষেত্র যদি আরও বেশী বিস্তৃত হয়, তাহলে শুধু কানাডা নয়, বরং গোটা পৃথিবীই একটা সুন্দর আবাসভ‚মিতে পরিণত হবে। তাছাড়া, আমরা সব সময়ই বিশ্বাস করি, আমরা যদি একে অপরের সংস্কৃতি ভালোভাবে জানতে পারি এবং একে অপরের সংস্কৃতির আদান প্রদান করতে পারি, তাহলে আমরা যেমন জ্ঞানলব্ধ হবো, ঠিক তেমনি আমরা একে অপরের প্রতি অনেক বেশী শ্রদ্ধাশীল আচরণ করবো। নিঃসন্দেহে এর মধ্যে নিহিত থাকে এক সুন্দর জীবন, সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবী গড়ার মূলমন্ত্র।

তাঁর বক্তব্যে তিনি আরও জানান, এমন এক ভাবনা থেকেই টরন্টো ফিল্ম ফোরাম এর মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এর যাত্রা শুরু। গত ৫টি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বাঙালি সংস্কৃতির চলচ্চিত্র ছাড়াও প্রায় ৫০টি সংস্কৃতির চলচ্চিত্র আমরা দর্শকদের দেখিয়েছি এবং বিভিন্ন সময়ের প্রদর্শনীতে বিভিন্ন সংস্কৃতির চলচ্চিত্র নির্মাতারা দর্শকদের সামনে উপস্থিত হয়েছেন এবং কথা বলেছেন তাদের চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং নিজেদের সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য নিয়ে। এতে যেমন উপকৃত হয়েছে চলচ্চিত্র পিপাসু দর্শক, তেমনি আরও সুন্দর চেতনায় জাগ্রত হয়েছে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম সদস্যবৃন্দ।

মনিস রফিকের লিখিত বক্তব্যের পর এবারের চলচ্চিত্র উৎসবের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের অনুষ্ঠান সম্পাদক ও ফেস্টিভ্যালের ভলিন্টিয়ার্স কমিটির আহবায়ক সোলায়মান তালুত রবিন, টরন্টো ফিল্ম ফোরামের অর্থ সম্পাদক ও ফেস্টিভ্যালের অর্থ বিষয়ক কমিটির আহবায়ক সাহিদুল আলম টুকু এবং টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি ও ফেস্টিভ্যালের পরিচালক এনায়েত করিম বাবুল।

ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অফিসিয়াল ব্যানার

সোলায়মান তালুত রবিন বলেন, টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এর প্রতিটি আয়োজনেই প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট থাকেন বেশ কিছু ভলিন্টিয়ার্স। গত ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশী বংশোভ‚তসহ অন্যান্য সংস্কৃতির ৩৪ জন ভলিন্টিয়ার অংশগ্রহণ করেন। এই ভলিন্টিয়ারদের সকলেই স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, এই নতুন প্রজন্মের কাছে যদি আমরা বহুসংস্কৃতির সৌন্দর্যের আলো পৌঁছিয়ে দিতে পারি, তাহলে তারা আরও সুন্দর মানুষ হয়ে পরিবার, সমাজ, দেশ এবং পৃথিবীকে আলোকিত করবে।
সাহিদুল আলম টুকু ফেস্টিভ্যালের ব্যয় এবং এই ব্যয় নির্বাহের জন্য সম্ভাব্য অর্থের উৎস সম্পর্কে উপস্থিত সবাইকে একটি ধারণা দেন।

ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর এর বক্তব্যর টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম বাবুল বলেন, বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্র একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ শিল্প মাধ্যম, এটার মাধ্যমে খুব সহজেই জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ও স¤প্রীতি বাড়ানো সম্ভব। টরন্টো ফিল্ম ফোরাম যেহেতু চলচ্চিত্র বিষয়ক একটি সংগঠন, সেহেতু চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এই ‘মাল্টিকালচারাল স্পিরিট’টি সবার কাছে পৌঁছিয়ে দিতে সংগঠনটি বদ্ধ পরিকর। এবারের এই চলচ্চিত্র উৎসবে বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও সংস্কৃতির চলচ্চিত্রের সাথে বাংলাদেশের তরুণদের একটি উল্লেখ সংখ্যক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। ফলে আমরা খুব সহজেই উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রও পৌঁছিয়ে দিতে পারবো। এই চলচ্চিত্র উৎসব এর সংবাদ পাঠকদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়ে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম’কে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে এবং ‘Enhancing the Beauty of Multiculturalism’ এর যাত্রায় ফোরামের সাথে থাকার জন্য তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের আহবান জানান।