বিনোদন ডেস্ক : দেশজুড়ে এই মুহূর্তে আলোচনার তুঙ্গে ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর মৃত্যুর ঘটনা। ২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) হঠাৎ করে তার মৃত্যুর খবর সবাইকে শোকার্ত করে। মৃত্যু রহস্য ঘিরে তৈরি হয় জল্পনা-কল্পনা। একের পর এক তথ্য উঠে আসতে শুরু করে প্রশাসনের হাতে।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে হিমুর বন্ধু মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি ওরফে উরফি জিয়াকে (৩৭)। তদন্তে বের হয়েছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
তবে হিমুর মৃত্যু তদন্তে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে ওঠে তার মেকআপম্যান ও পাতানো ভাই মিহির। হিমুর মৃত্যুর পর থেকেই সন্দেহের তীর ওঠে মিহিরের দিকে।

এ ঘটনায় পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর আদালতে বিচারকের কাছে জবানবন্দি দেন তিনি। এই মুহূর্তে হিমুর মৃত্যু তদন্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে মিহির। তবে এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এলেন মিহির।

রবিবার (৫ নভেম্বর) সকালে হুমায়রা হিমুর আলোচিত মেকআপম্যান মিহির নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন। সেখানে তিনি হিমুর মৃত্যু নিয়ে কথা বলেন। সঙ্গে রাখেন বেশ কয়েকটি প্রশ্নও। ১৫ মিনিটের সেই লাইভের শুরুতেই মিহির জানান, তিনি প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। সেই সঙ্গে জানান, হিমুর মতো স্ট্রং একটা মেয়ে ফাঁসি দিতেই পারে না! এ ঘটনা তিনি মেনে নিতে পারছেন না।

ভিডিওতে নিজেকে হিমুর মেকআপম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়ে মিহির জানান, হিমুর মৃত্যুর পর তাকে (মিহির) জড়িয়ে ফেসবুকে অনেকে বিরূপ মন্তব্য করছেন। এগুলো তাকে মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছে। তিনি নিজে কোনো অপরাধ করেননি। কোথাও পালিয়েও যাননি। বরং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে হিমুর স্বজনদের সাহায্য করেছেন। ভিডিওর একপর্যায়ে হিমুর উত্তরার বাসায় প্রেমিকের উপস্থিতির প্রসঙ্গ তোলেন মিহির।

মিহির বলেন, ‘হিমুর সাথে কোনো কিছু হইছে। দুর্ভাগ্যবশত আমি তা দেখতে পারি নাই। অন্য রুমে ঘুমায়ে ছিলাম। তবে ওর বয়ফ্রেন্ড ছিল রুমে। আমি ধারণাও করিনি ও হিমুর সাথে ঝগড়া করবে বা খুনোখুনি হয়ে যাবে, মারামারি হবে।’

মিহির বলেন, ‘ও (বয়ফ্রেন্ড) যখন আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে দেখাইছে, তখন আমি তাকে প্রশ্ন করছিলাম, আপনি রুমে থাকতে ঘটনা কিভাবে ঘটল। তখন বলে, সে বাথরুমে ছিল। একটা মানুষ বাথরুমে থাকবে আর আরেকটা মানুষ ফাঁসি দিয়ে ফেলবে- এটাও আমি মেনে নিতে পারতেছিলাম না। আমি কোনো কিছুই মেনে নিতে পারতেছিলাম না।’

ভিডিওতে মিহির বলেন, ‘আমার মনে হয়, হিমু ফাঁসি দিতেই পারে না। হিমু ফাঁসি দেয় নাই। হিমু এত স্ট্রং।’

নিজেকে ঘটনার রাজসাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করে মিহির বলেন, ‘আমি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সাক্ষী দিয়ে আসছি। কিন্তু এখন নতুন করে আমাকে নিয়ে ফেসবুকে যা শুরু হয়েছে, সেগুলো মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমি হতাশায় আছি। আমি যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটাই সেটার জন্য পুরো মিডিয়ার মানুষ দায়ী থাকবে। যারা উঠে-পড়ে লাগছেন তারা দায়ী থাকবেন। ডিবি, র‌্যাব, পুলিশের যেকোনো কর্মকর্তা যে কোনো মুহূর্তে আমাকে ফোন দিলে আমি হাজির হব। আমি কোথাও পালাব না। পালিয়ে যাওয়ার ছেলে আমি না। আমি কোনো ধরনের ক্রাইম করিনি।’

এই মিহির শুধু অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুই নয়, ২০১৮ সালের মে মাসে বিনোদন জগতের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তাজিন আহমেদের মৃত্যুর সময়ও পাশে ছিলেন। এমনকি দুজনকে হাসপাতালে নেয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসকের মৃত ঘোষণা পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন। এককথায় তাদের পুরো মৃত্যুর ঘটনাটি দেখেছেন এই মেকআপম্যান। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর আগে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ একা থাকতেন। একই অবস্থা ছিল অভিনেত্রী হিমুর ক্ষেত্রেও, নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করতেন এ অভিনেত্রী। মৃত্যুর সময় স্বজন-পরিজন কেউই পাশে ছিল না তাজিনের। একই দৃশ্য দেখা যায় অভিনেত্রী হিমুর ক্ষেত্রেও। তবে শেষ সময়ে দুজনেরই পাশে ছিলেন মিহির।

হিমুর মৃত্যুর পর মিহির প্রসঙ্গে উপস্থাপক ও অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, মেকআপ আর্টিস্ট মিহির এক সময় অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর ব্যক্তিগত মেকআপ আর্টিস্ট ছিল। আমরা তখন নিয়মিত কাজ করতাম। শ্রাবন্তী তখন প্রথম সারির নায়িকা। শ্রাবন্তী যখন মিহিরকে নিতো তখন মিহিরের অনেক দাপট ছিল। শ্রাবন্তীর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিহিরেরও অবস্থান পরিবর্তন হয়। তারপর মিহিরকে তাজিন আপার সঙ্গে পাই। তাজিনের মৃত্যুর ঘটনার সময়ও মিহির ছিল। একইভাবে হুমায়ারা হিমুর মৃত্যুর ঘটনায়ও মিহির ছিল।

জানা গেছে, মেকআপম্যান মিহিরের বাড়ি সিলেটে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি মেকআপ আর্টিষ্ট হিসেবে কাজ করছেন। ব্যক্তিগত জীবনে দুবার বিয়ে করেছেন বলে জানা যায়। তবে তার দুই স্ত্রী আত্নহত্যা করেছেন বলেও শোনা গেছে।