সোনা কান্তি বড়ুয়া : আনন্দবাজার পত্রিকায় (২১ মে ২০২১ প্রিয় মিত্র) হিন্দুরাজনীতি পূজনীয় গৌতমবুদ্ধকে সনাতন ধর্মের নবম অবতার বানষচ্ছে! বৌদ্ধ সাহিত্য বুদ্ধবংশ ও অষ্ঠবিংশতি ব্দ্ধু বন্দনার আলোকে গৌতমবুদ্ধ ছিলেন অষ্ঠবিংশতি ব্দ্ধু! প্রত্নতাত্তি¡ক গবেষণায় খৃষ্ঠপূর্ব ১৫০০ বছর পূর্বে বৈদিক রাজা ইন্দ্র প্রাগৈতিহাসিক কাশ্যপব্দ্ধুর বৌদ্ধধর্ম এবং বৌদ্ধ নগরদ্বয় মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা ধ্বংস করার পর প্রাচীন ভারতে বৈদিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন! ঋগে¦বেদের আলোকে (ঋগে¦বেদ প্রথম বেদ / (১/১০৫/৮ ও ১০/৩৩/২) প্রাচীন কাশ্যপব্দ্ধুর বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস এবং বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞই কি বৈদিক হিন্দুধর্ম (পৃষ্ঠা ১২, দেশ, কলিকাতা, ৪ মে, ২০০১)?
প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এই সিন্ধু প্রদেশে প্রত্নতাত্তি¡ক বৌদ্ধ নিদর্শনের ইতিহাস থেকেই প্রাগৈতিহাসিক কাশ্যপব্দ্ধুর বৌদ্ধধর্ম এবং বৈদিকপূর্ব ধ্যানমগ্ন রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো (মহষসূদর্শন সূত্রে মহষসূদর্শন) বোধিসত্ত¡ রূপরেখাটির” সূত্র বেরিয়েছিল! হিন্দুপন্ডিতগণ দশরথ জাতককে বদলায়ে রামায়ণ রচনা করার পর উক্ত রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের বত্রিশ নম্বর শ্লোকে সনাতন ধর্মের নবম অবতার গৌতমবুদ্ধকে চোর (HATE CRIME OF হিন্দুধর্ম) এবং বৌদ্ধদেরকে নাস্তিক বানিয়েছে। বৌদ্ধ জাতকই রামায়ন ও মহাভারতের উৎস!
স¤প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ (২১ মে ২০২১ প্রিয় মিত্র) শিরোনাম ছিল, (১) “আগামী বুধবার বুদ্ধপূর্ণিমা ও গন্ধেশ্বরী পূজা, জেনে নিন নির্ঘণ্ট! বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা একটি পূণ্য তিথি। আগামী ২৬ মে শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। বৈশাখী পূর্ণিমার পূণ্য তিথি সনাতন ধর্মের নবম অবতার এবং বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের শুভ জন্ম তিথি। বোধি বা সিদ্ধিলাভ এবং মহা পরিনির্বাণ লাভ করেন বুদ্ধ। মায়াদেবী এবং রাজা শুদ্ধধনের পুত্র গৌতম নেপালের লুম্বিনী নগরে জন্মগ্রহণ করেন। কপিলাবস্তু নগরে বড় হয়ে ওঠেন তিনি। রাজপুত্র হিসাবে সমস্ত বিলাসিতায় বড় হয়ে ওঠেন এবং যশোদার সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। ওঁর রাহুল নামে এক পুত্র ও হয়।” ”স্বয়ং গৌতমবুদ্ধ যেখানে বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন সেই বৌদ্ধ বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি মন্দির বেদখল হয়ে যাওয়াটা মেনে নিলে বৌদ্ধধর্ম ও জাতির গুরুতর অঙ্গহানি হয়ে যায়। তুমি ব্রাহ্মণ যে মানব, অখন্ড মানব জাতি সেই মানব! কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)! প্রাচীন উপনিষদের বিভিন্ন উপদেশ বৌদ্ধধর্ম থেকে নকল করা হয়েছে বলে গৌতমবুদ্ধ ত্রিপিটকের (মধ্যম নিকায়ের ৭৫ নন্বর) মাগন্দিয় সূত্রে ব্যাখ্যা করেছেন। বৈদিক উপনিষদ সাহিত্যসহ বিভিন্ন পুরাণ কাহিনীতে বৌদ্ধধর্মকে নকল করে হিন্দুধর্ম করা হয়েছে!
হিন্দুত্ববাদীদের বৌদ্ধ প্রতারণার অভিনব কৌশল এবং হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ না করে বা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী না হয়ে পূজনীয় গৌতমবুদ্ধকে হিন্দুরাজনীতি নবম অবতার বানিয়ে বানিয়ে গোলে মালে আধুনিক সমাজের চোখে ধূলো দিচ্ছেন। হিন্দু রাজনীতি বুদ্ধ উপনিষদ, যীশু খৃষ্ঠের নামে ভগবান যীশু (Rama Krisna Mission) এবং আল্লাহ উপনিষদ (সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে) রচনা করে সকল ধর্মের ধর্ম প্রবর্তকগণকে হিন্দুধর্মের অবতার বানিয়ে বিশ্বের সকল ধর্মকে গিলে ফেলবে কি? মা গঙ্গাসহ সূর্য্য দেব ও চন্দ্র দেবকে হিন্দু রাজনীতি দখল করে আছে। জাতিভেদ প্রথায় মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই হিন্দু রাজনীতির হিন্দু ধর্ম! “সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কেমন করিয়া ভুলিয়া গেলেন যে, একদা রাশি রাশি বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করিয়া একদিন গড়িয়া উঠিয়াছিল রাশি রাশি হিন্দু মন্দির (আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়, ২২ আগষ্ট, ১৯৯৩)!” হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠতম তীর্থভূমি “বুদ্ধগয়া দখল করে বৈদিক পন্থীরা মিথ্যা ইতিহাস বানিয়ে বৌদ্ধ সভ্যতাকে গ্রাস করে ফেলেছে। মুসলিমিরা আসার আগে ভারতে সুদীর্ঘকাল বৌদ্ধদের সাথেই বৈদিকদের (বর্তমানের হিন্দু) দ্ব›দ্ব-সংঘাত ছিল।
আমার দেশ আমার পরম তীর্থভূমি এবং মানবাধিকারই সর্বকালের ধর্মের মূলমন্ত্র। ঋগে¦বেদের আলোকে (ঋগে¦বেদ প্রথম বেদ / (১/১০৫/৮ ও ১০/৩৩/২) বৈদিক ধর্ম পন্থী আর্য্যদের রাজা ইন্দ্র ভারতে হিন্দুধর্মের পূর্বে মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা ধ্বংস করেছিলেন! ফলে মানুষ নিহত হয়েছিলেন অগণ্য। প্রাচীনতম বেদ হল ঋগে¦বেদ (Rigveda) যার পদ্যে রচিত সংহিতার দশটি মন্ডলে ১০২৮টি সূত্র আছে। হিন্দুধর্মের পূর্বে মহেঞ্জোদারো প্রত্নতাত্তিক নিদর্শনে কাশ্যপবুদ্ধের প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধ ইতিহাস এবং হিন্দু রাজনীতির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে বৈদিকপূর্ব ধ্যানমগ্ন রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো (মহষসূদর্শন সূত্রে মহষসূদর্শন) বোধিসত্ত¡ বিরাজমান! বল বীর, বল রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো বোধিসত্তে¡র উন্নত শির! শির নেহারি’ রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো বোধিসত্তে¡র নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
প্রত্নতাত্তি¡ক গবেষণায় এই সিন্ধু প্রদেশে প্রত্নতাত্তি¡ক বৌদ্ধ নিদর্শনের ইতিহাস থেকেই প্রাগৈতিহাসিক “ভারতবর্ষ : আদিপর্বের রূপরেখাটির” সূত্র বেরিয়ে ছিলেন! যুক্তিবাদীদের চোখে ধর্ম” নামক (প্রবীর ঘোষ ও ওয়াহিদ রেজা সম্পাদিত) গ্রন্থে পল্লব সেনগুপ্তের লেখা “ধর্ম ও ভারতবর্ষ : আদিপর্বের রূপরেখা” প্রবন্ধে (দেশ, Page 13, কোলকাতা, 13 May 1993) বিরুদ্ধে বৌদ্ধদের মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধদর্শনের বিভিন্ন প্রসঙ্গ বৈদিক সাহিত্যে বিরাজমান! “ইন্দ্ররাজাকে যুযুধান আর্যভাষী নায়করূপে দেখা যায় যিনি : (ক) স্বয়ং বৈদিক ইন্দ্ররাজা বোধিসত্ত¡ ঊষা দেবীকে ধর্ষণ করেছিলেন (খ) বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বোধিসত্বদের (যতি-দের) নিধন করে উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন। (গ) মুরদেবাঃ- শিশ্মদেবাঃদের নগরী লুণ্ঠন করেছিলেন; (ঘ) দাসরাজাদের পুরনারীদেরকে গণধর্ষণে বিধ্বস্ত করার নেতৃত্ব করেছিলেন; (ঙ) হরিযুপীয়া (হরোপ্পা) নগরের উপকন্ঠে দাসবংশীয় রাজন্যবর্গ ও সৈন্যদেরকে ধ্বংস করেছিলেন; (চ) বৃত্র নামক ত্রিশীর্ষ অসুরকে বধ করেছিলেন; (ছ) কৃষ্ণত্বক দাস-অহি বংশীয়দের পৃষ্ঠত্বকউন্মীলন করেছিলেন; (জ) দাসবংশীরা গর্ভিনী নারীদের হত্যা করেছিলেন; (ঝ) শতদ্বারযুক্ত প্রস্তুরনির্মিত নগরীসমূহ ভস্মসাৎ করেছিলেন!
হিন্দু মন্দিরে হিন্দুরষ বুদ্ধকে পূজা করে না এবং আনন্দবাজার পত্রিকার কার্টুনে বুদ্ধ পূর্ণিমা নাম বদলায় কেন? (২) বিগত ৬ই মে ২০১২ সালে আনন্দবাজার পত্রিকা তার কার্টুনে (রবিবাসরীয়, শেখর মুখোপাধ্যায় গোলমেলে গিন্নি) লেখা ছিল, “হ্যাঁ রে, আজ না কি বুদ্ধ পূর্ণিমা? বলিস কী, এখনও নাম বদলায়নি?” উক্ত কার্টুনের ভাষা বিশ্ব বৌদ্ধদের ধর্মীয় অনুভূতির মূলে কুঠারাঘাত করেছে। বুদ্ধের উপদেশ সম্বলিত ভারতে সারনাথের অশোকচক্র স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা এবং রাষ্ট্রীয় স্মারক চিহ্নে বিরাজমান। শুভ বুদ্ধপূর্ণিমায় হিন্দু মন্দিরে বুদ্ধ পূজা করার প্রথা আছে কি? বৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠতম তীর্থভূমি “বুদ্ধগয়া দখল করে” মন্দিরের দান বাক্সকে হিন্দুরাজনীতির অধীনে বন্দী করে রেখে ভারতীয় বৌদ্ধদের অস্তিত্বকে সমূলে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।” স্বয়ং গৌতমবুদ্ধ যেখানে বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন সেই বৌদ্ধ বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি মন্দির বেদখল হয়ে যাওয়াটা মেনে নিলে বৌদ্ধধর্ম ও জাতির গুরুতর অঙ্গহানি হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত: ভারতীয় ধর্মান্ধ হিন্দুপন্ডিতগণ হাজার বছর পুর্বে অহিংসা পরমধর্ম প্রচারক এবং মানবাধিকারের সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠাতা বেদ বিরোধী গৌতমবুদ্ধকে হিন্দুধর্মের জগন্নাথ বুদ্ধ পুরাণ শীর্ষক তিন হাজার পৃষ্ঠার বই লিখে উড়িষ্যায় রথ যাত্রা এবং পুরীর বৌদ্ধমন্দিরকে জগন্নাথ মন্দির নাম বদলিয়ে দখল করেছে। ধর্মান্ধ হিন্দুশাসকগণ কর্তৃক ভারতে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংসের সচিত্র বই উৎকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মহাপন্ডিত বংশিধর মোহান্তি রচনা করেছেন। জগন্নাথ বৌদ্ধ বিহার ও মঠের (PURI) কিছু কিছু জায়গা আংশিক ধ্বংস করে সেখানে বৈদিক কাঠামো ও গঠন শৈলীতে গোড়ে তোলা হয়েছে জগন্নাথ মন্দির। আর গৌতম বুদ্ধের মূর্তিকে বিকৃত করে বা কিছু কিছু জায়গায় ভেঙ্গে দিয়ে (হাত, মুখ) জন্ম হয়েছে জগন্নাথ দেবের। আবার মন্দিরের গায়ে নতুন কিছু ভাস্কর্যও পরবর্তীকালে তৈরি করা হয়েছে। যেমন দেয়ালে “কাম-কলার চিত্র”।,
প্রসঙ্গত: হিন্দু শাসক শশাঙ্ক, আদি শঙ্করাচার্য্য এবং কুমারিল ভট্ট ফতোয়া দিলেন, বৌদ্ধ মাত্রই বধ্য বা বৌদ্ধদেরকে হত্যা কর (পৃষ্ঠা ১২, দেশ, কলিকাতা, ৪ মে, ২০০১)!” গৌতমবুদ্ধ ও বৌদ্ধগণ হিন্দুদের বেদ ও জাতিভেদ প্রথা বিশ্বাস করেন না! বিশ্বকবির ভাষায়:
আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমন পশিল প্রাণের ’পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে
প্রভাতপাখির গান!
না জানি কেন রে এত দিন পরে
জাগিয়া উঠিল প্রাণ!
জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,
ওরে উথলি উঠেছে বারি,
ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ
রুধিয়া রাখিতে নারি।”
হিন্দুরাজনীতিতে “নবম অবতার বুদ্ধ” বৌদ্ধসভ্যতা বিরোধি পলিটিক্যাল হিন্দুধর্মের ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্র! এবং বিশ্ববৌদ্ধদের পবিত্রতম বুদ্ধগয়া মহাবোধি বিহার TEMPLE ম্যানেজম্যান্ট কমিটিতে জোর করে পাঁচজন হিন্দু মেম্বার দিয়ে হিন্দু শাসকগণ বুদ্ধগয়া দখল করে আছে! বৌদ্ধগণ যারা বেদে বিশ্বাস করেন না এবং হিন্দুদের সাথে বৌদ্ধদের মধ্যে রয়েছে দেড় হাজার বছরের সংঘাতের ইতিহাস। হিন্দুত্ববাদীদের বৌদ্ধ প্রতারণার অভিনব কৌশল হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ না করে বা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী না হয়ে পূজনীয় গৌতমবুদ্ধকে হিন্দুরাজনীতি নবম অবতার বানিয়ে বানিয়ে গোলে মালে আধুনিক সমাজের চোখে ধূলো দিচ্ছেন। হিন্দুরাজনীতি বুদ্ধের দেহকে দেখে কিন্তু বুদ্ধের উপদেশ মেনে চলে না এবং বুদ্ধের উপদেশ ছিল, “যে আমার দেহকে দেখে সে আমাকে দেখে না, যে আমার উপদেশ মেনে চলে সে আমাকে দেখে ও মেনে চলে।”
হিন্দুরষ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমায় হিন্দু মন্দিরে হিন্দুদের সনাতন ধর্মের নবম অবতার বুদ্ধকে পূজা করে না! বর্ণাশ্রমবাদী হিন্দু মন্দিরে “বুদ্ধং সরনং গচ্ছামি’ উচ্ছারিত হয় না! হিন্দুদের সাথে বৌদ্ধদের ঐক্য কিভাবে হয়? ব্রিটিশ পন্ডিত জেমস প্রিন্সেপ ভারতে এসে সম্রাট অশোকের শিলালিপি পড়তে পারলেন অথচ ভারতের ব্রাহ্মণ্যবাদী পন্ডিতগণ সিন্ধুসভ্যতার বৌদ্ধধর্ম ও অতীত বুদ্ধগণের অস্তিত্ব স্বীকার না করে ১৮৩৭ সালে সম্রাট অশোকের শিলালিপি পড়তে না পেরে ইতিহাস চুরির চাতুর্য হাতে নাতে ধরা পড়ে গেল। হিন্দুত্ববাদীদের ইতিহাস চুরির চাতুর্যে ভারতে বৌদ্ধধর্ম দখল!
রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের (অধ্যায়) বত্রিশ নম্বর শ্লোকে বুদ্ধকে (যথাহি চৌর স তথাহি বুদ্ধ, তথাগতং নাস্তিকমত্র বিদ্ধি।) চোর বলে গালাগাল করার পর সেই মহাকাব্যটি কি বৌদ্ধ জাতকের আগে রচিত? “তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, / আমি হলাম চোর বটে।” ইতিহাস চুরির চাতুর্যে রামায়নের তথ্য ফাঁস : গৌতমবুদ্ধ তাঁর ভিক্ষুসংঘকে উপদেশ প্রসঙ্গে দশরথ জাতক সমাধান করতে গিয়ে বলেছেন, “তখন (পূর্ব জন্মে) শুদ্ধোধন রাজা ছিলেন দশরথ মহারাজা, মহামায়া ছিলেন সে মাতা, রাহুলমাতা (গোপা) ছিলেন রাজকুমারী সীতা, আনন্দ ছিলেন রাজপুত্র ভরত, সারীপুত্র ছিলেন রাজপুত্র লক্ষন, বুদ্ধ পরিষদ সে পরিষদ, আমি (বুদ্ধ) ছিলাম সে রাম পন্ডিত (দশরথ জাতক নম্বর ৪৬১, জাতক অট্টকথা, পালি টেক্সট সোসাইটি, লন্ডন)।” বৌদ্ধ প্রধান দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক মহানগরীর বিখ্যাত রাজকীয় এমারেল্ড (মরকত মনি) বুদ্ধ মন্দিরের চারিদিক জুড়ে আছে দশরথ জাতকে রামকীর্তির অভিনব চিত্রশালা।
সিন্ধুসভ্যতায় কাশ্যপবুদ্ধের বৌদ্ধ সংস্কৃতির সর্বভারতীয় নৈতিক শক্তিকে বৈদিক জাতিভেদ প্রথা ধ্বংস করার ফলে আজ ভ্রষ্ঠাচারের দহনে করুন রোদনে তিলে তিলে ভারত সহ দক্ষিন এশিয়ার জনতা ক্ষয় হচ্ছে।
মানবাধিকারই বৌদ্ধ সাহিত্য এবং ধর্মের মূলমন্ত্র। বৈদিক পন্থী ব্রাহ্মণগণ ত্রিপিটকের অন্তর্গত চারি আর্য্যসত্য, প্রতীত্য সমুৎপাদের (কার্য কারন মহা প্রবাহ প্রণালী) বিশ্ববিদ্যা কল্পদ্রæম এবং অষ্ঠবিংশতি বুদ্ধ বন্দনায় বুদ্ধবংশের বুদ্ধ বচনকে উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণ্যবাদের দ্বারা রচিত নবম অবতার নামক খাঁচায় গৌতমবুদ্ধের ইতিহাসকে বন্দী করে বুদ্ধগয়ায় শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৪৯ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর আদেশে উক্ত শিবলিঙ্গ বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির থেকে সরিয়ে নেওয়া হল!
পবিত্র পালি ত্রিপিটকের দীর্ঘ নিকায়ের চক্কবত্তি সীহনাদ সূত্তান্ত (৩য় খন্ড ২৬ নং সূত্র) অনুসারে বৈদিকপূর্ব চক্রবর্তি রাজর্ষি বোধিসত্তে¡র ছবি এবং সুত্তনিপাতের ৩ নম্বর খ¹বিষাণ সূত্রানুসারে গন্ডারের ছবি মহেঞ্জোদারোর মিউজিয়ামের বাইরের দেওয়ালে বিশাল রেপিকায় বিরাজমান। বৈদিক রাজা ইন্দ্র প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধ নগরদ্বয় মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা ধ্বংস করার পর প্রাচীন ভারতে বৈদিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ! তথাগত গৌতমবুদ্ধের মতে, ”আমি প্রাচীন বুদ্ধগণের আর্য্য অষ্ঠাঙ্গিক মার্গ অনুসরণ করে ধর্ম প্রচার করি (নিদান সংযুক্ত, নিদান বর্গ, সংযুক্ত নিকায়)” এবং গৌতমবুদ্ধের বৌদ্ধধর্মের সাথে মহেঞ্জোদারো হরপ্পার কাশ্যপ বুদ্ধের বৌদ্ধধর্মের সম্বন্ধ বিরাজমান।
বৈদিক রাজা ইন্দ্র প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধ নগরদ্বয় মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা ধ্বংস করার পর প্রাচীন ভারতে বৈদিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (লেখক স্বপন বিশ্বাসের লেখা ইংরেজি বই ‘বৌদ্ধধর্ম’ মহেঞ্জোদারো হরপ্পার ধমর্, কলিকাতা ১৯৯৯), এবংপ্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধদর্শনের বিভিন্ন প্রসঙ্গ বৈদিক সাহিত্যে বিরাজমান এবং প্রাচীন উপনিষদের বিভিন্ন উপদেশ বৌদ্ধধর্ম থেকে নকল করা হয়েছে বলে গৌতমবুদ্ধ ত্রিপিটকের (মধ্যম নিকায়ের ৭৫ নন্বর) মাগন্দিয় সূত্রে ব্যাখ্যা করেছেন। বৈদিক উপনিষদ সাহিত্য সহ বিভিন্ন পুরাণ কাহিনীতে বৌদ্ধধর্মকে নকল করে হিন্দুধর্ম করা হয়েছে এবং মতো হিন্দুরাজনীতির রঙে রাঙিয়ে সূর্য ক্যালেন্ডার করা হয়েছে! (লেখক স্বপন বিশ্বাসের লেখা ইংরেজি বই ‘বৌদ্ধধর্ম’ মহেঞ্জোদারো হরপ্পার ধমর্, কলিকাতা ১৯৯৯), এবংপ্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধদর্শনের বিভিন্ন প্রসঙ্গ বৈদিক সাহিত্যে বিরাজমান!
আনন্দবাজার পত্রিকায় ভারতীয় রাজনৈতিক হিন্দুধর্ম আজ আবার বুদ্ধকে হিন্দুদের নবম অবতার বানিয়ে ভারতীয় বৌদ্ধগণের অস্তিত্ব সমূলে ধ্বংস করেছে ! লেখক জয়ন্ত ঘোষালের লেখা ”উচ্চবর্ণ আর দলিতে সংঘাতে হিন্দুত্ববাদীরা বেসামাল” শীর্ষক প্রবন্ধে বিরাজমান” একশোটা স্বামী বিবেকানন্দ আবির্ভূত হলেও চণ্ডাল ভারতবাসী চন্ডাল হয়েই থাকবে (আনন্দবাজার পত্রিকায় (১৬ অগষ্ট ২০১৬) !” ইউরোপে নাৎসিদের হাতে ইহুদি নির্যাতনের মতো ভারতে (দক্ষিন এশিয়া) ব্রাহ্মণ শাসক পুষ্যমিত্র (খৃষ্ঠপূর্ব ১০০), রাজা শশাঙ্ক (৭ম শতাব্দী), ও শংকরাচার্য (৮মশতাব্দী), সহ হিন্দুত্ববাদীদের হাতে বৌদ্ধ জনগণ ও দলিত নির্যাতন সহ বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস লেখা হলে পাঠকগণ দেখবেন, তা হলোকাষ্টের চেয়ে কম বীভৎস নয়। তারি দু’চারিটি অশ্রুজল ! ধর্ম নামক ক্যানসার বা মহামারি রোগে বর্তমান ভারত THE WORLD রোগগ্রস্থ ! কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)।
ভারতে পলিটিক্যাল হিন্দুধর্ম বৌদ্ধধর্মের গলা টিপে দিয়েছে অনেক আগে। সত্য কথা বলার উপায় নেই। ‘বৌদ্ধধর্ম তো হিন্দুধর্মের শাখা নয়’ বলতে না বলতে মৌলবাদী হিন্দুরা তেড়ে আসে।
সহজ কথায় ব্রাহ্মণ্যবাদের রাজনীতির ষড়যন্ত্রে হিন্দুত্ববাদীদের গায়ের জোরে উচ্চবর্ণের হিন্দু শাসকগণ বৌদ্ধগণকে দলিত বানিয়েছিলেন! ও ধর্মীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে নাগরিক উদ্যোগ জোরদার করা দরকার! হিন্দু রাজা শশাঙ্ক ৭ম শতাব্দীতে বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি মন্দির দখল করে বোধিবৃক্ষ ধ্বংস সহ শত শত বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ করার ইতিহাস চীনা পরিব্রাজক বৌদ্ধভিক্ষু ইউয়েন সাং তাঁর ভ্রমন কাহিনীর ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করেছেন। এই প্রসঙ্গে ইহাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে চীন সরকার বুদ্ধ জন্মভূমি লুম্বিনী সার্বিক উন্নয়ন প্রকল্পে তিন বিলিয়ন ডলার দান করেছেন। চীনের উক্ত মুক্ত হস্তের দান অবলোকনে ভারত সরকার সন্ত্রস্ত হয়ে পরেছেন।
হিন্দুরাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞই! রাজা শশাংক ও পুরোহিত শংকারাচার্য্যরে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ সম্বন্ধে রাশি রাশি বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংসের প্রতিবেদন (সম্পাদকীয়, আগষ্ট ২২, ১৯৯৩ আনন্দবাজার), এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের জঘন্য চাতুরীর ইতিহাস লিখতে গেলে একটি মহাভারত লিখতে হয়। গৌতমবুদ্ধকে ধর্মের জগন্নাথ বুদ্ধ পুরাণ শীর্ষক তিন হাজার পৃষ্ঠার বই লিখে উড়িষ্যায় রথ যাত্রা এবং পুরীর বৌদ্ধমন্দিরকে জগন্নাথ মন্দির নাম বদলিয়ে দখল করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশ সাতচল্লিশে ধর্মের জন্য ভারত ও পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়ে গেল। বিভেদ বিদ্বেষের নামই কি রাজনীতি? ধর্মান্ধের হিংসা উন্মত্ত রাজনৈতিক ধর্ম মানবতাকে ধ্বংস করেছে ! ধর্মের নামে‘ ধর্ম যার, যার, সংবিধান সবার’! ধর্ম অহিংসা এবং পশুর ধর্ম হিংসা।
প্রসঙ্গত উলেখযোগ্য যে, মানবাধিকার বিরোধী স্বার্ধান্ধ রাজনীতির প্রচলন শুরু করেছে। ধর্মান্ধের ধর্ম মানুষ জাতিকে চন্ডাল জন্ম। ধর্মকে রাজনীতির কারণে তরোয়ালের মতো ব্যবহার করার জন্যে ১৯৪৭ সালের ১৪ই ও ১৫ই আগষ্ট ”পাকিস্তান ও ভারত” স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পর ও ১৯৯২ সালে ভারতে ”বাবরী মসজিদ” নামক অন্ধকার রাজনীতির জন্ম হল কেন? নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক , চীন এবং নেপালের অদ্বিতীয় বুদ্ধভক্তিকে বিকৃত করে ভারতীয় সংবাদপত্র কেচ (১১ই মে, ২০১৬) নিউজ’ গৌতমবুদ্ধের সম্মুখে চীনের বুদ্ধ বন্দনাকে অপমানিত করে ড্রাগনের (ঈযরহধ) ছবির মুখে নেপালের তিনটি পতাকা জুড়ে দিয়েছে। বৌদ্ধগণ বন্দী আজ হিন্দুত্বের ঘৃণার অগ্নিগিরিতে!/ফেলে আমরা বৌদ্ধগণ সদাশয় ভারত সরকারের নিকট Catch News (১১ই মে, ২০১৬) রচিত, “Buddha in a diplomatic Jam” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী র কার্টুনে মুষ্ঠিযুদ্ধ” শীর্ষক হিন্দুরাজনীতির নামে (Catch News ) উক্ত কার্টুনের মহাভারতীয় ভাষার বিরুদ্ধে যথাযথ বিচারের আশা রাখি। কেন এই হিংসাত্মক আচরণ তা সমাজবিদগণ বিশ্লেষন করবেন।
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!