বিনোদন ডেস্ক : অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ ও গায়ক এসআই টুটুলের দীর্ঘদিন সংসার করার পর ২০২১ সালে বিচ্ছেদ হয়। তবে কেন সংসার ভাঙল তা নিয়ে মুখ খোলেননি কেউই। সম্প্রতি বিয়েবিচ্ছেদ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তানিয়া আহমেদ। এবার মুখ খুললেন টুটুল।
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন এসআই টুটুল। সেখান থেকেই বিয়েবিচ্ছেদের কারণসহ ২৩ বছরের সংসারজীবনের নানা ঘটনা নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিককে সাক্ষাতকার দিয়েছেন তিনি।
বিচ্ছেদ নিয়ে এতদিন চুপ থাকা প্রসঙ্গে এই শিল্পী বলেন, যারা সত্যিকার ভালোবাসে, তারা কখনোই বিচ্ছেদ চায় না। আমিও চাইনি। আমি একজন ক্ষুদ্র সুরকার ও সংগীতশিল্পী। একজন শিল্পীর সুর সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো মানসিক প্রশান্তি। যখন মনে এই শান্তিটাও থাকে না, তখন সেই মানুষটি দুঃখের সাগরে ডুবে যেতে থাকে এবং বাঁচার অবলম্বন হিসেবে একটা কিছু আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করে। আমার জীবনেও তেমনই কিছু ঘটেছিল। আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়টি নিয়ে কথা বলে ভক্তদের বিচলিত করতে চাইনি বলেই কিছু বলিনি।
কেন বিচ্ছেদ হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তানিয়ার সঙ্গে আমি কখনোই বিচ্ছেদটা চাইনি। আমার নিজের উদ্যোগেও আমি বিচ্ছেদ করিনি বরং তানিয়াই বিচ্ছেদ চেয়েছিল বারবার। কেন চেয়েছিল, সত্যটা সে নিজেই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে। সে তো বলেছে সে সত্যটা বলে দেওয়াই পছন্দ করে, তাই এই বিষয়টা তার কাছে জানতে চাইলে ভালো হবে।
টুটুল আরও বলেন, তানিয়া আমাকে বলেছিল, সে স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে চায়, সংসারের কোনো বাধ্যবাধকতা সে আর একেবারেই চায় না। সে বলেছিল, যখন যেখানে খুশি বেরিয়ে যাবে। কোথায় যাচ্ছে, কখন ফিরবে—এসব কোনো কিছুই আমি জানতেও চাইতে পারব না ইত্যাদি। একসময় সে চলাফেরাও শুরু করেছিল সে রকমভাবেই। এ ছাড়া আমার সঙ্গে তার ব্যবহার-আচার এবং অনেক কিছুই, যা আমি মেনে নিতে পারিনি। তাই বিচ্ছেদে আমিও একসময় রাজি হয়েছিলাম।
‘আমাদের বিয়েবিচ্ছেদের সব প্রক্রিয়া তানিয়া নিজেই তার ছোট ভাই এবং ভাবির মাধ্যমে করিয়েছিল। কিন্তু সবাই জানল, আমিই নাকি তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছি। আমার মাধ্যমে ডিভোর্স–প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। এ ব্যাপারে মানুষ আমাকে ভুল বুঝেছেন।’
দীর্ঘ ৪–৫ বছর আলাদা থাকার পর আমি যুক্তরাষ্ট্রে আসার প্রায় দেড় বছর আগে আমাদের বিয়েবিচ্ছেদের পেপারে স্বাক্ষর হয় বলে জানান টুটুল।
যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের গুঞ্জন প্রসঙ্গে এই সংগীত শিল্পী বলেন, তানিয়ার সঙ্গে আমার বিয়েবিচ্ছেদের যখন এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, সেই সময়ে আমি একজন সিঙ্গেল মানুষ হিসেবে জীবন কাটাচ্ছিলাম। তখন একটা অনুষ্ঠানের কাজে নিউইয়র্কে আসি। সেখানে একজনের সঙ্গে দেখা হয়, পরে সখ্য হয়, একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমাদের বিয়ের কথাও হয়েছিল। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার হয় তো হুকুম হয়নি তাই, কখনো কোনোভাবেই আমাদের বিয়ে হয়নি।
তানিয়ার বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে টুটুল বলেন, সে আমার সম্পর্কে তারকাখ্যাতির অহংকার বা রূঢ় আচরণের অভিযোগ করেছে। আমি যদি এমন কিছু করে থাকি, তা অজান্তে ভুল করে করেছি। কেউ নিজের ব্যবহারকে নিজে উপলব্ধি করতে কমই পারে। যখন মানুষ একজন অন্যজনকে খুবই ভালোবাসে, ধীরে ধীরে অজান্তেই একজন আরেকজনের ওপর একটা অধিকার তৈরি হয়। তখন জীবনের অনেক ধরনের স্ট্রেসগুলো নিজের আপন মানুষের ওপরই কোনো না কোনোভাবে প্রকাশ করে। আমারও এমন কিছু হতে পারে মেনে নিচ্ছি।
অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার চাইতেও সে যে একজন বড় সেলিব্রেটি, সেটা কে না জানে? আমার রূঢ় আচরণ শুধুই কি তিনিই দেখেছেন? আমার পরিচিত বন্ধুবান্ধব ভক্তরা কেউ দেখেনি? স্ত্রীর সঙ্গে তারকাখ্যাতির অহংকার অবশ্যই কোনো মানসিক রোগী ছাড়া কোনো নরমাল মানুষ করবে না। তবু আমি ক্ষমা চাই, আমার অজান্তে যদি কারও সঙ্গেই এমন কিছু করে থাকি।
তানিয়াকে ব্লক করার কারণ জানিয়ে টুটুল বলেন, সে আমাকে এই কষ্টের জীবনে ঠেলে দিয়েছে, তাই অভিমান করেই আমি তানিয়াকে ব্লক করেছিলাম। আমাকে তার জীবন থেকেই ব্লক করে দিয়েছে, তার সঙ্গে আর যোগাযোগ থেকেই বা লাভ কি-এমনই মনে হয়েছিল আমার। আরও কিছু কারণও ছিল হয়তো, তা বলতে চাই না, ক্ষমা করবেন। কিন্তু সংসারের দায়িত্ব পালন করা থেকে কখনোই তাদের কাছ থেকে নিজেকে ব্লক করিনি।
অতীত স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমারও কিছু কষ্ট আছে। আমার যখন বড় বড় অ্যাওয়ার্ড পাওয়া শুরু হলো, আমি রিসিভ করতে যাব, সেই অনুষ্ঠানগুলোর কোনোটাতেই আমি অনুরোধ করলেও তানিয়াকে পাশে পাইনি। সে যেত না। এতে আমার খুব মন খারাপ লাগত। আমার এই অর্জনগুলোতে আমি ওকে আমার পাশে খুব চাইতাম কিন্তু সে বারবার একই কথা বলত ‘আমি যাব না’। অ্যাওয়ার্ড আমি ওকে উৎসর্গ করব ভেবে রাখতাম কিন্তু ওকে পাইনি। তাই হয়তো অভিমান থেকে আমি এ রকম কিছু বলেও থাকতে পারি।
‘হায়রে তানিয়া! আমার ভালোবাসাটাও তুমি বুঝতে পারোনি। আমার এই জীবনটা যে দিয়ে দিয়েছিলাম তোমাকেই, তা তুমি ভালো করেই জানো।’
তানিয়াকে উদ্দেশ করে টুটুল আরও বলেন, সংসার করার সময় আমি কোনো যোগ–বিয়োগ করিনি, রাগ করলে আমিই করেছি আর ভালোবাসলেও আমিই বেসেছি। কখনো বলিনি এটা করতে পারবে না, ওটা করতে পারবে না, এখানে যাবে না, ওখানে যাবে না, আমাকে রান্না করে খাওয়াতে হবে। এমন কথা সে কোনো দিন বলতে পারবে না। বরং বাচ্চাদের স্কুল থেকে শুরু করে যেকোনো কাজে নব্বই ভাগ সময় আমিই গিয়েছি। তাহলে এত যোগ-বিয়োগ করে আমার জীবনটা কেন এত এলোমেলো করে দিলা? আমরা কি দোষগুণ মেনে বাকি জীবনটা কাটাতে পারতাম না? অন্তত বাচ্চাদের কথাটা ভেবে। এমন কী দোষ ছিল আমার?
সাক্ষাতকারে এই গায়ক জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তার নিজের একটা প্রফেশনাল অডিও স্টুডিও আছে। এ ছাড়া আমেরিকায় ফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন।
নতুন গানের বিষয়ে তিনি জানান, গত দুই বছর অনেকটা নিভৃতে ছিলেন তিনি। একেবারেই একাকী জীবন কাটিয়েছেন। নানা মাধ্যমে তাকে নিয়ে ট্রল আর অসম্মান করায় বেঁচে থাকার আগ্রহটাও তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে সম্প্রতি কয়েকজন শুভাকাক্ষীর অনুপ্রেরণায় আবার কাজ শুরু করেছেন তিনি।