অনলাইন ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার শাসকগোষ্ঠী ও স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস সন্ত্রাসী নয়। তারা দেশপ্রেমিক সংগঠন যারা তাদের অঞ্চল ও জনগণকে রক্ষার চেষ্টা করে। এক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এছাড়া তিনি তার পূর্বপরিকল্পিত ইসরায়েল সফরে যাবেন না বলে ঘোষণা দেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, বরং ইসরায়েল ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো কাজ করছে’ এবং ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে’।
বুধবার দলের আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে পার্লামেন্টে বক্তৃতা দেন এরদোয়ান। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন। খবর ডেইলি সাবাহ ও আল আরাবিয়্যার
এরদোয়ান বলেন, ‘হামাস কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয় বরং তারা একটি মুক্তি গোষ্ঠী। নিজেদের ভূমি রক্ষার জন্য তারা যুদ্ধ করছে।’
পার্লামেন্টে তার দলের আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েল তুরস্কের ভালো উদ্দেশ্যের সুযোগ নিয়েছে এবং পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ইসরায়েলে যাবেন না।
বুধবারের বক্তৃতায় এরদোয়ান ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের নৃশংসতার জন্য আবারও নিন্দা জানান। এরদোয়ান উভয় পক্ষকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করা উচিত।’
এরদোয়ান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র পেছনে থাকুক বা না থাকুক, শিশুদের উপর বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েল কিছুই অর্জন করবে না।’
এর আগে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার এক ফোনালাপে তারা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যেকার ক্রমবর্ধমান সংঘাত এবং এই অঞ্চলে চলমান মানবিক সংকট নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তুরস্কের যোগাযোগ অধিদফতর জানিয়েছে, পুতিনকে এরদোয়ান বলেছেন যে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে এবং প্রতি মিনিটে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট টুইট করে বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোর নীরবতার কারণে গাজার মানবিক সংকট প্রতিরোধে কিছু করা যাচ্ছে না।’
এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘তুরস্ক এই (মধ্যপ্রাচ্য) অঞ্চলে শান্তি নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।’
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় বোমাবর্ষণ করছে ইসরায়েল। এছাড়া তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিকে অবরোধ করে রেখেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সোর্ডস অব আয়রন’ অভিযান চালাচ্ছে।
আল-আকসা মসজিদে হামলা এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রতিশোধ হিসেবে হামাস ‘আল-আকসা স্ট্রম’ অভিযান চানানোর পর গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে সাতশ’র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। একদিনে এত মৃত্যু এর আগে গাজাবাসী কখনো দেখেনি। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৫৮০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা চারশটি ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা করেছে এবং কয়েকজন হামাস কমান্ডারকে হত্যা করেছে। তারা আরও বলেছে, হামাস নতুন করে দুজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পরেও তারা হামলার মাত্রা কমাবে না।
এদিকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য একটি নিরাপদ ও টেকসই ব্যবস্থা তৈরি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থাগুলো।