Home Uncategorized হঠাৎ নরম সুর চীনের, সতর্ক ভারত

হঠাৎ নরম সুর চীনের, সতর্ক ভারত

অনলাইন ডেস্ক : লাদাখে উত্তেজনা প্রশমনের সময় ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের বিবৃতি ভারত ‘সাবধানী দৃষ্টিতে’ দেখছে। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশকে একে অন্যের সহযোগী ভাবতে হবে। প্রতিপক্ষ নয়।

এই বিবৃতি ভারতের কৌতুহল বাড়িয়েছে। কূটনৈতিক মহলে এই মুহূর্তের ভাবনা, অতীতের নিরিখে এই বিবৃতি শুধু মাত্র নরমই নয়, যথেষ্ট সমীহ উদ্রেককারীও। এত রক্তক্ষয়ের পর এই বিবৃতি জারির মূল উদ্দেশ্য কী, সাউথ ব্লক আপাতত সেই ভাবনায় মশগুল।
চীনা রাষ্ট্রদূত সুন উইডং শুক্রবার রাতে জারি করা ওই ভিডিও বিবৃতিতে বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সন্দেহ ও বিরোধ দেখা দিলে তা দ্রুত মেটানো দরকার। দুই দেশেরই পারস্পরিক বিশ্বাস বাড়ানো প্রয়োজন এবং সময়ে সময়ে কৌশলগত আলোচনা করা দরকার। পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠার আগেই দুই দেশের উচিত কথাবার্তার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। দুই দেশকে বুঝতে হবে তারা একে অন্যের সহযোগী। প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। দুই দেশেরই কোনো ফাঁদে পা দেওয়া ঠিক হবে না। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, চীন মোটেই সম্প্রসারণবাদী যুদ্ধবিলাসী দেশ নয়। ভারত ও চীন দুই দেশের কাছেই শান্তি প্রাধান্য পাওয়া উচিত। সংঘর্ষ নয়।

পূর্ব লাদাখে গালওয়ান উপত্যকায় দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এই মুহূর্তে দুই দেশই শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংঘর্ষ পরবর্তী সময়ে ভারত অবশ্য একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে। যেমন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা উপস্থিতি বছরভর জোরদার রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বায়ু সেনা ঘাঁটিগুলোয় বছরভর যুদ্ধকালীন সতর্কতা জারি রাখা হবে। ভারতীয় অর্থনীতির অতিরিক্ত চীন নির্ভরতা কাটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বহু প্রকল্প থেকে চীনা সংস্থা বাদ পড়ছে। চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ হচ্ছে। বন্দরে বন্দরে চীনা পণ্য খালাসে অ–শুল্ক বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। চীনা আমদানি কমাতে অন্যত্র তাকানো শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বড় বথা, চীন–বিরোধী আন্তর্জাতিক জোট জোরদার করতে ভারত উত্সাহী হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাম না করেও ‘চীনা সম্প্রসারণবাদের’ সমালোচনা করেছেন। এই পরিস্থিতিতে স্রেফ বানিজ্যিক স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখতে চীনা রাষ্ট্রদূত এমন নরম বিবৃতি দিলেন কিনা সাউথ ব্লকে তা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র অনুযায়ী, এই বিবৃতি অতীত অভিজ্ঞতার নিরিখে খুবই ‘সমঝোতা মূলক’। ওই সূত্রের মতে, এর আগেও বেসরকারি স্তরে বিভিন্ন সংগঠন চীনা পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছিল। তখন চীনা রাষ্ট্রদূত সংবাদ সম্মেলন ডেকে কড়া ভাষায় ভারতকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, চীনা পণ্য বয়কট করা হলে ভারতীয় অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যাবে। এবার সরকারি স্তরে বয়কট করার কথা বলা হলেও রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য নমনীয়। সূত্রটি মনে করছেন, বিরূপ আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া অনুধাবন করেই সুন উইডং এবার এই ‘সতর্ক ও সমঝোতামূলক’ বিবৃতি দিয়েছেন যাতে পরিস্থিতি আরো ঘোরালো না হয়ে ওঠে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাংশের ধারণা, চীন মিশ্র ইঙ্গিত দিচ্ছে। গালওয়ানে ভারতের চেয়ে চীনের ক্ষতি ও প্রাণহানি বেশি হয়েছে। এই প্রথম তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তির ছোট্ট একটু পরিচয় পেল। এটা তাদের বোধোদয়ের বড় কারণ। গালওয়ানে পিছু হটতে ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে শান্তি স্থাপনে তাই তারা রাজি হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে তারা নেপাল ও ভুটান মারফত ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। এই মহলের মতে, নেপালে ভারত বিরোধী প্রধানমন্ত্রী খড়্গ প্রসাদ শর্মা ওলিকে ক্ষমতায় রাখতে চীনা রাষ্ট্রদূত যা করছেন তা কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অদৃষ্টপূর্ব। আবার আচমকাই তারা ভুটানের পূর্ব সীমান্তের দাবি খুঁচিয়ে তুলেছে যা অরুণাচল প্রদেশের লাগোয়া।

ভারতের কৌশল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় শক্তি ও নজরদারি জোরদার রাখা। অবকাঠামো নির্মাণে গতি আনা। নেপাল ও ভুটান পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা। এবং আন্তর্জাতিক জোটবদ্ধতায় সক্রিয় অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে চীনকে চাপে রাখা। নেপাল সরকার হুট করে ভারতের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিলেও ভারত কোনো মন্তব্য এখনো করেনি। ওই দেশে শাসক দলের অভ্যন্তরীণ কলহের পরিণতি কী হয় সাউথ ব্লক আপাতত তা দেখতে আগ্রহী।

Exit mobile version