সোনা কান্তি বড়ুয়া : জয় বাংলা! একাত্তরের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। প্রতিটি মহত কর্ম মানুষকে নতুন দিগন্তে উন্মোচিত করে। বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতধরেই বাঙালি জাতির স্বাধীনতার যাত্রা এবং বঙ্গবন্ধুর রচিত প্রথম কবিতার নাম “জয় বাংলা!” ১৯৭৫সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর গায়ে ১৮টি গুলি লেগেছিল কেন? জাতির পিতৃ হত্যায় ভয়ঙ্কর ষড়য়ন্ত্র ছিল! স্বাধীন বাংলাদেশ, বাংলা ভাষার উত্তরণ, বাঙালির আত্মপ্রকাশ, একটি জাতির জন্ম— সবটাই বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যার ও ৮৭ বছর পার হয়ে গেছে।

আজকের স্বাধীনতা দিবসটা নিয়ে হৃদয়সরণি থেকে বাংলাদেশে রাজনীতি রাজপথে আবহমান জাতির পিতৃ হত্যায় বেদনার অনুভব। এবং সময়ের করাল তর্জনীকে এক কথায় বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজও “কালের কপোল তলে শুভ্র সমুজ্জ্বল দেবদূত শেখ মুজিবুর রহমান। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, বদলে যাওয়া সময়ের চোখ দিয়ে দেশে গত পাঁচ বছরে সংঘটিত জঙ্গি মৌলবাদী ও সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত গণকমিশনের শ্বেতপত্র আগামী ১৯ জানুয়ারি প্রকাশ করা হবে। শনিবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যালয়ে গণকমিশনের তৃতীয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। (Samakal, 02 January 2022). শ্বেতপত্রে ২০১৬ সালে ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফেতে জঙ্গি হামলা থেকে শুরু করে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে জঙ্গি মৌলবাদী ও সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাসের পাঁচ বছরের ঘটনাবলী তুলে ধরা হবে।”

বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দন শুনেছেন? বঙ্গবন্ধু এখন ও বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে আছেন। যে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হত না, যিনি জীবনের ১৩টা বছর জেলখানার সেলে কাটিয়েছেন জাতির অধিকার আদায় করতে, সেই জাতির পিতাকে গোসল করানো হয় পুকুরের নোংরা পানি আর কাপড় কাচার সাবান দিয়ে। ৭১-এর পরাজিত ধর্মান্ধ শক্তিই স্বাধীনতার অভিশাপ! ভালো কাপড় না থাকায় শেখ মুজিবেরই দান করা রিলিফের কাপড় থেকে এক খন্ড কাফনের কাপড় জুটল শেখ মুজিবের কপালে। ৭ কোটি মানুষকে মাথা তুলে বাঁচতে শিখান যিনি, ইয়াসির আরাফাত, ফিদেল ক্যাস্ট্রোরা যাকে নিজেদের অনুপ্রেরণা মানত, সেই মানুষটার জানাজা পড়ল মাত্র ১৬ / ১৭ জন। এলোনা কোন বিশ্বনেতা! বঙ্গবন্ধু মানেই কথায় গর্জে ওঠা আত্মবিশ্বাস। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন যেন অনেকটা গ্রিক ট্র্যাজেডির মতোই তাঁর জীবন।

৭১-এর পরাজিত ধর্মান্ধ শক্তি এমন এক অভিশাপ যা থেকে নিস্তার পাইনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা! ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই এক দল বিহারীরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সাধারণ মানুষের বাড়িঘর আর প্রতিষ্ঠানে আগুন জ্বালিয়েছিলো। ঠিক ৫০ বছর পর উগ্রপন্থী জঙ্গি সংগঠন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালো! এই উগ্রপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠীর দল বঙ্গবন্ধুর ম্যূরালে হাত দিলো! ৩০ লক্ষ শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন করা এই দেশে শীঘ্রই এই জঙ্গিবাদের বিচার হবে, অবশ্যই বিচার হবে ইনশাআল্লাহ্।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেছেন, (Bhorer Kagoj, 18 March 2022) “বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ছিলো বাঙালির মুক্তির দিশা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। পিলখানাস্থ সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পিলখানাসহ সারাদেশে বিজিবির সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বর্ণিল আলোকসজ্জায় সাজানো হয়।”

মর্মভেদী শতবর্ষের আলোকে বিশ্বমানবতায় উদ্ভাসিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) জাতির জনক এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি (২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১১ জানুয়ারি ১৯৭২)। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম রাষ্ট্রপতি হত্যাকান্ডের পর, বাঙালি হত্যাযজ্ঞই কি বাংলাদেশে পাকিস্তানী ইসলাম? এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী জঙ্গি মৌলবাদী ও সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাস, রাজাকার ও জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশের সামরিক প্রশাসকগন রাষ্ট্রদ্রোহী ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সামরিক প্রশাসকগন এবং উগ্র জামায়াতে ইসলামী দলটির এতো ভয়ঙ্কর ষড়য়ন্ত্র ছিল কেন? জামায়াতে ইসলামী দলটির নেতাকর্মী এবং প্রশাসকগন বাংলাদেশের স্বাধীনতার রাষ্ট্রদ্রোহী ছিলেন এবং উগ্র জামায়াতে ইসলামী দলটির নেতাকর্মীদের বিচার না হলে তাদের ঔদ্ধত্য বাঙালি জাতিকে নষ্ট করে দেবে! বাংলাদেশে জাতির পিতৃ হত্যা ও বাহাত্তরের সংবিধান হত্যা মহাপাপ! বাংলাদেশের জন্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন কুরবানি। ইসলামি জঙ্গীরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার কাছে পরাজিত হয়ে ধর্ম কে অপব্যবহার করে মানুষ পশু হয়েছে বার বার অনেকবার। মৌলবাদী রাজাকার সামরিক প্রশাসকগন সৈন্যবাহিনী এবং রাজাকার মৌলবাদীরা ধর্মের মুখোশ পরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে তিলে তিলে ধ্বংস করতে বঙ্গবন্ধু হত্যাযজ্ঞ করেছে!

তির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আজ ১৭ ই মার্চ। বঙ্গবন্ধুকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! শুভ জন্মদিন!
আমার স্বরচিত কবিতায়
৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর মুকুট তো পড়ে আছে,
জাতির পিতা সহ তাঁর পরিবার স্বজন শুধু নেই।
দেশের রক্তাক্ত আকাশের উপর সূর্য ওঠেছে ওই
জন্মভূমি বাংলা মা গো তোমার শহীদ ছেলেরা কই?

১৯৭৫সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর গায়ে ১৮টি গুলি লেগেছিল কেন? মুবিনুল হক চৌধুরী, (সম্পাদক ও প্রকাশক, চট্টগ্রাম নিউজ মিডিয়া, 16 August 2021) বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুর লাশ ঢাকা ছিল সাদা চাদর দিয়ে। পরনে চেক লুঙ্গি, গায়ে গেঞ্জী, সাদা পাঞ্জাবী গায়ে ছিল। তারপর জানাজা হয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তার কবর পাহারা দেয়ার জন্য সরকার ১০ /১৫ জন পুলিশ মোতায়েন করেন। এরা দিবা-রাত্র পালা করে পাহারা দিত। বাড়ীর লোক ছাড়া কাউকে বাড়ীতে ঢুকতে দেয়া হত না। বঙ্গবন্ধুর দাফনের চারদিনের দিন বাড়ীর মসজিদে মিলাদ পড়তে দেয়া হয়নি পুলিশ বাধা দেয়। কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুর গৃহে একজন মৌলভী ডেকে মিলাদ পড়ানো হয়েছিল। টুঙ্গিপাড়ার অন্যান্য মসজিদে মিলাদের ব্যবস্থা হয়েছিল।
টুঙ্গিপাড়ার মৌলভী শেখ আব্দুল হালিম স্থানীয় মসজিদের ইমাম (নোট)! তিনিই বঙ্গবন্ধুর লাশ নিজ চোখে দেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন এবং তার সাহসিকতা ও প্রচেষ্টায় লাশের গোসল সুসম্পন্ন হয়েছিল। তবে মুখে কোন গুলি লাগেনি। দু’পায়ের গোড়ালীর ২টি রগই ছিল কাটা। মৃত্যুর পরেও গায়ের পাঞ্জাবীর বুক পকেটে চশমা, সাইড পকেটে তার প্রিয় পাইপ এবং গায়ে সাধারণ তোয়ালে জড়ানো ছিল। মিলিটারীরা রক্তাক্ত কাপড় চোপড়সহ বিনা গোছলে লাশ কবর দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।

https://www.facebook.com/ চট্টগ্রাম-নিউজ-মিডিয়া-১০০২৮১৮৫৯০৪২১৩৩/
এই কথাগুলো বলেছিলেন মৌলভী শেখ আবদুল হালিম। তিনি বলেন, মর্মান্তিক সংবাদটা শুনি ১৫ই আগষ্ট সকালে রেডিওতে। ঐ রেডিওতে ঘোষণা করা হয়, স্বেরাচারী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। সমগ্র দেশবাসীর মতো আমরাও স্তম্ভিত হয়ে যাই। হতভম্ব হয়ে পড়ি, মনে হল অবিশ্বাস্য। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। পরদিন দুপুর ১২টার সংবাদে জানায়, শেখ মুজিবের লাশ টুঙ্গীপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ১৬ তারিখ সকালেই থানার ওসি আমাকে ডেকে বলেছিলেন, আপনি তেরটা কবরের বন্তোবস্ত করেন। চলে এলাম। কবর খুড়লাম। তবে একটা, তেরোটা নয় ভাবলাম তেরোটি খুড়ে কি হবে। আগে তো একটি খুড়ি। তারপর দেখা যাবে যা হয়। ৯টা সাড়ে ৯টায় কবর খোড়া শুরু করি আর ভাবি এখানেই বঙ্গবন্ধুর দাফন হবে। যদি তাই হয় এবং আমি যদি তাকে কবর দিতে পারি। তবে ধন্য হই।
দুপুর বারটার আগেই কবর খোড়া শেষ হয়। তার পরপরই দ্বিতীয় ঘোষণাটা শুনি রেডিওতে। নিশ্চিত হই, বঙ্গবন্ধুকে এখানোই সমাহিত করা হবে। বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক গোরস্থানে প্রথমে রয়েছে তার মায়ের কবর, তারপর বাবার, বাবার কবরের পশ্চিমে সবদিকে একটু জায়গা ছেড়েই বঙ্গবন্ধুর কবর খুড়ি। অন্যান্যদের মধ্যে মদেল ফকিন (চৌকিদার) আবদুল মান্নাফ, ইমাম উদ্দিন গাজী কবর খোড়ায় সাহায্য করে। তারপর বেলা দেড়টার দিকে বঙ্গবন্ধুর লাশ হেলিকপ্টার যোগে টুঙ্গিপাড়া ডাক বাংলায় পৌঁছে। একজন মেজরের নেতৃত্বে ১৩জন সৈনিক লাশের কফিন বয়ে আনে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। ডাকবাংলায় অবশ্য আরো ১২/১৩ জন সৈনিক ছিল। ইতিমধ্যেই বঙ্গবন্ধুর বাড়ীর পাশে রাস্তায় ব্যাপক ভীর জমে যায়। যদিও কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মেজর সাহেব স্থানীয় মৌলভীকে ডেকে আনার সংবাদ দিলে আমি চলে আসি।

মেজর জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কি এখানকার মৌলভী?” উত্তরে বললাম, “জ্বি হ্যা।” এরপর তিনি আমাকে লাশের জানাজার নামাজ পড়ার নির্দেশ দেন। মেজর সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম, “কার জানাজার ব্যবস্থা করবো?” মেজর উত্তরে বললেন, “শেখ মুজিবের ডেড বডি।” তখন আমি ইংরেজিতে বললাম- “ইজ দ্য ডেড বডি অব শেখ মুজিব?” উত্তর দিলো- “হ্যাঁ।”

উদ্দেশ্য ছিলো কফিন খুলবো। বঙ্গবন্ধুকে দেখবো তারপর মাটি দেব। কিন্তু মেজর সাহেব আমাকে বলেছিলেন কফিনসহই জানাজা পড়ে মাটি দিতে। যদিও আমি তা চাইছিলাম না। মেজর সাহেবকে আবার বললাম- “আই মাষ্ট সী দ্য ডেড বডি।” মেজর সাহেব বললেন, “ডু ইউ নট বিলিভ আস?” আমি বললাম- “আই বিলিভ ইউ, বাট ওয়ান্ট টু সি ফর মাই স্যাটিসফেকশন।”

তারপর মেজর কফিনের তালা খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন, ২-৩ জন্য সৈন্য এসে তালা খুলে দেয়। প্রথমেই দেখলাম মুখ রক্তাক্ত। কফিনের বাহিরে অবশ্য কোন রক্ত ছিলো না। তারপর মেজর সাহেবকে বলি, “ওনাকে তো গোসল দেয়া হয়নি। বিনা গোসলে কোন মুসলমানের জানাজা পড়া জায়েজ নয়।” মেজর জিজ্ঞাসা করেন, “বিনা গোসলে মুসলমানের জানাজা হয় না?” বললাম, “হয় কেবল মাত্র শহীদের লাশ বিনা গোসলে জানাজা করা হয়। তবে সম্ভব হলে তাও গোসল করানো উচিত।” মেজর তারপর লাশের গোসলের নির্দশে দিলেন। সময় দিলেন ২ মিনিট। আমি পুনরায় বললাম, “গোসল করাতে আমার কজন লোক লাগবে।” তিনি আমাকে বললেন, “সর্বাধিক ৮ জন নিতে পারেন।”

বেলা তখন ২টা। আমি ৮ জন লোক ডাকি। সবাই মিলে কফিন থেকে লাশ নামাই। রাখি তক্তার উপর, তক্তা যোগাড় করি বঙ্গবন্ধুর বাড়ী হতেই। একটা ছেলেকে পাঠাই টুঙ্গিপাড়া সাহেরা খাতুন হাসপাতালে। সাবান, গরম পানি ও কাফনের কাপড়ের জন্য। অল্পক্ষণের মধ্যেই একখানা ৫৭০ সাবান রেডক্রসের ৪ খানা সাদা পাড়ওয়ালা শাড়ী নিয়ে ছেলেটি ফেরত আসে তড়িঘড়ি। পেছনের কাজ সেরে আমরা কাপড় পড়ালাম। খালি গা উল্টেপাল্টে সব দিকই দেখছি। পেটের নীচে পিছন দিক হতে একটি গুলি ঢুকে সামনের দিকে তলপেট দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ৯টা গুলি বা বুকের নীচের দিয়ে চক্রাকারে ঢুকেছে তবে বের হয়নি। বা হাতে তর্জনীতে একটি গুলি লেগেছে এবং আঙ্গুলটি প্রায় ছিন্ন ও থেতলানো। দুই বাহুর উপরিভাগে আছে দুইটা ও আরেকটি সম্ভবত ডান হাতের তালুতে। দুই পায়ে ৪টি, দুটি হাটুর এবং ওপরে নীচে দুট অর্থাত ১৮টি গুলি বঙ্গবন্ধুর শরীরে লাগে। তাছাড়া দুই পায়ের গোড়ালীর দুটি রগই কাটা ছিল। মুখে বা বুকে কোন গুলির চিহ্ন ছিলো না।

পরের দিন লন্ডনের বিখ্যাত দা ডেইলি টেলিগ্রাম পত্রিকায় একটি বিশ্রি সত্য শিরোনামে এলো, “এই করুণ মৃত্যুই যদি মুজিবের ভাগ্যে ছিল তাহলে বাংলাদেশ সৃষ্টির কোনো প্রয়োজন ছিলনা।” (ফিরে যাই ১৯৭২-এঃ- https://www.facebook.com/ চট্টগ্রাম-নিউজ-মিডিয়া-১০০২৮১৮৫৯০৪২১৩৩/ )!

বাংলার মেয়েরা হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতন ধর্ষণের পর ঘরে ফিরে পেল মানসিক নির্যাতন। বাপ মেয়েকে ঘরে নিতে অস্বীকার করল, স্বামী বউকে তালাক দিল। সমাজ তাদের বয়কট করল। অপমানে লজ্জায় আত্মহত্যা গাছের ডালে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করল বাংলার বীরাঙ্গনারা। কার জন্য ইজ্জত গেল কার জন্য নির্যাতন সহ্য করলাম।

সে খবর গেল ধানমন্ডি ৩২ এ শেখ মুজিবের কানে। বুক চাপড়ে কেঁদে কেঁদে বললেন মুজিব, “কেউ যদি বীরাঙ্গনাদের পিতার নাম জিজ্ঞেস করে তবে বলে দিও তাদের পিতা “শেখ মুজিবর রহমান” আর তাদের ঠিকানা স্থানে লিখে দিও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর। “ই কালো ফ্রেমের চশমা পড়া হিমালয় কে চিনে নিও প্রজন্ম। তোমাকে লীগ করতে হবে না, দল করতে হবে না, তোমাকে ৭১ করতে হবে। তোমাকে মুজিবে এসে থামতে হবে। জয় বাংলা!”
জয় বাংলার স্বাধীনতা দিবসে চোখে আসে পানি! নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চে প্রতিষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস! বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে অভিযোগ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর গায়ে ১৮টি গুলি লেগেছিল কেন? বাংলাদেশের জন্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন কুরবানি।

জয় বাংলার স্বাধীনতা দিবসে চোখে আসে পানি
বঙ্গবন্ধুকে কারা মেরেছে, কেন মেরেছে, জনতা জানতে চায়,
জাতির পিতৃ হত্যা মহাপাপ, বিশ্বাসঘাতকদল তিলে তিলে ক্ষয়।
বাংলাদেশে জাতির পিতৃ হত্যা মহাপাপ!
একাত্তররের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাস যৌথভাবে গত বছর এ গণকমিশন গঠন করেছিল। গণকমিশনের সভাপতি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সভাপতিত্বে সভায় বলা হয়, দুই খণ্ডে প্রকাশিতব্য এই শ্বেতপত্রে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের বহুমাত্রিক কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হবে। এছাড়াও জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সা¤প্রদায়িকতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের নির্বাচিত কলাম, সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করা হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন গণকমিশনের সদস্য বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, আরমা দত্ত এমপি, রিজিওনাল অ্যান্টি টেররিস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, কমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হাফেজ জিয়াউল হাসান, কমিশনের সচিবালয়ের সমন্বয়কারী নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সচিবালয়ের সদস্য আসিফ মুনীর তন্ময়, তৌহিদ রেজা নূর, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবু, সাংবাদিক মোরসালিন মিজান প্রমুখ।

লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), বিবিধ গ্রন্থ প্রণেতা , কলামিষ্ট এবং মানবাধিকার কর্মী। সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!