মতিউর রহমান লিটু : নিউইয়র্কে এখন প্রায় প্রতি সিজনে নতুন নতুন বাংলা পত্রিকা বের হয়, মাশাল্লাহ! মজার বিষয় হলো এগুলি পাঠকদের জন্য ফ্রি করে দেয়া হয়। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে ফ্রি পত্রিকাগুলি কিভাবে টিকে থাকে? ২০০৩ সালে অনলাইন পত্রিকার শুরুতে প্রথম অনলাইন বাংলা পত্রিকা বানিয়েছিলাম- যেটা পালাক্রমে কয়েকবার নাম পরিবর্তন করে অবশেষে পিবিসি টুয়েন্টিফোর ডটকম হিসাবে সেটেল্ড করেছি। (পিবিসি প্রতিষ্ঠার তারিখ হিসাবে হিসাব করলে বাংলা অনলাইন জগতের প্রথম অনলাইন পত্রিকা হিসাবে দাবি করছি।)

অনলাইন পত্রিকা চালাতে হলে তিনটি গুণ থাকতে হয়: লেখার হাত, টেকনোলজিতে দক্ষতা ও মার্কেটিংয়ের অভিজ্ঞতা। এই তিন জিনিসের কোন একটির অভাব থাকলে অনলাইন পত্রিকা বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। এই তিনটি অভিজ্ঞতার কোনোটিরই কমতি ছিলো না আমার তারপরেও কয়েক বছর চালিয়ে ২০১৩ সালে সরকারের প্রেসার, ঢাকা অফিসে পুলিশি অভিযান ও আর্থিক চাপে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম পিবিসি টুয়েন্টিফোর ডটকম, যদিও অনলাইন পত্রিকার খরচ প্রিন্টেড পত্রিকার চেয়ে অনেক কম। তারপরেও সাংবাদিকদের বেতন, নিজের মূল্যবান সময় ক্ষেপনসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পরে আর তাই সকলের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হয় না। যদিও পিবিসি এখন আবার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে শুরু করেছি।

আমার প্রশ্ন হলো: যেখানে একটি অনলাইন পত্রিকা চালিয়ে যেতে আমাদের হিমশিম খেতে হয় সেখানে এতো এতো প্রিন্টেড মিডিয়া কিভাবে সারভাইব করে? উত্তর জানতে অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন সদুত্তর পাইনি।

আজ পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক শ্রদ্ধাভর নাজমুল আহসান ভাইয়ের স্ট্যাটাস দেখে বিস্মিত হয়েছি- তিনি লিখেছেন: “নিউইয়র্কে দুই একটি বাংলা সাপ্তাহিকের বিজ্ঞাপনের বহর দেখে নিউইয়র্ক টাইমসও বাংলা সংস্করণ বের করার কথা ভাবছে …”

নিউইর্য়ক বাংলা কমিউনিটিতে পত্রিকার বিজ্ঞাপনে যদি এতো ছড়াছড়ি থাকে তাহলে পুরানা পত্রিকাগুলি চালাতে এতো হিমশিম খেতে হয় কেন? নতুন একটি পত্রিকা বের হলে নিজেদের পয়সা খরচ করে একবার সুস্বাগতম লিখে যারা উস্কানি দিয়ে থাকেন তারা কেন কিছুদিন পরে হারিয়ে যান? বাকিতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের কেন আর খুঁজে পাওয়া যায় না? এরা নেতা হতে চাইবেন, জ্যাকসন হাইটসে নিজের ছবি দেখাবেন কিন্তু দুই পয়সা খরচ করবেন না আবার ফ্রি সংবাদ ছাপা হলে টেলিফোন করে বলবেন ভাই আমার ছবিটা প্রথম পাতায় চাপা হলো না কেন কিংবা আমার ছবিটা কালার কারেকশনটা ঠিক করে দিলেন না কেন? ভাবছেন খুব কষ্ট দায়ক কথা বলছি? জ্বি না এটাই সত্যি!

নতুন নতুন পত্রিকা বের হবে, কমিউনিটি প্রচার বাড়বে আশা করি সেই সাথে কমিউনিটির উঠতি নেতারাও একটু জেনারাস হবেন। শুধু ফ্রি ছবি চাপানোর আশায় উস্কানি দিয়ে কোন সাংবাদিক দিয়ে পত্রিকা বের করিয়ে ছিটকে পরবেন না!

পঁচিশ বছর নিউইয়র্ক জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখছি – মন প্রাণ দিয়ে কাউকে ভালোবাসার চেয়ে নিউইয়র্কে বাংলা কমিউনিটির লোকজন চাপাবাজি বেশি করে এবং ধুরন্দর টাইপের লোকজনই এখানে বেশি। ইংল্যান্ডে থাকা কালীন সময়ের অভিজ্ঞতা তুলনা করলে লন্ডন বাংলা কমিউনিটি এখানের চেয়ে কিছুটা হলেও উদার প্রকৃতির।

আশা করি সাংবাদিকদের কষ্টটাও একটু বুঝবেন আর জ্যাকসন হাইটসের সুন্দর সুন্দর ফুসকা খাওয়ার ছবি পাঠিয়ে নতুন পত্রিকা অফিসে বলবেন স্টেট্ ডিপার্টমেন্টের বিরাট মিটিং সেরে এই মাত্র জ্যাকসন হাইটসে ফুসকা খাওয়ার পার্টি বানালাম! সংবাদটি চাপা হওয়ার পরে স্ক্যান করে পার্টি অফিসে পাঠাতে ভুলবেন না কিন্তু! শুধু ভুলে যাবেন পত্রিকার বিল পেমেন্টের কথা তাহলেই আপনি সফল একজন বড় নেতা হতে পারবেন!