ডঃ বাহারুল হক : বাবা একটা বিপুল অর্থবহ ছোট্ট শব্দ। বাবাকে নিয়ে লেখার কি কোন শেষ আছে? না নেই। বাবা নিয়ে গান আছে, কবিতা আছে, গল্প আছে, মুভি আছে। বাবা নিয়ে কত উক্তি, কত বাণী! সে সব উক্তি-বাণী লিখে শেষ করা যাবে না।
* “অর্থহীন পৃথিবীতে বাবা হলেন আমাদের গর্ব। বাবা হল একজন মানুষের অস্তিত্বের প্রথম পরিচয়”।
* “পৃথিবীতে সবাই তোমাকে ভালোবাসবে। সেই ভালোবাসার মাঝে কোনো না কোন প্রয়োজন লুকিয়ে থাকবে। কিন্তু একজন ব্যক্তি কোনো প্রয়োজন ছাড়াই তোমাকে ভালোবাসবে, সে হলো বাবা”।
* “এই পৃথিবীতে একমাত্র বাবাই এমন এক ব্যক্তি, যে নিজের চেয়ে নিজের সন্তানকে এগিয়ে যেতে দেখতে চায়”।
* “আমি সকল বিপদে শক্তি পাই, যখন এটা মনে পড়ে যে আমার সাথে এমন একজন আছেন যিনি কোনো বিপদেই আমার হাত ছাড়বেন না। তিনি হলেন আমার বাবা”।
* “বাবা হলেন পরিবারের সাহস, আশা এবং বিশ্বাস”।
* “বাবার জীবনটা হচ্ছে মশার কয়েলের মতো। নিজে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে পরিবারকে সুরক্ষিত রাখে”।
আমিও আজ বাবা নিয়েই লিখবো। আমার আজকের লেখার বাবারা সবাই বায়োলজিক্যাল বাবা। বাবা বলতে যা বুঝায় তার সুস্পস্ট প্রতিফলন সর্বদা সব বাবার মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় না। স্নিগ্ধ অপরুপা চাঁদে যেমন অসুন্দর কতিপয় দাগের দেখা মিলে সে রকম কিছু বাবা আছেন যারা বাবাদের চিরকালের অসীম মায়ার স্নিগ্ধ রুপ নিজেদের মধ্যে ধারন করতে ব্যার্থ হয়ে থাকেন। সব বিবেচনা করে পৃথিবীর বাবাদেরকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক ভাগে থাকবে সে সকল বাবা যাদের কণ্যা সন্তান নাই । এরা সব অপুর্ণ বাবা।
আরেক ভাগে থাকবে সে সকল বাবা যাদের কন্যা সন্তান আছে। এ সকল বাবাদের বলা হবে পুর্ণ বাবা। পূর্ণ বাবাদের পুত্র সন্তান থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। পুত্র সন্তান না থাকলেও তারা পূর্ণ বাবা। অন্যদিকে অপূর্ণ বাবাদের এক ডজন পুত্র সন্তান থাকলেও তারা অপুর্ণ বাবা। অপূর্ণ বাবাদের আবার দুইটা শ্রেনী আছে। এক শ্রেণীর অপুর্ণ বাবাদের অহংবোধ আছে। আরেক শ্রেণীর অপুর্ণ বাবাদের কোন অহংবোধ নাই। এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন- কিসের অহংবোধ? এই প্রশ্নের উত্তর হলো- ‘পুত্র সন্তানের বাবা’ এই অহংবোধ। অহংবোধহীন অপূর্ণ বাবারা পুত্রবধুদেরকে নিজ কণ্যা বলে আত্মিকরণ করে নেন।
অপরদিকে অহংবোধসম্পন্ন অপূর্ণ বাবাদের কাছে তাদের পুত্রবধুরা পুত্রবধু ছাড়া আর কিছু নয়। অহংবোধসম্পন্ন অপূর্ণ বাবাদের আবার দুইটি শ্রেণী আছে। এক শ্রেণীর অহংবোধসম্পন্ন অপূর্ণ বাবাদের অহংবোধ প্রচ্ছন্ন। কিন্তু অহংবোধ সম্পন্ন অন্য শ্রেণীর অপূর্ণ বাবাদের অহংবোধ বড় প্রকট। এই শ্রেণীর প্রকট অহংবোধসম্পন্ন অপূর্ণ বাবারা সাধারনত হয়ে থাকেন প্রবলভাবে স্বেচ্ছাচারী এবং প্রায় সর্বদা থাকেন আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে। এদের অযৌক্তিক, অপ্রিয়, বাক্যবানে অযথা কষ্ট পান তাদের পুত্রবধুরা। বধুদের মন্দ ভাগ্য মুছে ফেলতে কখনো তাদের স্বামীরাও এগিয়ে আসেন না, কারণ এ শ্রেণীর বাবাদেরকে তাদের পুত্ররা ভয় পায়। বলতে পারেন- শাশুড়িরা কি করেন? তারা কেন বাবাদেরকে কিছু বলেন না? না, বিষয়টা অত সহজ নয়। এ সকল পরিবারের প্রায় প্রত্যেকটা শাশুড়ি তার স্বামীকে অর্থাৎ তার পুত্রের বাবাকে যমের মত ভয় করে।
তামাম দুনিয়ার সব বাবাদের জানা দরকার ইসলাম ধর্ম মতে কণ্যা সন্তান একটা মহান অনুগ্রহ এবং মহান আল্লাহ প্রদত্ত একটা সন্মান। ইসলাম বলে পুত্ররা যেখানে আশীর্বাদ কন্যারা সেখানে পুরস্কার।
আল্লাহর রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের কণ্যা সন্তানদের আদর যত্ন করে সুশিক্ষা দিয়ে বড় করবে এবং কন্যাদের সুবিবাহের ব্যাবস্থা করবে পরকালে তাদের কন্যা সন্তান দেয়াল হয়ে তাদেরকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করবে”।