Home আন্তর্জাতিক স্বপ্ন ভঙ্গ যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাস্তুচ্যুত শিক্ষার্থীদের এখন শুধুই বাঁচার লড়াই

স্বপ্ন ভঙ্গ যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাস্তুচ্যুত শিক্ষার্থীদের এখন শুধুই বাঁচার লড়াই

অনলাইন ডেস্ক : খড়কুটো জ্বেলে পানীয় তৈরির চেষ্টা করছে ১২ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি শিশু ইয়োসরা আবু তাইম। এই জলন্ত আগুনের মতোই ঝলসে গেছে তার স্বপ্ন। তাইম স্বপ্ন দেখেছিলো একদিন স্কুল শিক্ষক হয়ে পড়াবে কমলমতীদের। তবে গাজা জুড়ে যুদ্ধ শুরুর পরে এখন তার চোখে মুখে শুধুই বেঁচে থাকার স্বপ্ন। ঠাঁই হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজার দক্ষিণের রাফাহ শহরের যুদ্ধ বিদ্ধস্তদের আশ্রয় কেন্দ্রে।

শুধু তাইম নয়, বাস্তুচ্যুত গাজান মেয়ে হেন্ড আল দোজিরও একই অবস্থা। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশা ভেস্তে গেছে তার। দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর অমানবিক হামলায় অসংখ্য ফিলিস্তিনি শিশুর স্বাভাবিক চলাফেরার পাশাপাশি পন্ড হয়েছে তাদের সোনালী স্বপ্ন।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী ইয়োসরা আবু তাইম বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল একটি স্কুলের শিক্ষক হবো, বাচ্চাদের পড়াবো। কিন্তু স্কুলই ধ্বংস হয়ে গেছে, আমি এখন যে স্বপ্ন দেখছি তা হল একটি নিরাপদ জায়গায় থাকতে চাই।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী হেন্ড আল দোজি বলেন, আমার স্বপ্নগুলি শেষ হয়ে গেছে, ভেঙে গেছে, আর সেগুলি কিছুই নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতাম, পড়াশোনা করতাম এবং আমি ভালো ফলাফল পেতাম আমার পরিবারকে খুশি করতাম। কিন্তু এখন আমার স্বপ্ন হারিয়ে গেছে, সবকিছু ভেঙ্গে গেছে।

ইসরাইলী বাহিনীর একের পর এক হামলায় ধ্বংস হয়েছে রাফাহ শহরের ঘরবাড়ি। যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফিলিস্তিনি শিশুদের। বাবা মা হারা হয়েছে অসংখ্য কমলমতি। ধ্বংসস্তুপের মাঝেই চলছে তাদের প্রতি মুহুর্তের বেঁচে থাকার লড়াই।

তাইম আরও বলেন, ইহুদিরা আমাদের উড়িয়ে দিয়েছে, তারা স্কুল ছেড়ে যেতে বলেছে, আমরা যেখানে থাকতাম সেখান থেকে আমাদেরকে চলে যেতে বাধ্য করে, আমরা এখানে ক্যাম্পে এসেছি, প্রথমে আমরা রাস্তায় এসেছি তারপর তারা আমাদের একটি তাঁবু দেওয়ার পরে আমরা সবাই এখানে একসাথে থাকতে এসেছি, আমরা ঠান্ডায় মারা যাচ্ছি, আমরা কিছুই খুঁজে পাইনি, গায়ে জড়ানোর মতো কিছুই নেই। আমরা সবাই মাটিতে ঘুমাচ্ছি।

দোজিও জানান, “আমি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বেঁচে আছি।, আমি দেখেছি ২০১৪ সালের যুদ্ধ, ২০২১ সালের যুদ্ধ, ২০২৩ সালের যুদ্ধ, এটা কী? সবকিছুই যুদ্ধ, যুদ্ধ, যুদ্ধ। পরিবারগুলো কোথায় জীবন কাটাচ্ছে? কেউ নেই, কিচ্ছু নেই।

এরই মধ্যে গাজায় ইসরায়েলের হামলা তৃতীয় মাসে গড়িয়েছে। গাজায় তেইশ লাখ লোকের বেশিভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। পালাতে বাধ্যকরা গাজার বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণের ট্রাকে হামলা করা হচ্ছে। একদিকে ইসরায়েলি বোমা বর্ষণ সাথে ক্ষুধা, ঠান্ডা আবহাওয়ায় মারা যাচ্ছে মানুষ। একের পর এক হামলায় ধ্বংস হচ্ছে হাসপাতাল, মসজিদ, স্কুলসহ নানা স্থাপনা।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আরেক শিক্ষার্থী সালেহ আল নাকা বলে, এই প্রথম আমি এইরকম যুদ্ধ দেখলাম, এত দীর্ঘ। প্রতিবার যুদ্ধ হয়, সাধারণত এটি চার দিনে শেষ হয়, অথচ এটি ৬০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলছে, ইহুদিরা আমাদের স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিয়েছে, কিছুই বেঁচে নেই, আমরা বনী সুহাইলায় গিয়েছিলাম, তারা আমাদের বনী সুহাইলা ছেড়ে চলে যেতে বলে। আমরা খান ইউনিসের কাছে গিয়েছিলাম, তারা আমাদের খান ইউনিস থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এখানে ক্যাম্পে এসেছি এবং এখানেই থাকছি।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশু ইখলাস হনুন জানায়, আমি দেখছি অনেক শিশু ঘুমানোর সময় মারা যাচ্ছে, আমি ভয় পাচ্ছি যে পরবর্তি টার্গেট আমি হবো এবং মারা যাবো। ওরা আমাদের স্কুলটিও ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি আমার স্বপ্নগুলিকে অনেক বেশি উপলব্ধি করতে চাই, আমি একজন ডাক্তার হতে চাই, আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের পরিস্থিতি নারকীয় উল্লেখ করে জাতিসংঘ বলছে, শহরটির জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

Exit mobile version