বকুল খান, স্পেন : নতুন প্রজম্মের বাংলাদেশি তরুণী নিশাত তাসনিম। স্পেনে আলোকিত মুখ। মূলধারার সঙ্গে মিশে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষা লাতিন সভ্যতার দেশ স্পেনে। নানা প্রতিকূলতা, সামাজিক ও পারিবারিক বৈরী পরিবেশও উপেক্ষা করে নিশাত তাসনিম দুরন্ত ছুটে চলেন।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে ২০১৭ সালের অক্টোবরে ট্রান্সলেটর হিসেবে যোগ দেন একটি প্রতিষ্ঠানে। এক বছর পরে সেন্ট্রা ক্যাসিনোতে স্প্যানিশ ভাষার শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১৮ সালে তাঁর একাগ্রতা নিষ্ঠার কারণে তরুণদের মেন্টর হিসেবে নিয়োগ পান। যে বয়সে ইউরোপের রঙিন, চোখধাঁধানো পথে না হেঁটে, কমিউনিটি পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী হয়ে দিনমান কাটে তাঁর সোনালি সময়।

বাংলাদেশের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আসা অনেক বাংলাদেশির মতো নিশাত ছিলেন একজন নবাগত। সবার মতো ভাষা শিক্ষার ক্লাস করে ১৬ বছর পেরোলেই কাজের পারমিশন নিয়ে চাকরিবাকরিতে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতানুগতিক সে ধারায় সেই নিয়মে হাঁটেননি তিনি ও তাঁর পরিবার। পড়া চালিয়ে গেছেন, এখন পর্যন্ত সোশ্যাল ওয়ার্ক, চাকরি, পারিবারিক ব্যবসা দেখার পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে থাকে কাজ করে যাচ্ছেন। একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, আগ্রহ এবং মেধাবী সংগঠক হিসেবে স্পেনের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল মাস মাদ্রিদ তাঁকে মাদ্রিদের সেন্ট্র জোনের সোশ্যাল ওয়ার্কারের (ভোকাল দে বেসিন) মুখপাত্র মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু শুধু স্প্যানিশ পাসপোর্ট না থাকায় তিনি তা হতে পারেননি।করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আবুল হুসেনকে ভাষাগত দুর্বলতার কারণে হাসপাতালে যেতে না পেরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছে। এই মর্মান্তিক বিষয়টি নিশাত তাসনিমকে খুবই নাড়া দেয়। তিনি গড়ে তোলেন স্প্যানিশ ভাষান্তর গ্রুপ দে বলান্টারিও বেঙ্গলিস। এই গ্রুপের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি ভাষাগত দুর্বলতার কারণে হাসপাতলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তাঁরা স্বস্তি ও সাহস পান।

নিশাত বর্তমানে ইউনিড ইউনিভার্সিটিতে সমাজবিজ্ঞান স্নাতক করছেন। এর আগে দুই বছরের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন হিউম্যানিটির ওপর। এ ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ক্যারিয়ার ডেভেলপ কোর্সে অংশগ্রহণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন।