অনলাইন ডেস্ক : স্ত্রীর স্বপ্নাদেশ পূরণে হাতি কিনেছেন কৃষক দুলাল চন্দ্র রায়। এ জন্য লেগেছে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা। এই টাকা জোগাড় করতে তাঁকে বিক্রি করতে হয়েছে ৭২ শতক জমি, বাড়ির কয়েকটি গাছ ও এক জোড়া গরু আর বন্ধক রাখতে হয়েছে ৫৪ শতক জমি।
সম্প্রতি লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের দেউতির হাট রতিধর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হাতিটি মাদি, বয়স আট বছর।
এর আগেও দুলাল স্ত্রী তুলসী রানীর স্বপ্নাদেশ পূরণে রামছাগল, রাজহংস ও ঘোড়া কিনে লালনপালন করছেন।
দুলাল চন্দ্র রায় বলেন, ‘স্ত্রী তুলসী খুব ধার্মিক। সে পরমেশ্বরের স্বপ্নাদেশ পেয়ে আমাকে হাতি পালনের মাধ্যমে সেবা করতে বলেছে, নাহলে পরমেশ্বর খুশি হবেন না, কী আর করা। লোক মারফত খোঁজ করে হাতিটা কিনে আনলাম।’
এক প্রশ্নের জবাবে দুলাল চন্দ্র রায় বলেন, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের রাজকান্দির আবদুল করিম এই হাতির মালিক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় হাতিটি বিক্রি করতে ঘুরছিলেন। দুলাল যখন হাতিটি কেনেন, তখন এটি খুলনায় ছিল। সেখান থেকে ট্রাকে করে হাতিটি বাড়িতে আনাসহ আনুষঙ্গিক আরও এক লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘স্ত্রী তুলসী রানীর স্বপ্নাদেশ মেনে হাতি কিনে আমার খুব ভালো লাগছে, আমি তাকে খুব ভালোবাসি।’
তুলসী রানী বলেন, ‘আমি পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের স্বপ্নাদেশ পেয়ে স্বামীকে হাতি, ঘোড়া, রামছাগল ও রাজহংস বাড়িতে পালন করতে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘পরমেশ্বরের কথা শুনলে আমরা ভালো থাকব, মানুষের সেবা করতে পারব।’
এদিকে হাতির সঙ্গে রাজকান্দি গ্রাম থেকে আসেন মাহুত শরিফুল ইসলাম (৩০)। তিনি দুই দিন থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন। একই গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন এখন হাতির মাহুত হিসেবে কাজ করবেন। তাঁর বেতন মাসে ১৫ হাজার টাকা। হাতির খাবারের পেছনে যাবে মাসে ১০ হাজার টাকা।
এই টাকা কীভাবে জোগাড় হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে দুলাল বলেন, ‘আমার এখনো তিন একর জমি আছে, সেখানে আবাদ থেকে যে আয় হবে, সেটা দিয়ে খরচ চালাতে হবে, বাকিটা পরমেশ্বর দেখবেন। ভক্ত–প্রতিবেশীরাও সহায়তা করবেন।’
দুলালের বড় ভাই শিবু প্রসাদ বলেন, দুলালের স্ত্রী তুলসী রানী দেবতাদের সাধনা করেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে হাতিসহ অন্যান্য প্রাণী পালনের জন্য কিনেছেন, অনেকে তো শখ করেও কেনেন।
লালমনিরহাটের ফরেস্টার মো. নুরুন্নবী বলেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী বন্য প্রাণী পালন করতে হলে শর্তপূরণ সাপেক্ষে লাইসেন্স নিতে হয়। দুলাল চন্দ্র রায় নামের কেউ লাইসেন্সের আবেদন করেননি, তবে দুলাল চন্দ্র রায় একটা হাতি কিনে এনেছেন বলে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। খোঁজখবর নিয়ে দেখব।’
এ বিষয়ে দুলাল চন্দ্র বলেন, ‘আমি যাঁর কাছ থেকে হাতি কিনেছি, তিনি তাঁর নামে থাকা লাইসেন্সের ফটোকপি দিয়েছেন। তিনি আমার নামে লাইসেন্স করতে সহায়তা করতে রাজি হয়েছেন।’