বিনোদন ডেস্ক : নাম, যশ, খ্যাতি সবটাই তো ছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের। তবুও কেন এই অবসাদ, কিসের এই অবসাদ? যেই অবসাদ গ্রাস করে নিলো ৩৪ বছরের একটা তরতাজা প্রাণ। সত্যি কি আউটসাইডার হয়েই রয়ে গিয়েছিলেন? বলিউড সত্যি কি এই প্রতিভার দাম দিয়েছিল? রবিবার সুশান্তের আত্মহত্যার খবর সামনে আসার পর থেকেই এইসব প্রশ্ন ভিড় করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সুশান্তের মৃত্যুর জন্য কার্যত বলিউডকেই দায়ী করছে নেটিজেনদের একাংশ।
সুশান্তের মৃত্যু ফের একবার উস্কে দিল বলিউডের স্বজনপোষণ বিতর্ককে। বলিউডে যে একজন আউটসাইডার হয়ে থেকে গিয়েছিলেন সুশান্ত, গড ফাদার না থাকবার আপসোস ছিল তা ধরা পড়েছে সুশান্তের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে। সুশান্তের সেই কমেন্ট এখন ভাইরাল নেটদুনিয়ায়।
এক ফ্যান সুশান্তকে জানিয়েছেন, ‘তুমি এই ছবিতেও মরে যাবে না..আমি দেখতে চাই না এমন ছবি’। জবাবে সুশান্ত যা লিখেছিলেন তা আপনাকে অবাক করবে!
তিনি লেখেন, ‘আরে..কিন্তু যদি তুমি না দেখ তাহলে ওরা আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে, আমার কোনও গডফাদার নেই ইন্ডাস্ট্রিতে।সেই কারণেই আমি তোমাদেরকে আমার গড এবং ফাদার বানিয়ে নিয়েছি। দয়া করে সিনেমাটা একবার দেখ যদি তুমি চাও এই বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে আমি টিকে থাকি’।
এম এস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরিতে সুশান্তের হেয়ারস্টাইলিস্ট হিসাবে কাজ করেছিলেন স্বপ্না ভবানি। এদিন সুশান্তের অবসাদগ্রস্ত হওয়ার খবর মেনে নিয়ে তিনি লেখেন, এটা বলিউডের কাছে সিক্রেট ছিল না এবং সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। ‘এটা কোনও রহস্য নয় যে গত কয়েক বছর ধরে সুশান্ত খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। ইন্ডাস্ট্রির কেউ ওর পাশে দাঁড়ায়নি, সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। যেন ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে তাকে, এমন! আজকের টুইটার প্রমাণ করে দিচ্ছে এই ইন্ডাস্ট্রি আসলে কতখানি নীচ..কেউ এখানে তোমার বন্ধু নয়’।
সুশান্তের মৃত্যুর কিছু দায় নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন তাঁর ‘ড্রাইভ’ সিনেমার প্রযোজক, করণ জোহরও। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, আমি নিজেকে দুষছি তোমার সঙ্গে গত এক বছর যোগযোগ না রাখবার জন্য… আমার কখনও কখনও মনে হয় সত্যি তোমার কখনও কখনও একটা মানুষকে দরকার হয় তোমার জীবনটা ভাগ করে নেওয়ার জন্য..আমি হয়ত সেই ভাবনা নিয়ে যোগাযোগ রাখিনি..এই ভুলটা আর জীবনে কোনওদিনও করব না..শুধু একটা সম্পর্ক গড়লেই হয় না এই কঠিন সময়েই এই সম্পর্কটার খেয়ালও রাখতে হয়’।
ড্রাইভের ব্যর্থতার পর করণ জোহরের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল সুশান্তের, এমনটাই খবর ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলে। এছাড়াও তিন বছর আগেই বলিউডের অন্যতম বড় প্রযোজনা সংস্থা যশ রাজ ফিল্মসের সঙ্গেও সবরকম পেশাদার সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন সুশান্ত। সেই কারণও অজানা নয়। শেষ মূহূর্তে শেখর কাপুরের পানি ছবি থেকে সরে দাঁড়ায় আদিত্য চোপড়ার এই সংস্থা। এই ছবির জন্য সুশান্ত ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সঞ্জয় লীলা বনশালির রাম লীলা ছবির অফার, কারণ সেই সময় যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন তারকা। একই কারণে সুশান্তকে ছাড়তে হয় ‘ফিতুরে’তে কাজ করার সুযোগও। অথচ সেই বিগ বাজেট ছবি পানি থেকেই শেষমেশ সরে যায় যশ রাজ ফিল্মস।
এখানেই শেষ নয়, এরপর বেফিকরে ছবিটি যা প্রথমে সুশান্তের করবার কথা ছিল তা চলে যায় রণবীর সিংয়ের ঝুলিতে। এই সম্পর্কে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি সুশান্তকে। এরপরেই শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স এবং ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সীর প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে সবরকম সম্পর্কের পাঠ চুকিয়ে দেন সুশান্ত।
আজ সুশান্তের আত্মহত্যার পর এই সব প্রশ্ন গুলোই ঘুরে ফিরে আসছে, সত্যি কি স্বজনপোষণই শেষকথা বলিউডে। সত্যি কি এখানে ‘আউটসাইডার’ হয়ে লড়াই করাটা খুব কঠিন!