নাদিরা তাবাসসুম : বাইরে শোঁ শোঁ শব্দে প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস বইছে। ঘন ঝিরি ঝিরি তুষারপাতে সারা আকাশজুড়ে ঘন কুয়াশায় অন্ধকার হয়ে আছে চারদিক। রাত হতে সকাল পর্যন্ত একই আবহাওয়া। কানাডায় এত বছর ধরে বাস করায় এধরনের আবহাওয়া যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সাবিতের খুউব ইচ্ছে হলো আজ খিচুরীর সাথে ইলিশ মাছের দোপেঁয়াজা জমবে, আর সাথে যদি থাকে শুঁটকি ভর্তা। যেই ভাবা সেই স্ত্রীকে ডাকাডাকি ‘এই যে জমিলা, আজ ভুণাখিচুরী আর ইলিশ মাছের দোঁপেয়াজা রান্না করো, সাথে শুঁটকি ভর্তাও করো। সাহিদকে ফোন করে বলি যে, পরিবারসহ আজ ওরা আমাদের সাথে দুপুরের খাবার খাবে। তুমি কি বলো জমিলা’?

– ঠিকই বলেছ, অনেক দিন দিবা আর সাহিদকে দাওয়াত করা হয় নাই। কতদিন ওদেরকে দাওয়াত করবো ভেবেছিলাম। তুমি আজ ফোনে আসতে বলে দাও, কাছেই তো থাকে ওরা, এই আবহাওয়ায় কোন অসুবিধা হবে না।
জমিলা কথামতো রান্না ঘরে চলে গেল। রান্নার সব আয়োজন নিয়ে জমিলা ব্যস্ত। সাবিত ফোন করতে বসলো সাহিদকে। ‘হ্যালো, হ্যালো’ কিন্তু ওদিক থেকে কোন সাড়াশব্দ নেই, রিং টোন বেজেই চলেছে। ফোনটা ব্যস্ত থাকায় রেখে দিল পরে ফোন করা যাবে ভেবে। ‘জমিলা, ওদেরকে এখন ফোনে পাচ্ছি না ব্যস্ত আছে, আমি পরে ফোন করে জানাচ্ছি’।
– ঠিক আছে, আমি রান্নাবান্নার কাজগুলো সেরে রেখে দিই; বেশি বেশি রান্না করছি, আমরা কিন্তু দুজন মানুষ, ওরা যদি না আসে তাহলে খাবার গুলো নষ্ট হবে।
– তুমি চিন্তা করো না, আমি আবার ফোন করছি ওরা আসবে
এমন সময় সাবিতের মোবাইল ফোন বেজে ওঠে।
– হ্যালো, আসসালামু য়ালাইকুম, কে বলছেন?
– হ্যালো আমি সাহিদ বলছি। কেমন আছেন? সকাল থেকে যে আবহাওয়া দেখছি তাতে আজ আর পার্কে হাঁটাহাঁটি করা যাবে না।
– ভালোই করেছেন ফোন দিয়ে। আমি আপনার ল্যান্ড ফোনে অনেকক্ষণ ট্রাই করে যাচ্ছি। ব্যস্ত দেখছি, কী ব্যাপার বলুন তো? আপনার ভাবী অনেক মজার মজার খাবার দাবার রান্না করছে; আপনারা আজ দুপুরে আমাদের বাসায় খাবেন’।

– সাবিত ভাই, আমার শ্বশুর মশাই অসুস্থ। হার্টে যে রিং পরানো আছে তাতে কি ইনফেকশন ধরা পড়েছে। ওদিকে ডায়াবিটিস, হাই ব্লাডপ্রেসার, হাঁপানি সব অসুখ আছে। এসব নিয়ে দিবা ওর মায়ের সাথে ল্যান্ডফোনে কথা বলছে তাই ফোনটা ব্যস্ত আছে। আপনি আমাদের আজ দুপুরে খাওয়ার দাওয়াত করছেন, ভালোই হলো- দিবার মনটা আজ ভালো নেই। দেখি ওকে বলি, তাহলে দুপুরে দেখা হচ্ছে সাবিত ভাই।
দুপুরে রান্নার সব কাজ সেরে লিভিং রুমে ডাইনিং টেবিলে বড় বড় প্লেটে বাটিতে খাবার দাবার গুছিয়ে রেখেছে জমিলা। গোসল সেরে অযু করেছে নামাজ পড়েছে। তারপর সাবিতসহ অপেক্ষা করছে সাহিদ আর দিবার আগমনের জন্য।
দুপুর আড়াইটায় দরোজায় কলিং বেল বেজে ওঠে। সাবিত তাড়াতাড়ি এগিয়ে যায়, দরোজা খুলে দেয়। সালাম দিয়ে সাহিদ আর দিবা বাসায় ঢোকে।
– ভাবী শুনেছি আপনার বাবার অসুস্থতার কথা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এসব অসুখ মানুষকে খুবই ভোগায়।

– বয়স বেড়েছে ঠিক আছে কারণ এতে মানুষের কোন হাত নেই। কিন্তু বাবা ভীষণ হাইপার টেনশন করেন। ছোট ছোট ঘটনাতেও অনেক সময় বেশি টেনশন করেন। ফার্স্ট টাইম, সেকেন্ড টাইম, থার্ড টাইম হার্ট এটাক হলে তো বাঁচানো কঠিন হবে- এটাই সকলের চিন্তা।
– চিন্তা করে আর কি হবে, আল্লাহ যতদিন হায়াত রেখেছেন ততদিন বেঁচে থাকবেন। মানুষের জন্মই হয় মরার জন্য। জন্ম আছে যেখানে, মৃত্যু আছে সেখানে। স্বাস্থ্য, অর্থ, বিত্ত, সম্পদ, মানসম্মান, খ্যাতি সবকিছু ক্ষণস্থায়ী এবং মূল্যহীন এই মৃত্যুর কাছে। এখানেই মানুষের জীবনের সীমাবদ্ধতা। আল্লাহতায়ালা মানুষকে সকল সীমাবদ্ধতার মাঝে ফেলে আবার পরীক্ষাও করেন।
– জমিলা লাঞ্চ করার সময় হয়েছে, ক্ষিদেও পেয়েছে। খেতে খেতে না হয় আলাপ আলোচনা করা যাবে, এখন খাবার খেয়ে নিই চলো। চলেন সাহিদ ভাই ভাবী আসেন, টেবিলে বসে খাই আর গল্প করি।
– আসলে কি জানেন, মানুষের শরীরটাকে মেশিনের সাথে তুলনা করা যায়। আর খাদ্যকে বলা যায় জ্বালানীস্বরূপ।
খাদ্যবিজ্ঞানীরা বলেন, “আপনি যা খান আপনি তা-ই” অর্থাত্ আপনার শরীরের সুস্থতা নির্ভর করছে আপনি কী খাচ্ছেন তার ওপর। আজকাল যে অনেক জটিল রোগ আমাদের পিছু নিয়েছে তার একটা বড় কারণ হল-নিয়মিত খাদ্যে কৃত্রিম সার ও কীটনাশক বিষ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া নানা রকম প্রক্রিয়াজাত, ভেজাল মিশ্রিত ও রাসায়নিক উপায়ে সংরক্ষিত খাদ্য আমাদের খেতে হচ্ছে’।

দিবা বলে – আমার বাবা বাজার থেকে সবসময় খাঁটি ও টাটকা খাবার কেনেন। ওনার এক বন্ধু ছিলেন (রাজ্জাক চাচা) যার সাথে তিনি হাঁটা হাঁটি করতেন আবার বাজারে যেতেন টাটকা শাকসব্জি আর ফলমূল কেনাকাটার জন্যে। ওনার সেই বন্ধুই হঠাত্ হ্যাপাটাইটিস ‘বি’-তে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন কিছুদিন আগে। সেই থেকে বাবা টেনশন করে যাচ্ছেন, ভাবছেন ওনারও বুঝি সময় ঘনিয়ে এসেছে। কারণ রাজ্জাক চাচা বাবার খুউব ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। তিনি বেছে বেছে খাবার খেতেন। বাইরের তৈরী খাবার কখনো খেতেন না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ্র করতেন। অনেক টাকাপয়সার মালিক ছিলেন। নিজের বাড়িতেই ছোটখাটো বাগান করেছিলেন টাটকা শাক-সব্জির জন্য। সিঙ্গাপুরের বড় হাসপাতালে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে চিকিত্সা করানো হলেও ওনাকে বাঁচানো যায়নি। ওনার আদরের একমাত্র মেয়ে শিমুলকে নিয়ে উনি খুব দুশ্চিন্তা করতেন। শিমুল আমার বান্ধবী ছিল। শিমুলের যে সমস্যা ছিল পরে সেটা অবশ্য কেটে গিয়েছিল।

– দুশ্চিন্তা, টেনশন মানসিক চাপ যা অত্যন্ত খারাপ জিনিষ। মানুষকে ভেতরে ভেতরে নিঃশেষ করে দেয়।
– হ্যাঁ, নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস এবং প্রফুল্ল মনই হচ্ছে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। আসলে আমাদের জীবনে এত দুশ্চিন্তা বা টেনশন থাকে যে আমরা কখনই হাসিখুশী থাকতে পারি না। অথচ কথায় আছে, ক্যান্সারে যত না কবর ভরেছে তারচেয়ে বেশি ভরেছে টেনশনে। সুতরাং ভালভাবে বাঁচতে চাইলে মনকে সকল সময় প্রফুল্ল রাখতে হবে। এর জন্য ভাল চিন্তা ও ভাল কাজের কোনো বিকল্প নেই। সেইসাথে নিজেকে জড়াতে হবে কোনো না কোনো সৃজনশীল কাজের সাথে।
– ব্যায়াম অবশ্যই করতে হবে। হাঁটা, সাঁতার কাটা, দৌড়ঝাঁপ ইত্যাদিও ব্যায়াম। আমরা প্রতিদিন পঁয়তাল্লিশ মিনিট অথবা আধাঘণ্টা হাঁটি এটাও ব্যায়াম। এতে দেহের সমস্ত অংগ-প্রত্যংগ নমনীয় থাকে ও মগজে প্রচুর অক্সিজেন ঢোকায় দুশ্চিন্তা কমে। হাঁটায় মহিলাদের হাড়ক্ষয় ও অন্যান্য জটিলতাও দূর হয়।
– ভাবী আসুন, আগে খাওয়া শেষ করুন। তারপর আমরা রাজ্জাক চাচার এবং ওনার মেয়ে শিমুলের পুরো ঘটনাটা শুনবো।

– ঠিক আছে ভাবী। কিন্তু আপনাদের আজকের আয়োজন দেখে আমরা মুগ্ধ। আমরা ভাবতেই পারছি না এতো আয়োজন কিভাবে করলেন।
– আর বলবেন না, আপনার ভাই আজ সকালের আবহাওয়া দেখে ওনার শখ হয়েছে ভূনাখিচুরি আর ইলিশ মাছের দোঁপেয়াজা খাবে। আর বেশ কদিন ধরে আপনাদের সাথে একসাথে খাওয়ার কথা আপনার ভাই বলেছিল, তাই এসব করেছি।
– সাবিত ভাই অনেক ধন্যবাদ। ভাবী আর আপনি কষ্ট করে অনেক রকমের রান্না করেছেন সেজন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাছাড়া আজ দিবার বাসায় রান্না বান্না করার মতো মনের অবস্থাও ছিল না; ভালোই হলো।
– হয়েছে এত কিছু বলতে হবে না। আমরা প্রতিবেশী, সুখে-দুখে একসাথে আছি, থাকবো। এই আর কি।
– হ্যাঁ ভাবী, রাজ্জাক চাচার মেয়ে শিমুলের যে ঘটনাটা বলেছিলাম যার জন্য রাজ্জাক চাচা সবসময় দুশ্চিন্তা করতেন। শিমুল অত্যন্ত ভালো মেয়ে ছিল। যেমন লেখাপড়ায় তেমনই আচার আচরণে সবাই ওকে পছন্দ্র করতো। ওকে যে ছেলেটি ভালোবাসতো তার সাথেই চাচা ওর বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর ও বুঝতে পেরেছিল যে রেহান ওকে বিয়ে করেছিল ওর বাবার ধন সম্পদ পাওয়ার জন্য। ভালোবাসা ছিল ওর একটা অভিনয়। বিয়ের পর থেকে রেহান ও তার পরিবার শিমুলকে নানাভাবে কথায় এবং কাজে অপমান করতো। বাবার বাড়ি থেকে কিছুদিন পর পর টাকাপয়সা নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করতো। রাজ্জাক চাচা মেয়ের সুখের জন্য অনেক টাকাপয়সা দিয়েছেন। তাছাড়া শিমুলের শ্বশুর বাড়ি থেকে যখন যা দাবি করেছে চাচা তাই পাঠিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু শিমুলকে কিছুতেই ওরা শান্তিতে থাকতে দেইনি। সেইসাথে চাচাও শান্তিতে থাকতে পারেননি। দুঃখভারাক্রান্ত মনে অনেক সময় শিমুল আমাকে ফোনে বলতো-কত ভালোলাগা আর ভালোবাসা নিয়ে রেহানের সাথে বিয়েটা হয়েছিল, তুই তো সবই জানিস। মানুষ যে এভাবে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে কিছুতেই কিছু মেলাতে পারি না। এখন শুধুই অবহেলা আর ঘৃণা।

– শিমুল তোকে কতবার বারণ করেছি যে, যার সংগে তোর মিলছে না তার কাছে ফিরে যাবি না। বাবার বাড়িতেই থাকবি, একটা চাকরি যোগাড় করবি। রাজ্জাক চাচা তোকে নিশ্চয়ই জোর করবে না।
– না গিয়ে কি করবো বল, পরিবারের সকলেই চায় আমি তাদের সাথে খাপ খাইয়ে চলি- এতে আমার মানসিক বা শারীরিক যত যন্ত্রণাই ঘটুক।
– হ্যাঁ, এরজন্য আমাদের এই ঘূণে ধরা সমাজের মানুষগুলো দায়ী। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এই যুগে সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে আমরা নিজেদের দাবি করি কিন্তু নীতিবোধ ও মূল্যবোধের দিক থেকে আমরা বর্বর আদিম সমাজের মানুষদের মতো ব্যবহার-আচরণ করছি।
– লোভ-লালসা ও স্বার্থপরতার কাছে মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং নীতিবোধ-মূল্যবোধ সব পরাজিত।
– আসলে প্রত্যেকটি মানুষ জন্মগ্রহণ করে কতগুলো সীমাবদ্ধতা নিয়ে। যেমন- জন্মের সময় সে জানতো না সে কোন পরিবারে, কেমন পরিবারে জন্ম নেবে। জন্মটা রাজার ঘরে না প্রজার ঘরে হবে। জন্মের পর মাতা-পিতা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী কেমন হবে। শিক্ষা-দীক্ষা, মান-মর্যাদার দিক থেকে কতটুকু সংষ্কৃতিসম্পন্ন ও আলোকপ্রাপ্ত হবে। কারণ পরিবেশভেদে প্রত্যেকটি পরিবার তার নিজ নিজ নিয়ম-কানুন ও আচারব্যবহারে ভিন্নতর হয়ে থাকে।
– আচ্ছা বলতো, দুনিয়াতে কি কোন ভালো মানুষ আছে? যদি থাকে তবে তাদের কেউ আমার কপালে জুটলো না কেন?
– দুঃখ করিস নারে, ধৈর্য্য ধরে থাকলে দেখবি আল্লাহ সাহায্য করবেন। তিনিই তোমাকে এ অবস্থা থেকে মুক্ত করবেন। আল্লাহ মানুষকে এসব বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন।
– সব পরীক্ষা আমাকেই কেন আল্লাহ করছেন জানি না। দোয়া রাখিস আমার জন্য।
এরকম বহুবার ফোনালাপ হয়েছে ওর সাথে। রাজ্জাক চাচা মারা যাওয়ার তিন মাস আগে শিমুল আমাকে বলেছিল যে-
– রেহানের এক বন্ধু আছে যে কিনা সব বিষয়গুলো জানে। তার নাম রাজিব। রাজিব অনেক চেষ্টা করেছে এবং রেহানকে বহুবার বুঝিয়েছে যেন রেহান আমাকে কোন কষ্ট না দেয়। কিন্তু রেহান খুউব একরোখা, বাবা-মার কথা মতো চলে। কিছুতেই আমার সাথে ভালো ব্যবহার করে না। রাজিব আমাকে অনেকবার বলেছে রেহানের কাছে আপনি শুধু কষ্ট, দুঃখ আর অপমান পেয়ে যাচ্ছেন। আপনার মতো একজন ভালো মানুষের এত কষ্ট আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না- আপনি যদি রাজী থাকেন আমি আপনাকে মুক্তি দিতে চাই
– বেশতো ওনাকে বল উনি যদি তোকে এব্যাপারে কোন সাহায্য করে এবং রেহানের হাত থেকে মুক্ত করে।
– তাই ভাবছি কিভাবে বিষয়টা বাবার সাথে আলাপ করা যায়। তুই কি বাবাকে ফোনে সব বিষয় বুঝিয়ে বলবি।
শিমুলের সাথে এধরনের ফোনালাপের পর রাজ্জাক চাচার সংগে আমি কথাও বলেছিলাম। চাচা এবিষয়গুলো নিয়ে খুউব টেনশনে ছিলেন। এত স্বাস্থ্যসচেতন ও শক্ত মনোবলধারী মানুষ হওয়া সত্তে¡ও চাচা এ ধাক্কা সামলাতে পারেননি, হার্ট এটাকে ওনার মৃত্যু ঘটলো। এর চার অথবা পাঁচ মাস পর আমার বাবা এবং শিমুলের আত্মীয়-স্বজনেরা সবাই ওকে রেহান-এর কাছ থেকে তালাক নিয়ে রাজিবের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করেছে। এখন মাশাল্লাহ ওরা সুখেই আছে। মাঝখানে রাজ্জাক চাচাকে এইসব দুশ্চিন্তা টেনশন নিয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হলো।

সাবিত সকল ঘটনা শুনে বলে, ‘এজন্যেই জমিলাকে বলি যে দুঃখ কষ্ট দেখে মন খারাপ করবে না, ভেংগে পড়বে না। দুনিয়াতে আমরা অল্প সময়ের জন্য বেঁচে আছি। “লাইফ ইজ এ জার্নি টুওয়ার্ডস ডেথ”, যেটুকু সময় পাও হাসি আনন্দ্রে থাকার চেষ্টা করো। পৃথিবীতে বিপদ-আপদ, দুঃখকষ্ট থাকবেই। কারণ দুনিয়াতে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা মানুষের চিন্তা ও কল্পনার বাইরে- যা মানুষের সীমা ও সাধ্যের বাইরে। আমরা আল্লাহর বাণী থেকে জেনেছি, “পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি তা সংঘটিত করার পূর্বেই তা লিপিবদ্ধ হয়; আল্লাহর পক্ষে এ খুবই সহজ”। আরো জেনেছি, “আল্লাহর অনুমতি ব্যতিত কোন বিপদই আপতিত হয় না এবং যে আল্লাহতে বিশ্বাস করে তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত”। তিনি আবার বিপদ আপদে মানুষকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন, “যারা ধৈর্য অবলম্বন করে ও তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে, তারা সত্কর্মশীল। তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর এবং বিনীতগণ ব্যতীত আর সকলের কাছে নিশ্চিতভাবে এ কঠিন। তিনি অবগত আছেন যে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে, সুতরাং তোমাদের মধ্যে একশতজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শতজনের উপর বিজয়ী হবে। আর তোমাদের মধ্যে এক সহস্র থাকলে আল্লাহর অনুজ্ঞাক্রমে তারা দু’সহস্রের উপর বিজয়ী হবে। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ও প্রার্থনার মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন”। আসলে আমরা মানুষেরা ভাগ্যের খুঁটিতে বাঁধা ঠিক যেমন রশি দিয়ে খুঁটিতে বাঁধা গরু তার রশির সীমানার বাইরে যেতে পারে না তেমনি মানুষের ভাগ্যে যা নির্ধারিত থাকে তার বাইরে যেতে পারে না’

– সাবিত ভাই একদম সত্যি বলেছেন, অনেক সময় বহু চেষ্টা করেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না আবার অনেক সময় কম চেষ্টাতে আশাতীত ফল মিলে যায়- সবই আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি আমাদের বিপদ আপদে ধৈর্য ধরার শক্তি দিন। তিনিই আমাদের ভরসাস্থল ও আশ্রয়স্থল। আসুন আমরা সকলে সুখে দুখে হাসি কান্নায় একমাত্র আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি। এই বলে সাহিদ এবং দিবা দোয়া চেয়ে বিদায় নিয়ে চলে যায়।