অনলাইন ডেস্ক : শুক্রবার তখন রাত ৯টা। বান্ধবীকে গাড়িতে তুলে দিয়ে কদমতলী থেকে রিকশায় ফিরছিলেন ডা. আফসানা তাসনিম মম। তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্সক। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের সামনে আসামাত্র ছিনতাইকারী রাজু ছুরি সহ হামলে পড়ে ডা. মমের ওপর। হাতে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এতে বাধা দেন ডা. মম। একপর্যায়ে হাতে থাকা ছুরি দিয়ে ডা. মমের ওপর আক্রমণ করে রাজু। মুখে পরপর কয়েকটি আঘাত করে।
এ সময় চিত্কার করে ওঠেন ডা. মম। চিত্কার শুনে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে একজন এসে রাজুকে জাপটেও ধরেন। কিন্তু রাজু ছুটে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় ডা. মমকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় সিলেটজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। দেখা দেয় ক্ষোভও। এ ছিনতাইয়ের ঘটনায় কঠোর অবস্থান নেয় দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ। ১০-১২টি দলে বিভক্ত হয়ে তারা ছিনতাইকারী রাজুকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। দক্ষিণ সুরমার পাপরাজ্যে রাজুর খোঁজে চিরুনি অভিযান চালায়। রেলওয়ে স্টেশন এলাকার সব অপরাধ স্থানে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু রাজুকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিলো না। হঠাৎ করেই সে হাওয়া হয়ে গেছে। পুলিশের দু’টি টিম উত্তর সুরমায় আসে।
কাস্টঘর, মহাজনপট্টিতে রাজুর খোঁজে অভিযান চালায়। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অবশেষে সিলেটের আরেক ক্রাইম জোন ক্বীন ব্রিজ এলাকায় পুলিশ তল্লাশি চালায়। ঘড়ি ঘরের বারান্দায় চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে সে। পুলিশ এসে তল্লাশিকালে তাকে ওখান থেকে গ্রেপ্তার করে। দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ জানায়- ছিনতাইয়ের সময় রাজু নিজেও তার হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। হাতের কিছু অংশ কেটে যায়। তার শার্ট ও প্যান্টে ডা. মমের রক্ত লেগেছিল। সে দৌড়ে দক্ষিণ সুরমা থেকে ক্বীন ব্রিজ হয়ে নদী পাড়ি দিয়ে উত্তর সুরমায় চলে আসে। এসে সে তার রক্তমাখা শার্ট ও প্যান্ট বদলে ফেলে। হাতে ব্যান্ডেজ দিয়ে ঘড়ি ঘরের নিচে শুয়ে পড়ে। আর ওখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে পুলিশের কাছে ঘটনা স্বীকার করেছে। এবং একাই এ ছিনতাইয়ের কাজে অংশ নেয় বলে জানায়। দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ছিনতাইকারী রাজুর বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে। তাকে ওই মামলায় আদালতে সোর্পদ করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি। তার কাছ থেকে পুলিশ রক্তমাখা ছুরিও উদ্ধার করেছে। তিনি জানান- ডা. মমের ব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল ছিনতাইকারী রাজু। এতে তিনি বাধা দিলে ছিতাইকারী তার মুখে ও হাতে ছুরি দিয়ে আঘাত করে।
এ সময় মমের চিৎকারে পথচারীরা এগিয়ে এসে ছিনতাইকারীকে ঘিরে ধরে। তবে কৌশলে সে পালিয়ে যায়। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্সকরা জানিয়েছেন- মুখে ছুরিকাঘাতের ফলে মমের মুখসহ জিহ্বার অনেকাংশ কেটে গেছে। সেখান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। এছাড়া হাতে তিনি আঘাত পেয়েছেন। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- সিলেট রেলওয়ে স্টেশন এলাকা ফের অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আবারো চিহ্নিত ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক বিক্রেতাদের দাপট বেড়েছে। শুক্রবার রাতে ছিনতাইয়ের ঘটনার পর পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করায় সব অপরাধীরা পালিয়ে যায়। তবে- গতকাল আবার তারা ফিরে এসেছে। রেলওয়ে স্টেশনের সামনের এলাকা ছিনতাইকারীদের হেডকোয়ার্টার। পুলিশ জানায়- ছিনতাইকারী রাজু রেলওয়ে স্টেশন এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। কয়েক বছর আগে রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় এক মাছ বিক্রেতাকে খুন করেছিল। ওই খুনের মামলার প্রধান আসামি সে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর প্রায় ৩ বছর কারাগারে ছিল।
সম্প্রতি সে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে বেরিয়ে এসে আবার অবস্থান নিয়েছে রেলওয়ে স্টেশনে। রাজুর কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই বলে জানান ওসি খায়রুল ফজল। তিনি জানান- সিলেট রেলওয়ে স্টেশন এলাকাই তার স্থায়ী ঠিকানা। আগে ছিল রেলওয়ে স্টেশনের টোকাই। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ছিনতাই, খুন সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন- রাজুর বেরিয়ে আসার খবর তাদের কাছে ছিল না। কিন্তু ডা. মমের ঘটনায় রাজুর নাম জানান ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি জানান- রেলওয়ে স্টেশনের টোকাই থেকে সে ভয়ঙ্কর অপরাধী হয়ে উঠেছে। তার নিয়ন্ত্রিত একটি চক্র রয়েছে বলে ইতিমধ্যে খবর এসেছে। পুলিশ এখন রাজু সংশ্লিষ্ট সকল অপরাধীকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে।