অনলাইন ডেস্ক : সিরিয়ার আইএস বন্দিশিবির থেকে ১৪ নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে কানাডা। ওই ১৪ জনের মধ্যে ৪ জন নারী ও ১০ জন শিশু। কয়েক বছর ধরে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আইএসের বিদেশি যোদ্ধা ও তাদের পরিবার-পরিজনদের জন্য তৈরি বন্দিশিবিরে আটক ছিল তারা। অন্য দিকে সিবিসি নিউজ জানিয়েছে, দেশে ফেরা নারীদের মধ্যে ৩ জনকে মন্টরিল থেকে গ্রেপ্তার করেছে কানাডা পুলিশ (আরসিএমপি)।

গ্রেপ্তারকৃতদের দুইজনের নাম আম্মারা আমজাদ ও দার আহমেদ এবং অপর একজন ৩৮ বছর বয়সী তৃতীয় মহিলা যার নাম পুলিশ জানায়নি। আমজাদ এবং আহমেদ গত ৬ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অন্টারিওর একটি আদালতে জামিনের শুনানির জন্য হাজির হন, কিন্তু তা স্থগিত করা হয়। তৃতীয় মহিলা জামিন শুনানির জন্য আলবার্টার আদালতে হাজির হন। আরসিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুই অন্টারিও মহিলা তাদের হেফাজতে রয়েছে এবং ১১ এপ্রিল, মঙ্গলবার তাদের আবার আদালতে হাজির হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই তিনজনের বিরুদ্ধে ‘টেররিজম পিস বন্ডে’র আবেদন করেছে কানাডা পুলিশ। তাদের আইনজীবী লরেন্স গ্রিনস্পন বলেন, পিস বন্ডের অর্থ হল নারীদের এক বছর পর্যন্ত নির্দিষ্ট শর্তের মধ্যে থাকতে হবে।

আরসিএমপি গত ৭ এপ্রিল, শুক্রবার একটি পৃথক বিবৃতিতে বলেছে, তৃতীয় মহিলাকে পুলিশি হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং এখন পিস বন্ডের আবেদনের শুনানির জন্য জামিনের শর্ত সাপেক্ষে।

২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের উত্থান ঘটে। কয়েক মাসের মধ্যে এই দুই দেশের বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় এই জঙ্গি গোষ্ঠী। সশস্ত্র এই গোষ্ঠীতে স্থানীয় যোদ্ধাদের পাশাপাশি অনেক বিদেশি যোদ্ধাও ছিল। যাদের বেশিরভাগই উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর অভিযানের মুখে ২০১৭ সালে উভয় দেশেই গোষ্ঠীটি পরাজিত হয়। এ সময় কয়েক হাজার আইএস যোদ্ধাকে আটক করা হয়। এসব যোদ্ধাদের কিছু কিছু তাদের দেশের সরকার ফিরিয়ে নিয়েছে এবং সেই প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর রিপোর্ট মতে, আইএসের পতনের ছয় বছর পরও এখনও আইএসের কয়েক হাজার যোদ্ধা ও তাদের পরিবার-পরিজন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন বন্দিশিবিরে আটক রয়েছে। আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল কানাডার এমন বেশ কিছু নাগরিক সিরিয়ায় বন্দি রয়েছে। সিরিয়া সরকারের সঙ্গে এক চুক্তির আওতায় তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে কানাডা সরকার। ইতোমধ্যে তিন কিস্তিতে বেশ কিছু নাগরিককে সিরিয়া থেকে ফিরিয়ে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রæডো সরকার। সবশেষ গত ৭ এপ্রিল, শুক্রবার চতুর্থ কিস্তিতে প্রত্যাবাসন অভিযানের অংশ হিসেবে মোট ১৪ জনকে ফেরানো হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী। মূলত ‘আইএস বধূ’ হিসেবে সিরিয়ায় গিয়েছিলেন তারা।

দেশে ফিরিয়ে নিলেও প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ‘টেরোরিজম পিস বন্ড অ্যাপলিকেশন’ নামে একটি সন্ত্রাস দমন আইনে বিচারের আওতায় আনছে কানাডা সরকার। কানাডীয় পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, সবশেষ ফিরিয়ে নেয়া ১৪ জনের মধ্যে যে ৪ প্রাপ্তবয়স্ক নারীর মধ্যে ৩ জনকে মন্ট্রিল বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

৩৮ বছর বয়সী অপর এক নারীকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। লরেন্স গ্রিনস্পোন নামে ওই নারীর এক আইনজীবী এএফপিকে বলেছেন, তার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি ফৌজদারি কোনো অভিযোগ নয়। তাকে আগামী এক বছর সরকারের বিভিন্ন বিধি ও শর্ত মেনে চলতে হবে। সূত্র : রেডিও কানাডা