অনলাইন ডেস্ক : গত ২১ জুলাই, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় টরন্টোর ৯ ডজ রোডের রয়েল ক্যানাডিয়ান লিজিওন হল এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও জাতীয় নেতা সিরাজুল আলম খানের সম্মানে এক নাগরিক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি গত ৯ জুন ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রাক্তন ছাত্রনেতা আলিমুর হায়দারি বাবু’র সভাপতিত্বে স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন মাহবুব আনাম।
উল্লেখ্য, সিরাজুল আলম খান ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে তিনি খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
১৯৬৩ সালে সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভ‚মিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনও নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শক হিসেবে তাদের ‘তাত্তি¡ক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাঁকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন। সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান।
স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক সংগঠক রেজা অনিরুদ্ধ, টরন্টো ফিল্ম ফোরামের নির্বাহী সদস্য শেখ শাহনওয়াজ, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর প্রাক্তন নেতা মনির জামান রাজু, লেখক তালুকদার রেজাউল করিম, মনির ইসলাম, সাবেক উপ সচিব ও উদীচী কানাডা’র প্রাক্তন সভাপতি আজফার সাঈদ ফেরদৌস, শ্রমিক নেতা মেসবাহ উদ্দিন, প্রাক্তন ছাত্র লীগ নেত্রী নার্গিস মিনি, ফয়সল চৌধুরী, ফখরুল ইসলাম চৌধুরী মিলন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস মিয়া, ড মাহবুব আলম, প্রাক্তন সচিব আবু আলম শহীদ খান এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ দুজা।
স্মরণ অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী শেখর ই গোমেজ ও নিবেদিত সংগীত পরিবেশন করেন শাহজাহান কামাল।