হাসান গোর্কি : যারা পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন তারা কিছু বিপদে থাকেন। পড়া না করে স্কুলে গেলে যে অনুভূতি হয়, সময় মতো লেখা জমা দেওয়া না গেলে তাদের কিছুটা সেরকম লাগে। আমি সাধারণত শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু করে মধ্য রাতের মধ্যে লেখা শেষ করি। কখনও সারারাত জেগে লিখি। আজ যখন লিখতে বসেছি তখন শনিবারের দিনটাও শেষ হবার পথে। সম্পাদক মনিস রফিকের একটা ফোন আসতে পারে। এই আতঙ্কে আর অশান্তিতে দ্রুত সময় চলে যাচ্ছে! তবে দমে গেলে চলবে না— “ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর”। অশান্তি থেকে বেঁচে থাকলে শান্তিতে থাকার অর্ধেক কাজ হয়ে যায়। এর কৌশল কী হতে পারে? আমরা একমত হবো যে শান্তি নষ্ট করে আমাদের আপন মানুষরা। শান্তির ৯০% নষ্ট করে আমাদের কুড়ি জন নিকট আত্মীয় এবং কুড়ি জন বন্ধু। বাকি দশ ভাগ অশান্তি বাইরে থেকে আসে। এটা একটা অনুমান। নিকারাগুয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সৌরভ গাঙ্গুলি বা আমার বন্ধুর ভাইয়ের শ্বশুর আমার শান্তি নষ্ট করতে আসেন না। তাহলে বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গ ত্যাগ করলেই তো আমরা শান্তিতে থাকতে পারি! বাস্তবে সেরকম ঘটবে না। বাঁচার জন্য আমরা নতুন আত্মীয় এবং নতুন বন্ধুর কাছে যাবো এবং তারাও আমাদের ৯০% অশান্তির কারণ হবেন। আসলে সমস্যাটা সম্ভবত অন্যখানে।
আমি যে ৪০ জন মানুষকে আমার অশান্তির কারণ মনে করছি তারাও প্রত্যেকে হয়তো আমাকে তাদের অশান্তির কারণ মনে করছেন। কিন্তু তারপরও আমরা পরস্পরের মধ্যে অশান্তির চেয়ে শান্তির উপাদান বেশি পাই বলে সম্পর্কগুলো টিকে থাকে। আর এর বিপরীত ক্ষেত্রে সম্পর্কগুলো ভেঙে যায়। টিকে থাকা সম্পর্কগুলো নিয়ে আমাদের অতৃপ্তির কারণ নিজেদের সম্পর্কে আমাদের ভ্রান্ত ধারণা এবং অন্যদের ভূমিকার অপ-বিশ্লেষণ। আমাকে যদি কেউ বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, প্রাজ্ঞ, সাহসী, পরোপকারী, সৎ, চিন্তাশীল, যুক্তিবাদী, ধৈর্যশীল, মহানুভব— এসব অভিধায় সিক্ত করে তাহলে তাতে আমি ভুল খুঁজতে যাবো না। কোনো বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই আমি এসব বিশেষণ খুশি মনে মেনে নেবো। অন্য কেউ যদি আমাকে অসৎ, চাটুকার, ধূর্ত, মিথ্যাবাদী, লোভী, ভন্ড, প্রতারক, তরলমতি, নির্বোধ- এসব বলে তাহলে আমি এর কোনটিকেই সঠিক বলে বিশ্বাস করবো না এবং সবগুলোকে প্রত্যাখ্যান করার যুক্তি খুঁজে বের করবো। তাহলে এই নেতিবাচক বিশেষণগুলো জগতে আছে কেনো! এই বিশেষণের উপযুক্ত লোক কারা? আমি (বহুবচন অর্থে) ছাড়া সবাই? তাহলে তো এরকম মানুষ জগতে এক জনও নেই!
দেড় দশক আগে আমার ছোটগল্প সঙ্কলনের একটা পাণ্ডুলিপি একটা পুরস্কারের জন্য জমা দিয়েছিলাম। সেসময় আমার এক বন্ধু (যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিল) আমার গল্পগুলোর মান যে খুব সাধারণ সেটা বুঝিয়ে বললো। আমি তার সকল যুক্তিকে মনে মনে খণ্ডন করে নিজের লেখা গল্পগুলোকে উচ্চ মানের বলে মনে করতে থাকলাম এবং এই বিশ্বাসে অটল থাকলাম যে পুরস্কারটা আমি-ই পাবো। সেরকম ঘটেনি। আমার গল্পের মান যে খুব সাধারণ নিজেকে এটা বোঝাতে দেড় যুগ লেগেছে। এতেও যে পুরোপুরি সফল হয়েছি তা নয়। এখনও যদি কেউ বিনয় বা সৌজন্যবশত বলে “আপনার গল্প ‘চমৎকার’, তখন সে বার্তাটাই কয়েকবার করে পড়ি। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি নিজের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বর্জন করা সহজ নয়। সেকারণে অন্য কারো সাথে আমার লেন-দেন, ঝগড়া- বিবাদ, শত্রুতা-বন্ধুত্বে আমি নিরপেক্ষ থাকবো না এটাই স্বাভাবিক।
আমার এক বন্ধুর সাথে একবার ঝগড়া বেঁধে গেলো। যোগাযোগ বন্ধ। সে আমার সাথে কী কী অন্যায় আচরণ করেছে এবং আমি তার কতো প্রকারের উপকার করেছি মনে মনে তার একটা লম্বা তালিকা তৈরি করে বাকি জীবনে তার সাথে যোগাযোগ না রাখার প্রতিজ্ঞা করলাম। গোপনে তার বিরুদ্ধে অন্যদের কাছে কুৎসা ছড়াতে থাকলাম। কিছুদিন পর খুব আকস্মিকভাবে তালিকাটা উল্টো করে দেখার ইচ্ছা হলো। আমি তার প্রতি কী অন্যায় করেছি আর সে আমার প্রতি কী বদান্যতা দেখিয়েছে তার তালিকা করে দেখলাম তার প্রতি আমার অন্যায় আচরণের পরিমাণ বেশি। আমি বলছি না যে ‘জগতে আমি একাই খারাপ মানুষ’ এভাবে আমাদের ভাবতে হবে। বলতে চাচ্ছি সবার মধ্যে কিছু ভালো, কিছু মন্দ আছে। এই ধরুন, মনিস রফিকের ফোন পাওয়ার আতঙ্কে আছি (এটা অন্যায়!) আবার তার সম্পাদিত পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হচ্ছে; এটা আনন্দের। জামায়াত, বিএনপি, আওয়ামীলীগ, হেফাজত, হিটলার, চার্চিল, ইন্দিরা গান্ধী — কেউ-ই নিরঙ্কুশ ভালো বা খারাপ নয়/নন। তারা কেউ-ই প্রশ্নাতীত কল্যাণ বা অকল্যাণের প্রতিভূ নয়/নন। আমার বন্ধু আহমেদ স্বপন মাহমুদের অফিসে রাত্রিকালীন আড্ডা বসে।
আমি দেশে থাকতে প্রায়-ই সেখানে যেতাম। সেখানে কাদের ভাই আসেন। তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ঢাকা অফিসে প্রোগ্রামার হিসেবে চাকরি করেন। স্বপন ও কাদের ভাইয়ের কাছে প্রায় সব তর্কে আমি হেরে যাই। বাসায় ফেরার সময় নিজেকে প্রবোধ দেই — যুক্তিই সব নয়। ইনটিউশন-ই প্রকৃত সত্যের সন্ধান দিতে পারে। এই অমীমাংসিত দ্বৈত অবস্থা মনের শান্তি নষ্ট করে। কিন্তু আমি এভাবেও নিজেকে সান্ত¡না দিতে পারতাম— আমি কিছু মানুষের সাথে তর্কে জিতি, কিছু মানুষের সাথে হারি।
সমস্যার মূল সূত্র হলো, আমরা নিজেদের গুণ ও সবলতার সাথে অন্যদের দোষ এবং দুর্বলতার তুলনা করতে পছন্দ করি। এই অসম তুলনার ফলাফল সঙ্গত কারণেই নিজের পক্ষে আসে। ফলে অন্য কেউ যে আমার চেয়ে ভালো, বুদ্ধিমান, দক্ষ হতে পারে সে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সহজ হয় না। আমার লেখার বানান দেখে দিতো আমার এক বন্ধু। তার ১০ বছর বয়সী ছেলে বলেছে, ‘’হাসান গোর্কি একটা আর্টিকেল লিখতে ২০টি বানান ভুল করে। তাহলে সে লেখক হলো কীভাবে!’ আমাদের মনে হতে পারে এই শিশুর বিচারবুদ্ধি অপরিপক্ক। ধারণাটা ভুল নয়। সে শুধু বিবেচনায় নিয়েছে ২০টি শব্দের সঠিক বানান বিষয়ে আমার অজ্ঞতাকে। আর্টিকেলের বিষয়বস্তু, যুক্তি, বক্তব্য- কিছুই বিচার করেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কারো সমালোচনা করার সময় আমরাও একই কাজ করি। ড. ইউনুস রবীন্দ্রনাথের মাইক্রো ক্রেডিটের ধারণা বাজারজাত করে নোবেল পেয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে তিনি সুদের ব্যবসা করেন। আল মাহমুদ স্বাধীনতা বিরোধীদের দোসর, শামসুর রেহমান নাস্তিক, রবীন্দ্রনাথ মনে মনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা চাননি- এই কথাগুলো সত্য হয়ে থাকলেও তাদের আকাশচুম্বী যোগ্যতা ও অবদানের সাথে এসবের ইতি বা নেতিবাচক কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই।
সব জটিলতার বাইরে এসে আমরা ভালো থাকতে চাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি যদি এরকম চাই তাহলে অন্য কারো সাহায্য নেওয়া ছাড়া বা আমার সাথে অন্যদের আচরণের ওপর নির্ভর না করেই আমি সেটা পারি। শর্ত হলো, নিজেকে ও অন্যকে বিচার করার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ হতে হবে। ৮ শব্দের ছোট্ট শর্ত। শুনতেও সহজ। কিন্তু বাস্তবে পালন করা কঠিন। ‘প্রান্তরে তেপান্তরে-৪৫’ পড়ে ফরিদপুর থেকে জিনাত রেহানা আমার মেসেঞ্জারে খুব মৃদু একটা বিরূপ মন্তব্য করেছে। আমি সেই সমালোচনাকে আমার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করেছি এবং তাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে নিয়েছি। যা কিছু আমার, তার কোন কিছুর ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা আমার জন্য কঠিন এবং অনেক সময় অসম্ভব। তা-ই যদি সত্য হয় তাহলে উপদেশ দিতে যাওয়া অনুচিত হচ্ছে কিনা? না। অন্য যাদের বিচারবুদ্ধি, প্রজ্ঞা ও মানসিক শক্তি আমার চেয়ে বেশি তারা নিরপেক্ষ হতে চেষ্টা করবেন এবং সফল হবেন। আমার নতুন যে উপলব্ধি নিবেদন করতে আজকের এই লেখা তা হলো: এক। প্রশান্তিতে না থাকার জন্য অন্যকে দায়ী করা নিজের প্রতি এক ধরণের অন্ধ পক্ষপাতিত্ব। দুই। প্রশান্তিতে থাকার জন্য সবচেয়ে জরুরি উপাদান হলো নিজের বিচার বুদ্ধির নিরপেক্ষতা।
প্রায় হাজার শব্দ লেখার পরও নিবন্ধের শিরোনামের যথার্থতা বোঝা গেলো না!
আমি প্রথম থেকে পড়ে দেখলাম সিদ্ধান্তহীন এলোমেলো উপদেশের মতো শোনাচ্ছে কথাগুলো। এবার একটা সারণী তৈরি করা যাক যার প্রায়োগিক মূল্য থাকতে পারে। এখানে আমি ১০০ জন ঘনিষ্ঠ মানুষের সাথে নিজের তুলনার তালিকা দিলাম। স্কোর করা হয়েছে ১০০-র মধ্যে। পাঠক এই সারণীতে নিজেকে বসিয়ে স্কোর করলে উপকার পেতে পারেন।
এখানে ১০০ জনের মধ্যে আমার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান, প্রজ্ঞাবান, নিরপেক্ষ, সৎ, নিষ্ঠাবান, যুক্তিবাদী ও সহিষ্ণু যথাক্রমে ৪০, ১৫, ২০, ৪৫, ০৫ ও ০৫ ও ০১ জন। আর লোভী, হিংসুক, পরশ্রীকাতর ও স্বার্থপর যথাক্রমে ১০, ২০, ২৫, ও ০ জন। তার অর্থ আমার চেয়ে ভালো গুণের মানুষের সংখ্যা ১০০ জন পরিচিতের মধ্যে বেশি। এই সারণীটা ১৫ বছর আগে তৈরি করলে আমি হয়তো সবগুলো সূচকে নিজেকে অ দিতাম। এটা সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন বা নির্ভুল নাও হতে পারে। তবে এভাবে চেষ্টা করতে থাকলে নিজের সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পাওয়া সম্ভব। প্রশ্ন হলো নিজের সম্পর্কে এরকম একটা সারণী যদি প্রায় নির্ভুলভাবে তৈরি করা যায় তাতে কী লাভ হবে? তাতে জীবনাচার অনেক নির্বিবাদ ও চাপমুক্ত হবে।
আমরা বেঁচে থাকি খুব কম সময়। প্রতিটা মুহূর্ত ভালো থাকা গেলে আমাদের-ই লাভ।
পরিপার্শ্বের সব মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে চলতে পারার যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রথম করণীয় আত্মানুসন্ধান। আমার প্রতি অন্যদের আচরণ নিয়ে নিজের মনে বিচার সভা বসানোর আগে আমাকে ভাবতে হবে আমার আচরণ শুদ্ধ ছিলো কিনা। যুদ্ধ করে মাঝে মাঝে জয় পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা শান্তির পাথেয় হয় না। ধরে নিন আমাদের তৈরি করা এই সূচকে আপনার অবস্থান অনেক উপরে। আপনার পরিচিত মানুষদের মধ্যে আপনি সবচেয়ে গুনী, মানবিকতার বিচারে সবচেয়ে ভালো। তাদের বিরুদ্ধে আপনি জিতে থাকেন। তাহলে এবার দুর্যোধন ও ধৃতরাষ্ট্রের এই কথোপকথন দেখুন এবং ভাবুন দুর্যোধনের মতো সুখের পরিবর্তে শুধু জয় চান কিনা:
দুর্যোধন। প্রনমি চরণে তাত!
ধৃতরাষ্ট্র। ওরে দুরাশয়, অভীষ্ট হয়েছে সিদ্ধ?
দুর্যোধন। লভিয়াছি জয়।
ধৃতরাষ্ট্র। এখন হয়েছ সুখী?
দুর্যোধন। হয়েছি বিজয়ী।
ধৃতরাষ্ট্র। অখণ্ড রাজত্ব জিনি সুখ তোর কই রে দুর্মতি?
দুর্যোধন। সুখ চাহি নাই মহারাজ! জয়, জয় চেয়েছিনু, জয়ী আমি আজ।
(গান্ধারীর আবেদন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
ধরুন অনেক যোগ্যতার মাপকাঠিতে আপনি আমাদের সবার থেকে বড় হয়েছেন; জয়ী হতে, শুদ্ধ ধারণার চর্চা করতে, মায়া-মরীচিকার প্রহেলিকা সৎ ভাবে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে যে সামর্থ্য দরকার তার সবটুকু আপনার আছে। তাহলে আপনি কী করবেন? উত্তর দেওয়ার আগে নিচের কাহিনিটা পড়ে নিন:
দেবগুরু বৃহস্পতির পুত্র কচ। তিনি পুত্রকে শুক্রাচার্যের কাছে সঞ্জীবণী বিদ্যা শিখতে পাঠালেন। শুক্রাচার্য দানব গুরু। তিনি মৃত মানুষকে জীবিত করতে পারেন। মূলত এই বিদ্যার কারণে দানবেরা দেবতাদের বিরুদ্ধে জিতে যাচ্ছিল। কচ শুক্রাচার্যের গৃহে আসেন। শুক্রাচার্যের কন্যা দেবযানী তাকে দেখে মুগ্ধ হন এবং কচের শিষ্যত্ব গ্রহণের ইচ্ছা পূরণ করতে পিতাকে অনুরোধ করেন। কচ শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকেন। তপোবনের, আলয়ে দেবযানী উপযাচিকা হয়ে প্রণয়-নিবেদন করতে থাকেন। কচের সাথে দেবযানীর দূরবর্তী কিন্তু অনেক মধুর সময় কাটতে থাকে। কচের শিক্ষা শেষ হতে এক সহস্র বছর লেগে যায়। তার বিদায়ের দিন আসে। কচ সবার কাছে বিদায় নিয়ে দেবযানীর কাছে যান। দেবযানী তখন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি কষ্ট পেতে থাকেন। কারণ কচ তার প্রণয় ও নিজের স্বার্থসুখ উপেক্ষা করে দায়িত্বের কারণে স্বর্গে চলে যেতে উদ্যত হয়েছেন। দেবযানী কচকে এই বলে অভিশাপ দেন যে কচ যে বিদ্যা শিক্ষা করেছেন সেটা তিনি নিজের আয়ত্বে পুরো নিতে পারবেন না। প্রয়োগও করতে পারবেন না:
“এ প্রাণের সমস্ত মহিমা। তোমা-‘পরে
এই মোর অভিশাপ–যে বিদ্যার তরে
মোরে কর অবহেলা, সে বিদ্যা তোমার
সম্পূর্ণ হবে না বশ–তুমি শুধু তার
ভারবাহী হয়ে রবে, করিবে না ভোগ;
শিখাইবে, পারিবে না করিতে প্রয়োগ।”
(বিদায় অভিশাপ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
জবাবে কচ বলেন
“আমি বর দিনু, দেবী, তুমি সুখী হবে।
ভুলে যাবে সর্বগ্লানি বিপুল গৌরবে।”
এই কবিতায় বর দেওয়ার কথা বলা হলেও মহাভারতের মূল আখ্যায়িকায় অবশ্য আছে যে কচও সেই অভিশাপের বদলে দেবযানীকে পাল্টা অভিশাপ দিয়াছিলেন। এবার ভেবে দেখুন আপনি অন্যকে অবজ্ঞা করে কোনো অভিশাপ মাথায় নিতে চান কিনা!
hassangorkii@yahoo.com
রয়্যাল রোডস ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কানাডা।