অনলাইন ডেস্ক : করোনা মহামারীকালে স্বাস্থ্য বিভাগের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে ‘অল আউট অ্যাকশন’ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগ তারই বহিঃপ্রকাশ। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বন্ধে শিগগিরই আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া পুরো স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোরও উদ্যোগ নিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে তৎপর দুর্নীতিবাজচক্রকে নির্মূলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে ইতোমধ্যে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের।

সূত্র জানায়, করোনা মহামারীকালে স্বাস্থ্য খাতের পুরনো দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা মাস্কসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন কেনাকাটায় নজিরবিহীন দুর্নীতি করেন। এই সিন্ডিকেটে যুক্ত হন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা। এ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের কেনাকাটায় দুর্নীতিবাজচক্র ভর করতে থাকে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে একের পর এক খবর প্রকাশ হয়। প্রথমেই সামনে চলে আসে এন৯৫ মাস্ক কেনাকাটায় দুর্নীতির কেলেঙ্কারির দিকটি। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই গত ২২ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিএমএসডি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহকে বদলি করে। তার এই বদলিতেও হাত ছিল স্বাস্থ্যের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের। এর পরই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহ স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে থাকা মিঠু সিন্ডিকেটের বিষয়ে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেন। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের নানা দুর্নীতির তথ্য সংযুক্ত করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, জনপ্রশাসন সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিত একটি চিঠি জমা দেন। তার এই চিঠির বিষয়বস্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোচরীভূত হলে তিনি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটকে ধরতে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাকে নির্দেশনা দেন। এর পর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সরিয়ে দেওয়া হয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে। সেখানে নতুন সচিব নিয়োগ করা হয় মো. আব্দুল মান্নানকে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী দুই অতিরিক্ত সচিবকেও সরিয়ে দেওয়া হয়, যারা স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এর পর থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় জোর পায়।

সূত্র বলেছে, গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক যে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন, তা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করতে হয়েছে। কদিন আগেই তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে। তিনি পদত্যাগ না করে নানা ঘাটে তদবির করে বেড়াচ্ছিলেন নিজেকে রক্ষার জন্য; কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে শেষমেশ আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। পদত্যাগ না করলে কী পরিণতি ভোগ করতে হবে, সে বিষয়টিও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদকে। যে কারণে গতকাল তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।

সূত্র বলেছে, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের চলমান অ্যাকশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই হয়েছে। এ ছাড়া করোনা রিপোর্ট জালিয়াতিকা-ে জেকেজি হেলথ কেয়ার ও রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদ করিমসহ তাদের অন্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযানও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চলমান।

সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তারা যত প্রভাবশালীই হোক, তাদের আইনের আওতায় আনতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি দমন কমিশন এবং আইন প্রয়োগকারী অন্য সংস্থাকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি দুর্নীতিবিরোধী এসব অ্যাকশনের আপডেট খবরও নিচ্ছেন সময়ে সময়ে। দুর্নীতি করে কেউ যেন পার না পায়- এ ব্যাপারেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে মাঠে নামিয়েছেন শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে র‌্যাব রিজেন্ট হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে। তাদের এই অভিযান সামনের দিনগুলোয় আরও জোরালো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতিকান্ডে শিগগিরই সদ্য পদত্যাগ করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদকে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ডাকা হচ্ছে। জেকেজিকে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেয়ার পেছনে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সরাসরি জড়িত বলে তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।