অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাসের চিকিত্সায় জালিয়াতি ও নানান অনিয়মের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে। এই হাসপাতালের এ কর্মকাণ্ড সরকারের মদদেই হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন আয়োজিত ‘কার্যকর গণতন্ত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা হাসপাতাল কী করে একটা মিথ্যা সার্টিফিকেট দিতে পারে। আমাদের সমস্ত মন্ত্রীরা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন, কাজ করছেন। অর্থাৎ পুরোপুরি সরকারের মদদ নিয়ে এই অপকর্মটা তারা করেছে।’
করোনা মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সকালে উঠে শুনতে হয় মৃত্যুর খবর আবার রাতে শোয়ার আগেও শুনতে হয় মৃত্যুর খবর।এভাবে মহামারিতে মৃত্যু হবে কিন্তু তা কোনো রকমের প্রতিরোধ গড়ে উঠবে না এবং চরম উদাসীনতার মধ্য দিয়ে, অবহেলার মধ্য দিয়ে সরকার মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে-এটা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের জনগণের মতামতকে যদি সত্যিকার অর্থেই গুরুত্ব দিতে হয়, সত্যিকার অর্থেই যদি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা তৈরি করতে চাই, সত্যিকার অর্থেই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করতে চাই জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নাই। সেই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য, জনগণের অধিকারকে রক্ষা করবার জন্য তাদের আজকে একটা জায়গায় আসতে হবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে শুদ্ধ করে আনার জন্য নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ কালীন সরকার এবং এই সরকারকে চলে যেতে হবে-এই দাবি তুলতে হবে।’
আওয়ামী লীগকে বারবার ক্ষমতায় রাখার জন্য রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের সংশোধন করা হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে, তারা তাদের প্রভুদের ক্ষমতায় রাখার জন্য সমস্ত আইন তৈরি করছে।’
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা এবং তাদের ক্ষমতায় রাখার প্রক্রিয়াটি ২০০৭ সালের এক-এগারোর সেনা সমর্থিত সরকার থেকে শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে এক এগারো থেকে। বিরাজ নীতিকরণের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলোকে একেবারে অকার্যকর করে। এখনো পরিকল্পিতভাবে সচেতনভাবে সেই কাজ চলছে।’
মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও নির্বাচন কমিশনগুলো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করেছে। সংবিধান থেকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিল করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে এক কোটির বেশি লোক দরিদ্র হয়ে গেছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ২০টি পরিবার ঢাকা ছাড়ছে। এদের নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই।
সরকারের কাছে কোনো টাকা নেই জানিয়ে মান্না বলেন, ‘সরকার টাকার জন্য কী করছে? প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, দেখেন তো ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ থেকে নেওয়া যায় কিনা। ক্যান ইউ ইমাজিন দেশ কত বড় ক্রাইসিসে পড়লে ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভে হাত দিতে চায়।’
করোনা চিকিত্সায় অনিয়মের প্রসঙ্গ তুলে মান্না বলেন, ‘মানুষের যখন মৃত্যুর আহাজারি, ক্ষুধার্তের আর্তনাদ সেই সময়ে মানবতার সঙ্গে এত বড় বেইমানি করার দল পৃথিবীতে বেশি নাই।’
বিএনপি কমিউনিকেশন সেলের পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক জহিরউদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ ও নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব আবদুর রশিদ সরকার।